somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী
অবসরে বই পড়তে পছন্দ করি, মুভি দেখতেও ভালো লাগে। ঘোরাঘুরিও পছন্দ তবে সেটা খুব একটা হয়ে উঠে না। বাকেট লিস্ট আছে অনেক লম্বা। হয়তো কোন একদিন সম্ভব হবে, হয়তো কোনদিন হবে না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে জানি, প্রত্যাশা করতে জানি। তাই সেটাই করে যাচ্ছি।

সোনালি ফ্রেমের দিনগুলি: মহানায়ক সমাচার (পর্ব - ১)

০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একে তো খারাপ বৈশ্বিক পরিস্থিতি তার উপর বিভিন্ন কারণে মন মেজাজও ভাল না; তাই ব্লগে আসা হয়নি অনেকদিন। লকডাউনে বাসায় বসে যা কিছু করা সম্ভব প্রায় সবই করছি শুধু ব্লগে আসা হচ্ছিল না। তাই চলে এলাম। পুরানো মুভি দেখতে ভালো লাগে অনেক। লকডাউনে তাই পুরানো দেখা মুভি আবার নতুন করে দেখলাম কতগুলো। পুরানো মুভি দেখতে বসলে উত্তম কুমারের মুভি বাদ যাবে তা তো আর হয় না। আর উত্তম কুমারের সাথে বেশিরভাগ মানুষই শুধু সুচিত্রা সেনকে দেখতে ভালবাসে। আমার কিন্তু আবার উত্তম-তনুজাও সাংঘাতিক পছন্দ। মহানায়কের মুভি নিয়ে করা প্রথম পোস্ট তাই উত্তম-তনুজার ফিল্ম নিয়েই হোক। যারা আমার মত পুরানো ফিল্মের ভক্ত লকডাউনে বসে দেখে ফেলতে পারেন এই তিনটি মুভি।

বাই দ্যা ওয়ে, উত্তম-তনুজার এই তিনটি মুভিই শুধু দেখেছি আমি। আমার জানামতে এর বাইরে এই দুজনের একসাথে আর কোন ফিল্ম নেই। তাদের দুজনের একসাথে আর কোন মুভি সম্পর্কে আপনাদের কারও জানা থাকলে প্লিজ জানাবেন। উত্তম কুমার তো প্রিয়, তনুজাও আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেত্রী। অনেকে বলে থাকেন তার বোন নূতনের অভিনয় বেশি ভালো, সেই জন্য হয়তো নূতনের মত তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান নি। এই ব্যাপারটা আমি আবার মানতে নারাজ। তনুজাকেও আমার কাছে নূতনের মত প্রতিভাবান অভিনেত্রী মনে হয়। শুধু তার ভাগ্য হয়তো নূতনের মত সুপ্রসন্ন ছিল না। আমার দৃষ্টিতে অনেক আন্ডাররেটেড একজন অভিনেত্রী তিনি।

১) রাজকুমারীঃ

এটা আমার সব থেকে প্রিয় উত্তম-তনুজার মুভি। রাজকুমারী মনজু কঠোর শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে। ইচ্ছা থাকলেও মায়ের অবাধ্য হওয়ার সাহস নেই তার। বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি, অংক, ইতিহাস, ভূগোল, আইন, পূজা অর্চনা, শরীরচর্চা, সঙ্গীত, সেলাই, গার্হস্থ্য বিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ের জন্য প্রায় ডজন দুয়েক মাস্টার রাখে আছে তার। সারা দিন ধরে বিভিন্ন ক্লাস করেই দিন কেটে যায় তার। কোন ক্লাস করতেই তার তেমন ভালো লাগে না। শুধু সেলাই ক্লাসটা তার একটু ভালো লাগে; সেটা অবশ্য সেলাইয়ের প্রতি আগ্রহ আছে সেই জন্য নয়। সে সেলাই শেখে তার এক বৌদির কাছে। এই লাবণ্য বৌদিকে তার বেশ ভালো লাগে। সেই বৌদির ভাই, নির্মলের সাথে তার পরিচয় হয় একদিন। নির্মল মনজুর মাঝে অসাধারণত্ব উপলব্ধি করে নিতান্ত একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে, রাজকুমারী হিসেবে নয়। এই ব্যাপারটা মনজুর কাছে পুরোই নতুন। সে ধীরে ধীরে পছন্দ করতে শুরু করে নির্মলকে। কিন্তু সেই অতি পুরাতন কাহিনী। বাধ সাধে রানি দেবী অর্থ্যাৎ মনজুর মা। কাহিনী এখানে শেষ হলেও কথা ছিল। মনজু তার মায়ের অমতে নির্মলকে বিয়ে করতে গেলে কাহিনী অন্য দিকে মোড় নেয়।

