_______________________________________উড়াল হাওয়া
মর্মদাহ
নীরবে দাঁড়ালাম, চোখ ঘুলিয়ে চারপাশ দেখে সতর্কতায় তার চোখের ঐশ্বর্য খুলে ফেললাম; চোখের অবস্থান ঠিক কোথায় শেষ হবে কে জানে! চারচোখে অপরাধবোধ জমতে জমতে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, চোখের জলও হাসে, আমি কাঁদি না মর্মদাহে...
উড়াল হাওয়া
রাত বাড়লেই রিসিভারের পাশে, ধীর পায়ে দাঁড়াই। শ্বাসের শব্দও গুনে গুনে ছাড়ি। নাম্বার ডায়াল করার আগে স্থির করে রাখি, আজ কথা হলে কুশলাদি ছাড়া আর কিছুই বলবো না। তার কথা শুনবো। অপেক্ষায় থাকবো, দেখবো সে কি বলে…। রাতে কথা হয়, আলাপে-প্রলাপে অনেক প্রসঙ্গ চলে আসে; মাঝে মাঝে কথা না-বলে আমরা চুপচাপ থাকি; চুপিচুপি ভদ্রতা জপি… কথা হয় কবিতার।কথা হয় দিনের ব্যস্ততা, কথা হয়… এসব আলোচনা করতে-করতে নিজের ভেতর জমা মুগ্ধতাকে হারাই, বলার সুযোগ ফাঁকি দিচ্ছি প্রতিদিন! সে কি প্রকাশ করবে না? বুকের ভেতর ছটফট করে যে উড়াল হাওয়া
ফের কথা হয়, দিনের পথ ধরে বছরও ফুরায়; দেখা হয় না। দেখা না-হওয়াই ভালো অন্ততঃ আরো দুটি বছর। আমি লক্ষ্য রাখি অপেক্ষা…। আজ কথা শেষ হয়নি— হলে ডাক্তারের কাছে রওয়ানা…
দেশলাই
দু'হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া
কিছুই করিনি আজ
বন্ধ দরজার লকটাও খুলিনি—
দরজা খুললেই বিনা বাধায় ঢুকে পড়বে
শীতল হাওয়া
আজ গুটিয়ে বসে থাকা, না-বিশ্রামের কথা...
তাও জানে না সিগ্রেট ও ছাই
এপকেট ওপকেট খুঁজি কোথায় লুকালো দেশলাই
ফেরা
একটাই পথ ছিল ফেরার, আমি হাঁটছি ত্বরাত্বরি— এভাবে ফিরে যাওয়া…! দুপুর খাড়া হয়ে থাকবে তো? আমার পথ অজানা; পায়ের নিচে পাথর; পাথর ভরে আমার দাঁড়িয়ে থাকা। তুমি গান গাও, আমি মুগ্ধ হই; আর যা যা বলার নিচু স্বরে বলো— আমি চুপচাপ থাকি; ভেঙে পড়ুক বুকের গোপন অহঙ্কার… আমি জড়িয়ে থাকি গানের পাশাপাশি
আশ্চর্য লাগে
ইচ্ছে করে তার কাছে যাই না। পাশে দাঁড়াতে একটাই ভয়; যদি ভাবমূর্তির সঙ্গে মিশে যায় অবিশ্বাসের ডানা। নিরুপায় ছিলাম না বলে চায়ের সঙ্গে পান করিনি কারো কল্পনা...। একা থাকতে বেশি পছন্দ, তাই দেয়াল হেলে দাঁড়িয়েছি; পা থেকে ঝরে পড়ছে পথের সৌহার্দ্য। কিভাবে যে উনত্রিশ পেরুল! ত্রিশে এসে আশ্চর্য লাগে; লজ্জায় কেনো যে কাউকে মুখ ফুটে বলিনি ভালোবাসি...
