somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপিকে জিয়ার আদর্শে ফেরার উপদেশ প্রসঙ্গে

২৫ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিএনপিকে জিয়ার আদর্শে ফিরে যাওয়ার উপদেশ কোনো কোনো মহল থেকে দেয়ার কথা প্রায়ই শুনতে পাই। এর মানে হচ্ছে বিএনপি এখন জামায়াতের সঙ্গে আছে। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলেই তাদের কথামতো বিএনপি জিয়ার আদর্শে ফিরে গেছে এমনটি যেন বলা যাবে। দেশের প্রিন্ট মিডিয়ায় লেখালেখি, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে বলাবলি করেন এমন পরামর্শদাতার সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনেকেই এমনটিই গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। আওয়ামী লীগ করেন না, সমালোচনা করেন, বিএনপি করেন না- এমন ভাবাপন্ন অনেকেই বিএনপিকে প্রায়শই এমন পরামর্শ দিতে শোনা যাচ্ছে, তাদের লেখালেখিতেও এর যথেচ্ছ প্রমাণ রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব রাষ্ট্রপতি পদ থেকে নিষ্ঠুরভাবে বিতাড়িত ডা. বি চৌধুরী একটি বইয়ের আলোচনা সভায় বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘বিএনপিকে আবার জিয়ার বিএনপিতে ফিরে যেতে হবে’। ১৩ জুনের প্রায় সব দৈনিকেই খবরটি আছে। বি চৌধুরী আরো বলেছেন, বিএনপিতে এখন জিয়ার রাজনীতি নেই, … বর্তমানে চলছে জামায়াত নির্ভর খালেদার রাজনীতি। বি চৌধুরী অবশ্য জিয়ার রাজনীতির আদর্শ, বৈশিষ্ট্য বা সাংগঠনিক মাহাত্ম্যের কোনো বিবরণ দেননি। তবে এক লাইনে বলেছেন, ‘তিনি (জিয়া) গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন’। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. বি চৌধুরী জিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে যে কথাটি বলেছেন এটি কি জিয়ার রাজনীতি বা জিয়ার বিএনপিকে বিশেষায়িত করার জন্য যথেষ্ট? বি চৌধুরী এখন বিকল্পধারার সভাপতি, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি, শিক্ষিত মানুষ এবং রাজনৈতিক পরিবারেরও মানুষ। তার পিতা কফিলউদ্দিন চৌধুরীও ছিলেন একজন ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ। তার (বি-চৌ) ছেলে মাহী বি চৌধুরীও তার সঙ্গে বিএনপি করেছেন, ছেড়েছেন, বিকল্পধারা গড়েছেন। পেশাগত জীবনে অধ্যাপক বি চৌধুরী একজন জনপ্রিয় চিকিৎসক, সুবক্তা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তার চেহারায় এখনো রয়েছে। তবে তার রাজনৈতিক মূল্যায়নের সীমাবদ্ধতাই বলে দেয় কেন তিনি এক সময় বিএনপি করতেন, কেন তিনি এখন বিকল্পধারা নামক একটি দল গঠন করেও তিনি বিএনপির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছেন! এক সময় কিছুদিনের জন্য মহাজোট গঠনেও জড়িত থেকে আবার আপন আদর্শের ডেরায় ঘোরাফেরা করছেন! সম্ভবত সেখানেই তার বাকি জীবন কেটে যাবে।
বি চৌধুরীকে রেখে আমরা অন্যদের উপদেশ সম্পর্কে আলোচনায় ফিরে আসি। যারা বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে জিয়াউর রহমানের আদর্শে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা বিষয়টি কখনো বিশ্লেষণ করে খোলসা করেছেন বলে আমার মনে পড়ে না। কথা বা লেখাগুলো কানের পাশ কেটে বাতাস চলে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছে। যারা এভাবে বলেন তারা বেশ বুদ্ধিমান! আমরা মনে হয় খুব মুখ্যসুখ্য মানুষ! রাজনীতি হয়তো তাদের মতো ততটা বুঝি না! তবে বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে উপদেশ দেয়ার মানুষের কোনো অভাব নেই। এদের উপদেশের মাহাত্ম্যে পড়ে রাতদিন, ভালোমন্দ, রাজনীতি, অপরাজনীতি, আদর্শ, আদর্শহীনতা সবই যেন একাকার হয়ে গেছে! রাজনীতিবিদ আর রাজনীতিবিরোধী ব্যক্তিকে গুলিয়ে ফেলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে বেশির ভাগ মানুষ। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম, কর্মসূচি আর নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনীতিবিদের অবস্থান যখন এসব আলোচক, লেখক এবং বুদ্ধিজীবীর কাছে হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া উর্দিপরা কোনো সামরিক কর্মকর্তার চেয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে তখন বুঝতে হবে এসব ‘পণ্ডিতের’ মনোজগত বুদ্ধিদীপ্ত আলোকিত জ্ঞানে উদ্ভাসিত হয়নি, এককথায় এরা হিপোক্রেট।
