
সারাটা দিন গাড়ি সেটিংয়ের কাজ, কাটা-ছেড়া, ঘসা-মাজা, নাটবল্টু লাগানো আবার খোলা আবার লাগানো, কোথাও একটু রং চটে গেলেই বাঁশ। নতুন কাঁচা রংয়ের গন্ধ, ঝালাই এর ধোঁয়ার গন্ধ, গ্র্যান্ডিং মেশিনের কাটার শব্দ, আগুনের ফুলকি চোখে গিয়ে লাল লাল চোখ। রোজ সকাল নটা থেকে রাত বারোটা একঘেয়ে কাজ, মাঝে মাঝে একটু কফি, সিগারেটের বিরতি।
ঝালাইএর লোহা পোড়া ধোয়ার গন্ধে প্রান ওষ্ঠাগত, কান ঝালাপালা, তার ভেতেরই কে যেন কোথা থেকে ডাক দেয় এই... এই... ইতিউতি তাকাই, নাহ, কেউতো ডাকেনি আমায়!! আবারো হাত চালাই , আবারো কেউ ডাক দেয়, এই ... !! ডাকটা আমাকে নিয়ে যায় আনেক পিছনে, কেউ একদিন কোনকালে আমাকে ডেকেছিল, এই.. তুই সব সময় ভ্রুটা কুঁচকে রাখিস ক্যান? অথবা এই, এইযে শুনুন, ছেলেরা সানগ্লাস পরে কেন জানেন? আমি ষোল নম্বর রেন্ঞ্চি হতে মাথা নাড়াই, কেনো বলুন তো ? আমার হাতে ষোল নম্বর রেন্ঞ্চি নয়, যেন ষোলটা রজনিগন্ধার ডাঁটা। চোখে জলন্ত লোহার কনা থেকে বাচার জন্য পরা গগলসটা যেন কালো গ্লাসে সোনালী ফ্রেমের সৌখিন রোদ চশমা হয়ে যায়। কখোনোবা মা ডেকে ওঠে, বাজান, কলাবাগানের ধারের গাছটা একটু দেখে আয় না, কাঠাল গুলো সব কাকে খেয়ে গেলো........!! আমি নাট-বল্টু টাইট দিতে দিতে আস্ফুটে বলে উঠি, মাগো, ওরাও তো কিছু খেয়ে বাঁচবে, খাকনা।
নতুন মডেলের ওপেন কারের উইন্ডশিল্ড লাগাতে সিলিকনের টিউব হাতে নিয়ে মাস্ক পরা নাকে তবু একটা আনকোরা গন্ধ ভেসে আসে, বর্ষার নতুন জলের ধারায় বাঁশবাগানের ধারের জলাটা বেয়ে নেমে যাওয়া ধারায় যে সিংমাছ গুলো বেয়ে উঠেছিল কিশোর বয়সে আমার পায়ের কাছে, মা যেন বলছে, বজান, নতুন পানির মাছের স্বাদই আলাদা, ডিমআলা সিং মাছের ভাজি খেয়ে দেখ, ভুলতে পারবিনা। না মা, আমি ভুলিনি এখনো, এতটা বছর হয়ে গেল, সেই আষাড় বিকেলের সিং মাছের ঘ্রান এখনো টের পাই, হাতুড়ির ছ্যাচা খাওয়া আঙ্গুলে এখোনো সেই সিং মাছের কাঁটার যন্ত্রনা মাগো।
কোথাওকি কাঠালিচাঁপা ফুটেছে?
একটা মাছরাঙ্গা বুঝি ঝাপদিল শ্যাওলা ভরা জলে!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