ইচ্ছে করে তার পাশে যাই না, সুযোগ পেলেও ওরনায় গেঁথে দেই না দু'চারটি চুম্বনের দাগ। বলতেও পারি না, আমার ভালোবাসা যে তোমাকে ছুঁতে চায়, পূর্ণশ্রদ্ধায়
দূরত্ব নির্ণয়
যেহেতু তুমিও সরে যাচ্ছো দূরে; আংশিক দূরত্বে
আমাকেও দূরে রাখা ভালো অর্ধেক উত্তরাধিকারে
দূরত্ব নির্ণয় হলেই সম্পর্কের ঘনত্ব বাড়ে; আর—
ইচ্ছা বুঝাতে অনন্তঃ দূরে থাকো; হৃদানুভব চিরে
লজ্জা ঠেলে আসা; খোলা ফিতার জামা যেন জটিল অংক
সব স্মৃতি বয়সের মুখোমুখি; আমাকে পরাও পুরনোসর্ম্পক
আমি পড়ে আছি পাহারায়; গোপন বাষ্পের ভেতর
মন খারাপ থাকা; ছুঁড়ে দাও শূন্যতা; বন্ধন মায়ার
হারানো সিম্ফনী
ঘর থেকে বেরুবার আগে দরজায় দাঁড়াই। মায়ের শেখানো দোয়া পাঠ করতে করতে প্রথম ডান পা বাড়াই। দরজার অহংকার দেখি! দরজার অহংকার দেখা, সে-ও এক খেলা।...
সামনে পিঁপড়া হেঁটে যাওয়া দেখতে-দেখতে মনে পড়ে এলিয়ট আর আঁজলার খেলে যাওয়া জলের কথা। 'এলিয়ট বলেছেন মধ্যবয়সে পৌঁছে কবিদের সামনে তিনটি রাস্তা খোলা থাকে- ১. লেখা বন্ধ করা ২. পুরনো লেখার আঙ্গিকগত উৎকর্ষসাধন ৩. সম্পূর্ণ নতুন ভাবে লেখা।' যদি ষাট বছর বাঁচি, এখন আমি মধ্যবয়সের ভেতর হাঁটছি... তবে কি আমার লেখা বন্ধ করা দরকার? নাকি দরকার নতুন করে শুরু করা?...
মধ্যবয়স! তারচে' ভালো কবিতা ছেড়ে দিয়ে শচীনকর্তার গান শোনা, ঋত্বিকের ছবি দেখা, জীবনানন্দের 'অন্ধকার' কবিতা ভেতর নিজেকে খোঁজা...
কৌতূহলী শব্দ
ধরিনি টেনে হাঁটছে যারা, শুধু গুনে রাখছি গোড়ালি শব্দ, জোড়-পা...। বিবশ চোখে বাড়ছে আগ্রহ, কতদূর যাবে বুঝা যাচ্ছে না… নিঃশব্দে বাড়ছে বিভেদ, অসহ্যযন্ত্রণা। জানার আগ্রহ কিভাবে কমাই? ত্রিমুখি রাস্তা।… কৌতূহলী মানুষ পাশাপাশি দাঁড়ানো, দাঁড়ানো যাত্রী ছাউনি, বসার জায়গা। যে কোনো জায়গায় বসে থাকতে বাধা নেই আমার। শুধু ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছটফট ভালো লাগে না। একমাত্র তোকে-ই বলি গোপনে কথা— যারা হাঁটছে তাদের হাঁটার ফাঁকফোকর গুলো যে আমাদেরও চেনা।… তোর কি মনে হয়? পথ টেনে ধরবে, কারো পা...
যারা হাঁটছে ধরিনি টেনে, ভালো না-লাগলেও হাঁটবে অনন্তকাল ধরে, প্রত্যেক মানুষ তাই করবে, করে— একটাই জীবন চলছে, চলবে যেমন খুশি নড়েচড়ে; জানতে চাই মৃত্যুর পরও কি এভাবে চলবে?...
সহনশীলতা
আর কিছুই দেখার ছিল না তাই— তোমার ছায়াভরে খাড়া হতে হতে কখন যে ছায়াও পড়ে গেল ঘাসের উপর! আর ঘাস থেকে ওঠে এলো দ্বিধালগ্ন-সহনশীলতা। চাপাকলি, তোমাকে বলা যাবে না কিছুই, শবস্পৃহায় কাঁপছে অধিকার, স্মৃতিকাতরতা আমার। দশ ইয়ার্ড দূরে এরূপ দর্শনে বন্ধ রাখি চোখ, নিজমুখ, গোপন বেদনা। শ্বেতাঙ্গিনী, কেনো খাড়া স্তনে ফোটাও সজারুকাঁটা!...
চাপাকলি, কিছুই বলবো না। জানালার পাশে নয়ান খুলে আলাদা করো দরদ; পাঠ শেষে নিয়ে নাও অধিকার… ঠোঁটে লাবণ্য ছড়াও সময়ের ললিপপ! আকাঙক্ষামাত্র জাগবে কি রাত্রিপোশাক?
