somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরকীয়া থেকে সমাজকে বাঁচাতে হবে

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন আগে থেকে শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করে আসছিল তার মা। একদিন পর সেই শিশু-সামিউলের মৃতদেহ রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে মেরে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল। ঘটনাটি ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকার। ঘটেছে এই জুনের ২০ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে কোনো এক দিন। মর্মান্তিক ঘটনা! পাঁচ বছরের একটি শিশুকে মেরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। একটি শিশু হত্যা অবশ্যই মর্মান্তিক কিন্তু এ রকম মর্মান্তিক ঘটনাই যে, অনেক বেশি মর্মান্তিক হয়ে ওঠতে পারে আরো কিছু কারণে, সেটা জানা গিয়েছে মৃত শিশুটি উদ্ধার হওয়ার তিন-চার দিনের মধ্যেই। সন্দেহ হওয়ায় শিশুর মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বেরিয়ে আসতে থাকে পিলে চমকানো সব তথ্য। শিশুটির মা এবং মায়ের অবৈধ প্রেমিকই যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা পুলিশের কাছে দেওয়া তাদের জবানবন্দি থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। র্যা্ব ও পুলিশের কাছে নিহত শিশুটির মা এবং সেই অদ্ভুত মায়ের প্রেমিকের দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে মর্মান্তিক ঘটনার এই পিলে চমকানো খবরটি প্রকাশ পেয়েছে। দু’জনই শিশু হত্যার বিষয়ে এমন কিছু কিছু কথা বলেছে, তবে হত্যাকাণ্ডে যে দু’জনই জড়িত তা প্রকাশ পেয়েছে। স্তম্ভিত হয়ে গোটা দেশের মানুষ দেখল, একজন মা তার শিশু সন্তানকে হত্যা করল কিংবা নিজ হাতে হত্যায় সহযোগিতা করল। শিশুহত্যার চেয়ে অনেক গুণ ভয়াবহ হল, মায়ের হাতে শিশু হত্যার এই ঘটনা। একজন মায়ের পক্ষে এত নিষ্ঠুর ও অমানুষ হওয়া কীভাবে সম্ভব হল-অবাক করা এ প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে ওঠেছে। সংবাদ মাধ্যমের বর্ণনায় জানা গেছে, শিশুটির মায়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল এক পুরুষের। সে সম্পর্ক এতই গাঢ় ও কুৎসিত ছিল যে, পাঁচ বছরের শিশু সন্তানটিও তাতে অস্বস্তি বোধ করছিল। আর সে কারণেই অবৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ শিশুর মা ও মায়ের প্রেমিক তাদের অবৈধ সম্পর্কের পথের কাঁটা সরানোর উপায় হিসেবে শিশুটিকে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। প্রাথমিক স্বীকারোক্তি থেকে আপাতত এতটুকু জানা গেছে। হত্যাকারী দু’জনের কে কীভাবে শিশুটিকে হত্যা করেছে, কে সাহায্য করেছে, কে ফেলে এসেছে এসব বিষয়ে আরো পরিষ্কার তথ্য হয়তো সামনের দিনগুলোতে বের হয়ে আসবে। তবে মানবীয় মমতা ও নির্মমতার বিবেচনায় সে বিষয়গুলো বড় কোনো ঘটনা নয়। সন্তান হত্যার মতো মাতৃত্বের এত ভয়ংকর পতনের সামনে অন্য কোনো প্রশ্নকে বড় করে দেখার কোনো সুযোগ কি আছে? এখানে প্রশ্ন একটিই। কেন ঘটল এই পতন? এ প্রশ্নের উত্তরে দেখা যাচ্ছে, বিবাহিত নারী-পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ক বা পরকীয়াই এ ঘটনার পেছনের মূল কারণ ছিল। অথচ ঘটনাটি ঘটে যাওয়া ও প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মূল এই কার্যকারণটি নিয়ে মিডিয়ায় কোনো আলোচনাই আসেনি। সেই মনির-রীমা, খুকুর ঘটনা থেকে নিয়ে আদাবরের এই শিশু সামিউল পর্যন্ত কেবল পরকীয়া বা বিবাহিত নর-নারীর অবৈধ সম্পর্কজাত হত্যকাণ্ডের প্রকাশ্য ঘটনা খুঁজলে এদেশে কয়েক শত ঘটনার সন্ধান মিলবে। এর মধ্যে স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে এবং মা সন্তানকে হত্যার ঘটনাও রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে অবৈধ সম্পর্কটি কেবল আখেরাতকেই বরবাদ করে না দুনিয়ার জীবনেও রক্তপাত ও নির্মম হত্যার মতো ঘটনার উপলক্ষ হয় সেই পরকীয়া কি এ সমাজে বন্ধ আছে কিংবা বন্ধ হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে? নর-নারীর অবৈধ সম্পর্কের অনুকূল পরিবেশ সযত্নে লালন করলে সে সম্পর্কের বিষ ও দূষণ তো যখন তখন সমাজে প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। নর-নারীর প্রাক বিবাহ ও বিবাহোত্তর সব রকম অবৈধ সম্পর্কের বিরুদ্ধে ইসলাম বহু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আমাদের সমাজ সেগুলো ভুলে যেতে বসেছে। ইসলামের বিচার ও আইনী ব্যবস্থায় বিবাহিত নর-নারীর অবৈধ সম্পর্ককে অধিকতর কঠোর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে রিপুতাড়িত বুদ্ধি ও যুক্তি তাকে আঘাত করেছে। আজ বিষাক্ত পরকীয়ার প্রতিক্রিয়া এই হয়েছে যে, মমতাময়ী মায়ের হাত পিশাচ খুনীর হাতে পরিণত হয়েছে। আবহমান কাল থেকে মানুষ কেবল নয়, প্রাণীমাত্রের মাঝেই মা ও সন্তানের পরস্পরের যে বন্ধন তাতেই এখন ফাটল ধরার ঘটনা ঘটছে। এরপরও যদি নারী-পুরুষ সম্পর্ক, দাম্পত্য, যৌন-নৈতিকতা বিষয়ে ইসলামের শিক্ষার দিকে আমরা মনোযোগী না হই তাহলে আর কবে আমাদের হুঁশ হবে! শিশু সামিউলের মর্মান্তিক হত্যার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আর সামিউলের মায়ের মতো মায়েদের হাতে সন্তান-খুনের ঘটনায় আমরা ভয়ংকর রকম উদ্বিগ্ন। সমাজকর্তারা যদি উদ্যোগী না হন তাহলে সম্পর্কের বিপথগামীতার কারণে আপন সন্তানের হন্তারক হাজার হাজার মায়ের জন্ম হতে পারে এ সমাজে। পরকীয়ার অভিশাপকে সমাজে টিকে থাকতে দিলে স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান যে কারো হাত যে কারো গলা টিপে ধরতে পারে-এ সত্যটা বুঝতে দেরি করলে ক্ষতি হবে আমাদের, আমাদেরই সমাজের।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×