somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টকার--- আন্দ্রে তারকভস্কি

০৯ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ফিল্ম 'অতর' বলে একটি শব্দ আছে। এই শব্দটি কারো নামের আগে সংযুক্ত করে উপাদি দেয়াটা চলচ্চিত্রে ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে অনেক সম্নানের ব্যপার। খুব কম মানুষই এই উপাধি পেয়েছেন। যারা চলচ্চিত্র দেখে বা ভাষা বুঝে অথবা কোন ক্ষুদে চলচ্চিত্র সৈনিককে যদি বলা হয়— আন্দ্রে তারকভস্কি কে? তাহলে সে আলোর গতিতে তার সম্পর্কে এক গাদা কথা বলে দিতে পারে। রাশিয়ান চলচ্চিত্রকার আন্দ্রে তারকভস্কি ছিলেন একজন সত্যিকার 'ফিল্ম অতর'। যিনি চলচ্চিত্রের এক অদ্ভুত ভাষা আবিস্কার করেছিলেন। Stalker তার এক অনবদ্য সৃষ্টি।

Stalker কাহিনী সংক্ষেপঃ সিনেমার প্রথমে স্টকার তার পরিবারকে কিভাবে দুর্দশায় ফেলে আসে তা দেখতে পাই। তার একটি মেয়ে আছে যে বলতে গেলে পঙ্গু কারন তার সাথে ক্রাচ দেখা যায়। তার স্ত্রী তাকে বের হতে দিতে চায় না। তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই করুন। স্ত্রী তাকে যে খুবই অপছন্দ করে তা প্রথমে আমরা দেখতে পাই। 'জোন' নামে একটি যায়গা আছে যেই যায়গায় এই সিনেমার প্রটাগনিস্ট স্টকার বিশ্বাস করে যে সেখানে 'রুমে' কোন বিশেষ ইচ্ছে বিশ্বাস করে করলে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়। সে আরও ২ জন (লেখক ও শিক্ষক) কে বিষয়টি সম্পর্কে বুঝায় এবং তাদেরকে সেখানে নিয়ে যায়। জায়গাটিতে যাওয়া অনেক দুর্লভ ব্যপার। কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয়না কোন এক অদ্ভুত কারনে। স্টকার, লেখক ও শিক্ষক নেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেয়ে অবশেষে 'জোন' নামক যায়গাটিতে পৌঁছায়। তারা ইচ্ছে পূরণ করার জন্য 'রুম' খুজে। 'রুমে' ঢোকার আগে লেখক তার ইচ্ছে প্রকাশ করে বলে— "আমি নোবেল পুরস্কার পেতে চাই"। সবাই যার যার ইচ্ছে নিয়ে রুম খুজতে থাকে। কিন্তু, রুমে ঢোকার আগেই তারা সন্দেহ করা শুরু করে রুমের ইচ্ছে পূরণ বা অলৌকিক ক্ষমতার সম্পর্কে। জোনে যখন তারা ঢোকে তখন একটি কুকুর তাদের কে পিছু নেয়। আবার স্টকার স্বপ্নে দেখে সেই কুকুরটিকে। লেখক নিজে ৫টি কুকুর পালেন সেটা আমরা লেখকের মুখে শুনতে পেলাম।স্টকার তাদেরকে মনজোরে রুম সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করতে বলে। কিন্তু, তারা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তারা স্টকারের এই অলিক চিন্তা ভাবনার সাথে শেষ পর্যন্ত একমত হতে পারে না। তার সাথে দুর্ব্যবহার করে। শেষে হতাশ হয় স্টকার। সে এই আধুনিক বিশ্বাসহীনতার মানুষদের বিশ্বাস করাতে পারেনি যে— সেখানে স্পিরিচুয়াল একটা ক্ষমতা আছে কিন্তু তার উপর আগে বিশ্বাস আনতে হবে। সিনেমার শেষ অংশে তার স্ত্রীর রুপ সম্পুর্ন পরিবর্তন হতে দেখা যায়। সে স্বীকার করে যে সে যেনে শুনেই স্টকার কে বিয়ে করেছিল এবং তার উপর স্ত্রীর প্রবল বিশ্বাস। শেষ দৃশ্যে তার পঙ্গু মেয়েকে টেবিলের উপর রাখা বস্তুগুলোকে স্পর্শ ছাড়াই নারাতে দেখা যায়।(শেষ)



এই হচ্ছে এই সিনেমার কাহিনী। যার থেকে ছেকে মূল ব্যপারটা বের করতে হবে কারন হচ্ছে সিনেমাটি বানিয়েছেন তারকভস্কি। আসলে, সিনেমার মূল সোল বা বক্তব্য হচ্ছে বিশ্বাস স্থাপন। ঐ সময়ে রাশিয়াতে প্রচুর পরিমাণে নাস্তিকতা গ্রাস করেছিল। মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে তত তারা যুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। নাস্তিকতার সংখ্যা বেরেই যাচ্ছে। বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে। এই মহাবিশ্ব কোন অলৌকিক স্পর্শ ছাড়া কিভাবে সৃষ্টি হল সেটা মানুষকে তাড়িত করার উচিৎ। যুক্তি দিয়ে অনেক কিছুরই সমাধান করা যায়। কিন্তু, সব কিছুর সমাধান বা ব্যখা এখনও মানুষ যুক্তি দিয়ে করতে সক্ষম হয়নি। এই সিনেমাতে ওই কুকুরটিকে বার বার জোনে দেখানো হচ্ছিল। স্টকার কুকুরটিকে স্বপ্নে দেখল। আমরা জানি, কুকুর হচ্ছে বিশ্বস্ত বা বিশাসের প্রতিক। রুপক অর্থে কুকুরটিকে জোনের আশে পাশে দেখা যায় কারন— বিশ্বাস স্থাপনের চেস্টা যা পরিচালক তারকভস্কি স্টকারের চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন। শেষে স্টকার যখন হতাশ ঠিক তার পরের সিকুয়েন্সেই তার স্ত্রীর ভিন্ন রুপ আমরা দেখতে পাই। কারন তার স্ত্রী তাকে বিশ্বাস করে এবং জোন কেও বিশ্বাস করে। তাদের আর্থিক অবস্থা হয়ত দূর হয়নি কিন্তু জোনের স্পিরিচুয়াল ক্ষমতার প্রভাব তাদের পঙ্গু মেয়ের উপর পরতে দেখা যায় সিনেমার শেষ দৃশ্যে যেখানে কোন স্পর্শ ছাড়াই মেয়েটি সব কিছু নারাতে পারে। সিনেমাতে যে যায়গাগুলো দেখানো হচ্ছিল সেগুলো মনে হচ্ছিল বিধ্বস্ত। যার অর্থ, আধুনিক মানুষ এখন কি বিপর্যস্ত পর্যায় আছে। 'জোন' বা বিশ্বাস স্থাপনের যায়গাটি হচ্ছে এখন একটি পরিত্যক্ত জায়গা যেখানে মানুষ যেতে পারে না। আবার, লেখক ও শিক্ষক খুব কাছ থেকে ঘুরে আসে কিন্তু তারা কুসংস্কার কে কেন বিশ্বাস করবে এই যুগে। সিনেমার শেষের অংশে স্টকারের স্ত্রী তাদের কুকুরটিকে খাওয়াতে দেখা যায়। যার মানে রুপক অর্থে যে তারা তাদের বিশ্বাসকে বাচিয়ে রাখছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×