somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসী পাত্র হলেই ‘সুপাত্র’ নয়

০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনাগুলো অনেকটা এভাবে ঘটে: হুট করে কোনো নিকটাত্মীয় ফোন করে কিংবা দেখা করে বলল, ভালো পাত্র আছে হাতে। ছেলে বিদেশে থাকে। অনেক আয়।
ব্যস! অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, এ রকম পাত্র হাতছাড়া করা একেবারেই উচিত হবে না। আশপাশে জুটে যায় পরামর্শকের দল। নানা যোগ-বিয়োগের পর এই ‘সোনার পাত্রের’ পক্ষে রায় দেয় তারা।
এবার পাত্রপক্ষ থেকে আসে চাপ। ছেলের ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ বা কাল বিয়ে পড়িয়ে ফেলতে হবে। পাঁচ দিন পর ওর ফ্লাইট। মেয়েপক্ষের যে দু-চারজন সংশয়বাদী ছিলেন, তাঁরা বলার চেষ্টা করেন, এত তাড়াহুড়ার কী আছে? ছেলে সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নেওয়ার দরকার আছে না?
তাতে হয়তো রেগে অগ্নিশর্মা হন মেয়েপক্ষেরই অভিভাবকদের একজন। বলেন, মেয়ে দুদিন পর বিদেশ চলে যাবে। সেখানে অগাধ নিরাপত্তা। ও নিজের জীবন নিজেই গুছিয়ে নিতে পারবে। কিসের এত খোঁজখবর? কেউ কেউ তাঁর কথায় সায় দেন।
ছেলেপক্ষের ক্রমাগত চাপের কারণে বিয়ে সম্পন্ন হয় খুব দ্রুত। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে ছেলে চলে যায় তার গন্তব্যে। এরপর প্রতীক্ষার পালা। যদি ভালো ছেলে হয়, তাহলে দ্রুত স্ত্রীর বিদেশ পাড়ি দেওয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরি করে ফেলে। কিছুদিনের মধ্যেই নিয়ে যায় স্ত্রীকে। প্রবাসজীবন ভালোই কাটে তাদের। দেশের প্রতি আকর্ষণ তো থাকেই, কিন্তু প্রবাসে সাংসারিক জীবনযাত্রাটি চলে স্বচ্ছন্দে।
কিন্তু যদি ছেলে খারাপ হয়? তড়িঘড়ি করে প্রবাসী পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে যদি বিপদে পড়েন মেয়েপক্ষ? ধরা যাক, এই ছেলেটাও খুব দ্রুত কাগজপত্র তৈরি করে স্ত্রীকে নিয়ে গেল প্রবাসে। কিছুদিন যেতেই মেয়েটি টের পেল, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। হ্যাঁ, যে সন্দেহ একটু একটু করে মনে বাসা বাঁধছিল, সেটাই ঠিক। এই ছেলে প্রবাসে আগেও একটা (কিংবা দুটো) বিয়ে করেছে। ছেলের আরেকটি বউ আছে। এই সত্যটি বিয়ের সময় বেমালুম চেপে গিয়েছিল ছেলেটা। কিংবা বিয়ের আগে বলা হচ্ছিল, ছেলেটা অমুক বিষয়ে পিএইচডি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। পরে দেখা গেল, একেবারেই সাধারণ মানের পড়াশোনা শেষ করেছে ছেলে। এখন ট্যাক্সি চালিয়ে বা হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। আরও ভয়াবহ হলো, প্রবাসে ছেলেটির যে স্ট্যাটাস, তাতে স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে না। ফলে বছরের পর বছর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে মেয়েটি। স্বামী হয়তো কখনো কখনো দেশে আসে, কিছুদিন থাকে, খুব শিগগিরই বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। একসময় এই সম্পর্কের পরিণতি হয় বিয়ে-বিচ্ছেদ।
দুটো ঘটনার কথা বলা যাক। খুবই মেধাবী ছাত্রী, সংস্কৃতিমনা। পারিবারিক প্রভাবও আছে সমাজে। সেই মেয়েকেই হঠাৎ বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো প্রবাসী পাত্রের সঙ্গে। খোঁজখবর বলতে ছেলেটি সত্যিই মেধাবী কি না, একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে কি না, কেবল তা-ই নেওয়া হলো। ঘটা করে বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটিও প্রবাসে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাবে বলে ঠিক করল। বিদেশ পাড়ি দেওয়ার আগে বন্ধুমহলে দুজন মুক্ত বিহঙ্গের মতোই ঘুরে বেড়াল। অনেকেই বলল, এ জুটি সোনায় সোহাগা। সেই দেশে পৌঁছানোর পরই মেয়েটা বুঝল, সে প্রতারিত হয়েছে। ছেলেটা মেধাবী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়, সেটাও ঠিক। কিন্তু লোকটি এ দেশেরই এক মেয়েকে বিয়ে করেছে আগে। সে বউ এখনো আছে। দুটি মেয়ের জীবন এভাবেই নষ্ট করে দিয়েছে ছেলেটি। সেই মেয়েটি কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটাতে বাধ্য হয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি অন্য রকম। ছেলে যেসব তথ্য দিয়েছে, তার সবই ঠিক আছে, জেনেশুনেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর মেয়েটি বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু এরপর মেয়ের ওপর শর্ত আরোপ করা হয়েছে, পরিবারের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা চলবে না। যাদের সঙ্গে কেটেছে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, শুধু বিয়ের কারণেই তাদের ভুলে যেতে হবে! মেয়েটি কি সেই সংসারে আর সুখ খুঁজে পাবে? ছেলের স্বভাব-চরিত্র জানা না থাকলে এ ধরনের ঘটনাও ঘটে।
প্রতারণার আরও অনেক রূপ আছে। এই তো সেদিন খবরের কাগজে বের হলো প্রবাসী কনের সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণার খবর। একই মেয়েকে কুমিরের ছানার মতো বারবার দেখিয়ে একেকজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হবে বিদেশে—এ রকমই কথা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ছেলেটি কয়েক লাখ টাকা খরচ করার আগে জানতেও পারে না, সে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
খবরের কাগজে ‘পাত্র চাই, পাত্রী চাই’ বলে যে শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন ছাপা হয়, সেগুলো পুত্র বা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেগুলোরই ফাঁকফোকরে কিছু অসাধু মানুষ বিজ্ঞাপন দেয়; সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ ‘প্রবাসী’ শব্দটি ঘিরেই প্রতারণা।
প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী মানেই অর্থ, নিরাপত্তা, সুখ—এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সম্পর্ক তৈরি করা জরুরি, নইলে বিয়ে নামের সামাজিক বন্ধনটি কোনো আলোর দিশা দেবে না।

