somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন মলম:::: পুরনো বোতলে নতুন মদ.... কিন্ত খেতে দারুণ মজা..

০১ লা জুন, ২০১২ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ তলা ভবন নির্মাণে নকশার অনুমোদন নেই, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, জমির মালিকানা বিষয়ে ভূমি অফিসের প্রত্যয়ন বা ছাড়পত্র নেই। তার পরও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিরোধপূর্ণ এবং প্রতিবেশ সংকটাপন্ন জমিতে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ওয়েসিস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড।
জানা গেছে, এরই মধ্যে লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই
হোটেল কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, মাত্র এক লাখ টাকায় (৫০ হাজার বুকিং মানি, মাসিক কিস্তি দুই হাজার টাকা) হোটেলের মালিকানা গ্রহণ করে প্রতিবছর তিন দিন-দুই রাত করে থাকতে পারবেন। কত বছর পর্যন্ত গ্রাহক থাকতে পারবেন, তা বলা নেই।
কিন্তু বাস্তবে সাফ কবলা রেজিস্ট্রিমূলে গ্রাহক এক লাখ টাকা দিয়ে পুরো হোটেলের মাত্র দশমিক ০০৩৮ শতাংশ জমি এবং ৯ দশমিক ৪৪ বর্গফুট স্থাপনার মালিক হতে পারবেন। হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, ৪৫২ বর্গফুটের ২১১ কক্ষবিশিষ্ট পুরো হোটেলটির ৪০ হাজার শেয়ার বিক্রি হবে ৪০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে। এ হিসাবে প্রতিটি কক্ষ বিক্রি হবে ১৮৯ জন গ্রাহকের কাছে। প্রতিটি শেয়ারের দাম এক লাখ টাকা করে একটি কক্ষের বিপরীতে পাওয়া যাবে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা। পুরো হোটেলে পাওয়া যাবে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। একজন গ্রাহক বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে মাত্র দুই রাত-তিন দিন হোটেলে অবস্থানের সুযোগ পাবেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদীরা সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এটা প্রতারণা।
সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন নোটিশ দিয়ে ওয়েসিস হোটেলের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণকে প্রতারণার ব্যাপারে সতর্ক করতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি করতে হলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে। কিন্তু ওয়েসিস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ পাঁচতারা ওয়েসিস হোটেল নির্মাণে কোনো অনুমোদন নেয়নি। নকশা অনুমোদন না নিয়ে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে গ্রাহক থেকে টাকা আদায়ের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারও অবৈধ। গত ২১ মে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করার পাশাপাশি ওয়েসিস হোটেল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওয়েসিস হোটেল নির্মাণের ব্যাপারে ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এমনকি এ পর্যন্ত কোনো আবেদনই করা হয়নি।
সরেজমিন পরিদর্শন: গত ২৯ মে বেলা ১১টায় শহরের কলাতলী সমুদ্রসৈকতে সিক্রাউন হোটেলের দক্ষিণ অংশে (মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙা অংশে) পরিত্যক্ত জমিতে ওয়েসিস হোটেলের বিশাল সাইনবোর্ড দেখা যায়।
সাইনবোর্ড ও হোটেলের নানা প্রকাশনায় লেখা রয়েছে, ‘কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পাঁচতারকা অ্যামিউজমেন্ট হোটেল। মাত্র এক লাখ টাকায় (৫০ হাজার বুকিং মানি, মাসিক কিস্তি দুই হাজার টাকা) মালিকানা গ্রহণ করে প্রতিবছর তিন দিন-দুই রাত করে থাকতে পারবেন। ১৫০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিতব্য এই হোটেলে লেক, পার্কিং, অ্যামিউজমেন্ট ও অন্যান্য বিনোদন আইটেম, হোটেলের রুম ইত্যাদি সম্পত্তির মালিকানা সাফ কবলায় নিবন্ধনের মাধ্যমে ক্রেতারা প্রাপ্ত হবেন। এর ফলে ক্রেতারা হোটেলের নিট মুনাফার অধিকারী হবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রহরী জানান, কাঠের রেস্তোরাঁসহ সমুদ্রের পাশের ১০ শতক জমির মালিক মহেশখালীর মানিক নামের এক ব্যক্তি। আরএফ বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ ২০ দিন আগে সেখানে ওয়েসিস হোটেলের সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিও হয়েছে।
পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বিরোধপূর্ণ জমিতে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া পাঁচতারা ওয়েসিস হোটেলটি নির্মাণ করছে আরএফ বিল্ডার্স নামের একটি বিতর্কিত আবাসন প্রতিষ্ঠান। এতে গ্রাহকেরা প্রতারিত হচ্ছেন দেখে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এই জমির মালিকানা নিয়েও বিরোধ আছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, প্রতিবেশ সংকাটাপন্ন এই সমুদ্রসৈকতের পাশে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়েসিস হোটেলের চেয়ারম্যান ও আরএফ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৫০ শতক জমিতে ১৪ তলাবিশিষ্ট দেশের প্রথম পাঁচতারকা অ্যামিউজমেন্ট হোটেলটি তৈরি হচ্ছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নকশা অনুমোদন ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া হোটেল নির্মাণ কীভাবে হচ্ছে, জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিন বছর আগে এই জমি কিনেছি প্রায় ১০০ কোটি টাকা দিয়ে। আরএফ বিল্ডার্সের নামে এই জমিতে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন নেওয়া হয় ২০০৫ সালে। পরে ওয়েসিস হোটেলের নামে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয় কক্সবাজার পৌরসভা থেকে।’
কিন্তু পৌরসভার অনুমোদন নিয়ে সেখানে ভবন নির্মাণ করা যায় না। তা ছাড়া পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি আবেদন করা হয়েছে।
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি: কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন কোম্পানির নামে হোটেল কক্ষ, স্টুডিও এবং অ্যাপার্টমেন্ট কেনা-বেচার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি মোহাম্মদ জয়নুল বারী। গত ২১ মে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ওয়েসিস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড নামের একটি পাঁচতারা হোটেলের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট আইন ২০১০-এর আলোকে গঠিত কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো নিবন্ধন নেয়নি। কক্সবাজার জেলায় এই প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিসও নেই। হোটেলের জন্য নির্ধারিত স্থানের ভূমির মালিকানা বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নও নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ক্রেতাসাধারণকে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেকোনো আর্থিক লেনদেন করার বিষয়ে সাবধান থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন: গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের লং বিচ হোটেলের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডাকে ওয়েসিস কর্তৃপক্ষ। এতে হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, পর্যটনের বিকাশে কক্সবাজারে ওয়েসিস হোটেলটি তৈরি করা হচ্ছে। এটি নির্মাণে সাংবাদিকদের সহযোগিতা দরকার।
হোটেল নির্মাণের আগে গণমাধ্যমে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাতে একদিন এই প্রতিষ্ঠানটি ইউনিপেটু-এর মতো দশা হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হোটেলের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আশা করি ওয়েসিস এমনটা হবে না।’
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×