somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম ও মানবতা।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্ম তাহাই যাহা মানুষের কথা বলে, মনুষত্বের কথা বলে, মানবতার কথা বলে, মহানুভবের কথা বলে, সহিষ্ণুতার কথা বলে। ধর্ম কখনই হিংসা বিদ্বেষের কথা বলে না, মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটির কথা বলে না। সব ধর্মেই উদারতার কথা বলে, শান্তির কথা বলে। যেখানে শান্তির পায়রা উড়ে নাই সেখানে ধর্ম নাই। যাহারা সকাল থেকে সন্ধ্যে অব্দী অমুকের মারো, তমুকের কাটো বলিয়া গলা ফাটাইয়া ফতুয়া জাহির করিয়া বেড়ায়, খুব দুঃখের বিষয় তাহারা ধর্ম কি এখনো বোঝে নাই। ফাইভের ছাত্র যেমন পরীক্ষায় গণিত ছাড়া বাকিগুলো মুখস্ত লিখিয়া দিয়া আসে, ফতুয়া জাহির করা মানুষগুলোও ঐ রকম মুখস্ত বলিয়া যায়, আত্মস্ত করিতে পারে না। আজকের বিশ্বে যে ধর্ম নিয়া চরম বাড়াবাড়ি চলিতেছে তাহা ঐ ধর্মগ্রন্থ মুখস্ত মানুষগুলোর জন্যই। যতকাল না মুখস্ত ছাড়িয়া আত্মস্ত করিবে ততকাল এইভাবেই চলিতে থাকিবে। দারিদ্র্যের দুষ্টু চক্রের মত এখানেও মুখস্ত চক্র চলিতেছে, মুখস্ত শিক্ষক থেকে মুখস্ত ছাত্র, মুখস্ত পীর থেকে মুখস্ত অনুসারীগণ, মুখস্ত উস্তাদ থেকে মুখস্ত শিষ্য। এই মুখস্ত তুলিয়া দিবার জন্য সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালইয়া যাইতেছে তেমনই ধর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রেও স্ট্রিম রুলার চালাইতে হইবে তাহাতে যদি সফল হয় তবেই ধর্ম হাফ ছাড়িয়া বাচিবে, সাধারণ মানুষও হাফ ছাড়িয়া বাচিবে নইলে ঐ ধর্মপন্ডিতগণের স্ট্রিম রুলারে সাধারণ মানুষ মরিবে, ধর্মও মরিবে। সকল ধর্ম পন্ডিতগণের জানিয়ে রাখা উচিত যে, ধর্ম প্রতিষ্ঠা হইয়াছে মানুষের কল্যানের জন্য, ধর্মের কল্যানের জন্য মানুষ হই নাই। তাই ধর্ম সর্বদা মানুষের কল্যান করিতে থাকিবে, মানুষের অকল্যাণ করিতে নয়, জীবন নিতে নয়। যাহারা ধর্মের নামে মানুষের জীবন নিতে উদগ্রীব তাহারা মুর্খ, গোড়া কিংবা মুখস্ত বিদ্বার অধিকারী। তাহাদের মাঝে বিনয়িতা নাই, নম্রতা নাই, ভদ্রতা নেই, আছে শুধু উগ্রতা। আর এই উগ্রতায় আজকের বিশ্বে ধর্মীয় ডামাডোলের মূল কারণ। আরেকটা কারণ নিজে কি করিলাম না ভাবিয়া অন্যেরা কি করিল তাহা নিয়া মাথা কুটিয়া মরা। নিজের প্রতিদিন কতবার ফরজ ছুটিয়া গিয়াছে তাহার হিসাব না করিয়া কাহার সুন্নত ছুটিয়া গেল তাহা নিয়ে ডামাডোলে সামিল না হইলে যেন নিজের ধর্ম থাকিবে না, তুমি ধর্মতত্ত্বের বাহিরের মানুষ হইয়া যাবা। মসজিদ কিম্বা মন্দিরে গিয়ে কপাল ঠুকিবার আগে নিজের অন্তরে একখান মসজিদ কিম্বা মন্দির তৈয়ার করিতে পারিলেই কেবল তুমি ধার্মিক হইবে সাথে মানুষও হইবে নইলে তুমি ধার্মিক হইবে বোটে মানুষ হইবে না, তাই আজ ধার্মিকের অভাব না থাকিলেও মানুষের বড় অভাব আছে, এই অভাব যে সহজে পূর্ণ হইবার নয়। ইহা যে আজ বড় ধরনের শুন্যের কোটায় পড়িয়া রহিয়াছে।