নিয়তিদশা
তার চাপাকথা শুনি, আর ভাবি— কি করে 'যেচে চিরকাল' বোবা হয় নদী ও জল। নদীগর্ভে বসে নিদ্রাপর্ব কাটে কি কাটে না; সে দ্বন্দ্ব আমার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে বোবাজলকথা। দোষ একটাই ছিল, জেনেছি পরে। দুঃখ পাবে জেনে কাউকে বলিনি। তারপর চাপাকথা। একটানা হাসি… বলতে সবই মিছে ভণিতা। সময়ের আবেগ, দুর্বলতা...
দোষ একটাই ছিল; তাও বলা যাবে না অসহায়। একদিন গা থেকে ঝরে পড়বে সোনালি আশা, জীবনের সৌকুমার্য… এমনি আমি, এমনি আমার নিয়তিদশা। শুধরানো গেল না
একশোটি দিনের ঋণ
ইচ্ছে করে জেগে উঠি পুর্নবার; গলা চেঁচিয়ে বলি আমি আগেই জানতাম হাওয়াভরে তুমি দাঁড়াতে শিখনি, নিয়ম বাঁধতে দাঁড়াতে পারবে না আর।কিন্তু তোমার আগ্রহ কম! আগ্রহ, আমিও যদি এরকম হই... দৃশ্যহত্যা দেখতে দাঁড়াই, তার আগে দু'শো-এক সেকেণ্ডের আত্নহত্যা দেখে বাড়ি ফিরি; সেকেণ্ডহত্যার ডরে তুমি ঘামো, ভয়ে দু'হাত ঘষে শরীরে মিশাও; নাক ঢলে অনুভব করো-
সেকেণ্ড-মিনিট গুনে সন্ধ্যা সাতটায় মনটা কত কিছুই না ভাবে। কিছু আমিও ভাবতাম... আগ্রহ, আমাকে বহন করো না ভবঘোরে! কড়ানাড়া বুকে, আমি ধরে রাখতে পারছি না একশোটি দিনের ঋণ
সে
জলের গন্ধ ভিজছে না কিছুই
শুধু জলের গন্ধে বেড়ে যাচ্ছে—
দেহের দরদাম
জলেরও কি চেকআপ দরকার?
চোখের পাশে বরফ গলে জল হয়
আশার চোখ তবু বিজ্ঞান বুঝে না
চোখের পাতা বুঝে না নির্দেশনা
গান গাই, ডুবে যাই। আমাকে যে
ফিরতে হবে আরো, আরো গভীরে
এই ভেবে কোথাও যাওয়া হয় না
যাকে কখনো দেখিনি সেও যদি পাঠায়
গোপন সান্ত্বনা…
বৃত্ত
চোখের আকর্ষন সবচে' বেশি! হাসির শব্দেও লোভ আসে; হাসিচোখ দেখতে আমারও ভালো লাগে; আমিবৃন্দ জানেন অবলোকনের ব্যাখ্যাও অনেক রকম মিলে। অন্য-আমি আকর্ষনবৃত্তে খাড়া হতে দেরি হয়ে গেল! ঘোর-আকর্ষনে দণ্ডায়মান কেবল প্রিয় এতো নাম। যে নামে সর্বদা মেলামেশা; নাবালক সমান। কোন নামে কাকে ডাকি, কে কি ভাববে? কোন নামটি জপার বাকি...
চোখের আকর্ষনে আমার জীবনদর্শন মরে গেছে
তোমার ভেজাচুল খুললে যে মৃদু ঘ্রাণ পাই
সে ঘ্রাণ কি সতেজ ফুলে মিলে?...
বন্ধত্ব
কৈশোর বয়সে আমাদের গাঢ় বন্ধুত্ব ছিল, আছে, থাকবে শেষ দিন পর্যন্ত।... সারাক্ষণ আমাদের ঝগড়া লেগেই থাকতো। দিনে অন্ততঃ একবার সাক্ষাত হতো, রিকশার হুড ফেলে ঘুরার শখ ছিল তোর। আমার বিব্রত লাগত। দেখতে দেখতে বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো, মাতৃত্ব পেলে; সন্তানের নাম মিলিয়ে রাখলে! বন্ধুত্বে আমরা কি হলাম পরবাসী? বন্ধুত্ব প্রেম নয়, ভালোলাগা-ভালোবাসাও ভিন্ন... তাই আমরা বিয়ে করিনি।
আলো ও অন্ধকারের দিকেই হাঁটছি আর ভাবছি বন্ধুত্ব আছে, থাকবে...
