somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পী সমাচার।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি তানভির জনি। বাবা একজন দুর্নীতিবাজ সাবেক এম্পি। ছোট্ট এক জেলা শহরের সবাই আমাকে চিনে এক নামেই। তবে অন্যান্য এম্পির ছেলেদের মতো আমাকে কেউ ভয় পায় না বরং ভালোবাসে। প্রথমে অবশ্য সবাই ভাবে আমিও বাবার মতো সন্ত্রাসী হবো আর অমানুষের মতো নির্যাতন চালাবো। কিন্তু আমার বাবাও চায় নাই অমন হই, আমারো ইচ্ছে ছিলো না। ছোট বেলা থেকেই বই আমার নিত্য সঙ্গী। তবে আমারো অনেক বদ অভ্যাস আছে। আর তার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে মেয়েদের মাইন্ড নিয়ে হোলি খেলা, এই ব্যাপারে আমাকে কেউ স্যাডিস্ট বললেও কম বলা হয়ে যায়। লিটনের ফ্ল্যাট দিয়ে আর কি হবে, বাবা আমার জন্যে এই ইট পাথরের শহরে আলাদা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে পড়াশুনা করার সুবিধার জন্যে। একাই থাকি তবে একজন কাজের বুয়া আছেন। প্রতি সপ্তাহে অবশ্য নিজের বাসায় না গেলেও প্রতি ১৫ দিনে একবার যেতেই হয়। আর তখন আমার রিমি সিমি ঝিমি জিএফ গুলা খুব কষ্ট পায়। অবশ্য নির্দিষ্ট কেউ নাই, আমি পারমানেন্ট রিলেশনে বিলিভ করি না। আর তাই নিত্য নতুন আসছে যাচ্ছে। মজাই লাগে ওরা যখন বিদেয় নেয় তখন, আহা কি কান্নাই না করে। কিন্তু আমি একজন শিল্পী আমার কাছে ওরা শিল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। যত্ন সহকারে ওদের নগ্ন শরীরে আমি আলপনা আঁকি, কিংবা কাউকে কাউকে বসিয়ে দেই বিশাল বারান্দায় তারপর লিখে চলি একেকটি কাব্য নামা।

একটি মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে, ওর নাম ছিলো শরমিলি, খুব নিরীহ গোছের এই মেয়েটা আমাকে কেন এতো ভালোবেসেছিলো জানিনা, গ্রাম থেকে উঠে আসা এই মেয়ে যখন আমার সাথে লিভ টুগেদার করছে তখন প্রায়ই ভেবেছি কাজটা ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু শিল্পীকে নিষ্ঠুর হতেই হয়। সেদিন রাতে ওকে খুব বোরিং লাগছিলো আমার, আর তাই মাঝরাতে ওকে ডেকে তুললাম, তারপর জানিয়ে দিলাম প্লীজ লিভ মি, আমি আর সহ্য করতে পারছি না তোমার দুর্গন্ধ। আমার কাছে তুমি বহু ব্যবহারে দুর্গন্ধ যুক্ত একটি মোজা ছাড়া আর কিছুই নও। এইটুকু বলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সাত সকালে উঠে তাকে দেখতে পেলাম বারান্দায় ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে সে। আমার তখন ঘুম উধাও। আমার লিখতে ইচ্ছে করলো।

বিবশ সূর্য যদি আজ সবটুকু প্রজ্বলন ঐ অভিব্যক্তিহীন মুখে এসে অবসর গ্রহন করে তবুও সেখানে আর কোনো তৃষ্ণার্ত সিগারেটখোর আগুন ধরাতে পারবে না।

তারপর আর কি, ও চলে গেলো, আমার দিকে তাকায় নাই। আমিও নতুন একজনকে বগলদাবা করে ওকে ভুলে গেলাম। তবে ও চলে যাবার আগেই ওর পার্সে বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলাম যাতে সমস্যা না হয়। আমি আবার এসবে বড্ড উদার। বাপের এতো এতো টাকা খরচ করতে হবে তো নাকি।

