হঠাৎ যেন মনেহল কুকুরের পেটটা একটু নড়ে উঠল, ভালভাবে খেয়াল করলাম খুব ধীরে পেটটা উঠা নামা করছে, তাহলে কুকুরটা মরেনি! হয়তো কিছুক্ষন ভুগে মরে যাবে, কে জানে হয়তো এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যেতেও পারে। এক্ষুনি নিয়ে যাওয়া উচিত, কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে কুকুরটা!
হতেপারে একদিন আমার বা আমার আপনজন কারও এমন অবস্থা, কতটা খারাপ লাগবে আমার যদি জানি আমার প্রিয় কেউ এভাবে অবহেলায় জীবন হারিয়েছে, পৃথিবীর মানুষের কাছে জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলিতে এতটুকু স্বাভাবিক, মানবিক ব্যাবহার পায়নি? মনে করেই মাথাটা ঘুরে উঠল।
অথচ কুকুরটার চোখে মুখে বিন্দু মাত্র প্রতিবাদ নেই কেন এই অবস্থায় কেউ তার পাশে নেই! তার হয়তো শক্তি নেই প্রতিবাদের কিন্তু ব্যাথায় মুখটাও একটুও কুকড়ে নেই কুকুরটার। ঠিক আমাদেরি মত, যত অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি চলুক না কেন, দেশটাকে লুটে পুটে চুশে খেয়ে শেষ করে দিক, খেয়ে বেঁচে থাকার পন্যের দামে আগুন লাগাক, না খেয়ে মরে যাক মানুষ, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দেশের মানুষকে ভুল ধারনা দেয়া হোক যে দেশে পাশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু সত্যি কথাতো দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, ভবিষ্যত কত প্রজন্ম যে বেড়ে উঠবে এই অন্ধকারে, দেশটাকে সম্পুর্নভাবে তলিয়ে দিতে তাদের কতকত জন যে হাতে তুলে নিবে অস্ত্র তা জানতে চাইনা আমরা, তবুও আমরা নিশ্চুপ, ওই কুকুরটার মত।
আমরা ভাবি কি হবে প্রতিবাদ করে, কি হবে রুখে দাড়িয়ে, এই দেশটার আর কিচ্ছু হবেনা, তাই সব সহ্য করে যাই মুখ বুঝে, যখন নিজের দেহের উপর দিয়ে যায় শুধু একটু কো…কা… করি অথবা করিনা, ঠিক কুকুরটার মত। আর এখন প্রতিবাদ করাটাও যে ব্যাবসা, যেখানে টাকার গন্ধ সেখানেই দুর্নীতির মূল উৎপাটনের তোড়জোর, টাকা হাতে এলে আবার সব বন্ধ। আবার ক্ষমতাসীন দলের পা চাটা মিডিয়া তাদের ইমেজ তৈরীর জন্য প্রচার করে জনগনের মনোযোগ ভুল দিকে ভুল সময়ে নিয়ে যেতে। সুশীল সমাজ? তারাও একই কাজ করছে। আর শিক্ষিত সমাজ দেশে দুর্নীতি, অনিয়ম আর অবিচারের ফিরিস্তি নিয়ে তর্কের টেবিলে ঝড় তুলে বিনোদন পাচ্ছে, স্কলারশীপ নিয়ে বৈদেশে গিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে (নাকি শুধু নিজের সুবিধাটা বাড়াতে) যাওয়া অতি শিক্ষিত (অতি সুবিধাবাদী) সমাজ? তারাতো দেশের দুরবস্থা নিয়ে আফসোস করে অলস সময়ের সদব্যাবহার করতে, প্রগতিশীল ভাব ধরতে, দেশ প্রেমিকের মুখোশ পরতে নয়তো নিজেকে ভুল সান্তনা দিতে যে আমি শুধু ভাল ছাত্রই না, দেশপ্রেমে উদ্বেল একজন পরিপূর্ন মানুষও বটে। কিন্তু এসবের কোনওটাতেই দেশের কিচ্ছু হয়না, দেশ গরিব গরিবই থাকে, ধ্বংস হয়ে যায়। দেশটা এ মুহূর্তে যে অবস্থায় আছে তাতে আমাদের মেধাবী গবেষক এর প্রয়োজন নেই, কর্মীর প্রয়োজন, যারা প্রথম দেশ, দ্বিতীয় পরিবার তৃতীয় নিজের কথা ভেবে কাজ করবে। দেশ কে এগিয়ে নিয়েযাবে। শিক্ষা নাকি জাতির মেরুদন্ড, কিন্তু কই? দেশের সবচেয়ে শিক্ষিতরাই বিপদে দেশের পাশে থাকেনা।
আশে পাশে কোথায় পশু হাসপাতাল আছে জানিনা, সেই বঙ্গবাজার বোধয় আছে, কিন্তু কিসে করে নেয়া যাবে কুকুরটাকে? সিএনজি করে, পাব এখন কোনও সিএনজি? ইতোমধ্যেই অফিসে লেইট, ভীড় ঠেলে বাস থেকে নামাই কঠিন, তবু দরজা খুলবে কিনা তাও জানিনা। একা পারব নিতে কুকুরতাকে? কেউ কি আসবে সাহায্য করতে? আমাদের পশু হাসপাতাল গুলোতে কি চিকিৎসা দেয়া হয়?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৪৪