somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের বান্দরবন ঘুরে আসা : পর্ব ২ (অসীমতাকে ছোঁয়ার দিনে)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বান্দরবনের প্রথম দিন হিসেবে আমাদের সকালে যেতে যে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে দেরি হয়ে গিয়েছিল তা ইতোমধ্যে আপনাদের বলা হয়ে গেছে । তো, গাড়ি ঠিক হয়ে গেল । সমস্যা হল তখনো কারো পেটে কিছু পড়ে নি । সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছে বলে বেশির ভাগ দোকানে নাস্তা শেষ । যা হোক অনেক ঘুরে খাওয়ার একটা বিহিত করতে পারলাম । প্রত্যেকের ভাগ্যে দুটো করে মোটে পরোটা জুটল । তা-ই সই । খেয়ে দেয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছি, পথের মধ্যে এক দলের সঙ্গে দেখা । তারাও আমাদের সাথে যেতে চায় । আমাদের উদ্দেশ্য নীলগিরি, তাদেরও বোধ করি তাই । খরচ কিছুটা কম হবে বিধায় আমরাও আর না করিনি । তাছাড়া তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে একটু বেশি দামে গাড়িটা ঠিক করে ফেলেছিল লোকমান । ওটাও পুষিয়ে নেবার ব্যাপার ছিল । এরা সবাই চাটগাঁর মানুষ । একজন ছিল সারাক্ষণ কথা বলত । বেশিরভাগই অপ্রোয়জনীয়। আমরা কিছু শুকন খাবার নিয়ে উঠেছিলাম, তারাও ।

আমরা জানতাম রাস্তায় তিন ঘণ্টা কাটাতে হবে । রাস্তার অবস্থা সম্পর্কে কোন ধারণা আমাদের ছিল না । আর রাস্তার পাশের সৌন্দর্য সম্পর্কে কোনই ধারণা ছিল না । বিশালতার একটা বিভীষিকাময় সৌন্দর্য আছে । অদ্ভুত সে ভ্রমণ, অদ্ভুত সে অনুভূতি । চালক যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল তাতে সারারাত গাড়িতে কাটানো আমাদের অনেকেই খারাপ বোধ করছিল । মাথা ঘুরে যাবার-ই কথা । আঁকাবাঁকা পথ, তারউপর সোজা তো যাচ্ছে না, যাচ্ছে পুরো উপর দিকে । মাঝে মাঝে একসাথে দুই তিনবার বাঁক খাচ্ছে । সহজ নয় কিন্তু । তারউপর আমাদের সঙ্গীদের একজনের কথা সেশ-ই হচ্ছিল না । কথা বলতেই আছে, বলতেই আছে । এদিকে আমরা বিশালতা দেখে মুগ্ধ হতেই আছি । একবার এপাশে তো আরেকবার অপর পাশে । আমার কানে এখনো মেহরাবের কথাটা ভাসছে, " দোস্ত আসলেই বাংলাদেশে বন মাত্র ৮ ভাগ?" ওর দোষ-ই বা আপনি কি করে দেবেন, যে দিকে তাকাচ্ছি ওইদিকেই শুধু সবুজ আর সবুজ । ভাল লাগাটা শেষ-ই হচ্ছিল না । আপনার বিরক্তি এসে যাবে, তবু ভাল লাগাটা যাবে না । আর ঐ বিশাল সবুজের মাঝে যখন সরু নদীটা দেখতে পাবেন, তখন আপনি চাইলেও ঐ সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না । ভাল লাগাটা বেড়ে যাবে তখনই যখন দেখবেন ওর মাঝে কিছু ঘর আছে, ঐ ঘরে কিছু মানুষ থাকছে ! কিছুক্ষণ পর পর আদিবাসী দের কেউ কেউ আমাদের হাত নাড়িয়ে হাসছে, কেউ কেউ আমরা যে গাড়িতে যাচ্ছি ওটা দেখে আবার হাসতে হাসতে হেঁটে যাচ্ছে । কখনো বা দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ি গরুর দল, কখনো রাস্তার পাশেই পাহাড় বেয়ে পড়া জলপ্রপাতের ছোট্ট স্রোত ।

আমার চোখে এখনো ভাসে অনেক দিন পর দেখতে পাওয়া মাছরাঙা, বা নাম না জানা বর্ণিল ঐ পাখি । কেন আমাদের দেখতে পেয়েও উড়ে যায় না ওরা, তাও মাথায় আসে নি । ভাল লাগাটা বাড়তেই থাকে যখন দেখি পাহাড়ের গায়ে বেয়ে বেয়ে আমরা অনেকটা উপরে উঠে গেছি । বুঝতে পারি ঠাণ্ডা হিমেল বাতাসটা যখন মুখে ঝাপটে লাগে । আমাদের কোন কিছুই আর আগের সাথে মিলে না । আমরা তো শুধু বিশালতা দেখতে চেয়েছিলাম । এই ছোট বিষয়গুলো যে দাগ কেটে রাখবে তা বুঝিনি । আমরা ঐ মানুষগুলোর হাসির কারণ খুঁজে পাইনি । হেঁটে অতটা পথ গিয়েও ওরা হাসতে পারছে । এখন সন্ধ্যের সময় গাড়িতে চড়েও যখন ঐ হাসি পাই না, তখন ধাঁধায় না পড়ে কোথায় যাব বলেন?

