ভাওয়াইয়া গানের চিরনত্দন আবেদনকে তিনি তুলে এনেছেন নিজ কণ্ঠে। বেঙ্গল বিকাশ প্রতিযোগিতায় লোকসঙ্গীত বিভাগে শ্রেষ্ঠ মান পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সফিউল আলম রাজা। সেদিন এসেছিলেন যায়যায়দিন মিডিয়াপেস্নক্সে। কথা চললো তার সঙ্গে। প্রথমেই বলা শুরম্ন করলেন তার উঠে আসার বিষয়টি। খুব ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি আমার অদম্য নেশা ছিল। রেডিওতে আব্বাস উদ্দিন আর কছিম উদ্দিনের গান শুনে সঙ্গে সঙ্গে গাওয়ার চেষ্টা করতাম। এ নিয়ে আমার মা প্রায়ই মজা করতেন। স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে আমার গান শুনে মুগ্ধ হন উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত শিল্পী নুরম্নল ইসলাম জাহিদ। তিনি আমাকে বললেন, তোমার তো কণ্ঠ অনেক ভালো, অনুশীলন করলে আরো ভালো করবে। তারপর তিনিই 'আমারই প্রতিভা সঙ্গীত নিকেতনে' গান শেখার ব্যবস্থা করে দেন।
এভাবেই গানের জগতে আমার যাত্রা শুরম্ন। এতো গান থাকতে ভাওয়াইয়ার প্রতি এ আলাদা দরদ কেন_ এর উত্তরে তিনি বলেন, ভাওয়াইয়া গানে আমি অন্যরকমের সুর-আবেদন, প্রাণ খুঁজে পাই। আমার ওসত্দাদ নুরম্নল ইসলাম জাহিদ যে ভাওয়াইয়া গান লিখতেন তা আমার খুবই ভালো লাগতো। এভাবেই ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আমার দুর্বলতা তৈরি হয়।
ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় গান-বাজনা নিয়ে বেশ মেতে ছিলেন সফিউল আলম। তারপর স্থানীয় এনজিওতে পার্টটাইম ও পরবর্তী সময়ে ফুলটাইম মিউজিক টিচারের কাজ করেন। একটা সময় রাগ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেশ দুরবস্থায় পড়ে যান। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লৰ্যে চলে আসেন ঢাকায়। সম্বল কেবল গান ও লেখালেখি জানার গুণ। শুরম্ন হয় বিভিন্ন পত্রিকায় ফিচার লেখা। আগেও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে লিখতেন। ঢাকায় এসে শুরম্ন হয় আল মুজাদ্দেদ, জনকণ্ঠ, সংবাদসহ আরো কিছু পত্রিকায় লেখালেখি। সময়ের ব্যবধানে সাংবাদিক হিসেবে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় তার। সাংবাদিকতার বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে 2000 সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার, 2001 সালে টিআইবি পুরস্কার, 2004 সালে ডেমক্রেসি ওয়াচ-এর হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড উলেস্নখযোগ্য। এখন তিনি কাজ করছেন একটি জাতীয় দৈনিকে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি শত বাধা-বিপত্তিতেও গানের প্রতি ভালোবাসা ধরে রেখেছেন রাজা। গভীর রাতে বাসায় ফিরে তাই গান চর্চায় বসে যেতেন। 2001 সালে ধানমন্ডির আড়িয়াল সেন্টারে প্রথমবারের মতো একক সঙ্গীত সন্ধ্যায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটিতে টানা 25টি গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে তোলেন তিনি।
তারপর এক অনুষ্ঠানে পবন দাস বাউলের সঙ্গে গান করেন। এতে আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায় তার। পবন দাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ শুরম্ন হয় সেই থেকে।
বেঙ্গল বিকাশে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ মোড় ঘুরিয়ে দেয় রাজার জীবনে। এ নিয়েও তার মজার ঘটনা রয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় কালচার বিট করেন। বেঙ্গল বিকাশ প্রতিযোগিতার সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের প্রেমে পড়ে যান। তারপর নিজেই অংশগ্রহণ করেন। আর এ প্রতিযোগিতায়ই লোকসঙ্গীত বিভাগে শ্রেষ্ঠ মান পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতা সম্বন্ধে তিনি বলেন, সৃজনশীল প্রতিভার অন্বেষণে ভালো একটি অনুষ্ঠান এটি। এখানে এসএমএসের কোনো ঝামেলা নেই। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
ভাওয়াই গান নিয়ে অনেক পরিকল্পনা তার। এ গানকে নগরজীবনে জনপ্রিয় করার পাশাপাশি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করতে চান। বর্তমানে দেশের বাইরের লোকজ গান সংগ্রহ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সবশেষে ভাওয়াইয়া সঙ্গীত নিয়ে বললেন নিজের কিছু কথা। আমার মনে হয় ভাওয়াইয়ার প্রসারে প্রচার মাধ্যমগুলো সেভাবে এগিয়ে আসছে না। রেডিও, টেলিভিশনে আরো বেশি করে ভাওয়াইয়া সঙ্গীত প্রচার করা উচিত।
ভাওয়াইয়া গানের পাশাপাশি আধুনিক গানও করেন সফিউল আলম রাজা। বিভিন্ন সময় গান শিখেছেন হাফিজুর রহমান, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী এবং নজরম্নল গবেষক রশীদুন্নবীর কাছে। সাংবাদিকতা এবং গান দুটি নিয়েই সৃষ্টিশীল স্বপ্ন দেখেন রাজা। আরো বহুদূর যেতে চান তিনি সফলতা নিয়ে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


