somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তাজুল ইসলাম মুন্না
সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ালেখা করছি। পাশাপাশি অনলাইন জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করছি দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে। ব্লগে ফেরার ইচ্ছা বহুদিনের। একদিন হয়তো হুট করে আবারও রেগুলার হয়ে যাবো।

জ্ঞানের আলোতে যারা পুরো জগৎকে আলোকিত করে রাখে সেইসব শিক্ষকদের গল্প ((সদ্য কলেজ জীবনের সমাপ্তির পথে থাকা এক শিক্ষার্থীর মনের কথা))

০৬ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসিআইসি কলেজ থেকে লেখাপড়া কতোটুকু শিখেছি তা বলবোনা। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা শিখেছি সেটা হলো "জীবনের শিক্ষা"; যা পড়ালেখার পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে।। এই কলেজে ভর্তির পরে কড়াকড়ি দেখে নানান সময় নানান কটু কথা বললেও এইচ.এস.সি. পরীক্ষার প্রায় শেষের দিকে এসে কিছু ভালো কথা বলতে পারি শিক্ষকদের ব্যাপারে।

যাদের থেকে সবচেয়ে বেশি এই শিক্ষাটা পেয়েছি এবং যাদের কথা এই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন সেলিম স্যার, তাজুল স্যার, মানব স্যার, হামিদ স্যার, নজরুল স্যার, মিজান স্যার, আশরাফ স্যার, জহির স্যার, দেবনাথ স্যার আর তপু স্যার (স্যারের আসল নামটাই মনে থাকেনা মোটে। তবে গায়ক তপুর নামেই সবসময় তপু স্যার বলে ডাকি। স্যারও কখনো কিছু বলেনি এই নিয়ে)

আর ম্যাডামদের মধ্যে প্রিয় ম্যাডাম ছিলেন হাসান বানু ম্যাম, নাহিদ ম্যাডাম আর খায়েরুন্নেসা ম্যাডাম।

যাদের কথা বললাম তাদের সবাইকেই খুব কাছ থেকে চিনতে পেরেছি বলে একটা কথা বলতেই পারি। তা হলো, প্রত্যেক স্যার ম্যাডামের চিন্তাধারা, লাইফস্টাইল, কথার স্টাইল, ড্রেসআপ সম্পূর্ণ আলাদা‍! এটা এরকম যে, প্রত্যেকজন স্যার ম্যাডামকে আইডল হিসেবে মনে করা হলে তারা তাদের শিক্ষকদের জীবনধারার ভালোলাগা অংশগুলোকে ফলো করলেই হয়! যেমন আমি শুরু থেকেই যেটা চেষ্টা করেছি তা হলো,
১) কথা বলার স্টাইল আর চালচলনের ক্ষেত্রে ফলো করেছি সেলিম স্যারকে।
২) মানুষের সাথে আন্তরিক এবং ভাল ব্যবহার বলতে যা বুঝায় সেটা বানাতে চেয়েছি তাজুল স্যারের মতো। ছবি আঁকার শর্টকাট তৈরীতে তাজুল স্যারের জুরি মেলা ভার! বাংলা কলেজে জীববিজ্ঞান পরীক্ষার দিন মানুষের হৃদপিন্ড আঁকার জন্যে যখন প্রাথমিক শেডটা দিলাম তখন একজন টিচার খাতার দিতে অবাক হয়ে তাকালেন। ("এইডা আবার কিরাম হৃদপিন্ড"-টাইপের চাহনি) আসলেই সেটা হৃদপিন্ডের মতো ছিলোনা। তবে ঠিক ২মিনিট পরে এসে যখন দেখলেন ছবিটা আঁকা শেষ তখন তার চাহনিটা ছিল অবাক হবার!! মাত্র ২-৫মিনিটে মানুষের হৃদপিন্ড আঁকার তাজুল স্যারের কাছ থেকেই পাওয়া, যেখানে পেন্সিলের সমপরিমাণ ব্যবহার হয় ইরেজারেরও! স্যার একটা কথা প্রায়ই বলতেন, "বায়োলজীতে তোমার অস্ত্র হলো দুইটা। এক, "২বি" পেন্সিল। আর ২, ইরেজার!" অবশ্য পরে ২বি লিড পেন্সিল দিয়েই সব করেছি।
৩) নজরুল স্যার আর মানব স্যারের কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে করে সকল পরিস্থিতিতেই শান্ত থেকে এবং মাথা ঠান্ডা রেখে তা সামাল দেয়া যায়।
৪) আশরাফ স্যারের কাছ থেকে শিখেছি লাইফে "judgement"।
৫) জহির স্যার আর দেবনাথ স্যারের পারসোনালিটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো।
৬) তপু স্যারের কথা আর কি বলবো! কলেজে যেরকম মাইরের উপরে রাখতো।। :P :P স্যারের বাসায় শুনেছি সে ছেলেদের সাথে খুব ফ্রি ছিল। খুব গল্প করতো। কিন্তু তার বাসায় যাইনি কখনো। কিন্তু তার ঐ কড়াকাড়ির দেখেই তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধটা এসে পড়েছে।
৭) বাংলা সাহিত্য কি সেটা জানতে চাইলে খায়রুন্নেসা ম্যাডাম আর জহির স্যারের সাথে কথা বললেই হয়‍!!

