somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড্ড অসময়ের উপলব্ধি!!

২৬ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আয়নাটা ভালই। কিনতে বেশ দাম নিলেও ভাল কাজ দিচ্ছে। তিন মাস আগে অনেক দাম দিয়ে কেনা পরিচ্ছন্ন বাঁধানো আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে আশফাককে এ কথা মনে মনে স্বীকার করতেই হল। কেননা সকালের স্নিগ্ধ আলোয় আয়নার ওপাশে তার যে প্রতিবিম্বটা দেখা যাচ্ছে তাতে তার গালের উপর বসে যাওয়া হাতের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । আগের দিন যখন আশফাক ঘুমুতে গেল তখনো এ দাগটা ওখানটাতে ছিলনা। প্রকৃতি কত বিস্ময়কর খেয়াল খুশিতে ভরা এই ভেবে হাসি পেল আশফাকের। যদিও তার গালের ঐ দাগের নিচে কেমন যেন কটমট একটা ব্যাথা মস্তিষ্কের কোন একটা স্থানে কিছু একটা ক্রিয়া করে তাকে বাজে একটা অনুভূতি দিচ্ছে। মস্তিষ্ক এও জানান দিচ্ছে যে, বসে থাকা দাগটা যে হাত থেকে তৈরী হয়েছে তা সাধারন যে কোন পুরুষের হাতের চেয়ে অনেক নরম ছিল, সে হাতটা নিশ্চয় কোন নারীরই হবে। ভেবে আবারও হাসি পেল আশফাকের। নরম হাত কি করে শক্ত ব্যাথা দিতে পারে এই সমীকরনটা মিলছেনা তার। এও আসলে প্রকৃতির একটা বিচিত্র খেয়াল হয়তো!

বারোটার সময়টা আশফাকের ঘরে বসে থাকার সময় নয়। শুক্রবার আর ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই তাকে এ সময়টাতে একটা জরুরী কাজে বেরুতে হয়। চাকরী নেই, পড়াশুনাটাও তাকে দিয়ে খুব বেশি হয়ে উঠেনি, তারপরও সময়টা তার অনেক ব্যস্ততায় কাটাতে হয়। মায়ের কাছ থেকে জোর করে কিছু টাকা নিয়ে সে বেশ কয়েকটা স্থান ডিজেল চালিত ডাবল ইন্জিন গাড়ির মত নাকের দুই ফুটা দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে পরিভ্রমন করে। বাসায় ফিরতে কখনো সন্ধ্যা হয়, আবার কখনো রাত। মাঝে মাঝে ফিরেও না। বাসায় আগে ফিরে এলে সে সবাইকে তটস্থ করে রাখে আর দেরীতে ফিরলেও তাদের জন্য দু:শ্চিন্তার খোরাক করে দেয়। আজও আশফাক বাইরে বেরিয়েছে।

বাসা থেকে বেরুতেই পেছন থেকে তার ইয়ারের দোস্ত ফারুক ডাক দিল, "আশফাক!! খাড়া।"
-খাড়াইছিতো, তাড়াতাড়ি আয়, জরুরি কাম আছে।
-জরুরী কাম মানে! তুই আইজও ওইহানে যাবি?
-যামুনা মানে? কি কস?
-কাইলকার কথা ভুইলা গেছস?
-কাইলকা কি হইসে?
-ক্যান সুইটির কতা মনে নাই তোর? এত তাড়াতাড়ি ভুইলা গেছস?
-হ, মনে আছে, তো কি হইসে?
-তুই সত্যিই কি আইজ ওইহানে যাবি?
-হ, যামুই।

ফারুককে নিয়ে আশফাক প্রতিদিনকার মত বালিকা বিদ্যালয় আর মহিলা কলেজগুলোর দিকে রুটিন ভ্রমনে এগুতে লাগল। রাস্তায় যেতে যেতে তাদের আরো অনেক দোস্ত জমে গেল। ছোটখাট এই মিছিল চলতে লাগলো একটা বালিকা বিদ্যালয়ের দিকে। বিদ্যালয়ের ছুটির ঘন্টা বাজতে আর বেশি দেরী নাই। সুইটিদেরকে ভালবাসার বাক্য ছুড়ে দেয়ার সুযোগটা মিস করতে চায়না বলেই আশফাকের দল একটু জোরে পা চালাল। স্কুলে আশপাশের গলিগুলো তাদের খুব পছন্দের জায়গা। তাদের প্রতিদিনকার এসাইনমেন্ট এ স্থানগুলোতে কোন রকম বাধা ছাড়াই পরিপূর্নতা পায়।

