ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের পাশের আর্কে-র ওয়াইড স্ক্রিনে প্রচারিত হচ্ছিল বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন। হঠাৎ ভেসে আসলো ভেজা হাওয়া ভিজে যাওয়া ... জিঙ্গেলটি। বাসের জন্য অপেৰারত যাত্রীদের চোখ চলে গেল স্ক্রিনের দিকে। জিঙ্গেলের সঙ্গে সঙ্গে ঝরনার পানিতে ভিজে যাচ্ছে মেয়েটি। পাশে দাঁড়ানোর কলেজ পড়ুয়া এক শিৰাথর্ী তো বলেই ফেললো-বাবা! জোস একটা মডেল। এ জোস বিজ্ঞাপনটিই মেরিল বিউটি সোপের নতুন বিজ্ঞাপন। আর এ বিজ্ঞাপনটি করেই সারাদেশে পরিচিত হয়েছেন সাদিয়া জাহান প্রভা। মডেলিং এবং নাটকে কাজ করছেন। সে সঙ্গে বিভিন্ন চ্যানেলে অডিশন দিয়ে ব্যসত্দ সময় কাটছে তার।
ভেজা মেঘ, ভেজা রোদ
প্রভাকে সাৰাৎকার নিতে ওর বাসায় যাবার পথে শ্যামলী নামতেই ঝির ঝির বৃষ্টি। কিছুৰণ পর আবার রোদ আবার বৃষ্টি। ভেজা মেঘ, ভেজা রোদ বুঝি এ অবস্থাকেই বলে। অদ্ভুত মিলের কথা ভাবতে ভাবতেই হাজির হলাম আদাবরের আয়েশা ভিলায়।
প্রভাবিত চারপাশ
প্রভাদের বাসায় গিয়ে বসতেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। চারপাশটা মুহূর্তেই অন্ধকার। অন্ধকারে বসে বসে ঠিক করে নিচ্ছি আড্ডার বিষয়বস্তু। কিছুৰণ পরেই আবির্ভাব ঘটলো এক সি্নগ্ধ কন্যার। কেমন আছেন? দেখি সাদিয়া জাহান প্রভা। প্রভা এসে বসতেই চলে এলো ইলেকট্রিসিটি। তবে কি প্রভার সাফল্যে এখন প্রভাবিত চারপাশ!
খোলা পা-ুলিপির আয়োজনে
প্রভার চোখেমুখে উজ্জ্বল অনুভূতি নিয়েই শুরম্ন করলেন স্বাচ্ছন্দ্য কথোপকথন। বসার ভঙ্গিতে লাজুক মনে হলেও আদোতে তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন মেরিলের বিজ্ঞাপনে গস্ন্যামারাস উপস্থিতি দেখিয়ে। 'আমার এক বন্ধুর বাবা শফিকুর রহমানের হাত ধরেই বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ শুরম্ন। তখন টেস্ট পরীৰার পরবতর্ী সময় চলছিল। প্রথমে ডেইলি স্টারের একটি বিজ্ঞাপন, তারপর বাংলালিংক আপার কাসের একটি বিজ্ঞাপনচিত্র করি। সে সময়টাতেই কাছের মানুষ পরিবারের সঙ্গে পরিচয়। 10-12টি পর্বে তাহসানের বিপরীতে অভিনয় করি আমি। মেরিল বিউটি সোপের বিজ্ঞাপনটি আমার তৃতীয় বিজ্ঞাপনচিত্র। মূলত এ বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে দর্শকদের নজরে আমি।' এভাবেই মিডিয়াতে আসার কথা বর্ণনা করে যাচ্ছিলেন সি্নগ্ধ কন্যা প্রভা।
আগের দুটি বিজ্ঞাপনচিত্রে তো তেমন নজর কাড়তে পারেননি। তৃতীয়টিতে এসে এতো হিট হয়ে গেলেন। এখন টিভি, পত্রিকা, বড় বিলবোর্ডে আপনার আকর্ষণীয় ছবির বাহার। এসবের রহস্য কি? প্রশ্ন শুনেই শব্দ করে হেসে ফেললেন প্রভা। 'আমার মনে হয় আগের দুটি বিজ্ঞাপন চিত্রের ফ্রিকোয়েন্সি কম ছিল। তাই তা দর্শকদের তেমন নজর কাড়তে পারিনি। তাছাড়া মেরিলের বিজ্ঞাপনটা আমার কাছে প্রাণবনত্দ মনে হয়েছে। একদম ন্যাচারাল। এর কনসেপ্টটাও আমার খুব ভালো লেগেছে। এর সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করতে পেরেছি বলেই আমার এ সফলতা।'
সংলাপহীন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রকে শুধু এক্সপ্রেশন দিয়েই মাতিয়ে তুলেছেন সাদিয়া জাহান প্রভা। এ সম্বন্ধে তিনি জানালেন, 'আসলে বিজ্ঞাপনচিত্রটির জিঙ্গেল স্টোরি ডিরেকশন লোকেশনসহ টোটাল জিনিসটাই রাইট ছিল। শুধু আমার কাজ ছিল সঠিক এক্সপ্রেশন দিয়ে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। সি্নগ্ধ হোক ব্যসত্দ জীবন ধারনাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে এক্সপ্রেশন দিতে পেরেছি।'
