বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বুয়েট।দেশের সব সেরা সেরা ছাত্ররা প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এখানে ভর্তি হয়।এই কঠিন বাছাইয়ের মধ্যেও মাঝে মাঝে ভুল থেকে যায়।শ্রেষ্ঠদের ভীড়ে সবসময়ই কিছু দুর্বলরাও ঢুকে যায় ফাক গলে।আমি সেই সমস্ত দুর্বল ছাত্রদের মধ্যেও অধমতম(জানিনা এই ধরণের কোন শব্দ আছে কিনা,না থাকলে নাই,বুইঝা ন্যান)।কাজেই আমার এই লেখায় কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন ,দয়া করে অধমের ভুল বুঝে ক্ষমা করে দিবেন।
আমাদের বাবা মার অনেক দিনের পালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমাদের বুয়েটে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে।কিন্তু ৮০% বাবা মা ই কিন্তু চায় আমার ছেলে বুয়েটে ভর্তি হোক,খুব কম বাবা মা ই এভাবে চিন্তা করে যে তাদের সন্তান ভালো প্রকৌশলী হোক।সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান টাই আমাদের কাছে বেশি মূল্যায়িত হয়।
যাক সে কথা,এর মধ্যে দোষের কিছু নাই।সব বাবা মাই চায় তাদের সন্তান অনেক সম্মানীয় কোন যায়গায় পৌছাক।যে কথা আমি বলতে চাচ্ছি তা হল যে সম্মানের জন্য আমরা অনেকদিন ধরে প্ররিশ্রম করেছি সেটা আমরা অর্জন করে ফেলেছি। দশজনের মাঝে বুক ফুলিয়ে আমরা বলতে পারি যে "আমি বুয়েটে পড়ি"। প্রশ্ন হচ্ছে এর পর আমরা কি করছি????
উত্তর খুব সহজ , সবার ই জানা, দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে গ্রেডের পিছনে ছুটে চলেছি। উদ্দেশ্যঃ ভালো চাকরি,সুনিশ্চিত ভবিষ্যত।আমাদের মধ্যে কয়জন এটা ভাবছে যে আমরা প্রকৌশলী হচ্ছি;আমরা চাইলে আমাদের মেধার জোরে এই দেশের নকশা পালটে ফেলেত পারি।আমার বিশ্বাস,হাতে গোণা দশজনও পাওয়া যাবে না।
বন্ধুমহলে দেখি অধিকাংশই বিদেশ পাড়ি জমানোর ভাবনায় মশগুল।যাদের বিদেশ যাওয়ার মত টাকা বা গ্রেড নেই তারা আফসোসে মশগুল।
বলছিনা যে বিদেশ যাওয়া খারাপ।অবশ্যই জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য (মুল্যহীন ভারী ভারী ডিগ্রী অর্জনের জন্য নয়) যেখানে যেতে হয় সেখানেই যাওয়া দরকার।কিন্তু তারপর?......তারপর কি হবে এই প্রশনের উত্তরে damn care ছেলেপেলেরা সরাসরি জানিয়ে দেয় তারা এই আবর্জনা আর যানজটের দেশে আর কোন্দিন ফিরে আসবেনা। যাদের একটু চক্ষুলজ্জা আছে তারা বলে যে কিছুদিন(মানে কয়দিন ??? জানা নাই) চাকরি করে দু' পয়সা আয় উপার্জন করে তার পরে দেশে এসে কিছু একটা করবে।
কিন্তু সত্যি কি তাই হয়? ধরলাম অনেকেই তার কথামত কয়েক বছর(যৌবনের পুরা সময়টুকু) চাকরি শেষে দেশে ফিরে আসে।কিন্তু আসার পরই বা তারা কি করছে? আমাদের দেশে কয়টি বড় বড় প্রযুক্তিগত শিল্প গড়ে উঠেছে? দেশে আসার পরও তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝুকি মুক্ত কোন ব্যাবসা বেছে নিয়ে আরামের সুন্দর জীবন পার করে দিচ্ছে।
