somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সৈয়দ মেহেদী হাসান
পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

দোষ ব্যাটা ওই রবীন্দ্রনাথের

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুটি প্রসঙ্গ মুখোমুখি। প্রথমত রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণা দ্বিতীয়ত গোপালভাড়ের গল্প। রবীন্দ্রনাথ তার গানে বলেছেন, আমরা সবাই রাজা আমাদের এ রাজার রাজত্বে। সত্যিকার অর্থে আমরা এখন সবাই-ই রাজা। কেউ জেনে আবার কেউ অবচেতনে। রাজা হতে ক্ষতিতো নেই কোন সুতরাং রবিবানীর সাথে তর্ক আত্তিকরার মনোবাসনাও নাই আমার। তবে অল্পোতেই রাজা বনে গিয়ে দেশে যে যখন আর কোন প্রজাসাধারণ নেই বিধায় ঘোষিত না হলেও নিমরাজি ভাবে এক ধরণের দানবিক আক্রমন হর-হামেশাই শান্ত জনপদকে অশান্ত হয়েছে। বাংলা প্রবাদ, অতি সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট। আমরা একথা জীবনে দু’একবার হলেও উপদেশ দিতে গিয়ে টেনে আনিনি তেমনটা দুবার। তবে আদৌ কি এই সন্ন্যাসীর আধিক্য নিয়ে প্রয়োগিক স্থান ও কুফল ভেবেছি? ভাবিনি। কয়েকদিন আগের কথা।

বরিশাল নগরীর বিণয়কাঠীতে আড়াইমাস বয়সী এক বাছুড়ের পায়ের রগ কেটে দিলো ষাট বছরের এক বৃদ্ধ। দেশীয় সামাজিক সাংস্কৃতিতে এটাকে সংবাদপত্রে প্রকাশযোগ্য সংবাদ বলা যায়না। কারন যে হারে আবর্জনার মত মানুষের মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে তাতে সামান্য বাছুরের পায়ের রগ কর্তন নিতান্ত হাস্যকর বিষয়। কৌতুহল বসে দুপুরের রোদ মাধায় নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রেক্ষাপট পেলাম ভিন্ন। বাছুরের রগ কর্তন হল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। কিছুদিন পূর্বে দলীয় প্রতিকে নির্বাচনে এই দ্বন্দ্বরত দুই পরিবারের মধ্যে একজন ছিল আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক অন্যজন ছিল আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। নির্বাচনে জয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী। এই আক্ষেপে জয়ীর সমর্থককে কিছু বলতে না পেরে তার পোষ্য অবুঝ বাছুরের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। মনোবৃত্তি কতটা নিচে নেমে পরলে মানুষ এমন প্রতিশোধ নিতে পারে তা আমার জ্ঞানে আসেনা। এ ঘট্নায় এটুকু ধরে নিতে পারি উভয় প্রার্থীর অবস্থা চিল তারা জয়ী হবেন। সঙ্গত এটাই। কিন্তু পরাজিত হলে সেই ফলাফল মেনে নেবার মানসিকতার নেতা ‘টপ টু বটম’ দেশীয় রাজনীতিতে নেই। ফলে হানাহানি ঘোরতর বাড়ছে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। হতবাক হতে হয় যখন দেখি হত্যা মামলার মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রাপ্ত টপটেররকে ক্ষমতাবলে সাজা মওকুফ করেদেন রাষ্ট্রপতি। ‘বেওয়ারিশদের চিকিৎসা হয় না শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে’। এই শিরোনামে একটি সংবাদ বেড়িয়েছিল স্থানীয় দৈনিকে। শিরোনামের বক্তব্যটি একজন ডাক্তারের। ঘটেছিলও তাই।


সকাল সোয়া ৭ টায় জনৈক যুবতীকে অচেতন অবস্থায় কে বা কারা বেডে ফেলে রেখে গেছে তা জানে না কেউ। সকাল গড়িয়ে দুপুর এবং বিকেল গড়িয়ে রাত। কোন ডাক্তার এলোনা সেই পরে থাকা রোগীর শুশ্রষায়। এক পর্যায়ে অন্য রোগীর স্বজনরা এগিয়ে এসে ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করলে একজন ডাক্তার মুখের উপর জানিয়ে দেয় বেওয়ারিশদের চিকিৎসা হয়না শেবাচিমে। কি সাংঘাতিক ! সংবাদটি প্রকাশ পাবার পর প্রতিবেদক যোগাযোগ করে হাসপাতাল পরিচালকের সাথে। অনেকটা অভিযোগের সাথেই জানিয়েছিলেন। ভদ্রলোক পরিচালক এই অভিযোগকে বিনোদন হিসেবেই কাউন্ট করলেন। মানবিক অবক্ষয়ের সেই ডাক্তারকে হুশিয়ারি দিলেন তো না-ই উল্টো সেই সাংবাদিককে নাকি ভৎর্সনা দিয়েছিলেন অর্থাৎ বিচার চাইবেন কার কাছে- তেমন মানুষ নেই। এখানে সবাই বিচারক।