বলা হয়ে থাকে জিয়াউর রহমান জামায়াতকে নিয়ে একজোট হয়ে রাজনীতি করেননি। কথাটি বাহ্যত আংশিকভাবে ঠিক। হ্যাঁ, তিনি জামায়াতকে নিয়ে জোট বেঁধে রাজনীতি করেননি। কিন্তু তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত এবং সব সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে এনেছেন। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪-৫ বছরের মধ্যেই স্বাধীনতাবিরোধী অপরাধী শক্তিকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ নামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন- যখন এ দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল, এ সব দলের নেতাদের প্রায় সবাই দেশের বাইরে বা ভেতরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। তিনি দালাল আইন স্থগিত করলেন। জেলখানা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিলেন, নিজে মন্ত্রিসভা গঠন করলেন। তাতে প্রধানমন্ত্রী পদে বসালেন শাহ আজিজের মতো একজন স্বাধীনতাবিরোধীকে, আবদুল আলীমের মতো একজন নরঘাতককে মন্ত্রী পদে বসালেন, সবুর খানদের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার বাতাবরণ তৈরি করে দিয়েছিলেন। গোটা দেশে তখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়ে চলার ক্ষেত্রে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হলো। বঙ্গবন্ধুর নাম তখন উচ্চারণ করা যেত না, তাঁর ছবি, আদর্শ যারা ধারণ করেন তাদের হেনস্তা করা হতো, বাঁকা চোখে দেখা হতো, চারদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা তুঙ্গে ওঠেছিল, অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভয়ে নিজের মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলেছিলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গোলাম আযমকে আসার এবং থাকার ব্যবস্থা করা হলো, জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার অনুমতি দেয়া হলো। ঢাকা শহরে তখনো রাতে সান্ধ্য আইন, দিনে রাজনীতির ওপর কঠোর নজরদারিত্ব চলছিল। রাজনীতি বেতার এবং টিভিতে জিন্দাবাদ ফিরিয়ে আনা হলো, জয় বাংলা নির্বাসিত হলো।
১৫ আগস্টের পর পরই প্রথমে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান নিযুক্ত হলেন। বিতাড়িত হলেন সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের এমন পুরস্কারপ্রাপ্তি কোনো সহজ কথা নয়, যাকে-তাকে এটি দেয়া হয় না। নিশ্চয়ই অভ্যুত্থানের সহযাত্রীরাই তা পেয়েছেন। অভ্যুত্থানের ১০ দিনের মাথায় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান লে. জে. পদেও উন্নীত হলেন। এটিও কোনো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না, পরিস্থিতির পুরস্কার একেই বলে। ৭ নভেম্বরের পর তিনিই মূল আসনে আসার পথ প্রশস্ত করা হলো। তারপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা বাংলাদেশের রাজনীতি দ্রুত অপসারিত হতে থাকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পঠনের ধারা চালু হলো। জিন্দাবাদ ফিরে এল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতিস্থাপন হলো, ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে আল্লাহর ওপর বিশ্বাসকে জুড়ে দেয়া হলো। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সব শক্তিকে অবাধে মাঠে নামার ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। নিজের সরকার, দলসহ সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হলো। সংসদ সদস্য হিসেবে যাদের মনোনয়ন প্রদান করা হলো তাদের বেশিরভাগই সাম্প্রদায়িক এবং উগ্র হঠকারী বাম রাজনীতির ধারক-বাহক ছিল- যারা রাজনীতির আঁস্থাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই সংসদে জামায়াতের সাবেক কয়েকজন নেতা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) পরিচয়ে জয়লাভ করে আসেন। বাংলাদেশের রাজনীতির এমন নিষ্ঠুর যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান নিজেই।
‘আবির্ভূত’ নেতারা এমনই হন এমনই করেন। কেননা তারা কোনো ‘মিশন’ নিয়েই আসেন, হাজির হন। নেতা হিসেবে বেড়ে ওঠা, গড়ে ওঠা, ত্যাগ স্বীকার করা, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দায় নেয়ার মতো প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তাদের জন্ম হয় না। সুতরাং এরা রাজনীতির নেতা নন, বরং এক সময় এদের দায়িত্বই ছিল রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতির ওপর খবরদারিত্ব করা, ভাঙচুর, তছনছ করা, রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। সেই দীক্ষা নিয়ে যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ এক দশক কাজ করেছেন, তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেড়ে ওঠা তাদের পক্ষে খুব সহজ কাজ নয়। রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ ইত্যাদি অবস্থানে যাওয়ার কোনো প্রক্রিয়া তিনি শুরু বা অতিক্রম করেননি, ফলে এদের হাতে পড়ে রাজনীতি কতটা সততা, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি আদর্শকে ধারণ করবে- তা বলাই বাহুল্য। সে কারণে জিয়াউর রহমান শুরুতেই বলেছিলেন যে তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেবেন। তিনি শুরু থেকে যা করলেন তা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য খুবই জটিল এবং কঠিন করে দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিলেন, দলগুলোকে ভেঙে তছনছ করে দিলেন, নেতাদের জেলখানায় পাঠালেন এবং রাজনীতির মাঠে ছেড়ে দিলেন স্বাধীনতাবিরোধী সব অপশক্তি ও জামায়াতকে। তাহলে কিভাবে বলা হয়, জিয়াউর রহমান যে রাজনীতি করেছেন তাতে জামায়াত ছিল না? এটি প্রকৃত সত্যের ঠিক বিপরীত একটি ধারণা তৈরি করা হয়। জিয়াউর রহমানের প্রতি তাদের দুর্বলতা ও আনুগত্য প্রকাশ থাকতেই পারে। সেটি তারা প্রকাশ্যে বললেই পারেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, জামায়াত বিরোধী রাজনীতির ধারক-বাহক এগুলো বলা মানুষের সঙ্গে মহাপ্রতারণা করা। জিয়াউর রহমান জামায়াতকে দেশে ফিরে এনেছেন, পুনবার্সিত করেছেন। খালেদা জিয়া আশির দশকে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে জোট বেঁধে ‘আন্দোলন’ করেছেন, ১৯৯১ সালে গোপন জোট বেঁধে নির্বাচন করেছেন, ১৯৯৯ সালে জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোটসহ ৪ দলীয় জোট গঠন করে ২০০১ সালে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছেন, বিজয়ী হয়ে জামায়াতকে ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব দিয়েছেন, দেশে জঙ্গিবাদের অবাধ লাইসেন্স দিয়েছেন, আওয়ামী নিধনের জামায়াতি মিশন বাস্তবায়নে সায় দিয়েছেন, ২০১০-১১ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতের পাশে অবস্থান নিয়েছেন, ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩ সালের ৫ মের হেফাজতি সহায়তায় জামায়াতের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে মদদ দিয়েছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করে