যাদের থেকে সবচেয়ে বেশি এই শিক্ষাটা পেয়েছি এবং যাদের কথা এই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন সেলিম স্যার, তাজুল স্যার, মানব স্যার, হামিদ স্যার, নজরুল স্যার, মিজান স্যার, আশরাফ স্যার, জহির স্যার, দেবনাথ স্যার আর তপু স্যার (স্যারের আসল নামটাই মনে থাকেনা মোটে। তবে গায়ক তপুর নামেই সবসময় তপু স্যার বলে ডাকি। স্যারও কখনো কিছু বলেনি এই নিয়ে)
আর ম্যাডামদের মধ্যে প্রিয় ম্যাডাম ছিলেন হাসান বানু ম্যাম, নাহিদ ম্যাডাম আর খায়েরুন্নেসা ম্যাডাম।
যাদের কথা বললাম তাদের সবাইকেই খুব কাছ থেকে চিনতে পেরেছি বলে একটা কথা বলতেই পারি। তা হলো, প্রত্যেক স্যার ম্যাডামের চিন্তাধারা, লাইফস্টাইল, কথার স্টাইল, ড্রেসআপ সম্পূর্ণ আলাদা! এটা এরকম যে, প্রত্যেকজন স্যার ম্যাডামকে আইডল হিসেবে মনে করা হলে তারা তাদের শিক্ষকদের জীবনধারার ভালোলাগা অংশগুলোকে ফলো করলেই হয়! যেমন আমি শুরু থেকেই যেটা চেষ্টা করেছি তা হলো,
১) কথা বলার স্টাইল আর চালচলনের ক্ষেত্রে ফলো করেছি সেলিম স্যারকে।
২) মানুষের সাথে আন্তরিক এবং ভাল ব্যবহার বলতে যা বুঝায় সেটা বানাতে চেয়েছি তাজুল স্যারের মতো। ছবি আঁকার শর্টকাট তৈরীতে তাজুল স্যারের জুরি মেলা ভার! বাংলা কলেজে জীববিজ্ঞান পরীক্ষার দিন মানুষের হৃদপিন্ড আঁকার জন্যে যখন প্রাথমিক শেডটা দিলাম তখন একজন টিচার খাতার দিতে অবাক হয়ে তাকালেন। ("এইডা আবার কিরাম হৃদপিন্ড"-টাইপের চাহনি) আসলেই সেটা হৃদপিন্ডের মতো ছিলোনা। তবে ঠিক ২মিনিট পরে এসে যখন দেখলেন ছবিটা আঁকা শেষ তখন তার চাহনিটা ছিল অবাক হবার!! মাত্র ২-৫মিনিটে মানুষের হৃদপিন্ড আঁকার তাজুল স্যারের কাছ থেকেই পাওয়া, যেখানে পেন্সিলের সমপরিমাণ ব্যবহার হয় ইরেজারেরও! স্যার একটা কথা প্রায়ই বলতেন, "বায়োলজীতে তোমার অস্ত্র হলো দুইটা। এক, "২বি" পেন্সিল। আর ২, ইরেজার!" অবশ্য পরে ২বি লিড পেন্সিল দিয়েই সব করেছি।
৩) নজরুল স্যার আর মানব স্যারের কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে করে সকল পরিস্থিতিতেই শান্ত থেকে এবং মাথা ঠান্ডা রেখে তা সামাল দেয়া যায়।
৪) আশরাফ স্যারের কাছ থেকে শিখেছি লাইফে "judgement"।
৫) জহির স্যার আর দেবনাথ স্যারের পারসোনালিটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো।
৬) তপু স্যারের কথা আর কি বলবো! কলেজে যেরকম মাইরের উপরে রাখতো।।


৭) বাংলা সাহিত্য কি সেটা জানতে চাইলে খায়রুন্নেসা ম্যাডাম আর জহির স্যারের সাথে কথা বললেই হয়!!
ম্যাডামদেরকে ফলো করার কথা ছাত্রীদের। তবে নাহিদ ম্যাডাম যেই ছবি আঁকতো তা শুধু হা করে দেখতাম আর ভাবতাম, "ইশশশ! যদি অতো সুন্দর করে আমিও ছবি আঁকতে পারতাম!"