ম্যাডামদেরকে ফলো করার কথা ছাত্রীদের। তবে নাহিদ ম্যাডাম যেই ছবি আঁকতো তা শুধু হা করে দেখতাম আর ভাবতাম, "ইশশশ! যদি অতো সুন্দর করে আমিও ছবি আঁকতে পারতাম!" :( আর হাসান বানু ম্যাডামের সাধারণ জ্ঞানের কথা কি বলবো।। দুনিয়ার তাবত বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতেন তিনি।

এ ব্যাপারে একটা কথা বলতে পারি। ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে খুব গো ধরলাম! "অনেক সহ্য করেছি বিসিআইসিকে! থাকুম্না আর এই কলেজে।।" চেইতা গিয়া বাসার জিনিসপত্র ভেঙ্গে পুরো অস্থির অবস্থা! আমার বাবা আমার একটু নিরীহ ধরনের। কোনক্রমেই আমাকে থামাতে না পেরে "টিসি" নেবার নামে কলেজে নিয়ে গেলেন। হাসান বানু ম্যাডামের কাছে গিয়ে বললেন, "ম্যাডাম, এইটা আমার ছোট ছেলে। কলেজে কি হয়েছে আমি জানিনা কিন্তু সে কিছুতেই এই কলেজে আর পড়তে চাইছেনা! ওর একই কথা যে এই কলেজে পড়লে নাকি সে এইচ.এস.সি-তে ফেল করবে!!!" আমি ভেবেছিলাম ম্যাডাম খুব রাগ করবেন। ম্যাডাম সুন্দর করে হাসি দিয়ে বললেন, "কোন চিন্তা করবেন না।" আমাকে বললেন, "কলেজ শেষ হলে দেখা করবে।" কলেজ শেষ হলে দেখা করার পর ম্যাডাম যেই কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন না আমি জীবনেও ভূলবোনা। সেইদিন দেখেছিলাম ক্লাসের বাইরের সম্পূর্ণ অন্যরকম এক ম্যাডামকে।

মানুষ বলে কলেজ লাইফের বন্ধুদের কথা। আমি বললাম শিক্ষকদের কথা।। বন্ধুদেরকে কতোটা মিস করবো জানিনা তবে সবচেয়ে বেশি মিস করবো এই শিক্ষকদের, যারা বইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি শিখিয়েছেন কিভাবে মানুষ হতে হয়। :(

অনেকদিন পরে আবার ইমোশনাল হলাম। কে বলে যে শিক্ষকরা কড়াকড়ি করে, তাদের মনে কোন ভালোবাসা নেই!! খুঁজে পাবার চেষ্টা করলে শিক্ষকদের সেই কড়াকড়ির মধ্যেই ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যাবে। অভাব শুধু খোঁজার সেই চোখের।।।

স্যার, আমরাতো ছাত্র মানুষ। আপনারা শিক্ষক। শিক্ষকরা বাবা মায়ের মতোন। বাবা-মায়ের সাথে আমরা অনেক সময়ই নিজের অজান্তে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি, তাদের মনে কষ্ট দেই। জানি যে আপনাদের মনেও মনের অজান্তেই অনেকসময় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। এটাও জানি যে আপনারা সেই কষ্টগুলোকে ভূলে ক্ষমা করে হৃদয় উজাড় করে আমাদের জন্যে দোয়া করেছেন। তবুও বলছি, "যদি কখন্ও কোন ভূল করে থাকি তবে ক্ষমা করবেন।" কখনো ভূলবোনা আপনাদের। কখনো না।।।



[[যারা জানেন না তাদেরকে বলছি। আমি এইবার ঢাকা বোর্ড থেকে এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিয়েছি। সবাই দোয়া করবেন আমার আর আমার জন্যে।]]

{{ছবিটা গুগল থেকে নেয়া। বিসিআইসির কেউ থেকে থাকলে ভালো করে দেখে বলুনতো! এটা দেখলে কোন স্যারের কথা মনে পড়ে।।}} ;)





-সবাই ভালো থাকবেন
হ্যাপি ব্লগিং
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×