বাড়াও হাত, হারাই জাতপাত
সীমান্ত শেষ হবার আগেই আড়াল করেছো গুপ্তমোহ
আমি এতে চোখ খুলে রাখি, ডাক দিয়ে বলি—
গোপনে কে-গো জমালে স্মৃতি, কে-গো দিলে ভাগ
স্বপ্নসঞ্চয়...
দুষ্টচোখে এতো বুঝা-পড়া, আড়চোখে কেবলি ছল
এতো ঝগড়া… সলাজে এরকম বললেই কী হবে!
সময় দাও; আমি ভাবি; ভেবেচিন্তে বলি— দেখি
কোথায় লুকানো গোপনসুর; এত সহজ কথা; হৃদয়াবেগ
সীমান্ত শেষ হবার নয়; আজন্ম র’বে শুশ্রূষা ও দাগ
যুগলচোখে অপেক্ষা ওফ্! আমি শুনতে চাই না অপারগ…
পোষা কুকুর
পাশের ঘরের শাদা কুকুরটির নাম টম। যতক্ষণ ঘরে থাকি, কানে শব্দ আসে, বৃদ্ধামহিলা টমি-টমি বলে ডাকে। বৃদ্ধার ডাক শুনে টমিও উৎসাহিত হয়; পিছনে-পিছনে লেজ উঁচিয়ে হাঁটে; কিংবা দৌড়ায়। হঠাৎ টমির শব্দ থেমে যায়; সে কি খাওয়ার বায়না ধরে? রাগ করে? না-কি কাছাকাছি বসে? রাতদীর্ঘ হলে টমির টম-টম শব্দ আর কানে বাজে না। এক বিছানায় দু’জন ঘুমিয়ে পড়ে।
বাড়িতে একটি পোষা কুকুর ছিল। নাম কি ছিল তার মনে নেই। হয়ত নাম দেইনি। কুকুরটির জন্য মায়ের বকুনি সহ্য করেছি। পোষা কুকুরটি আজো কি আগের মতো লেজ উঁচিয়ে হাঁটে? অন্ধকার তাড়া করে সারা বাড়ি পাহারা দেয়? অচেনা পায়ের আওয়াজ শুনলেই ঘেউ-ঘেউ করে? অচেনা কুকুর দেখলে কি তাড়ায়-দৌড়ায়? চোখে গুলিয়ে কি চারদিকে তাকায়? জানি না; শুধু এটুকু জানি—
দুঃখীরাত্রি জেগে গেলে পাখির কলরোল আর আত্নবিশ্বাসে
হাওয়াভোরে পোষা কুকুরটি ঘুমিয়ে পড়ে বারান্দার পাশে
চারিত্রিক স্বভাব
পায়ের অল্প-অল্প চাপে নিজেকে পাহারায় বসাই
থুতনি চেপে ধরি,আহ্লাদি চোখ অন্ধের ভান ধরে-
কেবলি রহস্য-নারী!...
আমার চেতনা স্পর্শপ্রবণ খাড়া হতে চায়
আমার চেতনা চেপে ধরছে কি মগ্নসময়?
তার দৃষ্টিসায়ক চেপে ধরে বুক; কে কাকে ছুঁবে!
নির্লজ্জ সান্ত্বনা দ্বিতীয় এই আমি; চারিত্রিক স্বভাবে
সন্ন্যাস
আমাকে আশা দিতে কত্ত ভণিতা করো
দেহে সন্ন্যাসী হও, হও দৃষ্টি ও আঘাত
আমি বলছি কথা, তুমি বলছো অশ্রুগীত
এপথ ওপথ বেয়ে ক্ষুদ্র আমি জলের গণিত
রাত্রি দীর্ঘ হলে ধরে রাখি দয়া
কে যেনো তুলে রাখছে দীর্ঘ পরিমাপ... রাতে
আমার না-ঘুমোলেও চলে, শুধু এককাপ চা
নিরলে আমাকে জাগিয়ে রাখে দেহবীজ-মনোবীজ
দু'চোখের অপরাধ
পোড়াহাড়
অগ্নিপাত্রে জমাও পোড়াহাড়! দেহ লুকোবার জলসহ চতুর অন্ধকার। প্রথা ভাঙলেই দ্বিধাপথ খোলা আকাশে খেলে, খেলে দু’চারটি কালোদাগ। তুমি সম্পর্কে দাঁড়াও, সঙ্গে আমাকেও নাও, শব্দ করো না- বুঝাপড়া, প্রথা ভেঙো না আঘাত। আমি অনর্গল কথা বলি, তুমি কান ভরে শুনো! বলো— আমি শুনছি, তুমি বলে যাও…। তোমার কি ইচ্ছে করে না? বেশি কথা বলার…
২.