তখন ইঞ্জিনিয়ারং ফাইনাল ইয়ারে উঠে এসেছি, নারী সঙ্গ ইদানিং একদম সহ্য হচ্ছিলো না তাই ও পাট আপাতত চুকিয়ে রেখেছিলাম। আমাকে নতুন নেশায় পেলো, ব্লগিং। কবিতা লিখতাম, গল্প, আড্ডা, ক্যাচাল এবং রাজনীতি। বেশ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছি ততদিনে। বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে সব কিছু। আহা এনজয়। বেশ কিছুদিন আমার নিজের শহরে যাই না তাই মুহূর্তের নোটিশে দুরুন্ত পরিবহনে ফোন দিলাম। ওরা আমাকে ভালো করেই জানে আমি কে। এই পরিবহনের মালিক আমার বাবা এবং ভবিষ্যতে আমি। তাই আমাকে খুশি করার জন্যে ওরা সব কিছুই করার চেষ্টা করে। আর দিনের বেলায় যে কবার যাই, প্রত্যেকবার ১১০ নাম্বার বাসটাই কেন জানি আমার বরাদ্দে থাকে। আর মুহিন নামের এই এডভাইজার বেশি বয়স নয় তার। সে সব সময় চেষ্টা করে আমার পাশে যেন এমন কেউ থাকে যাতে আমার বোরিং না লাগে। ও এই কারনে আমার খুব পছন্দের লোক। তবে ওর চোখ দেখলে আমি বুঝতে পারি আমার বন্ধু মহলে আমি যেমন পুরুষ প্রস্টিটিউট নামে পরিচিত সেও আমাকে সেটাই ভাবে। যাই হোক আমার আবার লজ্জা শরম কম।

যথা সময়ে ঠিক দুপুর ২ টায় গাবতলী এসে পড়লাম, বাস ছাড়তে আর মাত্র ৩০ মিনিট বাকি। কাউন্টারের মধ্যে গিয়েই বসলাম, ওখানেও এসি আছে। বাপি আমার অনুরোধেই এটা লাগিয়ে দিয়েছে। ঠিক তখন সে এলো টকটক লাল একটা ড্রেস পড়ে অবশ্য তার ফেইস টাও গরমে লাল হয়ে আছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন। এই মেয়ে কতো ছেলের কাপন ধরিয়েছে কে জানে তবে আমিও যে ক্ষুধার্ত বাঘ। অবশ্য সে একা ছিলো না সাথে আরো দুইজন ছিলো, তিন জনেই সুন্দর। ক্ষণিকের জন্যে তিনজনের প্রতিই আকর্ষণ অনুভব করলাম কিন্তু আমি সম্ভাব্যতার অংক গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে করেছি। তাই বাদ দিলাম তিন জনের থিউরী। হাতের ইশারা দিলাম মুহিনকে। আর আমি গিয়ে বসলাম বাসে নিজের সিটে। জানি তাকে আসতেই হবে আমার পাশে, নিয়তির মতোই এই টান। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ঠিক যেভাবে ধূর্ত শেয়াল কোনো মুরগীর বাচ্চার জন্যে অপেক্ষা করে।

ইস্কিউজ মি, এই যে শুনছেন? ইস্কিউজ মি। যদিও কানে হেডফোন লাগানো কিন্তু আমি গান শুনছিলাম না, ভান করে রইলাম যেন কিছুই শুনতে পাই নাই। তবে আরো একবার ইস্কিউস মি শোনার পর প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কান থেকে হেড ফোন খুলে তারপর তার দিকে তাকালাম এবং আরো বিরক্তিভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম ইস্কিউস মি হবে না, ওটা এক্সকিউজ মি হবে। হ্যা এবার বলেন আপনার সমস্যা কি? সে আমার দিকে হা করেই তাকিয়ে আছে। বুঝলাম ভড়কে দিতে পেরেছি, এও বুঝলাম এই সুরে তার সাথে আগে কোনো ছেলে কোনোদিন কথা বলে নাই, অবশ্য আমার মতো পাকা খিলাড়ী না হলে এটা সম্ভব না এবং ধরা খেয়ে যেত। বেচারী কোনোক্রমে সামলে নিয়ে বলল, আমাকে জানালার পাশে দিবেন? আমার খুব সমস্যা হয় জানালার পাশে না বসলে। যদিও বেচারী ভয়ে ভয়েই বলেছে কিন্তু আমি ওর উপরে আরো চেপে বসলাম। মাইন্ড গেমে কাউকে ছাড় দিতে নাই আমি এই নীতিটা ফলো করে অনেক উপকার পেয়েছি। তাই এবার একটু কর্কশ সুরেই বললাম দরকারটা আপনার একটু সুন্দর করে অনুরোধ করতে পারেন না? অমন কাকের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন? নিন বসুন।