যা হোক তিনটে পুলিশ ক্যাম্পের পর আসল কাঙ্ক্ষিত নীলগিরি । ততক্ষণে তিন ঘণ্টা চলে গেছে । সত্যি বলতে আমাদের যাত্রার সময় একটা পর্যায়ে কেউই আর ঘড়ি দেখছিল না । প্রতিজন ৫০ টাকা দিয়ে ড্রাইভারের কাছ থেকে মোটে এক ঘণ্টা সময় পেয়ে গেলাম নীলগিরি দেখতে । আগে জানা ছিল না এটা সামরিক স্থাপনা । জানলাম, দেখলাম । অপার শব্দটা আগে জানা ছিল, এবার অনুধাবণ করলাম প্রথম । যে দিকে দেখি অসীম, মাথার উপর সূর্য, তবু কিছুক্ষণ থেমেই ছিলাম । লোকমানের কিছুক্ষণ বিশ্রাম দরকার ছিল, নিল কিছুটা সময় । তারপর লেগে গেলাম দেখতে, নূর আর মেহরাব বেশি ব্যাস্ত ছবি তুলতেই, লোকমানের ক্যামেরা, তাই ওকেও যোগ দিতে হল । আমিও লেগে গেলাম, যদিও এই বদখত চেহারা নিয়ে তা কতটুকু সমীচীন তা ভাবতে যাই নি । সপরিবারে এসেছিল এক সুন্দরী নারী । আমাদের কারো চোখ এড়ায় নি এটা হলফ করে বলতে পারব এখনো । ঐখানে আরো ভাল লাগছিল ওকে বোধ করি । ঘুরে গিয়ে দেখি হেলিপ্যাড আছে । যাওয়ার রাস্তাটা ঠিক করছে বিধায় আর যাওয়া হল না ওদিকটায় । বাসায় ফোন দিলাম । ওরকম জায়গা থেকে প্রতিদিন তো আর কল দেয়া যায় না !

এবার ফিরতি পথের পালা । যাবার সময় একটা লেখা মতন দেখলাম পিক ৬৯, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থান, জানতাম না ওটা সম্পর্কে । কারো জানা থাকলে বিস্তারিত জানাবেন । অনেকটা পথ যেতে হবে ভাবতেই শরীর ছেড়ে দিচ্ছিল । চিম্বুক পাহাড়ে তাই আর কেউ নামতেই চাইল না । আমি কিছুটা গিয়ে আবার ফেরত আসলাম । একা একা কি আর ভাল লাগে? ওখানে থেমে বরং কলা খেল সবাই । সস্তা, খেতেও খারাপ না । এরপর গিয়ে থামলাম শৈল প্রপাতে । একটুআধটু মুখ ধুয়েই আমাদের সকল আগহ শেষ হয়ে গেল । তেমন কিছু নেই, বা আগে এর থেকেও বড় প্রপাত দেখেছি বলে টানলনা, বুঝলাম না । ওখানে কিছু দোকান ছিল, আপু আগে থেকেই বলে দিয়েছিল কি মাতি আর কোন কাঠের কথা । ফোন দিতেই বলে দিল, আমিও কিনে নিলাম । এরপর দেখি মেহরাব আর লোকমান কিনতে ব্যাস্ত । নূর কি কিনল বুঝতেই পারলাম না । তবে লোকমান আর মেহরাব ভাল খরচ করেছে । খোদা ওদের খরচ সার্থক করুক ;) । এবারে আবার একটানা যাত্রা । হোটেল পৌঁছানোর পর কারো শরীরে আর কিছু বাকি নেই । গোসল করে, একটু রেস্ট নিতেই দেখি ঘড়িতে ৫ টা বেজে পেরিয়ে গেছে । খেতে পাব না ধরে নিয়ে হোটেলের রেস্তোরাঁয় গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলল আছে । খিদের কারণে কিনা না জানি না, খেতে বড্ড ভাল লেগেছে । মুরগি, আলু ভর্তা, সবজি, ডাল আর লেবু । ওহ! সারাদিনের ওরকম ঘুরে খাওয়াটা রহমত ছিল ।

এবার গেলাম সাঙ্গু নদীতে । গোসল করার কোন উপায় নেই । নদীর পানি অস্বচ্ছ । তাই পাড়ে বসে গেলাম । নূর তো শুয়েই গেল নৌকার উপর । গান গাওয়া শুরু হয়ে গেল । বুঝতে পারছিলাম না কেউ খারাপ গাইলেই পানির ছটা এসে লাগছিল গায়ে । কেউ কেউ তো কত তত্ত্ব পর্যন্ত আবিষ্কার করার পথে, তখন শেষকালে দেখা গেল শ্যালো মেশিনের পাইপের যান্ত্রিক ত্রুটির ফসল ছিল ওটা, তবে খারাপ গানের সময়-ই কেন বারবার পানি আসছিল তা ব্যাখ্যাতীত এখনো!

সন্ধ্যের ঐ সময়টা বেশ লেগেছিল । যেতে ইচ্ছে করছিল না কারোই । অমন সন্ধ্যে কতদিন পর পেলাম তা গুনতে গিয়ে বারবার ভুলে যাচ্ছিলাম !

(চলবে)
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×