ফলত যে যেমনটি করছি তেমনই সুসার। সময়টা দেখে বলতে হয় ‘অবক্ষয়ের রেনেসা’। এই যে দীর্ঘদিন ধরে সাগর রুনি হত্যা, তনু হত্যা সহ বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা নিয়ে দেশ উত্তাল হল, সব খানে একটাই চাওয়া- ন্যায্য বিচারের জন্য। আমার প্রশ্ন হল- প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি ঈশ্বরের সমতূল্য যে ন্যায্য অধিকার পেতে হলেও হৈ- হৈ করে দাবী তুলতে হবে- যে হে খোদা ধানে বরকত দাও- ঘরে শান্তি দাও- জীবনের নিরাপত্তা দাও। বাংলাদেশ যেহেতু একটি সংবিধানের আলোকে পরিচালিত হবার কথা বা হচ্ছে; সুতরাং যে কোন অপরাধীর বিচারতো সাংবিধানিক ভাবেই বাস্তবায়ন হবার কথা। তার জন্য রাজপথে বিক্ষোভ-মানববন্ধন-অনশন করতে হবে কেন ? যদি এসব করতেই হচ্ছে তাহলে এটা স্পষ্ট ঃ সংবিধান বলতে বাংলাদেশে কোন কিছু নেই। আছে সঙবিধান। আছে দলীয় ও বিরোধী দলীয় মনোভাব। যে কারণে বাংলাদেশ বিচার প্রাপ্তি এখন অলিক ব্যাপার।


বরিশালে আলোচিত জিলা স্কুল ছাত্র ইনান হত্যা মামলা বিক্রি হয়ে গেছে। মানবাধিকার কর্মী পাপিয়া হত্যার বিচার হয়না বিএনপি নেতা সরোয়ারের কারনে। ৫ বছরে ৩৫ জন গুম হয়ে গেছে নগরী থেকে। মাঠের রাজনীতি নয় মৎস আড়ৎদার সমিতির নেতা নিরব হোসেন টুটুলের পায়ে গুলি করে আলোচনায় এলো হাসানাত পুত্র, এমন দৃষ্টান্ত বিরল আলোচ্য নয়। অর্থাৎ প্রত্যেক ঘটনা ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ায় সবকিছু অমিমাংশিত কোন্দল দানা বাধে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন ?

যুদ্ধোত্তর একটি প্রজন্ম নষ্ট বা বেহাত হয়ে যায়। তেমনি কি আরও একটি প্রজন্ম ধ্বংসের আগুনে ঝাপদিতে দাড়িয়ে আছে জলন্ত তাফালের পাশে ? তাহলে কোথায় আমাদের স্বাধীনতা ?

একটা গল্প দিয়ে শেষ করা যাক। গোপালভার একদিন খুব সকালে রাজ দরবারে রওয়ানা দিলো। রাস্তার পাশেই ছিল বস্তা খোলা পায়খানার হাউজ বা স্টোর রুম। গোপালভাড়তো এমনিতেই মোটা এবং হেলেদুলে চলেন। স্বভাব সূলভ তাই চলতে গিয়ে পরে গেলেন সেই খোলা হাউজে। একেবারে মল-মূত্রে স্নন সেরে উঠলেন। মুহুর্তে এই সংবাদ পৌছালো রাজার কানে। রাজাতো আনন্দে আত্মহারা। আজ গোপালভাড়কে লজ্জা দিতে পারবে সেই আনন্দে লাফাতে লাফাতে গিয়ে রাজা পড়লেন মধুর খোলা ট্যাংকির মধ্যে। তিনিও স্নন সেরে উঠলেন।

গোপালভাড়ের দেহে জবজব করছে মল-মূত্র; আর রাজার শরীরে মিষ্টি মধু। পথিমধ্যে দেখা হলো দুজনার। রাজাতো অট্টহাসিতে প্রায় আটখানা বললো গোপালভাড় এই ভিজে শরীরে মল-মূত্র মেখে তুমি রাজদরবারে যেতে পারবেনা। রাজ্যময় ছিঃ ছিঃ করবে। প্রত্যুত্তরে গোপালভাড় মৃদু হেসে বললো আপনার শরীরও তো ভিজা। যদিও মধুতে ভেজা তবুও আপনি কি করে রাজদরবারে যাবেন ? কথা শুনে রাজা চিন্তায় পরে গেল। শেষে গোপালভাড়কে বললো তুমিতো সারা জীবনই বুদ্ধি দিয়ে গেছ। আজ তোমার এই লজ্জার দিনে আমাকে শেষ বুদ্ধি দিয়ে দাও।

গোপলভাড় কিছুটা সময় চিন্তা করলো। অতঃপর বললো একটা উপায় আছে মহারাজ। শুনেতো রাজার মুখে হাসি ফোটে। গোপালভাড় বললো আপনার শরীর শুকাতে তাৎক্ষনিক একটা বুদ্ধি আছে। আসুন, আপনার শরীর আমি চেটে পরিস্কার করে দেই আর আপনি আমার শরীর চেটে পরিস্কার করে দিন। শুনে রাজা অকপটে রাজি হয়ে গেল। চাটাচাটি শুরু। রাজ্যময় প্রজারা দেখছে গোপালভাড় খাচ্ছেন রাজার শরীরের মধু আর রাজা খাচ্ছেন গোপালভাড়ের শরীরে লেগে থাকা মল মূত্র।

অর্থাৎ দোষ ব্যাটা ওই রবিন্দ্রনাথের। তিনিই তো বলে গেছেন আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে।

ফলে বর্তমান বাংলাদেশ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরে সবাই রাজা হতে গিয়ে গোপালভাড়ের গল্পের রাজার দশায় পরছি। দুঃখের কথা হলো আমরা কেউ গোপালভাড় হতে রাজি নই। যে কারনেই আজ এত অধঃপতন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×