সরকার উৎখাতের ব্লুপ্রিন্ট, দাবার ঘুঁটির ছক বসিয়েছিলেন, এবারেও ৫ জানুয়ারিতে ঢাকা অবরোধ ও সরকার উৎখাতের গোপন ছকে জামায়াতের শক্তির ওপর নির্ভর করেছেন খালেদা জিয়া। আসলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক খালেদা জিয়ার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, হয়েছে স্বয়ং জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই। উদ্দেশ্য পাকিস্তানি ভাবাদর্শের জিন্দাবাদী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। এই আদর্শ জিয়াউর রহমানের অন্তরে যেভাবে ষাটের দশকে বাসা বেঁধেছিল, সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পেয়ে তাই তিনি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেন। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের অনুরূপ বাংলাদেশও হবে ধর্মভিত্তিক। সেটিই তিনি তার রাজনীতির জন্য প্রতিষ্ঠিত দলের আদর্শে পুনঃস্থাপন করেছেন। ১৯৭৭-৮১ সালে উচ্চারিত জিয়ার ভাষণগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তাই কেবল ভেসে ওঠে। গবেষকরা জিয়ার ভাষণ, প্রশিক্ষণ বক্তৃতা পড়ে দেখতে পারেন। ডা. বি. চৌধুরী তখন জিয়াউর রহমানের পাশেই ছিলেন, তাকেও জিয়ার কাছে রাজনীতির এসব লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। গরু, গাধা এবং বাঘে কিভাবে একত্রে ঘোলাজল ও কাদাজল খেয়েছিল তার ছবি এখনো হারিয়ে যায়নি। আগ্রহী যে কেউ তা দেখে নিতে পারেন।
কথা হচ্ছে, জিয়াউর রহমানের সেই খাল কেটে কুমির আনার রাজনীতি আসলেই জামায়াতকে মিত্র হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ও বিকাশের ধারার সূচনা করা হয়েছে তা খালেদা জিয়া অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করছেন বললে মোটেও ভুল করা হবে না। জামায়াত এবং বিএনপি এখন এতটাই একাকার হয়ে গেছে যে, বিএনপির ভেতরে জামায়াতের প্রতি অনুগত নেতাকর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা কত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া খুবই কঠিন কাজ। জামায়াত অনেক আগেই বিএনপির ভেতরের সব স্টেশনে তাদের পাহারাদার বসিয়ে রেখেছেন। সুতরাং বিএনপি চাইলেও জামায়াত থেকে সম্পর্ক ছেদ করে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা- সন্দেহ আছে। কেনই বা তারা আলাদা হবে এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। উভয় দলের মূল লক্ষ্যে খুব বেশি প্রভেদ আছে কি?
আওয়ামী বিরোধিতা, ভারত বিরোধিতা, হিন্দু বিরোধিতা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা, ধর্মের নাম ব্যবহার করা, সুবিধা আদায় করা- বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে এমনই একটি দর্শনে প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনা নিয়েই জিয়ার হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। সেই মিশন এখনো শেষ হয়নি। তবে উভয় শক্তিই তাতে অনেকটা সফল হয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষকে তারা চরম বিভ্রান্তিতে ফেলে গণতন্ত্রের রাজনীতিতে মহাবিপদে নিক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশ রাজনীতির এমন জটিল এক সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন বিভ্রান্তিতে অনেক জ্ঞানীগুণীজনও রয়েছেন, সাধারণ মানুষ তো রয়েছেই। খুব নির্মোহভাবে এসবকে যত দিন আমরা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে পারব না, ততদিন এ থেকে উত্তরণ খুব সহজ কাজ নয়। কবে আমরা সেই পথে হাঁটব, সেই মেধা দেশপ্রেম ও রাজনীতি সচেতনতার পরিচয় দেব- তা দেখার অপেক্ষায় আছি। সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৭:৩৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×