somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা : জীবন ও জীবিকা যুদ্ধে বাংলাদেশ

০১ লা আগস্ট, ২০২১ ভোর ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা : জীবন ও জীবিকা যুদ্ধে বাংলাদেশ




আবার বানের জলের মতো মানুষ প্রবেশ করছে ঢাকায় ,
প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেন এই কড়া লকডাউন হুশিয়ারী ছিল ?
কেন মানুষ জরিমানা দিল , কেনই বা বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে
সরকার সাধারন মানুষের তীব্র সমালোচনার মুখে ?
এসকল প্রশ্ন আর তীব্র ক্ষোভ শহরবাসীর চোখে মুখে ???

করোনা নিয়ে আর লিখবনা ভেবেছিলাম , কিন্ত মনের মাঝে এত বেশী ক্ষোভ জমল যে,ব্লগিং লিখতে বসা ।
বর্তমানে আমরা করোনা যুদ্ধ আর অর্থনীতির চাপে মুখোমুখি। আমরা যদি করোনা ঠেকাতে লকডাউন মেনে নেই তাহলে
শতকরা ৭০% দরিদ্র মানুষ না খেয়ে মারা যেতে পারে আবার অর্থনীতির জন্য সবকিছু চালু থাকলে মৃত্যুর হার দ্রুত উর্ধগামী ???

তাহলে আমরা কেন সঠিক পথটি এই ১৭ মাসে নিতে পারলাম না ?

বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই :-

১। সরকার করোনা যুদ্ধ এবং অর্থনীতি একসঙ্গে চলমান রাখতে চায়।
২। সরকার বলছে কঠোর লকডাউন কিন্ত একসপ্তাহ পার হতে পারে না , তখনই শিথিলতার ঘোষনা আসে ।
৩। চলমান লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ স্হগিত করে জনগনকে ঈদ উদযাপনে উৎসাহ দেয়, আবার কোরবানীর জন্য
হাটও অনুমোদন দেয় ।
৪। সরকার বলছে ঈদের পর একদিনে ঢাকা ফিরতে হবে, কিন্ত ফেরার জন্য কোন সহায়তা মূলক ব্যবস্হাপনা থাকেনা ।
৫। ঈদের পর কড়া লকডাউনের হুঁশিয়ারী দিয়ে আবার ৭ দিনের মাথায় গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের চাপে বস্ত্রখাত উন্মুক্ত
করে কিন্ত কোন সহায়তা মূলক ব্যবস্হাপনা থাকেনা ।
৬। সরকারের ট্যেকনিক্যাল কমিটি বলছে এমনতর সিদ্ধান্ত আমাদের বিষ্মিত করে, কেউ কেউ বলছে এমন হলে
পদত্যাগ করা ছাড়া আর উপায় নাই ।
৭। টিকার জন্য সবাই আবেদন করতে পারেনা , কিন্ত রেজিষ্ট্রেশন করার পরও মেসেজ পায়না ।

জনগন আরও কিছু ভাবছে কিন্ত এসব ভাবনা গুলো প্রায় সবার মনেই আসে তাই এসব
এর উপর কিছু পর্যালোচনা করতে চাই ।


১) সরকার করোনা যুদ্ধ এবং অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক,
কিন্ত এজন্য কোন সুন্দর সমন্বিত পরিকল্পনা চোখে পড়েনা । সরকারের স্বাস্হ্য,বানিজ্য, জনপ্রশাসনের মাঝে যে সমন্বয়
নাই তা বারবার প্রমানিত হয়েছে । অথচ এই খাতে প্রধানমন্ত্রী যে প্রনোদনা দিয়েছে তা সঠিক প্রয়োগ হলে এরকম
হতো না । একটা প্রমান দিলেই যথেষ্ট : সরকার বস্ত্রখাতে খাতে প্রনোদনা দিয়েছে অথচ স্বাস্হ্যবিধি মেনে শৃন্খলা
প্রয়োগের আইন বলবৎ করতে পারে নাই । লক ডাউনের সময় সমস্ত বাস বসে থাকে, তখন চলমান সকল গার্মেন্ট মালিকদের
বরাদ্দ দিয়ে এই বাস দিয়ে শ্রমিক আনয়ন, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চত করন ও টিকা দান সম্পন্ন করলে এমন অবস্হার সৃষ্টি হতোনা ।

২) সরকার কড়া লকডাউনের কড়া হুঁশিয়ারী দিলে অবশ্যই তা পালন করা উচিৎ, বর্তমানে সরকারের ঘন ঘন অবস্হান
পরিবর্তনের জন্য গ্রহনযোগ্য ইমেজ তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে ।