মেরিলের বিজ্ঞাপনচিত্রে সফলতা পেয়ে বেশ ভক্ত জুটে গেছে প্রভার। এখন রাসত্দায় বের হলে লোকজন অন্য চোখে তাকায়। এভাবেই মেষ রাশির জাতিকা প্রভা স্টার হয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থানে আসার পেছনে উৎসাহ কার এমন প্রশ্নে প্রথমেই প্রভা পাশে বসা মায়ের দিকে তাকালেন। আমার বাবা-মা পরিবারের সবারই উৎসাহ ছিল। তবে বিশেষভাবে আমার মার কথা বলতেই হয়।
ব্যসত্দ জীবনের সি্নগ্ধতা
বছরখানেক আগেও এতো ব্যসত্দতা ছিল না। তখন প্রভা অবসরে গানই শুনতেন বেশি। কিন্তু এখন প্রচুর ব্যসত্দ সময় কাটে তার। তবে প্রভার এ ব্যসত্দ জীবনে সি্নগ্ধতার কোনো ঘাটতি নেই। প্রভা দুই বছরের জন্য স্কয়ারের ব্র্যান্ড অ্যামবাসাডর হয়েছেন। তাই তাকে কাজ করতে হয় একটু দেখে শুনে। এছাড়া ছবিয়ালের আরো কিছু নাটকে অভিনয়ের কথা হয়েছে। বর্তমানে আশুতোষ সুজন পরিচালিত 26 পর্বেও একটি ধারাবাহিকে কাজ করছেন। স্কয়ারের নতুন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার বিষয়ে কথা হচ্ছে। এভাবেই জীবনে একের পর এক সি্নগ্ধতা যোগ হচ্ছে। কাজের ব্যাপারে প্রভা বললেন, 'মেরিলের কাজটা করে একটা পরিচিতি পেয়ে গেছি। কাজেই এ পরিচয়ে ৰতি হয় এমন কোনো কাজ করতে চাই না। আমি এখন প্রতিষ্ঠিতদের সঙ্গেই বেশি কাজ করতে চাই।'
স্বপ্নের খসড়ায়
'আমি প্রচ- উচ্ছ্বল এবং স্বপ্নবিলাসী। আমার স্বপ্নের খসড়াটাও তাই অনেক বড়। মডেলিং করে যেহেতু একবার জনপিয়তা পেয়ে গেছি তাই মিডিয়াতে আমার স্বপ্নের পরিধি অনেক বেড়ে গেছে। এসব স্বপ্নের বাসত্দবের রূপদানেও আমি সচেষ্ট থাকবো। মডেলিং, নাটক যে ৰেত্রেই হোক ভালো কাজ করতে চাই। কাজের মধ্যে আত্মতৃপ্তি আমার কাছে বড় পাওয়া।' এভাবেই বলে যাচ্ছিলেন প্রভা। স্বপ্নের খসড়া আর প্রভার এক্সপ্রেশন দেখে মনে হলো সে যেন এভাবেই এগুতে পারে বহুদুর।
পড়াশোনার ব্যসত্দতা
এবারই মোহাম্মদপুরে প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাশ করেছেন প্রভা। পেয়েছেন এ-মাইনাস। এখন মেনটোরস-এ কোচিং করছেন। ইচ্ছা আছে ইংরেজিতে অনার্স করার। তবে হয়তো এজন্য বেছে নিতে পারেন কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। এখন কোচিংয়ের কাসও খুব উপভোগ করছেন। কাসের শিৰকরা বরাবরই প্রভার আলাদা যত্ন নিতেন তবে এখন মনে হয় একটু বেশি কেয়ার নিচ্ছেন।
প্রিয় প্রিয় প্রিয় ...
তার প্রিয় তারকাদের তালিকায় রয়েছে সুবর্ণা মোসত্দফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, অপি করিম, সানজিদা প্রীতি, তিনি্ন, তিশাসহ আরো অনেকেই। গান খুবই পছন্দ করেন প্রভা। মন খারাপ হলে আশ্রয় খোঁজেন গানের কাছে। জীবনের ব্যসত্দতার মাঝে গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরকে খুবই মিস করেন।
ভিজেও ঝলমল!
একটা বিজ্ঞাপনের সাফল্য দিয়েই অনেকটা পরিচিত হয়ে উঠেছেন সাদিয়া জাহান প্রভা। এতো তাড়াতাড়ি সাফল্য পেয়ে যাবে এমনটা নিজেও ভাবেননি তিনি। আর এখনতো প্রভার এগিয়ে যাওয়ার পালা। নতুন বিজ্ঞাপনচিত্র, নতুন নাটক নিয়ে দর্শকদের আরো প্রিয় হয়ে ওঠার সময়। ভেজা এ মন সি্নগ্ধ সারাৰণ, বুঝি প্রভার জন্যই প্রযোজ্য। ভিজেও যে ঝলমল করা যায় প্রভা তারই প্রমাণ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