এ ব্যাপারে একটা কথা বলতে পারি। ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে খুব গো ধরলাম! "অনেক সহ্য করেছি বিসিআইসিকে! থাকুম্না আর এই কলেজে।।" চেইতা গিয়া বাসার জিনিসপত্র ভেঙ্গে পুরো অস্থির অবস্থা! আমার বাবা আমার একটু নিরীহ ধরনের। কোনক্রমেই আমাকে থামাতে না পেরে "টিসি" নেবার নামে কলেজে নিয়ে গেলেন। হাসান বানু ম্যাডামের কাছে গিয়ে বললেন, "ম্যাডাম, এইটা আমার ছোট ছেলে। কলেজে কি হয়েছে আমি জানিনা কিন্তু সে কিছুতেই এই কলেজে আর পড়তে চাইছেনা! ওর একই কথা যে এই কলেজে পড়লে নাকি সে এইচ.এস.সি-তে ফেল করবে!!!" আমি ভেবেছিলাম ম্যাডাম খুব রাগ করবেন। ম্যাডাম সুন্দর করে হাসি দিয়ে বললেন, "কোন চিন্তা করবেন না।" আমাকে বললেন, "কলেজ শেষ হলে দেখা করবে।" কলেজ শেষ হলে দেখা করার পর ম্যাডাম যেই কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন না আমি জীবনেও ভূলবোনা। সেইদিন দেখেছিলাম ক্লাসের বাইরের সম্পূর্ণ অন্যরকম এক ম্যাডামকে।
মানুষ বলে কলেজ লাইফের বন্ধুদের কথা। আমি বললাম শিক্ষকদের কথা।। বন্ধুদেরকে কতোটা মিস করবো জানিনা তবে সবচেয়ে বেশি মিস করবো এই শিক্ষকদের, যারা বইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি শিখিয়েছেন কিভাবে মানুষ হতে হয়।

অনেকদিন পরে আবার ইমোশনাল হলাম। কে বলে যে শিক্ষকরা কড়াকড়ি করে, তাদের মনে কোন ভালোবাসা নেই!! খুঁজে পাবার চেষ্টা করলে শিক্ষকদের সেই কড়াকড়ির মধ্যেই ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যাবে। অভাব শুধু খোঁজার সেই চোখের।।।
স্যার, আমরাতো ছাত্র মানুষ। আপনারা শিক্ষক। শিক্ষকরা বাবা মায়ের মতোন। বাবা-মায়ের সাথে আমরা অনেক সময়ই নিজের অজান্তে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি, তাদের মনে কষ্ট দেই। জানি যে আপনাদের মনেও মনের অজান্তেই অনেকসময় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। এটাও জানি যে আপনারা সেই কষ্টগুলোকে ভূলে ক্ষমা করে হৃদয় উজাড় করে আমাদের জন্যে দোয়া করেছেন। তবুও বলছি, "যদি কখন্ও কোন ভূল করে থাকি তবে ক্ষমা করবেন।" কখনো ভূলবোনা আপনাদের। কখনো না।।।
[[যারা জানেন না তাদেরকে বলছি। আমি এইবার ঢাকা বোর্ড থেকে এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিয়েছি। সবাই দোয়া করবেন আমার আর আমার জন্যে।]]
{{ছবিটা গুগল থেকে নেয়া। বিসিআইসির কেউ থেকে থাকলে ভালো করে দেখে বলুনতো! এটা দেখলে কোন স্যারের কথা মনে পড়ে।।}}

-সবাই ভালো থাকবেন
হ্যাপি ব্লগিং