৩) ঈদ উদযাপনের জন্য জনগনকে সুযোগ দিয়েছে , অর্থনীতির চাকা ঘুরেছে সে জন্য ধনবাদ, কিন্ত পাশাপাশি কিছু
সহায়ক ব্যবস্হাপনা কঠিন ভাবে পালন করলে সংক্রমন রোধ করা যেত । যেমন, যিনি বা যাহাদের টিকা নেয়া আছে
ও স্বাস্হ্যবিধি পালন করছে শুধুমাত্র তারাই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে পারবে । বিকল্প ব্যবস্হা হিসাবে
সকল বাস ষ্ট্যান্ডে টিকার ব্যবস্হা করা যেত যা, ভোটার আই ডি প্রর্দশন করে নেয়া যেত ।
ফেরার সময় এই নিয়মটি কঠিন ভাবে পালন করা যেত । তাহলে সংক্রমনের হার আজ ৩০.২৮ দেখতে হতো না ।

৪) সরকার বলছে, "ঈদের পর একদিনে ঢাকা ফিরতে হবে" এটা যে কতবড় ভূল ছিলো তা শুধু ভুক্তভোগিরা জানে
এবং কথায় কথায় সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানায় । অথচ সরকার যদি সকল গুরুত্বপূর্ণ স্হানে বিআরটিসির
ব্যবস্হা রাখত এবং লকডাউন শুরু হবার পর সব বাস ষ্ট্যান্ড গুলো সীল করে দিতো তাহলে করোনা সংক্রমন রোধ ও
যাত্রী হয়রানী ও দুর্ভোগ হতো না ।

৫) ব্যবসায়ীর চাপে সরকার ৭দিনের মাথায় রপ্তানীমুখী বস্ত্রখাত হঠাৎ উন্মুক্ত করে দিলো অথচ ২/১ দিন পূর্বেই স্বরাষ্ট
মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসনের ঘোষনা ছিল , এই লকডাউন চলবে , সবাইকে মানতে হবে ।ব্যবসায়ীরা সরকারের সহিত
কথা বল্ল যে, ঢাকার বাহিরে থেকে কেউ আসবে না, অথচ স্রোতের মতো আসা লোকজন বলছে তাদের এসএমএস
দেয়া হয়েছে চাকুরীতে যোগদানের । এটা কি প্রতারনা নয় ?
সরকার কি কোন ব্যবস্হা নিতে পারতনা ? যদি বলা হতো এবং ঘোষনা হতো ঢাকার বাহির থেকে শুধু মাত্র বিআরটিসি
বাসে শ্রমিকরা আসবে, তার পূর্বে স্বাস্হ্য বিধি মেনে ও টিকা নিয়ে আসতে পারবে । রাস্তা সীল থাকবে, অন্য কোন উপায়
তারা আসতে পারবে না ।

৬} সরকারের ট্যেকনিক্যাল কমিটির লোকজন যা পরামর্শ দেয় তা সরকার সবটা পালন করেনা, সেজন্য আমরাও লজ্জিত ।

৭) টিকার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছনে আছি ।
সমীক্ষা বলছে :বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৬১ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান, প্রায় ৬২ শতাংশ।
এরপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ৯ দশমিক ৩১;
ভারত ৭ দশমিক ২৪, নেপাল ৫ দশমিক ৩২ ও পাকিস্তান ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সবার পেছনে থাকা আফগানিস্তানে মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে।
জনসংখ্যার অনুপাতে এক ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বাংলাদেশ।
সার্কভুক্ত দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে :
ভুটানে, ৬৩ শতাংশ।
শ্রীলঙ্কা (৪০ দশমিক ৭২),
ভারত (২৫ দশমিক ৮১),
নেপাল (১২ দশমিক ৫৩),
পাকিস্তান (৪ দশমিক ২১),
বাংলাদেশ (৪ দশমিক ১৮)
আফগানিস্তান (১ দশমিক ৯৬)।

প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে বিগত সাত দিনে কতজনকে টিকা দেওয়া হয়েছে, তার একটি গড় হিসাবও তুলে ধরা হয়।
এতে দেখা যায়, সবচেয়ে দ্রুত টিকা দেওয়া হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। এরপরে রয়েছে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভুটান। অবশ্য ভুটানে জনসংখ্যার বড় অংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত টিকা পেয়েছে প্রায় ২ কোটি ৫৮ লাখ।
তবে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে এ বছরের শেষ নাগাদ টিকা দিতে প্রয়োজন প্রায় ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা।
ঢাকা শহরে অনেকেই রেজিষ্ট্রেশন করার পরও মেসেজ পায়না, বা অনেক দেরী হচ্ছে । এর বাস্তবতা আছে
তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে যে সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহন করেছে তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে,
অবশ্যই করোনা সংক্রমন হার নীচে চলে আসবে, এজন্য অগ্রীম ধন্যবাদ থাকল ।




...হে দুর্ভাগা জাতি সাধ্য থাকা সত্বেও আমাদের কি দুর্গতি !!!.....
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×