এই ফিল্মের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন রাহুল দেব বর্মণ। তাই স্বভাবতই অনেক ভালো ভালো গান আছে ফিল্মে। এই ফিল্মের গান গুলোর কম্পোজিশন পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন হিন্দি ফিল্মেও ব্যবহার করেছেন, যেমনটি তিনি সাধারণত করে থাকতেন। গানগুলোর হিন্দি ভার্সনগুলোর লিংক গুলোও দিয়ে দিলাম ―

i) 'আজ গুন গুন কুঞ্জে আমার'Pyaar Deewana Hota Hai (Kati Patang - 1970)
ii) 'এ কি হল'Yeh Kya Hua (Amar Prem - 1972)
iii) 'কি যে ভাবি এলোমেলো'Yeh Jawaani Hai Deewani (Jawani Diwani - 1972)
iv) 'বন্ধ দ্বারের অন্ধকারে'Aap Ke Kamre Me Koi Rehta Hai (Yaadon Ki Baaraat - 1973)
v) 'তবু বলে কেন সহসায়'Kya Janu Main Hoon Kaun (Bandhe Haath - 1973)

প্রথম গানটির বাংলা আর হিন্দি দুটো ভার্সনই খুব ভালো। বাকিগুলোর বাংলা ভার্সন গুলো বেশি ভালো লাগে আমার কাছে। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে মাঝে মাঝে। আর. ডি. বর্মণের কিছু কিছু গানের ক্ষেত্রে আবার হিন্দি ভার্সনটা ভালো লাগে বেশি। তিনি তো অনেক কম্পোজিশন দুটো ভাষাতেই ব্যবহার করেছেন।

মুক্তির তারিখ ― ১৯৭০ (কোন কোন জায়গায় ১৯৬৭ ও দেওয়া আছে)
ব্যক্তিগত রেটিং ― ১০/১০
আইএমডিবি রেটিং ― ৮.২/১০
ইউটিউব লিংক ― রাজকুমারী







২) এন্টনি ফিরিঙ্গিঃ

আঠার শতকের বিখ্যাত কবিয়াল হেনসম্যান এন্টনির বায়োপিক এটি। সর্বসাধারণের কাছে তিনি এন্টনি ফিরিঙ্গি নামে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন পর্তুগীজ কিন্তু মা বাঙালি। বাংলা গানের প্রতি ছিল তার বিপুল উৎসাহ। এই ফিল্মের কাহিনী শুরু হয় তার মাতৃবিয়োগের মাধ্যমে। এরপরে একদিন তার পরিচয় হয় শাকীলা বাইজীর সাথে। তার গান ভালো লেগে যায় এন্টনির। ধীরে ধীরে সে জানতে পারে তার নিরূপমা থেকে শাকীলা হয়ে উঠার গল্প। আর তাকে আরও ভালো লাগতে থাকে। তারা বিয়ে করে সংসারীও হয় আর কুড়ায় সবার ব্যাপক সমালোচনা। ছোট একটা গ্রামে তারা চলে যায় কিন্তু সেখানেও কেউ তাদের ভালো চোখে দেখেনি। এর ভিতর একদিন এন্টনি কবি গান শুনে, যা তার ভিতর ব্যাপক ভালো লাগার সৃষ্টি করে। তার নিজেরও ইচ্ছা করে কবিয়াল হওয়ার। কিন্তু কবি গান করা তো আর সহজ কথা নয়। তার জন্য যত সাধ্য-সাধনা প্রয়োজন তাই শুরু করে। আর এতে নিরূপমাও তাকে সব সময় সাহায্য করে গেছে যেভাবে সম্ভব।

