somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরাবাস্তবঃ সম্পর্কের কৃষ্ণগহ্বর

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উনারা নিজেদেরকে মনেকরে রাজপুত্র, পংক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে আসবে, আপনাকে বলবে যাবে আমার সাথে, আমার স্বপ্নের দেশে? কিন্তু আপনি মর্ত্যের মানুষ, সমাজ, প্রতারণা, বাস্তবের নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচতে স্বীয় নিরাপত্তায় সচেতন হয়ে রাজপুত্রকে না করবেন? এত বড় স্পর্ধা আপনার!
উনি বুয়েট পাশ, স্কলারশীপ নিয়ে বাইরে পড়ছেন, যেনতেন কেউ না, রাজপুত্র! উনি আপনাকে কিছু একটা বলেছে এটাই আপনার সাত জনমের ভাগ্যি। আর আপনি উনার প্রস্তাবকে উপেক্ষা করেছেন? আর রক্ষা নেই।
“আপনি Over privileged তাই জ্ঞা্নী-গুনির কদর জানেননা,
মেয়ে মানুষকে পাত্তা দিলে আকাশে উঠে যায়, ভুলে যায় কখনো মাটিতে পা রাখত। আর পুরুষ, যত ওপরেই উঠুক তার ঈগলের ন্যায় সূক্ষ, স্বচ্ছ দৃষ্টি সবসময় মাটির দিকেই থাকে”।

সমাজ, বাস্তবতা, ন্যায়, অন্যায় ভেবে চলবেন তবু আপনার রেহাই নেই, নিন্দা আপনার জন্যই। নিজের নিরাপত্তার কথা ভাববেন তবু নাকি আপনি অশিক্ষিত, ক্ষ্যাত, স্বার্থপর এমন হাজার বাক্যবাণে ছিন্ন ভিন্ন করা হবে আপনাকেই।

আচ্ছা থাক, এত বাকবিতন্ডার দরকার নাই, কথা বললে যদি এত ঝামেলাই হয় তবে চুপ থাকাই ভাল। কিন্তু না, তখনও আপনিই দোষী। স্বাভাবিক যোগাযোগ বা সম্পর্কের নিয়ম আপনি জানেন না, বরং অন্যের সৌজন্যবোধকে অপমান করেন। আপনাকে উদ্দেশ্য করে ফেইসবুকে “মাইয়া তরে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি, প্রেমের প্রস্তাব না”—জাতীয় গ্রুপও খোলা হতে পারে।

আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে যখন সৌজন্যবোধ থেকেই উনাদের ডাকে সাড়া দেয়া হয়, স্বাভাবিক যোগাযোগের খাতিরেই শুভেচ্ছার উত্তর জানানো হয় তখন আপনাকে দূর্বল ভাবা হয় কেন? সৌজন্যবোধ যে আপনারও থাকতে পারে, আপনিও যে স্বাভাবিক দৃষ্টিভংগী, স্বাভাবিক যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন সেটা উনারা অনুধাবন করতে পারে না বরং আপনার সৌজন্যতাকে দূর্বলতা নয়তো বোকামী ধরে নিয়ে উনাদের মনের ঘুমন্ত বাসনা যেন একলাফে উঠে দাঁড়ায়।

যদি সেই বাসনার মুকুল আঁচ করতে পেরে উনাদের স্বাভাবিক যোগাযোগ নামক ভন্ডামীর যোগ্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব না দিয়ে বরং ভদ্রতা বজায় রেখে একবারের জন্যেও উনাদেরকে স্বাভাবিক যোগাযোগের সঠিক রীতিনীতি মনে করিয়ে দেন অথবা সামাজিক বিধি-বিধান বা আপনাদের মাঝে ধর্ম-বর্ন-রুচির ভিন্নতা উল্লেখ করেন তখনও আপনার রেহাই নেই, ইগো নামক বস্তুটিকে হাতিয়ার করে চোরের মা তখন বড় গলায় না, লাউড স্পীকারে বয়ান দেবে, আপনি সহ আপনার জ্ঞাতি বোনদের গুষ্ঠি উদ্ধার মূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জনমত ব্যক্ত করে স্বাব্যস্ত করা হবেঃ
আপনি কতটা অশিক্ষিত,
কতটা বিকার গ্রস্থ,
কতটা অমানবিক,
কতটা স্বার্থ লোলুপ
অথবা প্রাণী হিসেবে আপনি কতটা অপ্রয়োজনীয় যে আপনার মত পতঙ্গের দলকে পায়ের তলায় পিশে মারাটাও নাকি শতভাগ যুক্তিযুক্ত। এবং এখানেই শেষ না, তারা এহেন যুক্তি-যুক্ত আলোচনা করতে পারেন ভেবে নিজেদের জ্ঞানের প্রাচুর্য্যে গর্বিত হবে।

আর যদি তাদের ভন্ডামি ধরতে না পারেন, তাদের প্রতারনার জ্বালে জড়িয়ে যান, যদি আপনার হ্যাঁ বোধক সাড়াটা হয় তাদের পরিকল্পনা মাফিক তখন রাজপুত্র খুশি হয়ে আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে তার স্বপ্নের দেশের গলিতে গলিতে, প্রতিটি কোনায় কোনায়। তার স্বপ্নের প্রতিটি টুকরার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিবে। যে স্বপ্ন কিভাবে দেখতে হয় জানতেননা তাও শিখিয়ে পড়িয়ে দিবে। কখন যে তার স্বপ্ন গুলোকে নিজের ভেবে নিজের স্বপ্ন ভুলে যাবেন টেরই পাবেননা। ততক্ষনে ঐ স্বপ্নকে জড়িয়ে আপনার জীবন বাস্তবতা দাবী করবে।

সেসময় রাজপুত্র আপনাকে মনে করিয়ে দিবে আপনাকে স্বপ্নের দেশে ঘুরতে নিয়ে আসা হয়েছিল, বাস্তবে না। বাস্তবে আপনি ঘৃন্য, তার সমাজ, পরিবারে আপনি বেমানান, আপনার ন্যায্য দাবী তখন অন্যায়, অযৌক্তিক নয়তো বাস্তবতা ব্যাপারটাই উনার কাছে অগ্রায্য।

“কি দরকার ঝামেলাপূর্ণ দ্বায়িত্ব সমেত বাস্তবের যদি পরাবাস্তবেই সব পাওয়া যায়? তুমি না দিতে চাইলে অন্য কেউ দিবে, অভাব হবেনা। তোমার বাস্তব জীবনে কাঁটা হতে চাইনা, বিদায় হও।”
আপনাকে শোনাবে সমাজ, ধর্ম, বর্ণ, রুচির ভিন্নতা, দুরত্বের কথা। যে কথা শুরুতে আপনি বলেছেন, বদৌলতে পেয়েছিলেন নিন্দা আর অপমান আজ নিন্দুকের মুখেই সে কথা, এখন আপনাকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রধান হাতিয়ার সেই কথা। এখন আপনার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে জানিয়ে দেয়া হবে- এ জীবদ্দশায় আমাদের আর দেখা হবেনা, তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও। কী মহৎ মনমানসিকতা তাদের! কি ভীষণ শুভাকাংখা নিয়ে বিদায় দিল! উনারা কত মহৎ!

সব মিলিয়ে কি হল আপনার সাথে? মনের সাধ মিটিয়ে ওলট-পালট করা হল আপনাকে আর শেষে যা পেলেন তা আপনার জন্য নির্দয় শূন্যতা আর কষ্ট, এক কথায় প্রতারণার সুনিপুন শিল্পকলা যা উনাদের কাছে মামুলি টাইম পাস!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৪৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×