--------------মঙ্গলের কলমী বন্ধুর চিঠি--------------
---------------------------------------------------------------
সামহোয়ার ইনের প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা,
কেমন আছ? আশা করছি তোমরা আল্লাহর রহমতে ভালই আছ। তোমরা বোধহয় আমাকে চিনতে পারনি। আমি তোমাদেরও কিন্তু খুব ভাল করে জানি না। কিছুদিন আগেও আমি তোমাদের পৃথিবীর মানুষদের সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না। গত বছর মঙ্গলের নির্বাচিত প্রথম মুসলিম গভর্নর প্রথমবারের মত পৃথিবীর সাথে সহজ যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট সংযোগের ব্যপারে পদক্ষেপ নেন। তিনি মঙ্গল গ্রহের পার্লামেন্টে অত্যন্ত জোরালোভাবে একটি দাবি করেন। তিনি পৃথিবীর সাথে মঙ্গল গ্রহের মানুষদের মধ্যে সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা করার দাবী করেন। তাঁর যুক্তি মেনে নিয়ে পার্লামেন্ট তাঁর দাবীটি মেনে নেয়। পার্লামেন্ট পৃথিবীর সাথে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার আদেশ দেন। ইন্টারনেট আমাদের গ্রহে আগে থেকেই আমরা ব্যবহার করি। তবে আমাদের কম্পিউটার হতে পৃথিবীর ওয়েব সাইটগুলো ব্রাউজ করা যেতনা। এ আদেশের মাধ্যমে আমাদেরকে পৃথিবীর ওয়েব সাইট গুলো ব্রাউজ করার অধিকার দেয়া হয়েছে।
পৃথিবীর সাথে মঙ্গলের যোগাযোগের মাধ্যম হল শক্তিশালী মহাশূন্যীয় ওয়ারলেস প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি যতই শক্তিশালী হোক না কেন তা মঙ্গলের সাথে পৃথিবীর ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। মঙ্গলের সবার কাছে পৃথিবীর ওয়েবের সংযোগ দেয়ার জন্য প্রয়োজন আরো শক্তিশালী প্রযুক্তি, প্রয়োজন নতুন যন্ত্রপাতি। পার্লামেন্টের নিয়মতান্ত্রিক আদেশের পর থেকে মঙ্গলের সেরা গবেষকগন এ নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। সরকার সেরা আইটি বিশারদ, নভোচারী ও ইলেক্ট্রিকাল ইন্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি কার্যকরী টিম তৈরী করে। এই টিমের নাম দেয়া হয় 'টিম ব্যক টু রিলেটিভ' বা 'টিবিআর'। এ টিমের কাজ হলো মঙ্গলের মানুষদের পুরোনো আত্নীয়দের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া, তাই এই নামটি পছন্দ করা হয়েছে। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ একাজটি তাঁদের জন্য খুব সহজ ছিলনা। কেননা তোমাদের পৃথিবী আর আমাদের মঙ্গলের মাঝখানে মহাশূন্যের বিরাট দুরত্ব। এদুটো গ্রহের মাঝে ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া অসম্ভব। ওয়ারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমেই শুধু এ সংযোগ দেয়া সম্ভব। প্রায় ছয়মাসের চেষ্টায় 'টিবিআর' ইন্টারনেটের তথ্যের প্যাকেট আদান প্রদানের উপযোগী শক্তিশালি ওয়ারলেস প্রযুক্তির লজিকাল ফ্রেমওয়ার্ক দাঁড় করিয়ে ফেললেন। এ শক্তিশালি নেটওয়ার্কের জন্যে পৃথিবী ও মঙ্গলে দুটো বিশালাকৃতির শক্তিশালি তথ্য আদান প্রদান কেন্দ্র তথা সেন্ডার এন্ড রিসিভার স্টেষন তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। এরপর শুরু হলো এর বাস্তবায়নের কাজ। মঙ্গলের বিরান ভূমি 'গোজ মালভূমি”'তে আঠার কিলোমিটার জায়গা নিয়ে মঙ্গলের জন্য একটি স্টেসন তৈরী করা হয়। এই স্টেসনটি তোমাদের গ্রহে তথ্য অতি দ্রুত পাঠাতে এবং গ্রহন করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু তোমাদের গ্রহে ঘনবসতি হওয়ায় সেখানে স্টেষন তৈরী না করে তার উপগ্রহ চাঁদ-এ স্থাপন করা হয়। এর পাশাপাশি চাঁদের প্রধান স্টেষনের সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ রক্ষা করা হয় পৃথিবীর আরেকটি স্টেষনের মাধ্যমে। পৃথিবীর ঐ স্টেষনটি স্থাপন করা হয় মক্কার নিকটবর্তী মরুভুমিতে। একাজে সবচে বেশি সাহায্য করেছে নবনির্মিত বাংলাদেশের নভোবিজ্ঞান গবেষনা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও নভোচারীগন। মাত্র দুই বছরের মাথায় পুরো সিস্টেমটি সফলভাবে চালু করা হয়। আর প্রায় ছমাস হয়ে গেল আমরা নিয়মিত পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
আমাদের গ্রহে ইন্টারনেট ছাড়া একটি মিনিটও চলা সম্ভব নয়। তাই এ গ্রহের প্রত্যেকেই একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। আর ইন্টারনেটে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মঙ্গলবাসীর পদচারনার কারনে সবার সাথে সবার সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থানে পৌছেছে। আমরা সবাই সবাইকে সহজে জানতে পারি, একে অপরের খোঁজ খবর রাখতে পারি এবং সুখ-দু:খ সবাই ভাগাভাগি করে অত্যন্ত সুখি জীবন যাপন করি। পৃথিবীর সাথে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় আমাদের পরিসর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন মেসেন্জার সফটওয়ারের মাধ্যমে তোমাদের অনেকের সাথেই আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। আর সামহোয়ার ইনকে তোমরা যারা ব্লগিং এর মাধ্যমে মাতিয়ে রাখ তাদেরও অনেকের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। তোমাদের কাছ থেকেই আমি তোমাদের সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছি, তোমাদের গ্রহ সম্বন্ধে জেনেছি আর সব শুনে অবাক হয়েছি।
এবার আমার সম্বন্ধে বলি, আমার পূর্ব পুরুষ ছিলেন বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক। মঙ্গলে বসতি স্থাপনের শুরুতেই তিনি মঙ্গলের পথে পা বাড়ান। তিনি এখানে এসে এখানকার ভাষা একাডেমির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় পৃথিবীর অনেক ভাষার মধ্য হতে সবচে সুমধুর ভাষা অর্থাৎ বাংলা মঙ্গলের কথ্যভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এখানে বাংলা ভাষায় অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন এবং একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে সেখানে বাংলা চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেন। এখনো আমরা সবাই বাংলা ভাষাতেই কথা বলি এবং তার পাশাপাশি আরবী, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজী, মান্দালিন ও ফ্রেন্চকেও স্বল্প মাত্রায় ব্যবহার করা হয়।
আমি কৃষিতে পড়াশুনা করছি। আমার বাবাও একজন প্রতিষ্ঠিত কৃষক। এগ্রহে কৃষি হলো সবচে লাভজনক পেশা। এখানে কৃষিকাজ করা হয় অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগারে। পৃথিবী হতে সংগ্রহ করা বীজকে বিশেষভাবে প্রস্তুত তরলে রেখে পুষ্ট করা হয়। তার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গ্যাস চালনা করা হয়। পরিশেষে অনেক জটিল ধাপশেষে উদ্ভিদ হতে কৃষিজাত দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। তোমাদের একজন সেদিন জানাল যে, তোমাদের ওখানকার কৃষকরা নাকি বীজকে মাটিতে ফেলেই তা হতে নির্দিষ্ট