আমার গল্পে কোন মিরাকেল নেই। সুন্দর সুখী সুখী রোমান্টিক দৃশ্যকল্প নেই। আমার গল্প ঘুম থেকে উঠে সারা পিঠে ব্যথা আবিষ্কার করার মতো, শুয়ারের বাচ্চা বলে গালি দেয়ার মতো বাস্তব। আমার গল্প স্বাভাবিক, চুল পড়ে ধীরে ধীরে টাক হয়ে যাওয়ার মতো রসহীন, ভুরী বেড়ে হঠাৎ বেখাপ্পা দেখতে লাগার মতো উদাস ধরনের। আসলে, আমার কোন গল্পই নেই। আমার জীবন বারান্দায় শোকাতে দেয়া গামছার মতো, কেউ হাত মুছে যায়, মুখ মুছে যায়। এখানে সেখানে হলুদের দাগ লেগে থাকে। কেউ নাক খুটে যায় এক কানা দিয়ে, কেউ আবার সেই কানা দিয়েই দাঁত খোঁচে। আমার কিছু যায় আসে না। আমি ঝুলে থাকি। খোঁড়াতে খোঁড়াতে পাঁচতলা ভেঙে নিচে নামি, সিঁড়ি হাতরে হাতরে আবার উপরে উঠি। কুকুর দেখে বুক ঢিবঢিব করলে বারবার রাস্তার পাশ বদলাই। আর গল্পে কোন নায়িকা নেই। আলগা প্রেম প্রেম ভাব নেই। আমার দিকে কোন মেয়ে কখনো তাকায় না। আমি প্রতিবন্ধীর মতো মেয়েদের শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকি। মেয়েরা আমাকে গ্রাহ্য করে না। আমারো কিছু যায় আসে না। আমি থুতু ফেলি, বাতাসে সেই থুতু উড়ে এসে আমার প্যান্টেই লেগে যায়। আমার কিছু মনেই হয় না। আমার শরীর ঘেমে যায় একটু হাটলেই, জামা কাপড়ে দুর্গন্ধ। আমার গল্পে ঘাম আছে, দুর্গন্ধ আছে, শার্টের কলারে কাকের গু আছে। বোতাম ছিড়ে পরে গেছে কোথায় কে জানে, কোথাও কোথাও জামা তাই হা হয়ে আছে। লাল কালির দাগ লেগে আছে পাজাম। চেইনের আশেপাশে রঙ উঠে গেছে, আমার স্বপ্নদোষ হয়। অবশ্য স্বপ্নেও খুব বেশি দোষ আমি করি না, আমি স্বপ্নেও ভীতু, কাপুরুষ। আমার ঘুম ভাঙে, আমি গোসল করি না। আমার কিছু যায় আসে না। তীব্র উটকো গন্ধ আসে আমার শরীর দিয়ে, আমার সয়ে গেছে ওসব, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ঘ্যাষঘ্যাষ করে দাড়ি চুলকাই আমি, দাড়ি ছিড়ে উঠে আসে নখে। চুলে জট বেধে যায় আমার, আমি চিড়ুনী খুঁজে পাই না। আমার গল্পে আমি উদাসীনও না ঠিক, গল্পের নায়কদের থেকে এখানে একটা বিস্তর ফারাক রয়ে যায়। আমার ক্ষুধা পায়, আমি কাপড় পাল্টে পাল্টে পরি, আমার খুব চিন্তা হয় ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আমি ঘুমোতে পারি না। ঘুমোতে না পারলে আমার অস্বস্তি হয়, আমার কান্না পায়। সারারাত আমার ভূতের ভয় করে। আমার মনে হয় খাটে নিচে কেউ বসে আছি। আমি তাই খাট থেকে নামি না। প্রচন্ড প্রস্রাবের চাপ নিয়ে আমি বসে থাকি, যতক্ষনে না ভোরের আলো ফোটে, যতক্ষনে না আমি সিওর হই ঘরে আদতে কোন ভূত নেই। প্রস্রাব চাপিয়ে রাখতে রাখতে আমার তলপেট ব্যথা করে। প্রস্রাবের রঙ হয় পাম ওয়েলের মতো। পিঠে প্রচন্ড ব্যথা করে। চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে অনবরত। আমার খুব ভয় হয়। খুব কান্না পায়। আমি গভীর ভাবে চিন্তিত হয়ে উঠি ভবিষ্যৎ নিয়ে। মোবাইলের এপ থেকে ডেইলিস্টারের সম্পাদকীয় পড়তে শুরু করি, প্রতি লাইনে লাইনে আমি আটকে যাই। ডিকশনারি দেখে অর্থ দেখতে গিয়ে হতাশ হয়ে যাই। আমার ঘুম পায়। অথচ দুশ্চিন্তাও হয়। হঠাৎ হঠাৎ আমার স্বমেহনের ইচ্ছা জাগে। আমার গল্পে গল্প বলতে কিছু নেই। আমার গল্পের ভোর গুলো মিষ্টি রোদ নিয়ে আসে না, আজরাইলের মত মৃত্যু নিয়ে আসে, কিন্তু আমি মরি না। চোখ জ্বালা করে, আমি সূর্য্যের মা ও বোনকে নিয়ে বিভিন্ন গালি দেই। আমার গল্পে ঘুম গুলো অদ্ভুত। আমি ঘুমে প্রেমে পরে যাই বন্ধুর স্ত্রীর। স্বপ্নে আমার হার্নিয়া হয়। আমার স্বপ্ন আমাকে ঘুমুতে দেয় না। আমার গল্পে কিছু নেই।