somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"জেনোসাইড ডিনায়েল ল" কেন প্রয়োজন?

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৯জানুয়ারী ২০১৬ ইবনে গোলাম সামাদ সাহেবের "সংখ্যা নিয়ে গণ্ডগোল" শিরোনামে একটি আর্টিকেল ছাপা হয়। যার প্রথম লাইন ছিল "১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় নানা সংখ্যাতাত্ত্বিক গলোযোগ পরিদৃষ্ট হচ্ছে"। এখানে তিনি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ বলছেন যা একটি প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্তে পাবলিশ্ড। আরে রক্ত দিল বাঙ্গালি, শহীদ হল বাঙ্গালি, ইজ্জত দিল বাঙ্গালি, ঘর পুড়ল বাঙ্গালির, দেশান্তরিত হল বাঙ্গালি আর যুদ্ধ করল ভারত-পাকিস্থান! ভারত যুদ্ধ করে আমাদের দেশকে স্বাধীন করে দিল?
বেগম জিয়ার (২০০১-০৬) সরকারের মন্ত্রী ও জামাতের তৎকালীন সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, "বাংলাদেশে কোন যুদ্ধোপরাধী নেই, এটা ওদের (জামাত বিরোধীদের) বানোয়াট উদ্ভট চিন্তা, তখন থেকেই নেই, এখনো নেই, কোন স্বাধীনতা বিরোধী নেই, তখনো ছিল না এখনো নেই"। এমন কি তিনি মুক্তিযোদ্ধাকেই অস্বীকার করেন, কোন মুক্তিযুদ্ধই নাকি হয় নি যা দেশের প্রায় সবগুলো প্রাধান্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। যদিও তাকে এই যুদ্ধোপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। অতিসাম্প্রতিক সময়ে সাবেক প্রাধানমন্ত্রি বেগম জিয়া বলেন, "এখন যে ত্রিশ লক্ষ শহীদের কথা বলা হয় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বিভিন্ন বই কিতাবে বিভিন্ন তথ্য আছে"।
ঠিক এর কয়েকদিন পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পাকিস্তানের যারা বেতন ভাতা খেয়েছে, শেষ দিন পর্যন্ত, তারা নির্বোধের মত মারা গেল, আমাদের মত নির্বোধেরা প্রতিদিন তাদেরকে, কি! শহীদ বুদ্ধিজীবি হিসেবে ফুল দেয়, প্রতি বছর, না গেলে আবার পাপ হয়। ওনারা যদি এত বুদ্ধিমান হয় তাহলে ১৪ তারিখ পর্যন্ত থাকে কি করে বলেন তো আমাকে। (অত্যান্ত তাচ্ছিল্যের সুরে)। পাকিস্তানের বেতন ভাতা বিষয়ে এখন প্রায়ই খোঁচা দিয়ে কথা বলা শুনি। পাকিস্তান যদি এদেশ থেকে কর শুল্ক নেয়া জায়েজ হয় তাহলে বেতন নেয়া কেন পাপ হবে?
আবার আওয়ামী সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অতিশয় বড় করে রাজনীতি করেন। অন্যদিকে জামাত বিএনপি এটাকে খাট করে বা ছোট করে রাজনীতি করেন। অর্থাৎ একপক্ষ এটাকে অতিরঞ্জিত করেন অন্যপক্ষ এটাকে বিকৃত করেন। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়ে অতিরঞ্জিত ও বিকৃতি দুটোই সমান অপরাধ।
ইবনে গোলাম সামাদ সাহেব যে মুক্তিযোদ্ধ পাক-ভারত যুদ্ধ বলেছেন তা সরাসরি অফেন্স বা ক্রাইম। বর্তমান আইনেই এর বিচার করা সম্ভব। এটা পরিস্কার যে কোন একপক্ষকে খুশি করার জন্য ইন্টেনশনালি ইতিহাস বিকৃতি করেছেন। '৭১ এর তিন ডিসেম্বর ভারত সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় তার আগেই আমরা দেশের অধিকাংশ এলাকা স্বাধীন করে ফেলি। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ ভারতই দিয়েছে। তাদের অবদানকে অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। তার মানে এই নয় যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা ও অস্বীকার করতে হবে। যার যতটুকু অবদান তার ততটুকু স্বীকৃতি দিতেই হবে।
ইতিহাসের আরেকটা বিকৃতি হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে। ২৫শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী এদেশ আক্রমণ করলে রাত বারটার পর অর্থাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে ইপিআরের মাধ্যমে স্বাধীনতার ষোষণা পত্র পাঠিয়ে দেন কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ২৬ তারিখ সারাদিন স্বাধীনতার ঘোষনাটি প্রচার করা হয়। তখন তৎকালীন স্থানীয় আওয়ামী নেত্রীবৃন্দ মনে করেন যদি কোন সামরিক ব্যাক্তি দিয়ে ঘোষণা পত্রটি পাঠ করানো হয় তবে গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে সেই অনুসারে স্থানীয় উর্ধতন সামরিক অফিসার জিয়ার রহমানকে পেয়ে যান। তাকে দিয়ে পরদিন ২৭ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পত্রটি পাঠ করানো হয়। এই বিষয়ে পরে একটি ব্লগ লিখব সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করব আসা করছি।
এখন দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস বিকৃতি ও মহান নেতাদের নিয়ে অশালীন ও ঘৃণিত কথাবার্তা আমরা বলেই চলেছি। এখন রাজনীতির মূল খোরাক হয়ে গেছে এই বিষয়গুলো নিয়ে। ভারতের দালাল, পাকি দালাল আর রাজাকার ছাড়া এখন আমাদের রাজনীতি অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। লক্ষ লক্ষ ইহুদী হত্যা করার পরও এডলফ হিটলার সম্পর্কে কোন বাজে মন্তব্য জার্মানীতে করতে পারে না, করলে সঙ্গে সঙ্গে এরেস্ট হতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে "জেনোসাইড ডিনায়েল ল" রয়েছে। আপনি চাইলেই জেনোসাইডকে অস্বীকার করতে পারবেন না। আমাদের দেশে এইগুলো এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সবার মুখে মুখে। এই দেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুকে অপমান না করলে অনেকেরই পেটের ভাত হজম হয়া না। মুক্তিযোদ্ধাদের গালি না দিলে দিন কাটে না। দেশটা যেন ভারত পাকিস্থান দুদিকে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এখন সময়ের দাবি উঠেছে "জেনোসাইড ডিনায়েল ল" করার। শুধু তাই নয় প্রত্যেক ক্লাসে যে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে একটি গল্প থাকে তা যে যথেষ্ট নয় তার প্রমাণও নতুন প্রজন্ম দিয়েছে। কিছুদিন আগে একটি টিভিতে দেখলাম কলেজ ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা কোনটি স্বাধীনতা দিবস, কোনটি বিজয় দিবস, কোনটি মাতৃভাষা দিবস কোনটিই বলতে পারছে না। তাই প্রত্যেক ক্লাসে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে চেপ্টার বাড়াতে হবে। ৮ম, ৯ম ও১০ম শ্রেণীতে ১০০ মার্ক করা যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের স্পট, বধ্যভূমি এই ধরনে গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলো ছাত্রদের দেখানোর ব্যাবস্থা করলেও অনেক উপকারে আসবে। এর সাথে কাউন্সিলিং করানো যেতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সর্বপ্রকার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে জাতির পিতাকে নিয়ে বিতর্ক। আর এজন্য প্রয়োজন "জেনোসাইড ডিনায়েল ল"।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×