ধর্ম আসিয়াছে মানব মনে জড়তা, কঠোরতা, হীনতা, নীচুতা, শঠতা দূর করিয়া মহানুভাবতা, মানবতা, উদারতা, নম্রতা ও মনুষ্যত্ব জাগরণ করিয়া এক মহাশান্তির বিশ্ব গঠন করিবার জন্য যেখানে কোন প্রকার হিংসা বিদ্বেষের ছোয়া থাকিবে না, জাতিতে জাতিতে হানাহানি থাকিবে না, এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে দ্বন্দ্ব সংঘাত থাকিবে না। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাঝে, এক জাতি থেকে অন্য জাতির মাঝে, এক গোষ্ঠী থেকে গোষ্ঠীর মাঝে সহজ ও সরলীকরণ চলাচলের জন্য একটি ব্রিজ থাকিবে সেই ব্রিজের নামই ধর্ম। এই ধর্ম সর্বদা মানব জাতির কল্যান করিতে থাকিবে। উঁচু-নিচু, জাত-অজাত-বিজাত, ধার্মিক-অধার্মিক নির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণীর সম নীতি ও বন্টনের মাধ্যমে একটি সুসম, ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠনে যে উঁচু মাপের ধর্মের প্রয়োজন তাহার নাম মানবতা। আজকের এই মানসিক বিকারগ্রস্থ পৃথিবীর জন্য দায়ী এই মানবতার অভাব। এই মানবতার অভাবেই চলিতেছে মারামারি, কাটাকাটি, দেশ দখল, জায়গা দখল, ভারি অস্ত্রের মহড়া, পারমানবিক বোমা ছেড়ে আরো বহুগুণ শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা তৈরির মহোৎসব। এর একটি বোমায় একটি জাতি, একটি জনপদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হইতে পারে আর মাত্র কয়েকটি বোমায় সারা পৃথিবী ধ্বংস হইতে পারে। এই ভয়াভহ দূর্ঘটনা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করিবার সবচেয়ে বড় অস্ত্র মানবতা। এই মানবতায় মানব জাতিকে রক্ষা করিতে পারে, পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে, জাতিতে জাতিতে কিম্বা ধর্মে ধর্মে সংঘাত থেকে রক্ষা করিতে পারে। আজকের পৃথিবীতে বাচিয়া থাকার মন্ত্র হইতে পারে এই মানবতা। যেখানে মানবতা নাই সেখানে মনুষ্যত্ব নাই, বিবেক নাই। মানবতার ঘাটতি দেখা দিলে চিন্তার উদ্রেক হইবে, কপালে ভাজ পড়িবে। একদিকে মানুষ যেমন টাকার পাহাড়ের উপর ঘুমতে যায় অন্যদিকে ঠিক তেমনই প্রতিদিন প্রায় নব্বই কোটি মানুষ ক্ষুদার জ্বালা নিয়ে ঘুমোতে যায়। সারি বিশ্বে দশ ভাগ মানুষের যে সম্পদ বাকি নব্বই ভাগ মানুষের সম্পদ তার থেকে অনেক কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ ঐ মানবতার অভাব। তাই আসুন আমি মুসলিম, আপনি হিন্দু, তিনি বোদ্ধ, ওনি খ্রীষ্ঠান সকল ধর্মের উপরে মানব ধর্মকে স্থান দিই, মানব জাতিকে রক্ষা করি।
মানবতার আলোকছটা ছড়াবার জন্য, মনুষ্যত্বের বাতি জ্বালাবার জন্য প্রথম আগাইয়া আসিতে হইবে তরুণদের। একমাত্র তারুণ্যের হাত ধরেই মানবতার বিজয়মাল্য পরিতে পারে। হিন্দু, মুসলিম, বোদ্ধ, খ্রিষ্ঠান প্রত্যেকে তাহার নিজ নিজ ধর্মের গুণগানে ব্যাস্ত। তাহারা নিজের ধর্মের গুণগান করিতেছে করিতে থাক, আমাদেরকে এই প্রত্যেক ধর্মের মাঝে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করিতে হইবে, একে অন্যের মাঝে ভালসার বীজ বপণ করিতে