এন্টনি ফিরিঙ্গির স্ত্রীর আসল নাম বিভিন্ন জায়গায় সৌদামিনী দেখা যায়। এই ফিল্মে নিরূপমা দেখানো হয়েছে। এন্টনির বাংলা কথাতে সাহেবী টান থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এই ফিল্মেও তাই দেখানো হয়েছে। কিন্তু গানগুলোতে সেই টান অনুপস্থিত। বলা বাহুল্য এমনটা হলে সেটা মোটেও শ্রুতিমধুর হত না। এই একটা অসঙ্গতি থাকলেও সেটা ভালোর জন্যই ছিল। আর ফিল্মের এন্ডিং ভালো লাগেনি। সত্যি সত্যি এমন ঘটনা ঘটেছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই। সত্যি হলে কোন অভিযোগ নেই কিন্তু বায়োপিকে সাধারণত কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করা হয় বেশিরভাগ সময়। তাই সত্য ঘটনাটি এমন ড্রামাটিক ছিল কিনা কেউ জানলে আমাকে একটু জানাবেন। ফিল্মে তৎকালীন সময়ের আর একজন জনপ্রিয় কবিয়াল ভোলা ময়রার সাথে এন্টনিকে কবিগানের লড়াই করতে দেখা যায়। সেই ভোলা ময়রাকে নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আর তার চরিত্রে স্বয়ং উত্তম কুমারকে অভিনয় করতে দেখা যায়।

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৫৪ সাল থেকে দেওয়া শুরু হলেও অভিনেতা অভিনেত্রীদের তখন কোন পুরস্কার দেওয়া হত না। অভিনেতাদের ১৯৬৮ সাল থেকে পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়। শ্রেষ্ঠ অভিনেতার এই ক্যাটেগরিতে প্রথম পুরস্কার উত্তম কুমার লাভ করেন যৌথভাবে এন্টনি ফিরিঙ্গি এবং চিড়িয়াখানা চলচ্চিত্রের জন্য।


মুক্তির তারিখ ― ৬ জানুয়ারি ১৯৬৭
ব্যক্তিগত রেটিং ― ৯/১০
আইএমডিবি রেটিং ― ৭.৬/১০
ইউটিউব লিংক ― এন্টনি ফিরিঙ্গি







৩) দেয়া নেয়াঃ

প্রশান্ত বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। প্রশান্তর বাবা বি কে রায় লক্ষ্ণৌ এর একজন বড় শিল্পপতি। প্রশান্তর অফিসিয়াল কাজকর্মে কোন মন নেই দেখে তার বাবা তার উপর খুব অখুশী। প্রশান্ত গান করতে ভালবাসে, অভিজিৎ চৌধুরী ছদ্মনামে সে রেডিওতে গান গেয়ে থাকে। এই গান নিয়ে এত বাড়াবাড়ি দেখে প্রশান্তর বাবার সাথে তার একদিন কথা কাটাকাটি হয় আর ফলশ্রুতিতে সে বাড়ি ছেড়ে তার বন্ধু অসীমের কাছে কলকাতায় চলে যায়। কলকাতায় তার এমনিতেও গানের কাজ থাকে অবশ্য। একদিন একজন ভদ্রলোকের ড্রাইভার প্রশান্তকে মেকানিক মনে করে তাকে গাড়ি ঠিক করার জন্য অনুরোধ করে। সেই ভদ্রলোক খুশি হয়ে প্রশান্তকে চাকুরী অফার করে ফেলে। প্রশান্ত চাকুরীটা নেয় আর এখানে সে হৃদয়হরণ ছদ্মনাম ব্যবহার করে। সেই ভদ্রলোকের ভাগ্নি শুচি আবার অভিজিৎ চৌধুরীর গানের খুব ভক্ত কিন্তু হৃদয়হরণ লোকটাকে তার আবার বিশেষ পছন্দ নয়। এইভাবে কাহিনী এগিয়ে চলে।

খুব সাধারণ একটি কাহিনীকে এত সুন্দরভাবে রূপদান করা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে সেটা যারা আগে দেখেছেন তারা জানেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক পছন্দের এই ফিল্মটি। আসলে উত্তম-তনুজার এই তিনটি ফিল্মই আমার খুব পছন্দের। এগুলো দেখলে আফসোসও কাজ করে কিছুটা এই ভেবে যে এই দুইজনের একসাথে আর কোন ফিল্ম নেই।

মুক্তির তারিখ ― ১৯৬৩
ব্যক্তিগত রেটিং ― ১০/১০
আইএমডিবি রেটিং ― ৮.১/১০
ইউটিউব লিংক ― দেয়া নেয়া







“There will always be those who love old movies. I meet teenagers who are astonishingly well-informed about the classics. But you are right that many moviegoers and video viewers say they do not “like” black and white films. In my opinion, they are cutting themselves off from much of the mystery and beauty of the movies." ― Roger Ebert
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:১২
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×