অনেকেই একথায় রাগ করবেন এবং বলবেন যে সবাই তো আর বিদেশে থেকে যায় না !!! একথা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে! আমাদের এতগুলি faculty'র সব শিক্ষক ই তো বিদেশ গিয়ে ডিগ্রী নিয়ে আবার ফিরে এসেছে। এর মধ্যে আসলে আরো দুঃখজন ব্যাপার আছে।এতজন ভালো ভালো জ্ঞানসম্পন্ন প্রকৌশলী আমাদের দেশে থাকতেও এদেশে সেরকম কোন আহামরি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটছেনা।বুয়েট শুধু সিমেন্ট আর পাম্প টেস্ট করেই দিন পার করে দিচ্ছ্বে।না আছে কোন রিসার্চ,না আছে কোন নতুন কিছু করার চেষ্টা।
এই কথার প্রেক্ষিতেও একটা উত্তরই যথেষ্ট -"এই দেশে রাজনৈতিক বাধা আর দুর্নীতির জন্য কিচ্ছু করা যায় না"।এর চেয়ে ফালতু যুক্তি আর কিছু হয় না।এবং খেয়াল করলে দেখা যায় এই কথাটা সবচেয়ে বেশি তাদের মুখে শুনা যায় যারা আজ পর্যন্ত একটা মশাও মারার চেষ্টা করে নাই।আরে ভাই আগেও চেষ্টা কর না,তারপর বল।
আমাদের দেশের ব্যাবসায়ীরা নিজেদের আলাদা কমিটি গঠন করে নিয়েছে।সময়ে সময়ে তারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের সব্রকম কাজ উদ্ধার করে নিচ্ছে।একই কাজটা কি আমাদের প্রকৌশলীরা করতে পারে না? তারা কি পারেনা সরকারকে চাপ দিয়ে তাদের রিসার্চের সুযোগ করে দিতে।যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা আমাদের দেশে অপ্রয়োজনীয় কাজে অপচয় হচ্ছে সেখানে এই ধরণের প্রযুক্তিগত শিল্প প্রতিষ্ঠা করার মত অর্থ সরকারের কাছ থেকে উদ্ধার করা অবশ্যই সম্ভব।আমরা সেটা পারি না শুধু একটা মাত্র কারণে, আমাদের এ ধরনের কোন চেষ্টাই নেই।
হয়তো এর জন্য কিছু কাঠখড় পোড়াতে হবে,হয়তো একটু কষ্ট স্বীকার করতে হবে ।কিন্তু সারা দেশের বড় বড় প্রকৌশলীরা যদি একযোগে কাজ করে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা সরকারের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সহোযোগিতা পাব। আমরা Media Support পাব, আমরা Public Support পাব এবং আমরা আসলেই সরকারকে বাধ্য করতে পারব আমাদেরকে সহযোগিতা করতে যেন আমরা দেশের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের মেধার পুরো অংশটা ঢেলে দিতে পারি।
অনেকেই অনেক কিছু করার চেষ্টা করছে।কিন্তু যে পরিমাণ মেধাবী প্রকৌশলী দেশে আছে তার তুলনায় সংখ্যাটা অনেক বেশি কম হয়ে যায়।প্রতিবছর বুয়েটে গড়ে ৮০০ মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।সেই হিসাবে এই সংখ্যাটাকি বর্তমানের ১০-২০ গুণ বেশি হওয়া উচিত ছিল না?
অন্য কারো কথা জানিনা,আমি তো অন্তত চেষ্টা করব প্রযুক্তির অন্তত একটা ক্ষেত্রে দেশকে বড় কিছু দেয়ার।মনে মনে হাসছেন হয়ত,হয়ত ভাবছেন পাগলের প্রলাপ বকছি, ভাবছি যত্তোসব অসম্ভব কল্পনা।আসলেই হয়ত অসম্ভব,কারণ চেষ্টাটা "আমি" করছি।যদি "আমরা" করতাম , অবশ্যই সম্ভব হত।
কোন অভিযোগ করতে নয়, কথাগুলি বলার কারণ একটাই।একটা ব্যাপারে খুব কষ্ট হয়।ক্লাসে স্যারদের সবসময় বলতে শুনি যে আমাদের ছেলেরা বাইরে সবসময়ই খুব ভালো করে।কখনোই তাদের বলতে শুনিনি যে আমাদের ছেলেরা দেশের জন্যও ভালো কিছু করে।
[পোস্টটি ইতিপূর্বে আমার নিজস্ব ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।জানিনা এতে সামুর কোন নিউওমের ব্যাত্যয় ঘটেছে কিনা।ঘটলে দয়া করে জানাবেন।]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




