বেশ কিছু দিন আগের কথা কোন একটি দৈনিকে চোখ বুলাচ্ছিলাম হঠাৎ একটি ছোট্ট শিরোনামের দিকে চোখ পড়ল শিরোনামটি পুরোপুরি মনে নেই কিন্তু কলামের বিষয়বস্তু ছিল এমন যে লেখিকা নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাঙালী, যিনি একজন নতুন অভিবাসী, তো একদিন একটি তিনি একটি শপে ঢুকলেন শপিংয়ের জন্য উনার সামনে এক মহিলা শপিং করছিলেন এক মহিলা দেখতে অনেকটা নিউজিল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের মত , তিনি একসময় নিজের কৌতুহল নিবারন করতে না পেরে ঔ মহিলাকে জিজ্ঞেস করেই বসলেন আপনাকে দেখতে অনেকটা হেলেন ক্লার্কের মত লাগছে, জবাবে ঐ মহিলা কিছু না বলে একটু হেসেই বিদায় নিলেন। লেখিকার কথাগুলো ঐ শপের ম্যানেজার শুনছিলেন যিনি নিজেও একজন মহিলা, শপিং সেরে বের হওয়ার সময় বললেন আপনার অনুমান ভূল নয় উনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীই তিনি প্রতিদিনই এখান থেকে শপিং করেন। জবাব শুনে লেখিকা তো পুরোপুরি থ'। এটা কিভাবে সম্ভব, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রটোকল ছাড়াই নিজের বাজার নিজেই করছেন এবং তা একজন সাধারন নাগরিকের মতই। একথা শুনেই লেখিকার নিজের দেশের কথা মনে পড়ল, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা একজন এমপি'র ক্ষেত্রেও যা অকল্পনীয়। এমনিতেই নির্বাচনের মৌসুম ছাড়া জনগনের মাঝে খুব কমই দেখা যায়, আর হঠাৎ সঠাৎ দেখাগেলেও সাথে প্রটোকল মেনটেইন করার জন্য একদল চাটুকার বেষ্টিত হয়ে থাকেন, আর জনপ্রতিনিধী নির্বাচিত হলে তো পাশে ঘেষাই অসম্ভব, আর মন্ত্রী যদি কোন রাস্তা দিয়ে যান তাহলে তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার কমপক্ষে একঘন্টা আগেই পুরো রাস্থা আটকিয়ে দেয়া হয়,যার মানে হল লম্বা জ্যাম আর সাধারন মানুষের অবর্ননীয় দূর্ভোগ। লেখিকা তার ঐ কলামে আফসোস করে বলেছিলেন এমন গনবিচ্ছিন্ন নেতৃত্ব দিয়ে কিভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব যারা জনগনের কোন খোঁজই রাখেননা তারা দেশের সমস্যাই বুঝবেনইবা কি করে।
এ লেখার কথা মনে পড়ল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিউটে একটি শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে গিয়ে। ঐ শোক সভায় আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এর স্মরণে যেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশিষ্টজন। ঐ সভায় প্রায় আটশ জনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল, কিন্তু সভা এক দিন আগে আয়োজনের কারনে উপস্থিতি এত ছিলনা, যার ফলে খাবারের বিশাল অংশ বাকি রয়ে যায় তাই অনেককেই দুইবার তিন বার দেয়া হয়। এরই মাঝে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিউটের আশেপাশে অবস্থানকারী ভাসমান মানুষেরা খাবারের আশায় ভীড় জমায়। তাদের অনেকই খাবার পায় অনেকর ভাগ্যে তা জোটেনি।
এ ঘটনা গুলো যারা আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন বা যারা শেষ পর্যন্ত সেখানে ছিলেন তারাই শুধু জানতে পেরেছেন অতিথিরা নয়।
একই রকম প্রায় সব ক্ষেত্রেই একই রকম ঘটনা ঘটে থাকে কিন্তু যাদের জানা দরকার তারাই অর্থাৎ যাদের এসব দূর করার কথা তারা জানতে পারননা। যার ফলে অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটে না।
সমস্যা সমাধানের জন্য মূল কাজ হল সমস্যাকে জানার, সমস্যা জানলে তবেই তা সামাধান করা সম্ভব, সাধারনের সমস্যা জানার জন্য সাধারনের সাথে মিশতে হবে। ভিআইপি প্রটোকল নিয়ে চলাফেরা করলে সমস্যা জানা সম্ভব নয়। পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোর জনপ্রতিনিধিরা সাধারন মানুষের মতই চলা ফেরা করেন তাই তারা সমস্যা বুঝতে পারেন এজন্য সমস্যা সমাধানও করতে পারেন।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের চলমান অবস্থার পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি। কারন তার দল পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। এবং আশা করা যায় পরিবর্তন উনার নিজে থেকেই শুরু হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১৩