somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ৃত্যুর ভাবনা

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন থাকবো না, হয়তো চাপা পড়ে থাকবো কোনো বাস-ট্রাকের নিচে কিংবা বড় কোনো রোগ বাসা বাঁধবে শরীরে নাহয় নীরোগ থেকেই । সেটা যেভাবেই হোক বিদায় নিবোতো একদিন !
'
শেষ গোসল করিয়ে সাদা কাফনের কাপড়টা পড়াবে আমায়। শুনেছি মানুষ মৃত্যুর পর তার দেহটা কালো হয়ে যায়। আমিতো এমনিতেই কালো হয়তো হয়ে যাবো আরো কালো। পাতিলের কালো রঙটার মতো দেখাবে আমার বর্ণ। ওই সাড়ে তিন হাত মাটির নিচের গর্তটায় আমি হয়তো ঘুমাতে চাইবো না কিন্তু রীতিমতো জোড় করেই আমাকে ওরা সেখানে ফেলে রাখবে। আপন মানুষগুলো কিছুক্ষন সেই কবরটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে, একসময় দিশেহারা হয়ে চলে যাবে। একা রয়ে যাবো আমি, সবাইকে পাশে থাকতো বলবো কিন্তু কেউ শুনবে না আমার আওয়াজ। চেয়ে চেয়ে আপন মানুষদের দূরে চলে যাবার দৃশ্য উপভোগ করবো !
'
দু-একদিন মানুষের মুখে মুখে আমার নামটা হয়তো থাকবে। বিশেষ করে যাদের সাথে পরিচিত ছিলাম অনেক জ্বালিয়েছি অনেক কষ্ট দিয়েছি। দু'এক ফোঁটা পানিও বের হবে চোখ দিয়ে। আমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো হয়তো মনে পড়বে তার। স্মৃতিচারণ ঘটবে বারেবার। দিন এগোতে থাকবে তাদের মন থেকে আমার নামটাও মুছে যাবে। হয়তোবা মনেই থাকবে এই আমি কোনোদিন তার বন্ধু ছিলাম।
'
আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন খুব কান্না করবে। আম্মু কিছুদিন হয়তো না খেয়ে দিন পার করবে আর আমার কথা চিন্তা করবে। সারাক্ষন কত হইহুল্লুর করতো, এখন চোখের সামনে থেকে নাই হয়ে গেলো। পরিবারের মানুষগুলো হয়তো এসব চিন্তা করবে, আম্মুকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আম্মুর হয়তো ওসব কথার দিকে খেয়াল থাকবে না। এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আমাকে নিয়ে চিন্তায় মিথ্যে স্বপ্ন আঁকবে, "কি করছি আমি, কেমন আছি" এসব ভাবনাগুলো মাথায় ঘুরবে।
'
স্কুলের বন্ধুগুলো ভাববে, ছেলেটা খারাপ থাকলেও অতটা খারাপ ছিলো না। সারাদিন কি যে ভাবা-চিন্তা করতো তা কেবল ও-ই জানে। স্যার এই অন্যমনস্ক থাকার কারণে কতবার ওকে মেরেছে কিন্তু কই, একটুও বদলায় নি। যে তিমিরে ছিলো, সে তিমিরেই থেকেছে। ফেসবুকে ওর লেখা পড়ার জন্য কতো জোর করতো ! কিন্তু এখন আর কেউ বলে না, "এই আমার ওই লেখাটা একটু পড়িসতো!"
'
যাদের সাথে আমি আড্ডা দেই, কাছের বন্ধুগুলো। মনটা খারাপ থাকলে থাকতেও পারে। আমাকে নিয়ে হাসি-কান্নার স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসবে হয়তো। দু-একফোঁটা পানি পড়লে হয়তো পড়তে পারে। হয়তো চায়ের দোকানে সেই আড্ডাটায় আমার অনুপস্থিতি টের পেয়ে বলে উঠবে,"এই তানবীর কোথায় রে? ওহ, ও তো মারা গেছে। ভালোই হয়েছে, আগে কতো জ্বালাতো। সেই রকমের চা-খোর ছিলো, আমার ****টা একটানের কথা বলে নিয়ে পুরোটা শেষ করে দিতো।" ভালোই হয়েছে এখন থেকে কেউ আর খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করবে না।
'
আমার ছোটবেলার বন্ধুগুলো সেই পিচ্চিকালের কথাগুলো ভাবতে চেষ্টা করবে, পড়বে না মনে অনেক কিছুই। আমাকে কত ক্ষ্যাপিয়েছে, দুষ্টামি করেছে, পরীক্ষার খাতা কতবার দেখিয়েছে। মনে করতে করতে হয়তো সে নিজেও কষ্ট অনুভুত করবে। বলবে,"শালায় মানুষ হইলো নাহ!"
'
সাদা-নীলের দুনিয়ায় কিছু মানুষ যাদের সাথে আমার মোটামোটি সখ্য তৈরি হয়েছিলো, তারা হয়তো পুরনো মেসেজগুলি পড়তে থাকবে। মাঝে মাঝে হয়তো আমার প্রোফাইলটাও এসে ঘুরে যাবে, ঘাটতে থাকবে পুরো প্রোফাইল। অতটা চেনা-পরিচিত নয় মানুষরাও আসবে। হয়তো আমার টাইমলাইনে তখন কিছু লিখতে চেষ্টা করতো কিন্তু দেখবে আমার টাইমলাইনটা অফ করা, ট্যাগ করলেও শেষ পর্যন্ত দেখে সেটাও অফ।
'
আশেপাশের প্রতিবেশিরা আমায় দেখতে আসবে, মনে মনে ভাববে "ছেলেটা এতো অল্প বয়সেই মারা গেলো, আহা। মা'টা হয়তো কত ভেঙে পড়েছে !" এই ভেবে মা'র কাছে যাবে, স্বান্তনা দিবে।
'
আমার আন্টিটা খুব কাঁদবে, আমি জানি। খুব স্নেহ আমায়, আমাকে বাবা বলে ডাকতো। আমার মেয়ের মতো ছিলো, নানুবাড়িতে গেলে আব্বাজান-আব্বাজান বলে সবার আগে এই আন্টিটাই চিৎকার করতো। মেতে থাকতো আমাকে নিয়ে সারাক্ষন।
'
খুব কষ্ট হচ্ছে, কেউ আমার আওয়াজ শুনতে পারছে না। আমি কত ডাকছি সবাইকে, কিন্তু কেউ তো আমার কথা উত্তর দিচ্ছে না...!
......
দিন যাবে, মাস যাবে। সবাই সবার কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, ধূলাবালি মুছতে মুছতে আমারেও মুছেই দিবে। কালো নিথর দেহটা পরে রবে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে, কীটপতঙ্গ এসে বিরক্ত করবে। জ্বালাতন হবো খুব, পরিষ্কার করে দিবে না কেউ। একা একা দম বন্ধ হয়ে আসছে, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার... খুব মানে খুব !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×