আমার দু’চোখে এতো বুঝাপড়া! এতো সময়ের পাঠ! এতোসব বুঝি না আমি, তুমি মন খুলে ধরো দেখবে আমার অপ্রস্তুতি…। অপ্রস্তুতি চোখে না-জড়ালেই ফিরে আসে স্মৃতি। রোদ দেখি না, ছায়া দেখি না, মেঘের গর্জন বাজে, আরো বাজে বুকের প্রীতি। চোখ বন্ধ করে বসি; হাত বাড়াও শ্রী… ফোটাও মুখভরা হাসি। হাসি যদি শিল্পওই হয়, তবে— আমি দাঁড়িয়ে রবো, হবো তার চোখে ত্রিকালদর্শী
সর্বপ্রভা
সর্বপ্রভা, তুমি পারো প্রাবল্য দেখে মনোঘোড়া ছুঁতে
ভয় এমন দীর্ঘ, আমি যার ভয়ে লুকাই প্রকাশস্পৃহা
কিভাবে পারো তুমি, এ-ঘোরে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে!
স্বাভাবিক আচরণ, নিরুদ্বেগ কথাবার্তা; এতো দীর্ঘস্নেহ…
কিভাবে পারো তুমি, কিভাবে বশ করো মনমর্ম যৈবতী
এই ভয়ে আমি কাঁপি, সমপর্ণ কতদূর নিবে; কে জানে?...
চতুবিদ্যা শিখিনি, কিছুই পারি না— তাই, অন্ধকার আমার
বুকে হাত রেখে ঘুমায়; চোখ রাঙিয়ে নীরবতাও শাসায়!
অন্ধকারের গর্ভে আমারওতো জন্ম; অন্ধকার থেকে ওঠে
কেনো যে বাড়ে এতো রক্তপিপাসা। যাকে পোড়ালে দৃষ্টিও
ক্রোধে ভরে ওঠে… কথার ফেরে আজকাল লজ্জাও করে—
আমি কি দিনদিন অপরাধী হলাম, কারো লাবণ্য চোখে?
কখনও দেখিনি যাকে, দাঁড়াইনি পাশাপাশি নরম করতল ছুঁয়ে
অগোচরে আমি তারে বড় করে দেখি, নিকটস্থ মনের ভাষায়
আজ আপত্তি তুলেছে ‘দেহজাগা নারী’ যে বিষ ঠোঁটে নাড়ায়
আমি কি নষ্ট হয়ে গেছি ছায়ায়? জানে না কিছুই ‘দুঃখ ও জরা’
সর্বপ্রভা, তুমি পারো, পারো তুমি এভাবেই নিজেকে গুছিয়ে রাখতে!
তুমি যতই নিজেকে গুটিয়ে রাখো, সরে দাঁড়াও, আমার মুগ্ধতা
দিনাতিদিন জাগবে পৃথক আত্নায়; প্রীতিপান আর সন্তরণ সাজে
ত্রিশকাল! তাতে কি? আমি নষ্ট হবো না, সেই পণে ছাই ফোটেছে
এখন তার জন্য কি বে-পথি হবো? ভ্রষ্ট হলাম তবে এই পথ ধরে…
সর্বপ্রভা, তুমি পারো প্রাবল্য দেখে মনোঘোড়া ছুঁতে
কিভাবে পারো তুমি, এ-ঘোরে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে!
