somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে সেই বারাকাহ, যিনি নবীজী কে প্রথম দেখেন,স্পর্শ করেন, কোলে তুলেন এবং জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সাথেই ছিলেন?

০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে সেই বারাকাহ যিনি নবীজী কে প্রথম দেখেন,স্পর্শ করেন, কোলে তুলেন এবং জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সাথেই ছিলেন?
❤আমাদের দয়াল নবীজী (ﷺ) এর পিতাজী হজরত আব্দুল্লাহ (রা) একদিন মক্কা শরীফের বাজারে গিয়েছিলেন কিছু কেনা-কাটা করার জন্য I
এক জায়গায় তিনি দেখলেন, এক লোক কিছু দাস-দাসী নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে, হজরত
আব্দুল্লাহ (রা) দেখলেন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, একটা ছোট নয় বছরের কালো আফ্রিকান আবিসিনিয়ার মেয়ে I
মেয়েটাকে দেখে হজরত আব্দুল্লাহ (রা) এর অনেক মায়া হলো, একটু রুগ্ন হালকা-পাতলা কিন্তু কেমন মায়াবী ও অসহায় দৃষ্টি দিয়ে তাঁকিয়ে আছে I
তিনি ভাবলেন ঘরে হজরত আমেনা (রা) একা থাকেন, মেয়েটা পাশে থাকলে তার একজন সঙ্গী হবে I
এই ভেবে তিনি মেয়েটাকে কিনে নিলেন I
মেয়েটিকে হজরত আব্দুল্লাহ (রা) ও হজরত আমেনা (রা) অনেক ভালোবাসতেন I স্নেহ করতেন I এবং তারা লক্ষ্য করলেন যে, তাদের সংসারে আগের চেয়েও বেশি রহমত ও বরকত চলে এসেছে I
এই কারণে হজরত আব্দুল্লাহ (রা) ও হজরত আমেনা (রা) মেয়েটিকে আদর করে নাম দিলেন "বারাকাহ"I
তারপর একদিন হজরত আব্দুল্লাহ (রা), ব্যবসার কারণে সিরিয়া রওনা দিলেন I
আমেনা রা. এর সাথে সেটাই ছিল উনার শেষ বিদায় I
উনার যাত্রার দুই এক দিন পর হজরত আমেনা একরাতে স্বপ্নে দেখলেন, আকাশের একটা তারা যেন খুব আলো করে তার কোলে এসে পড়লো I
পরদিন ভোরে তিনি হজরত বারাকাকে এই স্বপ্নের কথা বললেন I
উত্তরে হজরত বারাকা মৃদু হেসে বললেন, "আমার মন বলছে আপনার একটা সুন্দর সন্তানের জন্ম হবে"
হজরত আমেনা (রা) তখনও জানতেন না তিনি গর্ভধারণ করেছেন কিন্তু কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারলেন, হজরত বারাকার ধারণাই সত্যি I
হজরত আব্দুল্লাহ (রা) আর ফিরে আসেন নি, সিরিয়ার পথেই ইন্তেকাল করেছেন I
আমেনা রা. এর সেই বিরহ ও কষ্টের সময়ে, হজরত বারাকা ছিলেন একমাত্র সবচেয়ে কাছের সঙ্গী I
একসময় হজরত আমেনা (রা) এর অপেক্ষা শেষ হয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে তাশরীফ আনলেন।
*শেখ ওমর সুলাইমানের বর্ণনা অনুযায়ী, সর্বপ্রথম আমাদের নবীজী (ﷺ) কে দেখার ও স্পর্শ করার সৌভাগ্য হয়েছিল যে মানুষটির, সে হলো এই আফ্রিকান ক্রিতদাসী ছোট কালো মেয়েটি I
আমাদের নবীজী (ﷺ) কে নিজ হাতে হজরত আমেনা (রা) এর কোলে তুলে দিয়েছিলেন, এবং আনন্দ ও খুশিতে বলেছিলেন,
"আমি কল্পনায় ভেবেছিলাম সে হবে চাঁদের মত কিন্তু এখন দেখছি, সে যে চাঁদের চেয়েও সুন্দর "
এই সেই হজরত বারাকা নবীজি (ﷺ) এর জন্মের সময় উনার বয়স ছিল মাত্র তের বছর I
ছোটবেলায় শিশু নবীজী (ﷺ) আমেনা (রা) এর সাথে যত্ন নিয়েছেন, গোসল দিয়েছেন, খাওয়াতে সাহায্য করেছেন,আদর করে ঘুম পাড়িয়েছেন I
ইন্তেকালের সময় হজরত আমেনা (রা) হজরত বারাকার হাত ধরে অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন তাঁর সন্তানকে দেখে শুনে রাখেন I
হজরত বারাকা তাই করেছিলেন I
বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে, ইয়াতিম নবীজী (ﷺ) আসলেন দাদা আবদুল মোত্তালিবের ঘরে I
উত্তরাধিকার সূত্রে নবীজী (ﷺ) হজরত বারাকার নতুন মনিব I
কিন্তু তিনি একদিন হজরত বারাকাকে মুক্ত করে দিলেন, বললেন,
-"আপনি যেখানে ইচ্ছে চলে যেতে পারেন, আপনি স্বাধীন ও মুক্ত I"
সেই শিশুকাল থেকেই নবীজী (ﷺ) ক্রীতদাস প্রথাকে দূর করতে চেয়েছিলেন I