মাত্র কয়েক মিনিট পরেই সে আড়ষ্টভাব কাটিয়ে উঠে আর সামনের দুই বান্ধবীর সাথে বকবক শুরু করে দিয়েছে। মূলত এইরকম বাচাল মেয়ে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না কিন্তু তাকে কেন জানি সহ্য করতে পারছি আমি, নিজের কাছেই অবাক লাগছে। অবশ্য বিরক্ত হইতে সময় লাগে নাই আমার, আধাঘন্টা সহ্য করার পর হেডফোনে গান বাজিয়ে দিয়ে ব্লগে বিভিন্ন ক্যাচালের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম ল্যাপি অন করেই। বাস ছেড়ে দিয়েছে, সবগুলো জানালা বন্ধ আর এসির কোমল বাতাসে ঘন্টাখানেক পর সব যাত্রী নাক টেনে ঘুমুতে শুরু করলো। তবে আমার পাশে বসে সে শুধু আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ল্যাপিতে দেখছে কি করছি, আমিও তাকে দেখাবার জন্যেই ব্লগে ঢুকে আড্ডা আর ক্যাচাল সমানে চালাচ্ছে, জানি ও সব পড়ছে। পড়ুক আমিও চাই আমাকে অপছন্দ করুক। প্রথমেই দিউয়ানা হইলে আমার বোরিং লাগবে। কিন্তু আমার নিজেরো যখন বোরিং লাগতে শুরু করলো ল্যাপি অফ করে বই পড়তে শুরু করলাম, ড্যাম ব্রাউনের একটা থ্রিলার। আহা একি কান থেকে হেডফোন খোলার পর থেকেই মৃদু নাক ডাকার বিচ্ছিরি আওয়াজ আসছে কানে। বাম পাশে তাকিয়ে দেখি সে আমার কাঁধেই মাথা রেখেছে। আরে আজব এতক্ষণ টের পেলাম না কেন?

ওর মাথাটা বারবার পড়ে যাচ্ছে দেখে শেষে নিজের বাম হাত দিয়ে ওর অন্যপাশের কাঁধ ধরে রাখলাম যাতে না পড়ে যায় আর শান্তিতে ঘুমুতে পারে। পাক্কা ৫ ঘন্টা পর ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো হালকা এক ঝাকুনীতে। ততোক্ষণে সে হালকা বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আর আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। আমার কাধ ততোক্ষণে ব্যাথা হয়ে গেছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে বলেই ফেললাম ধন্যবাদ, আমার কাধ আরেকটু পর ভেঙ্গে যেত। সেও রেগে গিয়ে বলল আপনি আমাকে ধরে ছিলেন কেন? কোনোমতে মেজাজ ঠান্ডা রেখে বললাম এতক্ষণ আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছেন, ঘুমিয়েছেন আমাকে বালিশ বানিয়ে আবার আমাকেই ঝাড়ি? তাও আমার সিটে বসে? সাথে সাথে ওর বিব্রত মুখ দেখতে পেলাম। সরি বলল। তারপর আমি অন্যদিকে সে অন্যদিকে এভাবেই কেটে গেলো অসহনীয় ১০ মিনিট। জানি আমি এবং সেও জানে হাতে বেশি সময় নাই, আর মাত্র এক ঘন্টা পর দুজনেই হারিয়ে যাবো অথচ টান দুজনেই অনুভব করছি।

