somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রামে গ্যাসে নতুন আশা

২১ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন আবিষ্কৃত নোয়াখালীর সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। দৈনিক আজাদীর গতকালের খবরে প্রকাশ, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুর্তজা আহমেদ ফারুক জানিয়েছেন আগামী বছরের মার্চ থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া খাগড়াছড়ির সিমুতাং গ্যাসক্ষেত্র থেকে আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক আজাদীর খবরটি উৎসাহ ব্যঞ্জক ও আশাপ্রদ। তবে এখনো পর্যন্ত বিষয়টি এমন অবস্থায় রয়েছে যাকে বলা যেতে পারে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’-এর মতো।

চট্টগ্রামে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ সরবরাহ করা হচ্ছে ২২৮ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মাঝে প্রতিদিন সরবরাহ করা হয় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সিইউএফএল, কাফকো এই দু’টি সার কারখানাসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য কারখানার অবশিষ্ট ১২৩ থেকে ১২৫ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এই পরিমাণ সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কত কম তা সরকারি সংস্থা বাপেক্সের জানা আছে। সম্ভবত এ কারণে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগের ত্বরিত বাস্তবায়ন কামনা করি। এ প্রসঙ্গে আর একটি বিষয় অবশ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। কথাটি হলো মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামে জরুরী ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহের জন্য সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রটি খননের জন্য বাপেক্সকে নির্দেশ দিয়েছিল।

চট্টগ্রামে বর্তমানে ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট নিকট ভবিষ্যতে যে চাহিদা বেড়ে যাবে সন্দেহ নেই। চট্টগ্রামের নতুন কারখানাগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি। গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে রয়েছে। চট্টগ্রামের শিল্পপতিরা শিল্প কারখানা স্থাপন করেও গ্যাসের অভাবে চালু করতে পারছেন না। অথচ ২০০১ সাল থেকে চট্টগ্রামে বিনিয়োগকারীরা গ্যাসের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর এবং মন্ত্রণালয়ে আবেদন-নিবেদন করে যাচ্ছেন। দেশে শিল্পায়নের জন্য শুধু নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রচুর গ্যাস-তেল প্রয়োজন। চট্টগ্রামকে যেহেতু কাগজে-কলমে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে ঘোষণা করা হয়েছে সেই ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করার স্বার্থেও এখানে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা দরকার। তাছাড়া বর্তমানে আবাসন সংকটের কারণে শুধু বন্দর নগরী নয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩০ মাইল ঘিরে যে সব স্থান রয়েছে সে সব স্থানেও গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। লোকসংখ্যা বাড়ছে আবাসন সংকট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। লোক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দোকান পাট ইত্যাদিও বাড়ছে। এমতাবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ চাহিদা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়বে সন্দেহ নেই। সঙ্গতকারণে চট্টগ্রামে যদি চাহিদা মত গ্যাস সরবরাহ না হয় তাহলে আগামী দিনগুলোতে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিও কম হবে না।

এটা সকলেরই জানা যে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বস্তুটা হলো জ্বালানি। জ্বালানি হলো চালিকা শক্তি কী অর্থনীতি কী সমাজ-কী জনজীবন সর্বক্ষেত্রেই। গ্যাস ও তেলই হলো জ্বালানি। এ দু’টো ছাড়া গোটা বিশ্বই অচল। ঘর-গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প কারখানা এবং যানবাহন চলাচল পর্যন্ত কোন কিছুই জ্বালানি ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সৌভাগ্য হলো এখানে তেল গ্যাস ও কয়লা রয়েছে। অপরদিকে দেশবাসীর দুর্ভাগ্য হলো- এই খনিজ জ্বালানি উত্তোলনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনও হয়নি। আরও দুঃখজনক যে উত্তোলনের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলাদলি উত্তোলন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। কম হোক বেশি হোক মাটির গভীরে যে খনিজ সম্পদ রয়েছে তা যদি উত্তোলন করে ব্যবহার করা না যায় তাহলে দেশের উন্নয়নও যে ব্যাহত হয় তা আমরা অনেক সময় বুঝিনা বা বুঝতে চাই না। যেভাবেই হোক আমাদের মাটির তলার সম্পদ আহরণ করে কাজে লাগাতে হবে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান অসুবিধা হলো, পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ গ্যাস উত্তোলনে যথেষ্ট পারদর্শী নয় এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই অভিমত। বাংলাদেশকে এ কারণে গ্যাস উত্তোলনের জন্য এ বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও দক্ষ বিদেশি কোন কোম্পানি বা সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। এক্ষেত্রে ভারতও বেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে এবং তাদের বিদেশি কোম্পানি বা সংস্থার উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা যখন তেল-গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান দিতে পারেন তখন এতদিনে গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে পারদর্শী করে তোলার প্রয়োজন ছিল। যা-হোক বর্তমানে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট দেশের স্বার্থ বজায় রেখে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক গ্যাস উত্তোলনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া যেমন দরকার তেমনি দেশীয় প্রয়াসকেও ক্রমশ সক্ষম ও মানসম্পন্ন করে তোলার কাজটিও ক্রমে অপরিহার্য হয়ে দেখা দিচ্ছে।

দৈনিক আজাদীর গতকালের আশা জাগানিয়া খবরটিতে আরও বলা হয় যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির সিমুতাং গ্যাসক্ষেত্র থেকেও আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। যদি সুন্দলপুর ও সিমুতাং উভয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস পুরোটাই চট্টগ্রাম পায় তাহলে চট্টগ্রাম প্রকৃত অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী হয়ে উঠতে দেরি লাগবেনা। অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের দেশে কোন কাজই সময়মতো হয় না। আমাদের আবেদন- এক্ষেত্রে যেন এ পরিণতি না হয়। চট্টগ্রামসহ দেশবাসীর প্রত্যাশা যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট দূর হোক্‌, নতুন আশা হোক বাস্তবায়িত।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×