পৃথিবীর সব বাবা মায়ের স্বপ্ন থাকে তার ছেলে/মেয়ে জীবনে থাকবে সুখে , থাকবে দুধে-ভাতে। তেমনি করে আমার বাবা-মা স্বপ্ন দেখেছিলো আমিও শিক্ষিত হয়ে থাকব সুখে। এজন্য শত কষ্টের মাঝেও তারা আমার পড়াশোনা বন্ধ না করে এইচএসসির পর উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকাতে পাঠানোর জন্য আমার চাচাদের সবাইকে অনুরোধ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ছোট চাচার কাছ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে গেলেন। ফলে আমাকে ছোট চাচার বাসা তেজকুনীপাড়ায় পাঠালেন। ভাগ্যগুণে জগন্নাথে ভর্তিও হয়ে গেলাম। এখানেই পেলাম আমার সেই বন্ধুটির সান্নিধ্য। তার অকৃতিম ভালোবাসা ও সহমর্মিতা ।
প্রথম বর্ষে ভর্তি ও হলাম সেই সাথে চেষ্টা করতে থাকলাম একটা টিউশনি নামক সোনার হরিণ পাওয়ার চেষ্টায়। পেয়েও গেলাম ভাগ্যগুণে কিন্তু মাত্র এক হাজার টাকা তাও সপ্তাহে ছয় দিন পড়াতে হবে। রাজি হয়ে গেলাম।
এই টাকায় আমার সারা মাসের সম্বল, যা দিয়ে সারা মাসের বাস ভাড়া, পকেট খরচ, বই খাতা কেনা এবং ফটোকপি করতে হবে । তো যাইহোক এভাবেই চলছিলো কিন্তু বিপদ বাধলো যখন পরীক্ষার ফি ও বেতন দেওয়ার সময় হলো । লাগবে ২১০০ টাকা, ছোট চাচা দিলো ১০০০ টাকা, ল (তিন নম্বর ) চাচা ৫০০ টাকা কিন্তু এখনও দরকার ৬০০ টাকা । আমার কাছেও টাকা নেই আবার বাড়ী থেকে পাবো সে কল্পনাও বৃথা । কোন উপায় না পেয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি, এভাবেই সময় শেষ যাচ্ছে. তো শেষ দিন মেহেদী বললো কবে ফ্রম ফিলাপ করবি ? আমি জানালাম যে টাকা ব্যবস্থা করতে পারিনি। ও কিছু বললো না । শুধু বলরো যে টাকা ব্যবস্থা হয়েছে সেটা আনিস। পরেরদিন তাই করলাম । ও আমার থেকে টাকা নিয়ে জমা দিয়ে আসলো । থখনো জানতাম না কিভাবে টাকার ব্যবস্থা হলো । কয়েকদিন পরে জানলাম মেহেদী ওর জমানো টাকা থেকে দিয়েছে। কিন্তু আমিতো জানতাম, ও বাড়ী থেকে মাত্র ১৫০০ টাকা নেয়। কিভাবে জমালো ....... আজও জানতে পারিনি।
দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে চাচার বাসায় খাওয় ও থাকা বাবদ কিছু টাকা দিতে হতো, তাই টিউশনির প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে যেত । এর মাঝে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ায় বেতন ও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেল । আর এদিকে প্রণপণ চেষ্টা করছি কুলিয়ে উঠার জন্য । এর মাঝে মা আবার অসুস্থ। তাই যে টাকা বাচত সবই বাড়ীতে দিয়ে দিতাম।
এভাবে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ৫০০০ টাকার মত জমা দিতে হবে। দিলামও । কিন্তু এর পরেই আসলো আসল বিপদ । মা টেনিস এলবো এর ব্যথা ও ডায়াবেটিস এ খুব বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লো । আমি কুষ্টিয়া তে চিকিৎসা করালাম কোন লাভ হলো না । ডাক্তার মাকে ঢাকার পপুলার মেডিকেলে ডাঃ তসলিম উদ্দিন সাহেবের কাছে পাঠালেন । কোন পূর্ব চিন্তা করেই ঢাকাতে নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম । এ সময় আমার স্টুডেন্ট এর বাসা থেকে কিছু টাকা অগ্রিম নিলাম। কিন্তু এ টাকায় কিছুই হলো না । আমি মহা বিপদে পড়লাম ওদিকে মার মুখের দিকে তাকাতে পারি না । এর মধ্যে মেহেদী মাকে দেখতে এসে আমার অবস্থা জানতে পেরে বলরো চিন্তা করিস না ব্যবস্থা হবে।
পরদিন ও ৭০০০ টাকা আমার হাতে দিয়ে বললো নে খালার চিকিৎসা করা। আমি তো হতভম্ব , কি করবো বুঝতে পারছি না । এ সময় ও বললো তোর মা তো আমারও মা । আমার মা হলে কি তুই আমার জন্য কিছু করতিস না ? আমি কিছু বলতে পারলাম না । মায়ের চিকিৎসা করালাম। আমার মা এখন সুস্থ।
দোস্ত আমি আজীবন তোর উপকার শোধ করকত পারি পারব না।
আসলে লিখে তোর উপকার শেষ করা যাবে না। ভালো থাক দোস্ত ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