সে ফিরলো আবার আর আমিও একই সাথে। সুন্দর করে হেসে বলল আমি নিন্দিতা সরকার অনু। পরিচয় দিলাম আমিও। আর খুব সরল চোখে তাকালাম। আমি জানি আমার চোখ দুটো ভয়াবহ সুন্দর আর তাই মেয়েদের খুন করতে আমার কষ্ট অনেক কম হয় আর সেও সেই মায়ায় জড়িয়ে গেলো। পরিচয়ের পর পুরো সময়ে আমরা শুধু কথা বলে গেলাম, জানতে পারলাম সে আমার বাপের প্রতিপক্ষ সরকার আঙ্কেলের মেয়ে। এবং ওরা হিন্দু। দুই জনেই বুঝতে পারলাম বিপদটা কোথায়। কিন্তু নিয়তি বলে একটা কিছু আছে যা আমাদের আপাতত বন্ধুত্ব ঠেকাতে পারলো না। ফোন নাম্বার বিনিময় সেরে দুই জনেই বিদায় নিলাম। আর দূর থেকে দেখলাম ওর দুই বান্ধবী ওকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। অপলক সে তারপরেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর আমিও কেন জানি বুঝতে পারছিলাম না কি হলো। সেদিন বাসায় ফিরে দেখলাম আব্বু আম্মু দুইজনেই পার্টি দিয়েছে, অনেক মেহমান বাসায়। সবার সাথে ফরমাল আলোচনা করতে করতে কখন জানি রাত ১২ টা বেজে গেলো, আমি আসলে তার ফোনের অপেক্ষায় আছি, নিজে থেকে ফোন দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি কোনোদিন কোনো মেয়েকে নিজে থেকে প্রথম ফোন দেই নাই। যাই হোক একটা ক্যাভারির বোতল নিয়া বসলাম। খাচ্ছি আর অপেক্ষা করছি যখন সহ্যের শেষ সীমায় চলে গেলাম তখনি তার দয়া হলো বুঝি। ফোন বেজেই চলল। আর তারপর সারারাত কথা, কতো কি কথা। সে কবে তার পুতুল হারাইছে, পিচ্চিকালে কোন টিচার তারে কানে ধরায়া এক ঘন্টা দাড় করিয়ে রেখেছে কিংবা ক্লাস ফাইভেই কোন ছেলে তারে প্রথম প্রপোজ করেছে। কিচ্ছু বাদ যায় নাই, তবে ভয়ের কথা হইলো কথা তার কিছুই শেষ হয় নাই। এইগুলা আসলে স্যাম্পল, গোডাউন যে তোলা আছে বেশ বুঝতে পারতেছিলাম। তবে আমার দারুন লাগছিলো ওর কথা শুনতে। সাত দিন ছিলাম এলাকায় শুধু ওর সাথেই কথা বলে কাটিয়েছি, বন্ধুবান্ধব কত ফোন দিলো আর কতো মেসেজ দিলো কিন্তু কার কি আসে যায়। আমার নয়া শিল্পী আমি পেয়ে গিয়েছে। কবে তার উপর আলপনা আঁকবো আমি সেই চিন্তায় বিভোর।

অবশেষে ফিরলাম আমি ঢাকায়, তবে ও রয়ে গেলো। দুইজনেই জানি পরস্পরকে কতোটা চাই কিন্তু ধর্মের অদৃশ্য দেয়ালে বারবার আটকে যাচ্ছে অনি। আমার অবশ্য এতো বিকার নাই এসব নিয়ে, আমি নাস্তিক। ওকে ফোনে দু মাস ধরে বুঝিয়েছি পৃথিবীতে ধর্ম হচ্ছে মানুষকে বিভাজনকারী একটা নিয়ম ছাড়া আর কিছুই নয়। ও অবশ্য অনেক রেগে যেত। তবে আমার ব্যকুলতা ও অনুভব করতে লাগলো। তারপরেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হলো না। তুমুল ঝগড়া হয়ে গেলো আমাদের। কয়েকদিন ওর কোনো ফোন রিসিভ করলাম না। আর তারপরেই একদিন খুব সকালে বাসার কলিং বেল বাজতে লাগলো। আমি অবশ্য রাতে ঘুমাইনি, রাত জেগে ব্লগিং করার অভ্যাস আমার। তাছাড়া এতদিন যত কবিতা লিখেছি সব একটু একটু করে ব্লগে প্রকাশ করি। যাই হোক ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, এই যে অনি। নীল একটা শাড়ি পড়ে এসেছে সে। আমি নতুন এই শিল্পীকে দেখে মুগ্ধ। ভাবছিলাম এই প্রতিমাকে আমি বিসর্জন দেবো কি করে।

