কয়েকদিন আগে মামার ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানের পিছনে বসে সিনেমা দেখছিলাম । আর সামনে বসে মামা মাহফিল চালাচ্ছিলেন । ত হুজুর হটাত্ মাহফিলের কোন এক যায়গায় বলে উঠলেন 'সমাজতন্ত্রের জন্ম হয়েছে সোভিয়েত রাশিয়ায় , সোভিয়েতে এসেই সমাজতন্ত্র আত্বহত্যা করেছে ।'
সিনেমা পুশ করে দিলাম ।গুরুত্বপূর্ন বয়ান মিস যায় কিনা !
আসলে সমাজতন্ত্র ঈশ্বর প্রদত্ব কোনো ঐশি বানী বা কোনো প্রফেটের পবিত্র কথা নয় যে এটার আলোচনা সমালচনা করে পরিবর্তন পরিমার্জ করা যাবে না । গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লিটাস বলেছিলেন 'পরিবর্তন ছারা পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয় ।'
জার সাম্রাজ্যের পতন যেমন সমাজতন্ত্রের জয় , আমার চোখে বৃহত্তম সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনও সমাজতন্ত্রের জয় । কিভাবে ? এই প্রশ্নের জবাব এখন দেয়ার সময় নেই । এতটুকুই বলছি মহামতি লেলিনের স্বেচ্চাচারিতার কথা আমরা সবাই জানি ।
একথা শতভাগ সত্যি যে পিউর মেটালিজমে ইশ্বরের কোনো অস্তিত্ব নেই । খুব সংখেপে বস্তুবাদ হলো সমস্ত ঘটনা দূর্ঘটনা রটনা সৃষ্টি ধ্বংশ সব কিছুই বস্তু সংশ্লিষ্ট । বস্তু বা এলিমেন্ট বলতে জগতে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে সেগুলোই বুঝানো হয়েছে । জীব এবং জীবের নানান আবেগও এর অন্তর্গত । সুতারং পিওর মেটালিজমে বিশ্বাসিরা কোথাও ইশ্বরের অস্তিত্ব খুজে পায় না । আরেকটু পরিস্কার করে বললে খুজতে চায় না । কিন্তু আমার মতো ছাপোষা কিছু লোক সবকিছুতেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব খুজি । নাস্তিকদের মতে হয়তো আমরা স্থুল চিন্তার অধিকারি , আর তারা সুক্ষ চিন্তার মানুষ ।
মুলত সৃষ্টির উত্স ও সভ্যতার বিবর্তন চিন্তা করলেই সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি প্রকট আকার ধারন করে । বিগ ব্যংক তত্বের প্রবক্ত স্বয়ং স্টিভেন হকিং একবার তার তত্বে ঈশ্বরের উপস্থিতি স্বীকার করেছিলেন । মুলত যারা ঈশ্বরকে অসীকার করেন তাদেরকে বেশ কিছু প্রশ্ন সবসময় এড়িয়ে যেতে হয় । ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজতে গেলে ঈশ্বরের উপস্থিতি নিশ্চিত্ না হওয়া গেলেও ঈশ্বর নেই এই ধারনাটা সন্দেহের মধ্যে পড়ে যায় । কোনো এক নাস্তিক গনিতবিদ একবার অংক কষে ঈশ্বরের উপস্থিতি মুছে দিতে চাইলেন । তার অংকের ফলাফল আসলো দুটি । এক অংশে ঈশ্বরকে স্বীকার করতে হবে , অন্য অংশে করা যাবে না ।
সংশয়বাদীরা বলেন যে কোনো কিছুই নিশ্চিত হওয়া যায় না । আর নাস্তিক্যবাদ বলে সবকিছুর যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে । বস্তুবাদ নাস্তিক্যবাদের মত যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুজলেও সমাজতন্ত্রের মনিষিরা নিজেদের মতো করে সমাজতন্ত্রকে সাজিয়ে নিয়েছেন । সমাজতন্ত্রী বা বামদের আজকাল চোখ বুজে নাস্তিক ট্যাগিং দেয়া হয় । উপমহাদেশের ইতিহাসে মওলানা ভাসানি সহ বহুত ধর্মভীরু লোক বামধারায় বিশ্বাসী ছিলেন । তারা কি নাস্তিক ছিলেন ? নাহ , আসলে তারা সমাজতন্ত্রের পদ্ধতি ও সমতার তত্বগুলো স্বীকার করে বস্তুবাদের মধ্যে সৃস্টিকর্তার অস্তিত্ব ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন । অথবা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় দর্শনের উপর সমাজতন্ত্রের প্রয়োগ ঘটিয়েছিনেন ।
কোনো এক গ্রীক দার্শনিক বলেছিলেন, পৃথিবীতে নাস্তিক বলতে কোনো প্রাণী নেই । তরুণ বয়সে কিছু পাব্লিক রক্তের গরমে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে বসে । অবাধ যৌনতাকে ব্যাক্তিস্বাধীনতা মনে করে । বয়স বাড়লে তারা আবার ঈশ্বরকে খুজে পায় ।
আর বর্তমান অবস্থা হলো জামাতের বিরুদ্ধে কিছু বললে জামাতিরা নাস্তিক বলে । এরকমভাবে সকল ধর্মের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলোও তাদের বিরুদ্ধাচানকেই নাস্তিক্য আখ্যা দেয় ।
সর্বশেষ বিষয় মহামতি দেলোয়ার সাঈদী বলেছেন 'সমাজতন্ত্র একটি কুফরি মতবাদ ।'
কথাটি অনেক যায়গায় সভায় বা মাহফিলে বলা হয়েছে । এখন কথা হলো চিরায়িত বলবিদ্যার জনক নিউটন কাফের ছিলেন । স্ট্রানজিস্টর আবিস্কারকরাও কাফেরই ছিলো । সুতারং অনেকগুলো কুফরি মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত অ্যম্প্লিফায়ার দিয়ে তৈরি সাউন্ট সিস্টেম । সেই সাউন্ড সিস্টেম ব্যাবহার করে কুফরি মতবাদের বিরুদ্ধে প্রচালনা চালানো হচ্ছে ।
এই হাস্যকর বিষয়টা নিয়ে প্রায়ই ভাবি । বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত তত্ব ও বিজ্ঞানিদের নিয়ে কঠিন ভাষায় সমালচনা করা হয় । এমনকি অনেকে নিজেদের সন্তানদেরও বিজ্ঞান পড়তে দেন না বিগড়ে যাবে বলে । কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুম যাওয়ার পর পর্যন্ত ঐসব তত্ব দারা ও ঐ সকল বিজ্ঞানি দারা তৈরি বস্তু ব্যাতিত তাদের জীবন অচল !

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