হইবে, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করিতে হইবে, প্রত্যেকের মাঝে রজনীগন্ধার সুভাস ছড়াতে হইবে, সকালের মিঠেল আলো মুঠি মুঠি ছড়াতে হইবে মসজিদ, মন্দির, পেগোডায়। সম্প্রীতির সুবাতাস বহিতে থাকবে পৃথিবীময়। আমাদের ভুলিয়া গেলে চলিবে না যে, যে যতবেশি ধর্মভীরু তার মধ্যে ততবেশি কঠোরতা। ঐ ধর্মভীরুকে শতভাগ সম্মান জানিয়ে, শ্রদ্ধা রেখে কঠোরতার বুকে আঘাত হানিতে হইবে যাহা সহজ কর্ম নহে। সকালে মসজিদ হইতে নামাজ পড়িয়া মন্দিরে পাহারা দিতে হইবে যাতে করে তাহারা নির্বিঘ্নে পূজা-অর্চণা করিতে পারে কিম্বা পূজা-অর্চণা শেষ করিয়া মসজিদ বা পেগোডার সামনে সারি বেঁধে দাড়াইয়া থাকিতে হইবে। ধর্ম তাহার কর্ম করিয়া যাক, আমরা মনুষ্য সেবায় নিয়োজিত করিতে পারিলেই হইল। কেহ মসজিদ কিম্বা মন্দিরে যাইতে চাহিলে যেমন আমরা পৌছাইয়া দিব তেমনই কেহ যদি বেশ্যাখানায় কিম্বা সরাইখানায় যাইতে চাহে সেখানেও পৌছাইয়া দেওয়া আমাদের কর্ম তবে আমরা মানুষ হিসাবে তাহার কর্মের ভাল মন্দের দিকগুলি স্মরণ করিয়া দিতে পারি বাঁধা দিতে পারি না। স্বচ্ছ, গন্ধ, দূর্গন্ধ সকল জলই তাহার ইচ্ছেমত গড়িবে অযথা আমরা তাহার মাঝে বাঁধ দিতে পারি না, ইহা আমার বা আমাদের ধর্ম নহে, কর্মও নহে। আমাদের ধর্ম মানবতা, এই ধর্মকে সকল জাতির মাঝে পোথিত করিতে হইলে, মানুষের মাঝে নবরূপে এক আবহ তৈরি করিতে হইলে, মানবসত্ত্বাকে অন্ততপক্ষে মনুষত্বের কাতারে আনিতে হইলে সর্বপ্রথম আমাকে আপনাকে আগাইয়া আসিতে হইবে, বিপদসংকুল এই মহাপথে মাথা আগাইয়া দিতে হইবে।

খন্ডিত হোক তব মাথা আজি, ধরিব অন্তরে মানবতা,
বিপদসংকুল শত পথে, চলিবে তাহা চির বহতা।
অন্যের ব্যাথায় ব্যাথিত, পরম সুখি অন্যের সুখে,
আমি যে কাঁদিয়া মরি অন্যের একটু খানি দুখে।
একটু খানি সুখের তরে হে পৃথিবী আমার এ প্রাণ,
হাসিতে হাসিতে তোমার তরে দিব আজি বলিদান।
নিজ হাতে মুছিয়া দিব সকল দুখিনী মায়ের অশ্রুজল,
পুচ্ছে ফেলিয়া শঠতা দেখিব মুখখানি তার হাস্যোজ্জ্বল।
জানি আসিবে ঝড় কালো মেঘে ছেয়ে, সকাল দুপুর,
আসুক বৈশাখী ঝড়, টলিব না, নড়িব না চাহিয়া সুদুর।
মানবেরে তুলিয়া, মানবসত্ত্বা জাগাইয়া ক্ষান্ত হইব আমি,
সুখ-দুখ ভাগাভাগি পরমসুখে থাকিবে আমার প্রিয় ভূমি।
যত কৃচ্ছতা, শঠতা, ইর্ষা-রেসারেসি হইবে দূর,
বাঁজিবে চারিদিকে সর্বদা মহানুভাবতা সুর।

আজি ভাঙ্গিতে হবে মসজিদ-মন্দিরের ঐ দোয়াড়,
ঝুলিবে সেথা মানবতার তালা, বন্ধ হইবে খোয়াড়।
যত গানের পাখি আছে আসিবে ঐ ধর্মাশালয়,
আরো মধুর করিয়া তুলিবে আমাদের দিশালয়।
গলাগলি ধরি, কুলাকুলি করি হিন্দু-মুসলমান,
আমাতে তোমাতে সুখ-স্বপ্ন সমানে সমান।
হোক না পূজা আমার মসজিদে, তাহাদের মন্দিরে হোক আযান,
আমার অন্তরে বাজুক উলু ধ্বনি, তাহার অন্তরে আযান সমান।
গাহিয়া চলিব আমরা দুজন এক প্রাণ,
একই সুতায় বাঁধা মোরা হিন্দু-মুসলমান।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:০৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×