সে প্রথমেই আমাকে ঘুমুতে পাঠালো আর তারপর পুরো বাসা গুছাতে শুরু করলো। মেয়েদের যা অভ্যাস আর কি। আমার অবশ্য এলোমেলো ভালো লাগে। গোছাগাছ একদম পছন্দ না। যাই হোক ঘন্টা তিনেক পর ওর ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। এই তোমার ঐ ব্লাক ডোরের ঐ পাশে কি আছে? ঐ রুমের চাবি দাও। আমি স্রেফ ঘুমের মধ্যেই আৎকে উঠলাম। ঐ রুমে যা আছে তা যদি অনি জানে জীবনেও ও আমার শিল্প হতে রাজি হবে না। আসলে ঐ রুমে আছে হাজার হাজার ফোটোগ্রাফী বিভিন্ন ভঙ্গিমায় তোলা। তারা সবাই আমার কাছে আলাদা আলাদা প্রান। আলাদা সত্ত্বা। আর আছে কয়েকশো বই। ডায়েরী আছে চারটা। ঢাকায় আসার পর এই চারটা ডায়েরীতে আমি সব লিখেছি। ঐ রুমে কোনও ধুলো নেই। ঐ রুম আমার জীবন। শত অনিদের ভালোবাসাও ঐ রুমের ভিতরে আসতে পারবে না।

আমি শান্ত ভাবে অনিকে বুঝিয়ে বললাম ওটা আমার আব্বু আম্মুর রুম, ওখানে তারা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করে নাই। আর এখন সেটা উচিতও হবে না। অনি মাথা নেড়ে চলে গেলো, আমিও উঠে শাওআর নিয়ে তৈরী হলাম, ইতিমধ্যে বুয়াকে দিয়ে অনি বাজার আনিয়ে নিয়েছে। বেশ সংসারী মেয়ে। বুয়াকে বিদায় করে দিয়ে নিজেই রান্না করতে শুরু করলো। আমিও শুরু করলাম ফাঁদ পাতা। ঠিক যেভাবে ইঁদুর ধরার জন্যে গ্রামের মানুষ ইঁদুর কল দেয় সেভাবে। আমি ধীরে ধীরে এনাকোন্ডার মতো করে ওর চারপাশে একটা রোম্যান্টিক পরিবেশ তৈরী করতে থাকলাম।

ওর রান্নায় কিছুক্ষন সাহায্য করে উঠে গেলাম সেখান থেকে। ক্যামেরাটা পরিষ্কার করলাম, একটা নতুন খসড়া খাতা নিলাম, শুধু অনি কে নিয়ে লেখা কাব্য গুলো থাকবে সেখানে। তারপরেও যখন ওর রান্না হতে বাকি তখন ওর পাশে একটা টুল নিয়ে গিয়ে বসলাম তারপর সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলাম ওকে। আমি জানি ও আইসক্রিমের মতো গলতে শুরু করেছে। লাঞ্চের পর আমি চলে এলাম আমার বেডরুমে, ও এলো একটু পরেই, জানি গোলাপী অধর কিভাবে বশ করতে হয়, আমি একজন এক্সপার্ট অবশ্যই। ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম, আমি জানি কোনও মেয়েকে এভাবে ধরলে সে কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু তারপরেই ওকে বিচলিত করে দিয়ে উদোম করে দিলাম তাকে। আর সরে চলে আসলাম তার কাছ থেকে। ও একটু বিব্রত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। মৃদু হেসে সান্তনা দিলাম, ও কিছু নয়, আলপনা আকার সময় হয়ে এসেছে, আর দেরী করা যাবে না, ওকে আমি বিভিন্ন ভঙ্গিতে বসিয়ে ছবি তুলতে শুরু করলাম, আমি জানি এই মুহূর্তে আমি ঈশ্বর আর ও হচ্ছে আমার কাছে একদলা মাটি ছাড়া কিছুই নয়। ওকে আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়ে সাজিয়ে চুষতে শুরু করলাম আমার ক্যামেরা দিয়ে। আমি জানি আজ থেকে মাস দুয়েকপর ও হবে একটা নারিকেলের ছেড়া খোসা। তবে সেসব না ভেবে আমি আমার কাজেই মন দিলাম, ক্যামেরার প্রতিটি বাইট শেষ হয়ে গেলো, খাতার অর্ধেক ভরে গেলো লিখতে লিখতে। আর সে অবাক হয়ে আমার কাজকর্ম দেখছে, হয়তো ভাবছে কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম রে। কিন্তু আমিও জানি ও আর বেশি অপেক্ষা করবে না। অতঃপর দুটো বিরক্তিকর ঘন্টা এবং ঘর্মাক্ত শরীর। বিচ্ছিরি।