পাপ জেনেও স্পর্শ করি
আক্ষেপ ছিল, আছে, থাকবে— তার অপেক্ষায় আমিও দাঁড়াই প্রবল সন্দেহে। অন্তরঙ্গ, আমি তো ছায়াশব্দ ঠেলে যাবো। ভেতর বাহির যা পাও, কেটে-ছেঁটে নাও। পাপ জেনেও স্পর্শ করি। ভরসা পাই। চিন্তার ভেতর একাকী পুড়ি...। আমার মুগ্ধতা ফুলের পাপড়ি। আমার দূর্বলতা পাতা ও কুঁড়ি। আরো- আরো যত এখনও জঙ্গলে ফোটেনি
তর্সু কথা হল একবার। সারাদিন স্টাচুর মতো দাঁড়িয়ে আশে-পাশে কিছু বলিনি। দৃষ্টিসন্তরণ সৌন্দর্য দেখে ছাড় দেয়নি। বয়ঃসন্ধি, আক্ষেপ বড় অপ্রাসঙ্গিক লাগে। সন্তুষ্টি জয়ে এ-হৃদয়ে পুষিয়ে নাওনি। বুকের ভেতর দোলাও কেবল হাতছানি
অপেক্ষা ছিল, আছে, থাকবে— কেবল অপেক্ষার শব্দ বাজে কানে। সুখের রঙ দর্পণেও ধরে রাখা যায়। দুঃখের একটাই রঙ যাকে ছোঁয়া যায়
নিবিড় সমপর্ণ
এইটুকু সত্য স্থির আমি... স্থির চোখ, মুখ আর কান
চিরকাল মানুষের স্বার্থপরতা এক স্থানে স্থির হয় না
চিরকাল মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক দীর্ঘ হয় না
চিরকাল স্থির থাকে সৌন্দর্য পুজো আর যৌনাকর্ষন
চিরকাল মনোবল স্থির থাকে; যৌবন থাকে না
সকল সন্তুষ্টি হও নিবিড়; হও স্থির ও সমপর্ণ...
অতি সহজে বলতো পারো নিরূপায়
ঘুমহীন শেষরাত চোখের পাশে একা পায়চারি করে! অবশিষ্ট থাকে ভরা শব্দতরঙ্গ টান টান গভীরতা... শেষচুমু পর্যন্ত পোড়াই; সিগ্রেট ও ছাই। রাতে ভাঙা-ভাঙা ঘুম নিজ ছায়ায় হাঁটে; হাঁটে জানালায়, পর্দায়। আমি জাগি চুপিচুপি। মাথার উপর ঝুলে না মশারি। রাতে বিরহ সুন্দর! আরো সুন্দর হাওয়াভোর। তার শরীর। রোমাঞ্চরাত তুমি একা হও; হও অবশিষ্ট নজর...
ঘুমহীন রাতে নিজস্ব অধিকার অগ্রাহ্য করেছো পায়ের তলায়
অতিসহজে বলতো পারো নিরূপায়; নীরব শৃঙ্খল একা দাঁড়ায়
নিঃশ্বাস ট্যানেলে ঘুরে
আমার দৃষ্টি যেদিকে ঘুরে
সেদিকে উড়ে তোদের ছায়া!
নিঃশ্বাস আয়েসে ট্যানেলে ঘুরে
আমি তার কাছে একা যাবো কী?
—মায়া…
যদি স্থির রাখো বয়স; লুব্ধ দরকার
সৌন্দর্য শিকারের ডরে কাঁপছে হাড়
ভয় জন্মাবে দখল, পাঁচ আঙুলের উপর
ও-ছল, ও-করতল, উড়াতে পারবে কি?
মাটি আর জল
আমি না-হয় হবো হাতখরছ; হারানো দশ আঙুল
দৃষ্টি যেদিকেই ঘুরে; দেখি আলো ও আঁধার
দৃষ্টি যেদিকেই হাঁটে প্রস্তুত লিলাজ পাথর!
সহাবস্থান
তাহলে আমি কি নির্বোধ র’বো, বিষণ্ণ আশায়
মান-কুলমানের ডরে কিছুই বলি না— চাপা…
তোমার সহাবস্থান দেখে অগোচরে শ্বাস টেনে ধরি
তুমি বাজো… বাজাও জলচুম্বন; পিপাসাগান
অপূর্ণ পান শেষে পূর্ণ হও, হে সময়, হে সহাবস্থান
বর্তমান কঠিন, অতীত-ভবিষ্যত সর্বদা পতনকাল
___________________
রচনা : ০১-১৫ই মে ২০১০
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১০ ভোর ৪:০১