আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগে এই দিনে এই সময় আব্বা আর আমি এক সাথে ছিলাম।
এই দিনে অফিস থেকে আধাবেলা ছুটি নেই আব্বা কে ডাক্তার দেখানোর জন্য। আব্বা আর আমি ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে বসে অনেক কথা বলছিলাম। আব্বা হঠাৎ করে বললো - রানা তোর কি কাজের অনেক চাপ, তোর চোখ গুলো কেমন যেন লাগছে? আমি আব্বাকে বললাম - আব্বা আমার মনিটরটা অনেক বড় তো তাই মনিটরের আলো টা চোখে সরাসরি পরে তাই চোখের নিচে কালি জমেছে। একথা বলে আমি আব্বার হাতটা ধরে বসে থাকি। আসলে অফিসে কাজের অনেক চাপ ছিল কিন্তু আব্বার সাথে দেখা হবার পর থেকে খুব ভালো লাগছিলো।
সেদিনও এমন মেঘের ঘূড় ঘূড় শব্দ হয়ে হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। আব্বা জানে যে আমার মুড সুইং সিন্ড্রোম এর সমস্যা আছে বিশেষ করে ওয়েদার ইনডিউস্ড মুড সুইং সিন্ড্রোম টা আমার আছে। হাসপাতালের ক্যানটিনে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আব্বা বললেন - চল একটু রিক্সা দিয়ে ঘুরি। আমিও মানা করি নাই, দুজনে হাত ধরে রিক্সায় বসে ঘুরেছিলাম। খুব ভালো লাগছিলো।
তখন যদি জানতাম এটাই আব্বার সাথে এভাবে কাটানো শেষ মূহুর্ত হবে আর কোন দিন আব্বার সাথে এভাবে ঘুরতে পারবো না তাহলো সেদিনের সেই সময়টাকে ফ্রিজ করে রাখতাম।
কি বোকার মত কথা বলছি, সময়কে কি আবার ফ্রিজ করা যায়? যদি যেতো তাহলে জেনেসিস / গ্রেট এক্সপ্লোশন অব দ্যা ইউনিভারস এর পরবর্তী তে কি আর এই মহাবিশ্ব, এই পৃথিবী, এই আমরা প্রাণীরা কি এই বর্তমান পর্যায়ে আসতে পারতাম? সময় চলে তার আপন গতিতে মিলিয়ে যায় মহাকালের মহাগহ্বরে এটাই সময়ের বৈশিষ্ট্য। আমার বাবা ও এই সময় নামক অতল গহব্বরে হারিয়ে গিয়েছে এখন আমি চাইলেও তাকে ফিরে পাবো না এটাই সময় নামক মহাগহ্বরের নিষ্ঠুরতা।