দেখতে দেখতে কেটে গেলো ছয় মাস। অনি আমার ঘাড়ে বেশ ভালোভাবেই চেপে বসেছে। গত চারমাসে কোনও ছবি তুলি নাই কোনও কবিতা লিখি নাই। অনি কে ছেড়ে দুই মুহূর্ত থাকতেও ভালো লাগছে না। কি একটা অসভ্য সময় কাটাচ্ছি। অনিকে অনেক কষ্টে দুই দিনের জন্যে ম্যানেজ করলাম যাতে ও না আসে আমার কাছে কিংবা ফোন না দেয়। কিন্তু আমার নিজেরি সবথেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি অনির আর কিছুই দেয়ার নাই আমাকে। যা ছিলো সব শেষ। আর আমার ভিতরটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়।

জাগতিক তাঁরার দল ভুলে যেও পথ
ডাহুকের বুকে জেগে উঠা করুন শপথ,
জেগে উঠা চর, গোলাপী অধর মিছেই
সর্ষে বার্তা নেচে গেয়ে যায় তা থৈ তা থৈ
আমি ফিরে যেতে চাই সূর্য পাটে
আমি ফিরে যেতে চাই মহাকাশের হাটে।


জানি আমায় দিয়ে হবে না, শিল্পী আর ফিরবে না। তাহলে আর আমায় দিয়ে কি হবে? বেরেটাটা সামনেই নিয়ে বসেছি, আর মাত্র কয়েকঘন্টা পর অনি এসে হাজির হবে। তবে চলে যাবার আগেই লিখে যাই কিছু। হ্যা আমার অনি কে।


প্রিয় অনি,

এই লেখা যখন তুমি পড়বে তখন একজন শিল্পী তার শেষ তুলি এঁকে ফেলেছে। একজন ঈশ্বর তার শেষ সৃষ্টিকর্ম শেষ করে ফেলেছে, এখন সে বেকার। ভাবছো খুব আবোলতাবোল বকছি তাই তো? না অনি। তুমি হচ্ছ আমার শেষ শিল্প। তোমার পরে আর কাউকে চাইনি আমি শিল্প হিসেবে, এ তোমার জন্যে এক সন্মান। তোমাকে দেয়া আমার সন্মান। তোমাকে দেয়া আমার ভালোবাসা। ভালো থেকো তুমি। আর কালো দরজার ওপাশে যেও না কখনো, শুধু জেন ও দরজার ওপাশে তোমাকে কখনো রাখিনি আমি, ঐ দরজার ওপাশে অনেক শিল্পকর্ম আছে আর সব শেষে তাদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছে আমি। কিন্তু তোমাকে নয়। তোমার জন্যে এই চিঠি আর তোমার শিল্পকর্ম গুলো রেখে যাচ্ছি। আমার ডায়েরী গুলোও তোমাকে দিয়ে গেলাম। ভালো থেকো তুমি।

তোমার জনি।



গত একমাস অনি নামের একটা মেয়ে শুধুই কেঁদেছে, সে জনির লেখা চারটা ডায়েরী পড়েছে। সে জনিকে অনেক ঘৃণা করে, সে নিজেকেও অনেক ঘৃণা করে। সে জানে সে নিজেই জনিকে তিলে তিলে ঠেলেছে মৃত্যু অভিমুখে। আর এভাবেই একজন ঈশ্বর মারা গেলো। একজন শিল্পী মারা গেলো।
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×