somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজলা দিদি।

২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত যাওয়া হয়নি নানা বাড়ি। বগুড়া থেকে অনেক দূর, যেতে সময় লেগে যায় আট নয় ঘন্টা, এটা বড় কারণ নয়। মন টানেনা। অথচ একটা সময় খুব যেতাম। মন টানতো। বেশ কজন মামা আর খালা নিয়ে ছিলো আমার নানাবাড়ি। অনেকখানি এলাকাজুড়ে আম গাছ, পুরনো কিছু জাম গাছ, সীমানায় নারকেল গাছ। দুইটা মিষ্টি পানির পুকুর, হাফ মাইল দুরে জোয়ার ভাটার নদী। ছুটির দিন শুরু হলেই রকেট নামক আন্তনগর ট্রেনে ভ্রমন, জমজমাট ছিলো সেই দিনগুলি।

সেবার স্কুল ছুটির পরপর নানাবাড়ি গিয়েছি। নানির ঘরে আমার ঘুমানোর বন্দোবস্ত। প্রতিবছর এই ঘরটা যেভাবে দেখে রেখে যেতাম ঠিক সেভাবেই পেতাম। নানুর ঘর পরিস্কার পরিছন্ন থাকতো সবসময়, ঘরের আসবাবে পরিবর্তন আসতনা। সেইবার দেখি বেশ পরিবর্তন। ঘরের শো-কেস দক্ষিন দেয়াল থেকে উত্তরে গিয়েছে, বিছানার চারকোণে মশারি টাঙ্গানোর স্ট্যান্ড উধাও। নতুন ভাবে একটা লম্বা আয়না সহ ড্রেসিং টেবিল যুক্ত হয়েছে। নানুর দেখাশোনার জন্য নতুন একজন মানুষ।

কাজল খালা।

সারাদিন ট্রেন জার্নি করে আমি তখন ঘুমানোর কথা ভাবছি, অচেনা এক মানুষ ঘরে এসে বললেন আগে খাওয়া তারপর ঘুম। আমি একটু অবাক হয়ে মানুষটাকে দেখছি। কাজল খালা বললেন ' তুমি আমাকে চিনবে না ভাগ্নে, আমি তোমার আম্মুর দুরের ফুফাতো বোন '। অচেনা, দুরের মানুষটি থেকে খুব চেনা, ঘরে বানানো খাটি নারকেল তেলের একটা সুগন্ধ ভেসে আসছে, নানাবাড়ি থেকে প্রতি বছরে আসা তেল আম্মু বড় বোন ব্যবহার করতেন। পরিচিত সুবাস। কাজল খালাকে আপন ভাবতে এক মুহূর্ত দেরী করেনি মন।

খালার নাম দিয়ে দিলাম কাজলা দিদি।

যতীন্দ্র মোহন বাগচীর 'কাজলা দিদি' আমার খুব পছন্দের কবিতা। কাজল খালা আমাকে শোলক শোনাতেন। ঘুম পাড়ানোর জন্য গল্প শোনাতেন। ঘুমানোর সময় 'কাজলা দিদি' শোনাতেন। স্কুল পড়ুয়া আমার অদ্ভুত লাগতো। রাতে অনেক শান্তির ঘুম হতো। শীল পাটায় মশলা বাটা শেষে সেটায় ভাত দিয়ে মজার এক মশলা ভাত মাখা তৈরী করে আমাকে খেতে দিতেন। ডাবের পানিতে মুড়ি ভিজিয়ে আনতেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার তিনমাস ছুটিতে দ্বিতীয় মার আদর যত্ন ভালবাসা পেয়েছিলাম। কাজল খালা কতো সুন্দর করে, উদাসী কন্ঠে একদিন 'কাজলা দিদি' শোনালেন। ' কাজলা দিদি ' কবিতার সেই কাজলা দিদির জন্য শুন্যতা পূর্ণ করে দিল কাজল খালা।

আমার সেই কাজলা দিদি আত্মহত্যা করলেন।

সেবার ছুটি শেষে বাড়ি এসে কলেজে ভর্তি হয়েছি। একদিন সংবাদটা পেলাম। সংবাদ পাওয়ার পর প্রচুর কেদেছিলাম। বাসা থেকে কেউ নানাবাড়ি গেলেন না, শেষ বারের মতো কাজলা দিদি কে দেখা হলো না। একটা শুন্যতা শুরু হয়েছিল, কিন্তু কাউকে জিজ্ঞাসা করিনি কোথায় গেলেন আমার কাজল খালা। সময়ের সাথে সাথে ঘটনাটা চাপা পরে গিয়েছিল। নানাবাড়ি, আমার বাড়ির কেউ খালাকে নিয়ে আলোচনা করত না। নানাবাড়ি গেলে ছাদের উপর থেকে কাজল খালার গোলপাতার বাড়িটা দেখতাম। নানাবাড়ির উপর থেকে মন উঠে যাওয়া শুরু হয়েছিল তখন থেকেই।

সেখানে কদিন আগে ঝামেলা শুরু হলো, সম্পত্তি ভাগাভাগি সম্পর্কিত। মৃদু তর্ক বিতর্ক চলল মামা মামী খালাদের মধ্যে। আমি আমার আম্মু সহ নানাবাড়ি গেলাম। একদিন তুমুল তর্কাতর্কি চলছে, তুই অতীতে কি করেছিলি, বাবা মায়ের আদর যত্ন ভালবাসা কে বেশি দেখিয়েছেন তা নিয়ে কথায় কথায় কাটাকাটি চলছে। বড়খালা ছোটমামার উদ্দেশ্যে বললেন

তুই কি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা ?
কি করছি বড় আপা ?
কাজল যে গলায় দড়ি দিল, কি জন্য দিল কার জন্য দিল জানি না আমি, সবাই ভুলে গেছে মনে করিস !

ঝগড়া আচমকা থমকে গেল। ছোট মামার মুখ থমথমে। বড় খালাও চুপসে গেলেন যেন। একটা চিরগোপন সত্য খানিক সময়ের জন্য সকল ঝুট ঝামেলায় ইতি টেনেছিল কি?

সে রাতের ট্রেনেই বাড়ি ফিরছিলাম । অনেক অনেকবার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হয়েছিল
' মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই? '


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৫৮
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×