বলা হয়ে থাকে যে, ইসলাম বহু বিবাহ বৈধ করেছে। আসলে ইসলাম বহু বিবাহের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যে কেউ চারটির বেশি বিবাহ করতে পারবে না। কারণ সে যুগে এমনকি আজ থেকে এক দেড়শ বছর আগে এই ভারতেই অনেক মানুষ ৩০-৫০-৮০ এমনকি ১০০ আরো বেশি বিবাহ করত! বিশ্বাস না হলে ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বহু বিবাহ’ ও 'বাল্য বিবাহ’ বই দুটি পড়ে দেখতে পারেন। আপনি যদি রোম সাম্রাজ্যের, গ্রীক সাম্রাজ্যের অথবা পৃথিবীর যে কোনো ইতিহাস পড়েন তাহলে দেখবেন যে সে যুগে মানুষ অনেক স্ত্রী রাখত।
এখানেই শেষ নয় হিন্দুদের দেবতা কৃষ্ণার ১৬০০০ স্ত্রী, মহাদেব এর ১ লক্ষ ইত্যাদী এমন অনেক বর্ণনা রয়েছে বহু বিবাহের বা বহু স্ত্রী রাখার। ইসলাম শুধু পুরুষের এই জৈবিক বিষয়টিকে একটি নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ করে দিয়েছে যে, কেউ ইচ্ছা করলে একসাথে সর্বোচ্চ ৪ টির বেশী বিবাহ করতে পারবে না।
৪ টি বিবাহের ব্যাপারেও কড়া নির্দেশনা যে, কেউ ইচ্ছা করলেই ১ টির বেশী করতে পারবে না। হ্যা ! যদি সে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারে তবেই সে ১ টির বেশী বিবাহ করতে পারবে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
"বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই ,তিন আথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা কর যে (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে (মাত্র) একটি (বিবাহ কর)…."
(সুরা নিসা ০৩:০৩)
এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টেই বুঝা যাচ্ছে যে কোনো মুসলমান ইচ্ছা করলে একের অধিক বিয়ে (চারের বেশি নয়) করতে পারে। কিন্তু তাতে শর্ত হলো তাকে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার অর্থাৎ একাই রকম ভালবাসা, খাদ্য, বস্ত্র দিতে হবে এবং তাদের একের উপর অপরকে প্রাধান্য দেওয়া চলবে না। আর যে একাধিক বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিন্তু তার মনে হচ্ছে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার বা সমতা রাখতে পারবে না তাহলে তাকে একটি বিয়েতেই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয়েছে।
আর স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করা নিশ্চয় কঠিন কাজ। আল্লহ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন,
"তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না……”
(সুরা নিসা ০৪:১২৭)
উপরের দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
বহু বিবাহ করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আরো সতর্ক করে পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
“তোমরা এক জনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পর না ও অপরকে (অপর স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্তায় রেখে দিও না …”
( সুরা নিসা ০৩:১২৭)
এখানেই শেষ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন ১ এর অধিক বিবাহ করার ব্যাপারে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"যে ব্যক্তির দুই জন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে এক জনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।"
(আহমেদ ২/৩৪৭; আসবে সুনান; হাকিম ২/১৮৬) ইবনে হিব্বান ৪১৯)
উপরোক্ত দলীল থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বহু বিবাহ শর্ত সাপেক্ষে জায়েয কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিরুৎসাহিতই বেশী করা হয়েছে।
সে জন্যই ডেভেন্পর্ট বলেছেন যে, “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহু বিবাহকে সীমার বাধনে বেধে ছিলেন।”
সুতরাং ইসলাম কখনোই বহু বিবাহকে সমর্থন করেনি। বরং বহু বিবাহকে ৪ টির মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন তাও বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে।
আসুন আমরা ইসলামের এই সুমহান দিকনির্দেশনাকে মান্য করি এবং স্ত্রীর সাথে সর্বদা সদাচারণ করি।
ফেইসবুকে আমি::তাহমিদ হাসান
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৪