দার্জিলিং আমাদের দেশের পাহাড়প্রিয় র্পযটকদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্য। সেখানে যাবার জন্য আমাদের দেশের র্পযটকদের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত স্থলবন্দর হচ্ছে বুড়িমাড়ি/চেঙ্গড়াবান্দা। কিন্তু পাহাড়ী অঞ্চল দার্জিলিং যেতে হলে সমতলের শিলিগুড়ি শহর হয়ে যেতে হয়।
শুধু তাই নয় ঐ উত্তরাঞ্চলের জন্য শিলিগুড়িতে সমস্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাবার রেল, সড়ক বা বিমান যোগাযোগের কেন্দ্রস্থল। কিন্তু চমকপ্রদ সত্যিটা হচ্ছে বুড়িমাড়ি/চেঙ্গড়াবান্দা স্থলবন্দর থেকে শিলিগুড়ির কেন্দ্রস্থলের দূরত্ব ৭৮.৪ কিমি, যেখানে বাংলাবান্ধা/ ফুলবাড়ী স্থলবন্দর থেকে ১০.৬ কিমি। তারপরও বুড়িমাড়ি/চেঙ্গড়াবান্দা স্থলবন্দর জনপ্রিয় হবার কারন February 18 , 2016 সালের আগে বাংলাবান্ধা/ ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে শুধুমাত্র পণ্য লেনদেনে অনুমতি ছিল।
বাংলাদেশের দেশের ২৮টি স্থলবন্দরের মধ্যে ২৪টি সচল স্থলবন্দর। প্রথম শ্রেনীর স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে মঙ্গলা ও বেনাপোল স্থলবন্দরের পরেই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশনের অবস্থান। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট থেকে বাংলাবান্ধা বাসটার্মিনালের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়া সদরের দূরত্ব প্রায় ২৩ কিলোমিটার, পঞ্চগড় শহরের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এবং ঢাকার দূরত্ব ৪৭০ কিলোমিটার।
অপরদিকে ফুলবাড়ী স্থলবন্দর থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রেলষ্টেশন (NJP) মাত্র ১০.৬ কিমি, যে রেলষ্টেশন থেকে ভারতের বড় বড় সব রেলষ্টেশনে সরাসরি ট্রেন আছে। বাগডোগড়া বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০.৬ কিমি দুরত্ব।শুধুমাত্র তাই না, যারা স্থলপথে জয়গাওঁ দিয়ে ভূটান ও কাঁকরভিটা দিয়ে নেপাল যেতে চান, তারাও শিলিগুড়ি হয়ে যেতে পারেন। তবে জয়গাওঁ দিয়ে ভূটান যেতে হলে বুড়িমাড়ি/চেঙ্গড়াবান্দা স্থলবন্দর দিয়ে নিকটর্বতী হবে এবং শিলিগুড়ি র্পযন্ত না গিয়ে ময়নাগুড়ি দিয়ে চলে যাওয়া যায়।
সম্প্রতি অভিবাসন সুবিধা চালু হওয়া এই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে যাবার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে, ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা র্বডার দিয়ে শিলিগুড়ি যাবার যাতায়াত ব্যাবস্থা সমুহ তুলে নীচে ধরা হলোঃ
বাসে ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা র্বডার:
বাসে ঢাকা থেকে সরাসরি বাংলাবান্ধা র্বডার: ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধায় সরাসরি যাবে হানিফ এন্টারপ্রাইজ ও শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস। শ্যামলী পরিবহন ঢাকার শ্যামলী হল মোড় থেকে এই বাস প্রতিদিন রাত সাড়ে নটায় ছাড়ে। একই ভাবে বাংলাবান্ধা থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা সাতটায়। শ্যামলী এই এসি বাসটির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০০ টাকা। এছাড়া হানিফ এন্টার প্রাইজের একটি বাস প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকা এবং সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা যাতায়াত করে।
ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়া: ঢাকা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন ছাড়াও অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় যাওয়ার। নাবিল পরিবহনের ভাড়া নন এসি ৬০০-৬৫০, এসি ১০০০-১০৫০, বিজনেস ক্লাস ১৫০০-১৬০০। তেঁতুলিয়া থেকে বাসে বা অটোরিক্সায় যাওয়া যাবে বাংলাবান্ধা। মনে রাখবেন, রাত ৮ টার মধ্যে তেঁতুলিয়া সদর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী , আহসান এন্টারপ্রাইজ, কান্তি পরিবহণ ও কেয়া পরিবহনের সকল বাসগুলো ডাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ঢাকা থেকে সরাসরি পঁঞ্চগড়: ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন,এনা এন্টারপ্রাইজ, খালেক, কেয়া, বিআরটিসি বাসগুলো পঁঞ্চগড় শহরে নামিয়ে দেবে আপনাকে সকাল ৭:৩০ টায়। ঢাকা থেকে পঁঞ্চগড়/তেঁতুলিয়ার নন এসি বাস ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে, এসি পাবেন ৯০০-১৫০০ টাকার ভেতরেই। পঞ্চগড় থেকে লোকাল বাস, প্রাইভেট বা মাইক্রো ভাড়া করে ৫৫ কি. মি. দুরত্ব অতিক্রম করে দেড় ঘণ্টায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে পৌছে যাবেন।
ঢাকা থেকে রেলপথে:
গত ১০ই নভেম্বর ২০১৮ তে ঢাকা থেকে সরাসরি পঁঞ্চগড়ে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান চালু হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন রাত ৮:০০ মিনিটে ছেড়ে পঁঞ্চগড়ে সকাল ৬:৩৫ মিনিটে পৌছায়। পঞ্চগড় থেকে লোকাল বাস, প্রাইভেট বা মাইক্রো ভাড়া করে ৫৫ কি. মি. দুরত্ব অতিক্রম করে দেড় ঘণ্টায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে পৌছে যাবেন।
ফিরতি পথে পঞ্চগড় থেকে প্রতিদিন সকাল ৭:২০ মিনিটে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬:৩৫ মিনিটে ঢাকায় পৌছায়। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনের সামনে পঞ্চগড় থেকে যাত্রী নিয়ে আসা রেন্ট-এ -কার এর খালি গাড়ী ফিরতি পথে যাবার জন্য যাত্রী খুঁজে, ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যেতে পারেন।
ঢাকা থেকে আকাশপথে:
ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি সৈয়দপুর বিমানবন্দর, নীলফামারি র্পযন্ত যাওয়া যাবে। সাপ্তাহে প্রতিদিনই এ রুটে বিমান, রিজেন্ট, নভোএয়ার এবং ইউএস-বাংলা মিলিয়ে দৈনিক মোট ৮টি ফ্লাইট সকাল ৭:২০ থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ টার মধ্যে চলাচল করে থাকে। তারপর সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রেন্ট-এ-কার বা বাসে পঞ্চগড় বা বাংলাবান্ধা বর্ডার যাওয়া যেতে পারে।
বেসরকারী বিমান সেবা পরিধিতে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুর থেকে বিমানের যাত্রী নিয়ে আসা ও পৌঁছে দেওয়ার জন্য এয়ারলাইন্সের নিজ্বস্ব পরিবহন সেবা রয়েছে। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ২৫০-৩৫০ টাকা অতিরিক্ত মুসল দিতে হয়। তারপর পঞ্চগড় থেকে লোকাল বাস, প্রাইভেট বা মাইক্রো ভাড়া করে ৫৫ কি. মি. দুরত্ব অতিক্রম করে বাংলাবান্ধা পৌছানো যাবে।
তবে দুঃখজনক এই যে, সকল এয়ারলাইন্সের সব ফ্লাইটের জন্য এ সেবাটি নিয়মিত বিদ্যমান নয়।
ফুলবাড়ী/বাংলাবান্ধা বর্ডার থেকে শিলিগুড়ি:
ফুলবাড়ী/বাংলাবান্ধা বর্ডার থেকে শিলিগুড়ি শহর বেশ কাছেই। ফুলবাড়ী চেকপোষ্ট থেকে শিলিগুড়িতে দার্জিলিং ট্যাক্সী ষ্ট্যান্ডের দূরত্ব ১০.৬ কিমি মাত্র। চেকপোষ্ট থেকে ১০ মিনিটে ইজি বাইকে (১০ রুপী) করে ফুলবাড়ি বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে, সেখান থেকে থ্রি হুইলার স্কুটার বা লোকাল বাসে ১৫/২০ রুপি খরচ করেই চলে যেতে পারেন পানির ট্যাংকি জীপ স্ট্যান্ডে, ট্রাফিক না থাকলে পৌঁছে যাবেন ১৫/২০ মিনিটে। চাইলে ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন থেকে ইজি বাইক রিজার্ভ (১৫০-২০০ রুপী) করে সরাসরি শিলিগুড়ির জাংশন রোড়ে চলে যেতে পারেন।ওখান থেকে সরাসরি কালিম্পং ও লাভার শেয়ার জীপ পাওয়া যায়। সব ঠিকমতো চললে, আপনি শিলিগুড়ি শহরে পৌছাবেন বেলা ১১ টার মধ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৮