somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আখেরাতের ন্যায়, দুনিয়াতেও রয়েছে যুলুমের ভয়াবহ পরিণতি

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'যুলম' শব্দটি আরবী। বাংলায় এর অর্থ অত্যাচার করা, অবিচার করা, নির্যাতন করা বা সীমা অতিক্রম করা। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ দখল করা, কারো চরিত্র হনন করা, কারো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, কাউকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রমাণ করার ব্যবস্থা করা, মিথ্যা মামলা দেয়া, কাউকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা, কারো জমি দখল করা, অন্যায়ভাবে চাকরীচ্যুত করাসহ ইত্যাদি কাজ, যুলুমের অন্তর্ভুক্ত।
যুলম এমন একটি ভয়ানক বিষয় যে, আল্লাহ তা‘আলা যালেমকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। এটি একটি জঘন্য অপরাধ, মানবতাবিরোধী কাজ, গুরুতর পাপকাজ।
কোন ইমানদার ব্যক্তি, কারো উপর যুলম করতে পারে না। যুলুমের কারণে দুনিয়া এবং আখেরাতে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَقَدۡ كَذَّبُوكُم بِمَا تَقُولُونَ فَمَا تَسۡتَطِيعُونَ صَرۡفٗا وَلَا نَصۡرٗاۚ وَمَن يَظۡلِم مِّنكُمۡ نُذِقۡهُ عَذَابٗا كَبِيرٗا ١٩﴾ [الفرقان:19]
‘অতঃপর তোমরা যা বল, তারা তা মিথ্যা বলেছে। অতএব তোমরা আযাব ফেরাতে পারবে না এবং কোন সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে যুলম করবে, তাকে আমি মহা আযাব আস্বাদন করাব।’ [সূরা আল-ফুরকান-১৯]
আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন দিকে যুলুম এমনভাবে ব্যাপকতা লাভ করেছে, যা থেকে উত্তরণ হওয়া খুবই জরুরী।
যুলুমের কারণে দুনিয়াতে যেসব ভয়াবহ পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে, তাহলো:
ক) যুলুমের কারণে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিবে। এ বিপর্যয় কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির উপর আসবে না, বরং সকলেই এর ভুক্তভোগী হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٢٥﴾ [الأنفال: 25]
‘আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে, যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।’ [সূরা আনফাল -২৫]
খ) যালেমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু অপেক্ষা করছে। আল্লাহ্ বলেন,
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمۡ يُوحَ إِلَيۡهِ شَيۡءٞ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثۡلَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۗ وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّٰلِمُونَ فِي غَمَرَٰتِ ٱلۡمَوۡتِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ بَاسِطُوٓاْ أَيۡدِيهِمۡ أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَكُمُۖ ٱلۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَكُنتُمۡ عَنۡ ءَايَٰتِهِۦ تَسۡتَكۡبِرُونَ﴾ [الأنعام: 93]
‘আর যদি তুমি দেখতে, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহংকার করতে।’ [সূরা আল-আন‘আম:৯৩]
গ) যুলুমের কারণে জাতির সফলতা আসে না । আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢١﴾ [الأنعام: 21]
নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হয় না। [সূরা আন‘আম-২১]
অনুরূপভাবে আরও এসেছে,
﴿وَعَنَتِ ٱلۡوُجُوهُ لِلۡحَيِّ ٱلۡقَيُّومِۖ وَقَدۡ خَابَ مَنۡ حَمَلَ ظُلۡمٗا﴾ [طه: 111]
‘আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে, সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে, যে যু্লম বহন করবে।’ [সূরা ত্বা-হা:১১১]
ঘ) সমাজ ও রাষ্ট্রে যখন যুলুম চলতে থাকে, তখন আল্লাহর নেয়ামত সংকুচিত হয়ে যায়। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ كَثِيرٗا ١٦٠﴾ [النساء: 160]
‘সুতরাং ইয়াহূদীদের যুলমের কারণে, আমি তাদের উপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেককে, তাদের বাধা প্রদানের কারণে।’ [সূরা আন-নিসা:১৬]
ঙ) যালেমদের জন্য দুনিয়াতে বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِۦٓ أَنجَيۡنَا ٱلَّذِينَ يَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذۡنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ بِعَذَابِۢ بَ‍ِٔيسِۢ بِمَا كَانُواْ يَفۡسُقُونَ ١٦٥﴾ [الأعراف:165]
‘অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল, তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে, যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা যুলম করেছে, তাদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ, তারা পাপাচার করত।’ [সূরা আল-আ‘রাফ -১৬৫]
চ) যালিমের শক্তি যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ বলেন,
﴿ فَقُطِعَ دَابِرُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْۚ ﴾ [الأنعام:45]
‘অতএব যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল।’ [ সুরা আনাম ৪৫]


লেখক : হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×