অশ্লিলতার দায়ে জীবনানন্দ দাশ চাকরি হারিয়েছিলেন। অনেক যুগ পর আবার অশ্লিলতার দায়ে চাকরি হারালেন রহমান হেনরী নামে আরেক কবি বলে সংবাাদমাধ্যম মারফত জানতে পারলাম। এই কবির নিয়মিত পাঠক নই।
কিন্তু এই ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে যেভাবে হৈ হৈ রৈ রৈ চলছে তাতে মনে হলো মূল ঘটনা চাপা পড়ে গেছে আওয়াজের তলে।
একপক্ষ স্পষ্টতই বলছেন রহমান হেনরীর চাকরি আরো আগেই চলে যাওয়া উচিত ছিল। আরেক পক্ষ বলছেন কবিতার লেখার জন্য চাকরি কেড়ে নেওয়া রাষ্ট্রের গর্হিত কাজ। মোদ্দা কথা ফেসবুক অনেকটা হেনরীময়। প্রকারান্তরে কিন্তু কবি নিরব। তিনি কোন কিছুই স্পষ্ট করেননি। তাহলে ধরে নিব সংবাদ মাধ্যমের তথ্যই সত্য, কুরূচিপূর্ণ কবিতা লেখার জন্য চাকরি হারিয়েছেন।
কবিতা লিখে চাকরি হারানো কিংবা রহমান হেনরীর চাকরি এতদিন টিকলো কেমনে তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে চাকরি হারানোর আফটার ইফেক্ট নিয়ে।
বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আবার গরিবভাবে আমরা চিন্তা করতে পারি। যদি গরিবিভাবে চিন্তা করি তাহলে চাকরি হারানোর পরে ফেসবুকে নামডাকওয়ালা কবি-সাহিত্যিকদের স্ট্যাটাসের বন্যা দেখে দুনিয়াটাকেই সার্কাস সার্কাস মনে হয়। সে কবে মদ খেয়েছে, কবে নারীর সাথে আড্ডা দিয়েছে এসব নিয়ে মল্লযুদ্ধে নেমেছে তার বিরোধী কবিপক্ষ। যারা এতদিন সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এবার সুযোগ পাওয়ায় ঝাপিয়ে পড়েছেন দমন করতে।
এমন কবি রাজনীতি কতকাল আগে থেকে চলছে জানি না, তবে যখন ছোটকাগজে লেখা পাঠানো, ছোট কাগজ প্রকাম করতাম তখন গিভ এন্ড টেক সাবজেক্টিটির সাথে পরিচিত হই। বিষয়টি হচ্ছে এমন, সাহিত্য সম্পাদকদের লেখা আপনার পত্রিকায় ছাপাবেনতো আপনার লেখা তিনি নিয়ে তার পত্রিকায় ছাপাবে। এভাবে জেলা ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ তৈরী হলো এবং তারা নিজেদের যোগ্য, সময়ের প্রতিনিধিত্বশীল কবি-লেখক আখ্যা দিয়ে পরস্পরকে জাহির করতেন। এইসব লেখকরা নিজেদের রবীন্দ্রনাথ ভাবতেন বাকিরা রবিন্দ্রনাথ হলেও ছাইপাস বলে বিশেষায়িত করা হতো।
যে শ্রেণী এখন রহমান হেনরীর বিপক্ষে ফেসবুকে জোয়ার তুলেছেন তারা যে হীনমন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে ভাবার অবকাশ নেই রহমান হেনরীও খুব উচ্চ মার্গিয় চিন্তার। কয়েক বছর আাগেও তাকে দেখেছি, একইভাবে তার পক্ষে যিনি নেই সেই কবি/লেখকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্যানেলসহ ঝাপিয়ে পড়ে অপমান-অপদস্তের আখড়া করে তুলতেন। অর্থাৎ কবি হতে গিয়ে কবি রাজনীতি কিংবা কবি প্যানেল গড়ে তোলাই যেন উভয়ের মূখ্যতা।
সে কারনেই ইট মেরে পাটকেল খাচ্ছেন খোদ কবি/সাহিত্যিকদের কাছ থেকে।
আরর যদি এই ঘটনাকে গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে বোঝা যায়, আমাদের কণ্ঠ রোধ হতে হতে আর কোন কণ্ঠই থাকলো না। কবিতায় আসলে কুরুচিপূর্ণ বলে কিছু নেই। প্রতিটি ভাষাই সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ। শব্দ কখনো অসুন্দর হতে পারে না। আর কবিতাতো উচ্চমাত্রার শব্দপ্রবাহ। একে বিশ্লেষণ করা যায়, বধ করা যায় না। হ্যাঁ বিশ্লেষণ হতে পারে, যেগুলো নিয়ে আপত্তি সেগুলো কবিতা হয়েছে নতুুবা হয়নি। কিন্তু কুরুিচিপূর্ণ কবিতা বলতে কিছু নেই।
আর কবিতার বিচার আমলা করতে পারেন বলে মনে হয় না। কারন এমনও কবিতা আছে যা সৃষ্টির ১০০ বছর পরও সময়কে শাসন করে। ফলে কোন কবিতা কোন সময়ের তা বিবেচনা করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। কবির ভাষা আর সরকারি ভাষা এক না এটিতো পুরানো কথা। যদি কবিতার জন্য চাকরি কেড়ে নেওয়া হয় সেটি অন্যায়। তাছাড়া কবিতার নামে যদি রহমান হেনরী কোন ইজম প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন সেটি আরো মারাত্মক অন্যায়। কারন কবিতাকে নিয়ে কারুরই ছেলেখেলা করা উচিত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২২ রাত ১:১৯