চারদিকের সকল আত্বীয় স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া শেষ ,গরীব মিসকিন সকলকে জাননোর কাজও শেষ ,বাড়ীতে একে একে সকল আত্বীয় স্বজনরা এসে হাজির হচ্ছে একটি বিশেষ দিনের জন্য ,কিসের জন্য ,দুঃখিত এই আসল কথাটায় আপনাদের বলা হয়নি।২১ ফেব্রয়ারীর এই দিনে জাহিদ সাহেবের বাবা ও ভাই এক একসিঢেন্টে মারা যায় গত তিন বছর আগে ,এই কারনে তাদের আত্বার রুহের মাগফিরাত কামনার জন্য এই বিশেষ দিনের আয়োজন ।আজ ২০ ফেব্রয়ারী জাহিদ সাহেব তার এক বন্ধুর সাথে আলাপ করতেছিল । জাহিদ সাহেবঃসকল মেহমান এসে পৌছেছে? বন্ধুঃহ্যা সবাই পৌছেছে তবে একটা ফ্যামিলি বাকি আছে তারা বিকালে এসে পৌছে যাবে। জাহিদ সাহেব হঠাৎ থমকে গিয়ে বললেনঃ আমরা তো আসল মেহমান কে এখনো দাওয়াত দেয়নি,হুজুরদের কালকে কুরআন খতম দেওয়ার কথা এবং হুজুর ছাড়া দোয়া করবে কে? বন্ধুঃরাখ সকল মেহমান আছে আবার হুজুর টুজুর কি দরকার আমরা তো আছি । জাহিদ সাহেব একটু রাগ হয়ে বললেনঃ তুমি কি দাদা বাদাদের দলে যোগ দিয়েছ নাকি এমন ভাবে কথা বলছ কেন তুমি কি জাননা হুজুরদের ছাড়া কোন দোয়া হয়না উনারা হলেন আল্লাহ ওয়ালা মানুষ তাদের দোয়া কবুল হয়।এই কথা বলে জাহিদ সাহেব বের হয়ে গেলেন হুজুরকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য । জাহিদ সাহেব বাড়ী এসে বললেন ,কিছু হুজুর মাগরিবের পর এসে কুরআন খতম করে যাবেন এবং আগামিকাল সবাই একসাথে আসবেন দোয়া করার জন্য ,এই জন্য হুজুরদের কে একটি ভাল জায়গা যেন ঠিক করে দেওয়া হয় ,এই কথা বলে মসজিদে চলে গেলেন মাগরিবের নামাজের জন্য । মাগরিবের পর জাহিদ সাহেবের সহধর্মীনি হুজুরদের জন্য একটি ভাল জায়গা ঠিক করে দিলেন।যথাসময়ে হুজুররা এসে কুরআন পড়া শুরু করে দিলেন।জাহিদ সাহেব এবং তার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এসে কুরআন পড়া শুনতেছিল,এমন সময় জাহিদ সাহেবের বাড়ির গোরুস্হানের সামনের মাঠ থেকে এক বিকট আওয়াজে গান বাজানো শুরু হল আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি ,একে একে শুরু হতে লাগল হিন্দি ও ইংলিশ শরির নাচানো গান।জাহিদ সাহেব কিছুক্ষন চুপ ছিলেন এবং কুরআন শুনতে ছিলেন কেননা আগমিকাল একুশে ফেব্রয়ারী যে দিন বাংলার কিছু সাহসী যুবক তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়ে ছিল।কিন্তু এদিকে হুজুররা গানের আওয়াজে কুরআন পড়তে পারছেনা ,তাই জাহিদ সাহেব বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলেন এবং তাদের গিয়ে বললেন কালকে আমার বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যু বার্ষিকী তাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য কুরআন খতম হচ্ছে আমাদের বাড়ীতে, তাই তোমরা একটু গানের আওয়াজ নিচু করে বাজাও ।তারপর তারা যে উত্তর দিল তাদের উত্তর শুনে জাহিদ সাহেব একবারে ত হয়ে গেলেন ,তারা বলল আপনি আপনার বাবা ভাইয়ের রুহের মাগফিরাতের জন্য কুরআন খতম করছেন, আর আমরা আমাদের ভাইদের মাগফিরাতের জন্য গান খতম করছি,যান যান বাড়ি গিয়ে কুরআন শুনেন ।জাহিদ সাহেব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি দিকে পা বাড়ালেন উনি যখন একটু দূরে গেলেন একটা ছেলে বলতে লাগল ,সালা রাজাকারের বাচ্চা একুশে ফেব্রয়ারী মানেনা আমরা এখনে গান দিয়ে তাদের স্বরণ করছি তিনি আসছেন উনার বাবা ভাইয়ের কুরআন খতম নিয়ে দেশটা পুরাই রাজাকারে বড়ে গেছে।বাড়ী পৌছে জাহিদ সাহেব এই ব্যপারে কিছু বললেন না যাতে কোন ঝগরা সৃষ্টি না হয় কালকে উনার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী ।সকাল বেলা সবাই গোসল করে পরিস্কার হয়ে যোহরের নামাজের জন্য প্রস্ততি নিল,নামাজ শেষ করে সকল মেহমানরা এসে পৌছার পর হুজুরদের নিয়ে কবরস্হানের দিকে রওয়ানা দিল জিয়ারতের জন্য ,যখন কিছু কুরআন তেলাওয়াতের পর দোয়া শুরু করার জন্য হাত তুলল তখনি আবার গান বাজানো শুরু করল, হুজুর দোয়া বন্ধ করে দিল এবং বলল যেখানে গান বাজনা হয় সেখানে ফেরেশতা আসেনা এবং সেখানে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়না এর জন্য কবরের মুর্দারদের কষ্ট হয়।তারপর হুজুর সেই যুবকদের কাছে গিয়ে তাদের বুঝালেন, যে দেখ গান বাজনা করে কোন মৃত্যু ব্যক্তিকে স্বরণ করা বোকামি কারন গান বাজনার কারনে তাদের কবরে শান্তির বদলে অশান্তি হয় ।তোমরা বল তোমাদের যদি বাবা বা মা মারা যায় তুমি কি তাদের মাগফিরাতের জন্য গান বাজনা বাজিয়ে দোয়া কর ,অবশ্যয় না তবে যারা আমাদের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে তারা তো আমাদের ভাই ,হয়ত তাদের আত্বীয় স্বজন কেউ বেচে নেই তাদের জন্য দোয়া মাহফিল করা হয়না ,তবে আমরা কেন তাদের এই মৃত্যু বার্ষীকিতে গান বাজনা বাজিয়ে তাদের অযতা গোনাহের অংশিদার বানাচ্ছি তারা যদি আমাদের নামে আল্লাহর দরবারে আমাদের ব্যপারে নালিশ করে, আমরা কি তার জবাব দিতে পারব ,তবে আমরা কেন নিজেও গোনাহের অংশিদার হব অন্যকেও অংশিদার বানাবো। চল আমরা সবাই সকল ভাষা শহিদদের জন্য এবং আজকে যারা মারা গেছে সকলের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত ও আমাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া প্রার্থনা করি।তারপর সকল যুবক ও সকল মুসল্লি নিয়ে আজকের দিনের সকল মুর্দারদের জন্য দোয়া করা হল।
একটি একুশে ফেব্রয়ারী ও মৃত্যু বার্ষিকী ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:
وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।