স্কুল ছুটি হয়েছে দুঘন্টা হয়ে গেছে। ভয়মিশ্রিত সুশ্রাব্য সুললিত গালি খেতে খেতে আশফাকের দল টায়ার্ড হয়ে গেছে। ছোট্ট একটা দেয়ালে চড়ে হালকা আড্ডা চলছে এখন। ফারুক হঠাৎ আশফাককে জিজ্ঞেস করলো, "সুইটি কিন্তু আইজ স্কুলে আহেনাই, ওয় মনে অয় ডরাইছে।"
-ডরাইলে ডরাকগা।
-কাইলকা কি তুই ব্যাথা পাইছস। ওর হাতডা যেমনে তোর গালের দিকে ফাল পাইড়া উঠছে, আমি তো ডরাইয়া গেছিলাম। চড় দিলে এত জোরে আওয়াজ অয় আগে জানতাম না।
-আরে ধুর! ব্যাথা পামু ক্যা? ব্যটা, দুনিয়াতে যা দেহা যায় তা পুরাপুরি সত্য অয়না। সুইটির সামাইন্য থাপ্পড়ে কি আর আমি ব্যাথা পামু? কি কস না কস! আর আওয়াজ তো অ্যামনেই অইছে।
-তুই যাই কস, আমার কিনতু শরম লাগছেরে। আমার আইজকা আইতে ইচ্ছা করে নাই। কেমন শরম লাগতাছিল। এত মাইনষের সামনে তোরে থাপ্পড় দিল! কি শরমের কথা!
-শরম কিয়ের! ধুর! এইসব কোন ঘটনাই না। মাইনষে দেখছে, তো কি অইসে? মনে কর কেউ দেহে নাই।
-মাইয়াডা আইজ আইলে কিন্তু আমি একডা দৌড় লাগাইতাম।
-ওয় আর আইবোনা।
-ওয় যদি কমপ্লেন করে, তহন কি অইব?
-ধুর, কার কাছে কমপ্লেন দিব? কেউ কিচ্ছু কইব না আমগোরে। অন্যের উপকার করার লাইগা এখন আর একডা মানুষেরও সময় অয়না। আর যদি দেয়ও, দিব এলাকার বড় ভাইয়েগো কাছে, হ্যায়রা তো আমগো মতই আছিল আগে। হ্যারা আমগোই বড় ভাই, আমগোরে কিছু কইবো না।

কিছুক্ষন ভেবে ফারুক আশফাককে জিজ্ঞেস করলো, "আইচ্ছা ক তো, আমরা কামডা কি ঠিক করতাছি? হুদাহুদি টাইম নষ্ট করতাছি, আবার মাইয়াগুলারে ডর দেহাইতাছি। আল্লায় তো আমগো উপরে গজব ফালাইবোরে।"
-কিয়ের আল্লা? মনে কর কুন আল্লা নাই। আল্লা থাকলে তো সব মজা শ্যাষ। নামাজ কালাম পইড়া সিধা চলা লাগব।
-আসলে তো আল্লা আছে। এত্ত বড় দুনিয়া কি অ্যামনে অইছে নি? কেউ না কেউ তো উপরে আছেই। আইজ হউক আর কাইল হউক, প‌্যাঁচে আমগোরে পড়তেই অইব।

============================================
অনেক বছর পর, আশফাক এখন বুড়ো মানুষ। শরীরের কর্মক্ষমতা এখন প্রায় নেইই। তারপরও কষ্ট করে সে বাইরে বেরোয়। দিনে পাঁচবার, লক্ষ্য থাকে মসজিদ। পুরোনো স্মৃতি গুলো আনন্দ দেয় না তাকে, কষ্টই বাড়ায়। জীবনের স্বর্ণোজ্জ্বল সময়টা কি বিচ্ছিরিই তার কেটেছে। জীবনটা হয়তো আরো পরিপূর্ন হতো, যদি সে সময়টাকে কাজে লাগানো যেত। পৃথিবীকে কত কিছুই না তার দেয়ার ছিল, পৃথিবী থেকেও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। সব শেষ, এখন শুধু দু:খটাই বাকি আছে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×