সময় পরে শষ্য সংগ্রহ করে নেয়। এর মাঝে সামান্য কিছু যত্ন নিলেই হয় শুধু। অথচ আমাদের এখানে প্রতিটি মুহুর্তে উদ্ভিদের উপর নজর রাখতে হয়। নিয়মিত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, গ্যাস ও পুষ্টি উদ্ভিদে চালনা না করলে শেষ পর্যন্ত শষ্য উৎপাদন ব্যর্থ হয়ে যায়। বন্ধুরা, তোমরা অনেক সৌভাগ্যবান। তোমাদের গ্রহের মাটি কতই না বুদ্ধিমান আর পুষ্টিকর! তোমাদের একেক স্থানের মাটি একেক ধরনের শষ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া তোমাদের অজান্তেই সুচারুভাবে পালন করে তোমাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। আর আমাদের মাটিতে হাজার বছর ধরেও একটা জীবন তৈরী হওয়া সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে তোমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
তোমাদের পৃথিবীর আরেকটা জিনিস আমাকে অবাক করেছে। তা হল বায়ুমন্ডল। তোমরা কি জান, আমাদের প্রধান আমদানি পন্য কি? আমাদের গ্রহের পৃথিবী হতে সবচে বেশি যেটি আমদানি করা হয় তা হল তরল ও বায়বীয় অক্সিজেন। আমরা তোমাদের গ্রহ থেকে বিপুল পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনও আমদানী করে থাকি। কিছু অক্সিজেন আমদের গ্রহের কৃষকদের পরীক্ষাগারেও উৎপন্ন হয়, তবে বেশিরভাগই পৃথিবী হতে আমদানি করতে হয়। আমরা বায়বীয় অক্সিজেনকে নাইট্রোজেনের সাথে নির্ধারিত পরিমানে মিশিয়ে আমাদের নিশ্ছিদ্র করে নির্মিত গৃহে একধরনের বিশেষ গ্যাস চেম্বার তৈরী করি। এর ফলে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালু থাকে এবং আমরা বেচে থাকি। আর আমরা বাইরে বেরুবার সময় নিশ্ছিদ্র পাত্রে অক্সিজেন ভরে পিঠে বহন করে তার সাথে সংযুক্ত মাস্ক দিয়ে নাক মুখ ঢেকে নেই। আর আমাদের গাড়িগুলো চালানোর জন্য আমরা তরল অক্সিজেন ব্যবহার করি। একবার আমাদের গ্রহে অক্সিজেনের মজুদ অনেক কমে গিয়েছিল। সেবার পৃথিবী হতে অক্সিজেনের চালান আসতে খুব দেরী হচ্ছিল। আর বহনকারী যানের সাথে আমাদের যোগাযোগ হারিয়ে গিয়েছিল। যার ফলে সবাইই খুব ভয় পেয়ে গেছিল। কেননা অক্সিজেন ছাড়া আমরা যে কিছুতেই বেচে থাকতে পারবনা।আর তাছাড়া আমদানী করা এসকল গ্যাস দিয়েই আমাদের সবচে প্রয়োজনীয় আরেকটি জীবনোপকরন পানিও উৎপন্ন করা হয়। কৃষি উৎপাদনও অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি ছাড়া সম্ভব নয়। বন্ধুরা, তোমাদের পৃথিবীতে নাকি কাউকে অক্সিজেন কিনতে হয়না! কি অবাক করা ব্যপার। তোমাদের পৃথিবীর অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া 'উইকিপিডিয়া'তে জানতে পারলাম তোমাদের গ্রহের চারপাশে একটা বিশেষ গ্যাসীয় স্তর রয়েছে যাতে তোমাদের শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদার্থ রয়েছে। তোমরা সত্যিই সৌভাগ্যবান আর আল্লাহ কত মহান। এজন্যেও তোমাদের উচিত সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে নিয়মিত কৃতজ্ঞতা পেশ করা।
আমার খুব ইচ্ছে করে তোমাদের সুন্দর আর সজীব পৃথিবীতে চলে আসতে। মঙ্গলের বিরানভূমি আমার একটুও ভাল লাগেনা। আজ এখানেই শেষ করছি। ইনশাআল্লাহ পরে আরো অনেক কথা হবে। আর তোমরা কিন্তু আমাকে লিখতে ভুলে যেওনা। তোমাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থেকো সবাই।
তোমাদের ভিন্নগ্রহবাসী কলমী বন্ধু,
তা-সীন
১৯.০২.২১৫০
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