হজরত বারাকা নবীজী (ﷺ) কে ছেড়ে যেতে রাজি হলেন না I রয়ে গেলেন I মায়ের ছায়া হয়ে পাশে থেকে গেলেন I
এমনকি নবীজির (ﷺ) দাদা উনাকে বিয়ে দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হলেন না I উনার একই কথা,
-"আমি আমেনাকে (রা) কে কথা দিয়েছি, আমি কোথাও যাবো না" ।
তারপর একদিন খাদিজা (রা) এর সাথে নবীজির বিয়ে হলো I
বিয়ের দিন রাসূল (ﷺ) খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বারাকাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন I
তিনি বললেন, "উনি হলেন আমার মায়ের পর আরেক মা "
বিয়ের পর রাসূল (ﷺ) একদিন হজরত বারাকাকে ডেকে বললেন,
-"উম্মি ! আমাকে দেখাশুনা করার জন্য এখন খাদিজা (রা) আছেন, আপনাকে এখন বিয়ে করতেই হবে I"
(নবীজি উনাকে উম্মি ডাকতেন, নাম ধরে ডাকতেন না )
তারপর রাসূল (ﷺ) ও খাদিজা (রা) মিলে উনাকে উবাইদ ইবনে জায়েদে (রা) এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন I
কিছুদিন পর হজরত বারাকার নিজের একটা ছেলে হলো, নাম আইমান I
এরপর থেকে বারাকার নতুন নাম হয়ে গেলো "উম্মে আইমান" (রা)।
একদিন হজরত বারাকার স্বামী উবাইদ (রা) মৃত্যু বরণ করেন, নবীজি (ﷺ) আইমান ও হজরত বারাকাহকে সাথে করে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন এবং সেখানেই থাকতে দিলেন I
কিছুদিন যাওয়ার পর নবীজি (ﷺ) একদিন বেশ কয়েকজন সাহাবীকে ডেকে বললেন,
"আমি একজন নারীকে জানি, যার কোন সম্পদ নেই, বয়স্কা এবং সাথে একটা ইয়াতিম সন্তান আছে কিন্তু তিনি জান্নাতি, তোমাদের মধ্যে কেউ কি একজন জান্নাতি নারীকে বিয়ে করতে চাও?"
এইকথা শুনে জায়েদ ইবনে হারিসা (রা) নবীজির কাছে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন I
নবীজি হজরত উম্মে আইমান ( রা) এর সাথে কথা বলে বিয়ের আয়োজন করলেন I
বিয়ের দিন রাসূল (ﷺ) জায়েদকে বুকে জড়িয়ে আনন্দে ও ভালোবাসায়, ভেজা চোখে, কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন,
"তুমি কাকে বিয়ে করেছো, জানো জায়েদ ?"
-হাঁ, উম্মে আইমানকে I জায়েদের উত্তর I
নবীজি বললেন,
-"না, তুমি বিয়ে করেছো, আমার মা কে "
সাহাবীরা বলতেন,
রাসূল (ﷺ) কে খাওয়া নিয়ে কখনো জোর করা যেত না I উনি সেটা পছন্দ করতেন না I কিন্তু হজরত উম্মে আইমান একমাত্র নারী, যিনি রাসূল (ﷺ) কে খাবার দিয়ে "খাও".." খাও".. বলে তাড়া দিতেন I আর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে বসে থাকতেন I নবীজি মৃদু হেসে, চুপ চাপ খেয়ে নিতেন I
রাসূল (ﷺ) উনার দুধ মাতা হজরত হালিমা (রা) কে দেখলে যেমন করে নিজের গায়ের চাদর খুলে বিছিয়ে তার উপর হালিমা (রা) কে বসতে দিতেন ঠিক তেমনি মদিনা শরীফে হিজরতের পর দীর্ঘ যাত্রা শেষে হজরত উম্মে আইমান (রা) যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন নবীজি উনার গায়ের চাদরের একটা অংশ পানিতে ভিজিয়ে, হজরত উম্মে আইমান (রা) এর মুখের ঘাম ও ধুলোবালি নিজ হাতে মুছে দিয়েছিলেন
এবং বলেছিলেন,
"উম্মি ! জান্নাতে আপনার এইরকম কোন কষ্ট হবে না"
নবীজি (ﷺ) এর ওফাতের আগে সাহাবীদের অনেক কিছুই বলে গিয়েছিলেন I
সেই সব কথার মধ্যে একটা ছিল, হজরত উম্মে আইমান (রা) এর কথা I
বলেছেন,
"তোমরা উম্মে আইমানে (রা) এর যত্ন নিবে, তিনি আমার মায়ের মত I তিনিই একমাত্র নারী, যিনি আমাকে জন্ম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছেন I আমার পরিবারের একমাত্র সদস্য, যিনি সারাজীবন আমার পাশে ছিলেন I"
সাহাবীরা সেই কথা রেখেছিলেন I
গায়ের রং নয়, এক সময়ের কোন ক্রিতদাসী নয়, তাঁর পরিচয় তিনি যে নবীর আরেক মা I
মায়ের মতোই তাঁরা, এই বৃদ্ধা নারীকে ভালোবেসে আগলে রেখেছিলেন I
ইবনে হিশাম ও শেখ ওমর সুলাইমান, "Woman who cared forever

ফেইসবুকে আমি:: তাহমিদ হাসান
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×