এই পর্বে আমি দুধে ভেজাল আর দূষন সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদানে চেষ্টা করব। আমার এক সামুর ব্লগার প্রথমেই
বলে ফেলেছে দালালি করছি , উনাকে উত্তর দিয়েছি কিন্ত কোন ব্যাখ্যা দেননি,
আমি সেজন্য দু:খিত নই তবে চিন্তিত , তাহলে সাধারন জনগণ কি ভাবে প্রকৃত তথ্য নিয়ে সত্য অনুধাবন করবে ?
প্রথমেই বলে রাখি এই মর্হুতে আমার টেবিলে প্রায় ৬০ পাতার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পড়ে আছে অন্যদিকে কোর্ট থেকে কিছু
নির্দেশনা চলমান উভয় দিকে দৃষ্টি রেখে ব্লগে লিখতে বসা ..............................................................................
দুধে ভেজাল : ছোট বেলা দেখতাম গোয়ালা তার দূধ বাড়ী বাড়ী একটি ক্যানে করে পৌঁছে দিত। কিন্ত তার ক্যানের
উপরে কচুরী পানা ভাসমান, কিছুতেই তার অর্থ তখন জানতে পারি নাই। গোয়ালা চাইত তার খাঁটি দুধ যেন ঐ পরিবারের
জন্য সঠিক পুষ্টির যোগান দেয় । দুর দুরান্ত থেকে আনয়নের ফলে নষ্ট হয়ে না যায়, তখন এর কোন বিকল্প ছিল না ।
কোন প্রকৃতিক দুযোর্গ, বায়ু দুষন বা খাদ্যে ভেজাল তারও কোন সুযোগ ছিল না । টাকা পয়সা বিনিয়োগ করে "ডেইরী শিল্প"
গড়ে উঠে নাই বা বাণিজ্যিক প্রতিযোগতিা ছিল না । ঐ সময়ে গোয়ালাদের সততা ছিল ইর্ষণীয় ।
স্বাধীনতা যুদ্ধর পরপরই আমরা অনেক বিষয়ে স্বাধীন হলাম, যুদ্ধের গোলাবারুদ পরিবেশ দুষন ঘটালো, পুষ্টির চাহিদা বাড়ল,
জনসংখ্যা বাড়তে থাকল, বাণিজ্যিক প্রতিযোগতিা শুরু হলো অন্যদিকে ভালো জাতের গরুর যোগান ছিল না , চাহিদামত
দুধের যোগান হচ্ছিল না , তখনই দেখলাম, গোয়ালা দুধে পানি মেশানো শুরু করেছে, অনেক গোয়ালা কোন বাছবিচার
না করে , খাল বিলের পচাঁ পানি মেশানো শুরু করল, আমার খাঁটি দুধ খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল , ভাবতে শুরু করলাম, বিদেশ
থেকে আসা উৎকৃষ্ট গুড়ো দুধই খাবো ।
বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা যতই বাড়তে শুরু করল আমাদের এক শ্রেণীর লোকজনের নৈতিক চরিত্রর অধ:পতন ঘটতে
লাগল এবং তা এমন পর্যায়ে আসল যে, সাবান শ্যাম্পু আর কেমিক্যাল দিয়ে দুধ হিসাবে চালানো প্রচেষ্টা শুরু হলো।
অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই আমরা অনেক বিষয়ে স্বাধীন হলাম, কিন্ত পাঠ্যপুস্তকে সেই বৃটিশ আমলের
ভূত নামল না, ৬৮ হাজার গ্রামে কৃষি ভিত্তিক পাঠশালা গড়ে উঠল না । পুস্তকে খাঁটি দুধ পুষ্টির জন্য খেতে বলা হলো,
কিন্ত কি ভাবে খাঁটি দুধ চেনা যায় তার বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা ছিল না , ৭ কোটি মানুষ ১৬ কোটি ছাড়ায়ে গেল আমরা এখনও
কিছু বিশেষজ্ঞ বা গরুর খামারী ছাড়া ৮০% মানুষ জানি না খাঁটি দুধের মাণদন্ড কি ?
