দীর্ঘদিন ধরে পরিশুদ্ধতার পথে হেঁটে কণ্ঠে ধারণ করেছেন রবীন্দ্রনাথের গানকে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে গেয়ে চলছেন পুরনো দিনের গান, ফোক গান। বাংলা গানের আসনকে বিশ্ব দরবারে পাকাপোক্ত করতে তার প্রয়াস লৰণীয়। তিনি শামীমা আলম চিনু। নিজে প্রশংসিত তার গায়কীর জন্য। গল্পের ছলেই তার সঙ্গে কথা চললো।
আট নয় বছর বয়সেই গানের জগতে আসেন শামীমা আলম চিনু। ছোট মামাই তাকে নিয়ে আসেন। এৰেত্রে তার মায়ের উৎসাহ ছিল অনেক। বারিন মজুমদারের হিন্দোল মিউজিক স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে 5 বছরের সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন। তারপর কাসিকাল শেখেন জাকির হোসেনের কাছ থেকে। গান লেখা ও জানার ইচ্ছাটা ছিল প্রচুর। তাই কলিম শরাফীর সঙ্গীত ভবন স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। এ সম্বন্ধে শামীমা আলম চিনু বললেন, শ্রদ্ধেয় কলিম শরাফীর সানি্নধ্য আমার জীবনের অন্যতম সেরা পাওয়া। গান শিখতে গিয়ে অনেক খ্যাতিমান লোককে কাছাকাছি পেয়েছি। শানত্দি নিকেতন থেকে ফিরে আসা মৃন্ময় দাসগুপ্ত ও হাসি বিশ্বাসের কাছে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। এভাবেই দীর্ঘদিন গান শেখার ধারাটাকে তুলে এনেছেন নিজের গায়কীতে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে শামীমা আলম চিনু স্টেজ শোতে অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশে বিটিভি, এনটিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন মিউজিক ভিত্তির গান গাচ্ছেন নিয়মিতভাবে। দেশের বাইরে স্টেজ শোগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাতিয়ে তোলেন তিনি। লন্ডন, সুইটজারল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, দুবাই, সিংগাপুর, মালয়শিয়া, ব্যাংকক, ইনডিয়া এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায় তিনি স্টেজ শো করেছেন। 2004 এবং 2005 সালে তিনি ফোবানা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এবারও অংশগ্রহণ করবেন। দেশের বাইরের স্টেজ শোগুলোতে কেমন সাড়া পান_ এমন প্রশ্নে উচ্ছলতা দেখা গেল শিল্পীর চোখে-মুখে। প্রবাসী বাঙালিরা যে বাংলা গানকে খুবই পছন্দ করে তা বিদেশের স্টেজ শোগুলোতে বোঝা যায়। বাঙালি শিল্পী এবং ভালো গান হলে তারা আনত্দরিকতাসহ তা শোনে। বিদেশে আমার স্টেজ শোগুলোতে প্রচ- সাড়া পেয়েছি।
এর পরপরই রবীন্দ্রসঙ্গীত, ফোক গান এবং ধুমধাড়াক্কা আধুনিক গান সম্বন্ধে নিজের অভিমত তুলে ধরেন শামীমা আলম চিনু। রবীন্দ্রনাথের গান বুঝতে হলে কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। তবে এসব গানের প্রতি বর্তমান জেনারেশনকে আগ্রহী করে তুলতে আমার মনে হয় গানগুলোর গায়কীর ঢঙে একটু পরিবর্তন আনা উচিত। আমি সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। আমার মনে হয় ইয়াং জেনারেশন আসত্দে আসত্দে ফোক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরম্নল সঙ্গীত, পুরনো দিনের গানের দিকে ঝুঁকছে। এরই মধ্যে অনেক মিউজিক অ্যালবাম বের হয়েছে তার। এর মধ্যে চুরি গেছে মন আমার, ওরে আমার হৃদয় আমার, মনে কি দ্বিধা, রেখো না বেঁধে আমায় উলেস্নখযোগ্য। গেল জুলাই মাসে সাউন্ডটেক থেকে বের হয়েছে মিউজিক ভিসিডি মনের কথাটি শোন। এটি ভালো ব্যবসা করছে। গান নিয়েই ব্যসত্দ সময় কাটছে শামীমা আলম চিনুর। 16 ডিসেম্বর উপলৰে একটি দেশের গানের ভিসিডি প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। কাজও প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া 25 বৈশাখ অথবা 22 শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে একটি একক ভিসিডি বের করবেন। এ সম্বন্ধে তিনি বলেন, এরই মধ্যে 12টি গান ঠিক করে ফেলেছি। এর ভিডিও দৃশ্যায়ন আমেরিকায় হবে। রবীন্দ্রনাথের গানের ভাব নষ্ট না করে মিউজিকে একটু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবো। তবে অবশ্যই তা শ্রম্নতিমধুর হবে।
এই যে তিনি দেশের গান, আধুনিক গান, হারানো দিনের গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, ফোক গান এমনকি নাটকের গানও গেয়েছেন এ বিষয়টি একজন শিল্পীর জন্য এটিকে কিভাবে দেখছেন। এমন প্রশ্নে হাসিমুখে নিজের যুক্তিকে বেশ সহজ করে তুললেন। আসলে এখন শ্রোতা একজন শিল্পীর কাছে বিভিন্ন ধরনের গান শুনতে চাচ্ছেন। আমার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করতেই এমনটা করছি।
কথোপকথনের মাঝখানে বিভিন্ন শিল্পীর নাম আসছিল। সুযোগ পেয়ে প্রশ্ন করে বসলাম, আপনার প্রিয় শিল্পী কে? এমন প্রশ্নেও হাসিমুখ। আসলে আমি প্রচুর গান শুনি। পুরনো, নামকরা শিল্পী থেকে শুরম্ন করে নতুন শিল্পীদের গানও শুনি। গান ভালো লাগলেই হলো। তবে প্রিয় শিল্পী হিসেবে কারো নাম উলেস্নখ করতে চাই না। স্বামী, এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার শামীমা আলম চিনুর। অবসর সময় কাটে রান্না করে আর গান শুনে। কম্পিউটারেও বেশ আগ্রহ রয়েছে। গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে বললেন, আমি গান নিয়ে অনেক দূর যেতে চাই। আমার নিজের একটি সুর সৃষ্টি কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে নতুন শিল্পীদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য যা যা করণীয় তা আমি করি। এছাড়া উত্তরায় একটি মিউজিক ইউনিভার্সিটি খোলার ইচ্ছাও রয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বললেন, আমাদের দেশের শিল্পীদের আসলে ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যারা গান করে তাদের অসহায়ত্বের সময় সবারই এগিয়ে আসা উচিত। দুস্থ শিল্পীদের জন্য সরকারি ভাতাও চালু করা উচিত।
দীর্ঘক্ষণের গল্প শেষে ফিরে যাবেন শামীমা আলম চিনু। তখনো তার কণ্ঠে গানের প্রসঙ্গ। বোঝা গেল গান নিয়েই তার রোজনামচা আর এই গান নিয়েই তিনি আরো অনেক দূর যেতে চান।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


