এই বছরের বইমেলা শুরু হয়েছে। একমাস চলবে। লেখা প্রেমিক বই প্রেমিক মানুষরা নতুন পুরাতন প্রকাশিত বই কিনবে। ঢাকার বাহিরের অনেক মানুষ শুধু বই কিনতে , বই মেলায় ঘোরাঘুরি করার জন্য হলেও রাজধানীতে যাবে।
সম্ভবত ছয় সালের বই মেলায় গিয়েছিলাম শুধুমাত্র ছোটবোনের জন্য মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কিছু বই কিনতে। তার সেই বছরের জন্মদিনে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের অটোগ্রাফ দেয়া বই গিফট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। রক্ষা করতে পেরেছিলাম , আমার রাজধানী যাত্রা সফল হয়েছিল ।
বই গিফট করার চল কি কমে গেছে ? প্রেমজীবনের প্রেমিকারা জীবনানন্দের সুরঞ্জনা দিয়েছিলো , একজন বিক্ষিপ্ত জীবনকে পোষ মানাতে দিয়েছিলো ডেল কর্নেগী , বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র ডেল কর্নেগির বইয়ের অধিকারী , কি দাম আমার ! রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ দিয়েছিলো যে মানুষটি সে জানতো হৈমন্তী আমার সাধনা, একমাত্র ওই গল্পটাই আমাকে কাদিয়েছিল।
এসএসসির পরপর পাড়াতো স্কুল সহযাত্রী বান্ধবীর আমন্ত্রণে পরিচয় হলো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথে। ক্রীতদাসের হাসি ,কপালকুন্ডলা আর বিদেশী বইয়ের বাংলা অনুবাদ। শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত সেসব বই নিয়ে আলোচনা। মাসে একটা রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার দেয়া হতো বিদেশী লেখকের বই। আমার সবচেয়ে আগ্রহ ছিলো কেন্দ্রে আসা লেখক আর কবি , কাছ থেকে উনাদের দেখা , তাদের ঘোরাঘুরির গল্প , নামকরা লেখকদের গল্প শোনা । সবশেষে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে সব বন্ধুরা মিলে শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে বাড়ি ফেরা।
রাজধানী বিমুখ হবার পর এখন ছোটবোনই ভরসা। বইমেলা থেকে বই কিনতে হবে এমন নয় হয়তো । কিন্তু যে ধারাটা শুরু করেছিলাম সে নিয়মেই সে আমার পছন্দ মতো সাথে ওর ইচ্ছে অনুযায়ী বই কিনে পাঠিয়ে দেবে । ফোনে বইমেলার গল্প শোনাবে । এবার বোনকে বলেছি উপন্যাস সমগ্র গল্প সমগ্র বই না কিনতে । এক লেখকের সব লেখা একত্রে কিনে কেমন যেন পড়া হয়ে ওঠে না । বরং অনেক লেখকের অনেক বই পড়া অনেক বেশি থ্রিলিং আমার কাছে ।
ইদানিং নাকি লেখক সংখ্যা বেড়ে গেছে পাঠক কমে যাচ্ছে। লেখকদের মধ্যে যোগাযোগ কমে যাচ্ছে । লেখকদের নাম দখল করে নিচ্ছে কনটেন্ট রাইটার । লেখা দিয়ে সিনেমা ওয়েবসিরিজ হচ্ছে - এগুলো সম্ভবত হূমায়ন আহমেদের দেখানো পথ । তবে বই থেকে সিনেমায় কাহিনী ফুটিয়ে তোলা কঠিন । বইকে এভাবে বেশি মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব হলেও আমার কাছে বইয়ের সিনেমা ভালো লাগে না ।
যারা বই কেনেন , যার সংগ্রহে অনেক বই তারা কাছের মানুষদের বই পড়তে উত্সাহ দিন । আপনাদের যোগাযোগ মাধ্যমে সপ্তাহে অন্তত একটা বইয়ের রিভিউ দিয়ে বন্ধুদের বলুন ঘুমানোর আগে কিম্বা একটু অবসর মুহুর্তে টিভি মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বিশ তিরিশ মিনিট পড়তে । দুরের যাত্রা শুরুতে আব্বু এখনো দুই একটা ম্যাগাজিন কিনে দেন উপদেশের মতো করে বলেন তানিম - রাস্তার পাশের সবুজ দেখবে - সবুজে চোখের শান্তি হয় ।
বইমেলায় পুরনো বই পাওয়া যায় ? কেন পাওয়া যায় না ? শুনতে পাই অনেকের বাসার লাইব্রেরীতে বই আটছে না । উপচিয়ে পড়া বইগুলির জন্য মেলার একটা স্টল বানান । এই সময়ে সেই বইটির দামের গ্রহণযোগ্য মূল্য রেখে বই বেচে দিন । নতুন বই কিনুন ।
বই নিয়ে ই - বুক একটা সমস্যা। ই - বুক মলাট বইয়ের ভবিষ্যত হলেও গুগল বুক এমাজন বুক সেবা দেশে কেন নেই ? বই পড়াটা সহজ হতো অনেক। বই বিক্রি সংক্রান্ত অনেক ক্ষমতাই লেখকের হাতে থাকতো । লেখক থেকে লেখকের ,পাঠকের সম্পর্ক দারুন একটা প্লাটফর্ম পেত । এই সামু ব্লগ থেকেই অনেক বইয়ের সম্পর্কে জানতে পারছি , এটাও কিন্তু একটা ডিজিটাল মাধ্যম , ফ্রিতে পড়তে পারা লেখা গল্প প্রবন্ধ বইয়ে মুদ্রিত হয় , সারা বছরের অনলাইন বইমেলা , লেখা শেখা শিখানোর পাঠশালা , কবিদের লেখকদের নিজস্ব সংসার।
সামুতে আগে বইমেলা চলাকালীন বই সংক্রান্ত স্টিকি পোস্ট দেখতাম - এবার এখনো নেই ।
বই নিয়ে লেখকের সাথে লেখকের মিথস্ক্রিয়া , পাঠক থেকে পাঠকে বই ভাব বিনিময় জরুরি ।
বইকে ভালোবাসুন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