সাধারন ভাবে বলা যায় যে, ভেজালমুক্ত, দুষনমুক্ত এবং আর্ন্তজাতিক মাণদন্ড সঠিক রেখে যে প্রতিষ্ঠান বা খামারী বা গোয়ালা
তার ভোক্তার মাঝে যে দুধ বিক্রয় করবে, সেই দুধ পুষ্টিমান ও স্বাস্হ্যগত বিচারে সম্পুর্ন খাাঁটি ।
এক্ষেত্রে দুধে লেক্টো নুন্যতম ২৬ থেকে ৩০ এবং ফ্যাট নুণ্যতম ৩.৫ >৪.০০ মাত্রায় থাকতে হবে । সরকারী তদারকীতে সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটায় এর নির্ধারিত মাত্রা লেক্টো নুন্যতম ২৭ এবং ফ্যাট নুণ্যতম ৩.৫ । তাহলে একথা সহজে বোধগম্য যে, কোন
গোয়ালা বা ছোটখাটো খামারী প্রতিদিন তার খামারে বিভিন্ন গাভীর আরহিত দুধের মান সম্পর্কে নিজে জানেন না । খামারী বা গোয়ালা
কে বিষয়টি জানতে হলে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যেতে হবে বা প্রতিষ্ঠিত আধুনিক "ডেইরী শিল্প" ল্যাবে পরীক্ষায় দিতে হবে ।
এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন আসতে পারে, খামারী বা গোয়ালার পক্ষে প্রতিদিন তা কিভাবে সম্ভব ???
দুধে দুষন আছে কিনা , খামারী বা গোয়ালার কথা বাদই দিলাম, গড়ে উঠা "ডেইরী শিল্প" ল্যাবে তা পরীক্ষার কোন ব্যবস্হা নাই,
দেশের কোন ল্যাবেও আধুনিক কোন ব্যবস্হা নাই, দুঃখজনক যে, এ বিষয়ে ডেইরী এসোসিয়েসন বা সরকারের জোরালো,গুরত্বপূর্ণ
পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না ।
অথচ আমরা জানি উন্নত বিশ্বে খাদ্যে বা শিশু খাদ্যে ভেজাল করলে জেল জরিমানা সহ ব্যবসা
বন্ধ করে দেয়া হয় এবং নিয়মিত দুদ্ধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত দুধের দূষনমাত্রার পরীক্ষা চলমান ।
দুধের দুষন : বাস্তবে দুধে এন্টিবায়োটিক, আর্সেনিক, সালফাড্রাগ এবং সীসা ও ক্রোমিয়ামের এর প্রভাব কি আছে ,
তা কি সহনীয় মাত্রায় নাকি স্বাস্হ্য হানিকর ; বির্তক চলছে । এর পরীক্ষায় মাণদন্ডের বিচারে উর্ত্তীন হতে না পারলে আমরা
তাকে দুষন বলতে পারি ।
গবাদীপশুর লালন পালন, চারনভূমি, এলাকার আবহাওয়া, খাদ্যর মান বা সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা, পশুর চিকিৎসা ব্যবস্হাপত্র সাধারনত এই দুষনমাত্রাকে নিয়ন্ত্রন করে । তবে কিছু অসাধূ খামারী অতিরিক্ত দুধ প্রাপ্তির আশায় অক্সিটোসিন ব্যবহার করছে কিনা তা
গভীর ভাবে নীরিক্ষা করা আবশ্যক । এজন্য স্হানীয় ওষুধ বিক্রেতা বা স্হানীয় পশু ডাক্তার ছাড়া যা সম্ভবপর নয় ।
নীচে একটি টেষ্ট রিপোর্ট দিলাম, আমাদের সবার জানতে সুবিধা হবে দূষনমাত্রা কিবা সহনীয় মাত্রা বলতে কি বুঝি ?
ভূলে গেলে চলবে না , খাদ্যে ফরমালিন মেশানো একধরনের ভেজাল কিন্ত সহনীয় মাত্রাকে আমরা মেনে নেই ।
তাহলে কেন এত বিতর্ক চারিদিকে ? গুড়ো দুধেই বা কি আছে আমরা সঠিক তথ্য কি জানি ?? ডেইরী শিল্পে এই আঘাত
আজ কতটা ক্ষতি হচ্ছে, তা কি কোন সংস্হা জরীপ করছে ??? এসবের উত্তর আশাকরি আগামী পর্বে দিতে চেষ্টা করব ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৬:৩৯