somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসব দিনগুলো থেমে যাচ্ছে সন্ধ্যার অন্ধকারে

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন কিছু মনে পড়ে না তেমন। কেমন চেহারার ধাচ ছিলো, কেমন মুখের গড়ন। ঠিক কেমন করে হাসতো, একটু কেমন মনে পড়ে যায়, একটা খিলখিল শব্দ অনুভব করি আসেপাশে। এরপর আবার সব কেমন নাই হয়ে যায়। চেহারার ছাঁচটা মনে করতে পারি না।

ইদানিং সন্ধ্যাটা কেমন বিষন্ন লাগে। আমার কোন তাড়া নেই। উঠে গিয়ে সুমনদের দোকানে বসতে ইচ্ছে হয় না আর। ইদানিং ঝাঁ-চকচকে সুন্দরী মেয়েগুলো আসে এদিকটায়, দোকানগুলো ভর্তি হয়ে থাকে ওদের কোলাহলে। তবু চোখে লাগে না, আমি একটা মৌণতা টের পাই। কোথাও যেন একটা দেয়াল উঠে গেছে। দেয়ালটার গায়ে আটকে যাচ্ছে কোলাহল। দুমড়েমুচড়ে যায় শব্দবদ্ধ আনন্দ। এসব আমি এখন সন্ধ্যা থেকে আলাদা করে রাখতে পারি, সন্ধ্যাটাকে বিষন্নই ছেড়ে দেই। সন্ধ্যাটা চাপা কান্নার মতো জাপটে ধরে আমাকে, অভিমানী রিক্ততা যেমন শীতের বসন, সন্ধ্যার গায়ে তেমন এককাপড় হাহাকারের পট্টি।

আড়ষ্টভাব টের পাই শরীরে, মনে। হঠাৎ হঠাৎ কোন কোন দিন দু-একজন পরিচিত মানুষ আসে। কথা বলে। জানতে চায় কি করবো, কি ভাবছি ইদানিং, এসব। আমি কিছু বলি না। কিভাবে বলবো, আমার তো ভাবনা আর আসেই না। পরিচিত যারা একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ, ঠেলে-ঠুকে বাসাতেই ঢুকে আসে। এ দেয়ালে, ও দেয়ালে তাকায়। বলে, একটু-দুটো ছবি রাখলেও তো পারতে। আমি এই প্রশ্নটাকে খুব ভয় পাই। ইদানিং তাই নিজেই বাসার বাইরে থাকার চেষ্টা করি। কেউ দেখা করতে এলে বাইরে থেকেই ফিরিয়ে দেই। ইদানিং ভাবছি, কিছুটা একটা কাজ টাজ করবো, শক্ত কোন বাহানা পাই না মানুষ এড়ানোর।

মাসুদের বউটা ইদানিং এদিকে আসছে। খোঁজ খবর জানতে চাইছে। প্রশ্ন দু-একটা করেই ছলছলে চোখে তাকিয়ে থাকে, আমি কিছু বলতে পারি না। হা হু করি। মেয়েটাকে বিভিন্ন নজরে দেখেছি এক সময়, পেটের কাছ থেকে, বুকের উপর থেকে হুটহাট কাপড় সরে গেলে একটা মুহূর্তকে নষ্ট হতে দেইনি। এমন সুন্দরী সচারাচর চোখে পরে না তো। সেই একই মেয়ে দরজার কাছ ঘেষে রাখা টুলটায় এসে বসে আজকাল, চোখ ছলছল করে দুটো-একটা প্রশ্ন করে। অগোছালো ভাবে নড়াচড়া করে কখনো কখনো। আমাকে টানে না। আমি শুধু ছলছলে চোখটুকুই দেখতে পাই। আমার খুব পরিচিত লাগে এইটুকু। খুব পরিচিত একটা মুখ কেমন ভাসা ভাসা উঠে আসে চোখের ওপর। একটু কেমন মনে পরে যায়। মেয়েটা, মাসুদের বউ, আমার কাছে ঘেষে এসে বসে। মাসুদ কি এবারের ঈদে বাড়ি আসেনি? আমার মায়া হয়। অথচ একসময় আনন্দ হতো। আনন্দ কি অদ্ভুত! আনন্দ কি অলীক!

সেদিন ছোট কাকার নাম্বার খুঁজতে খুঁজতে মোবাইলের কল লগ ঘাটতে ঘাটতে অনেক নিচের দিকে চলে আসতে তনুর নাম্বারটা হঠাৎ চোখে এলো৷ নাম্বারটা রাখার প্রয়োজন নেই। মুছের ফেলার কথা ভাবতে মোবাইলে স্ক্রিনের লেখা গুলো অস্বচ্ছ ঝাপসা হয়ে এলো। তনুর নাম্বারটা থাকবে সবার শুরুতেই, ডায়েলড কল, মিসড কল সব তালিকার প্রতিনিধিত্ব করবে তনু, নাম্বারদের এতো গভীরে তনুকে মানায় না। বার কয়েক ফোন দিলাম সাথে সাথে। বললো, বন্ধ আছে। বলুক। তনু আবার শুরুতে চলে এলো। একটা তৃপ্তি আচ্ছন্ন করলো আমাকে। বেশ। থাকুক এভাবে। এভাবে কতদিন থাকবে? এভাবে, ঠিক ওই মুহূর্ত সব থমকে যেত যদি! এই অবিনশ্বর সময়ের গতিময়তা, এই মেটাফিজিকাল কন্টিনিউইটি, আমি কি করবো এসব দিয়ে, আমি কি করবো এখানে থেকে? চোখ ইদানিং ঝাপসাই থাকে, চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। পরক্ষনেই মনে হয়, কি দেখবো চোখ দিয়ে? এই সাদা দেয়াল? দেয়ালে ঝোলানো স্থবির ঘড়িটা? এই নারকেল-সুপোরী গাছ? সুমনের দোকানের সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া সুন্দরী মেয়েদের? মাসুদের বউএর নগ্ন পেট? আমি কি এসব দেখার বেঁচে থাকবো আরো অনেক অনেক দিন! এই ভাবনাগুলো সন্ধ্যার বিষন্নতার প্রতিনিধি, রাতের ঠিক পূর্বভাগে এমন হয় ইদানিং আমার। এরপর আস্তে আস্তে সামলে উঠি। রাত আসে। অন্ধকার নামে চারদিকে।

শুধু অন্ধকার।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×