বিশেষজ্ঞ মতামত
নাহিদ মাহতাব
আইনজীবী
এই ব্যাপারগুলো সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। ছেলেটা বিদেশ থেকে এল, বিয়ে করল, কিন্তু মেয়েকে নিয়ে গেল না। এগুলো এড়ানোর জন্য কয়েকটি ব্যাপারে খোঁজ করতে হবে। একটি হলো, ছেলেটির ভিসায় তার স্ট্যাটাস কী, সেটা জানতে হবে। সেই স্ট্যাটাসই প্রমাণ দেবে, বিয়ের পর ছেলেটি মেয়েকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারবে কি না। আরেকটি ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে—যে দেশে ছেলেটি থাকে, সেই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, ছেলেটির নামে কেনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না। প্রবাসী পাত্র বা পাত্রীকে বিয়ে করার আগেই তার সম্পর্কে তথ্য যাচাই করে নিতে হবে। কারণ, বিয়ে তো সামাজিক বন্ধন। বিয়ের পর যদি মামলা-মোকদ্দমা করতে হয়, তাহলে জীবনের সুখটাই তো হারিয়ে যায়। এমনও ঘটে, কোনো বিদেশিনীকে বিয়ে করার পর প্রবাসী পাত্র দেশে ফিরে আরেকটা বিয়ে করে। বহুদিন স্বামীর খোঁজ না পেয়ে সেই বিদেশি স্ত্রী বাংলাদেশে এসে হাজির হন। আমাদের দেশের মেয়েরা পারিবারিক আদালতেই যেতে চায় না, সাধারণ আদালতে যাওয়া তো আরও দূরের ব্যাপার। তা ছাড়া আদালতে দীর্ঘসূত্রতারও একটা ব্যাপার থাকে। শুধু আইন থাকলেই তো চলবে না, আইন কার্যকরও হতে হবে। তবে, বিয়ের মতো বিষয়ে বিরোধ যেন না আসে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রবাসী পাত্র বা পাত্রীর ব্যাপারে ঠিকভাবে তথ্য জানাটাই জরুরি।

শাহনাজ মুন্নী
সাংবাদিক, লেখক
প্রবাসী পাত্র বা পাত্রীর সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে সবার আগে। খবরটা সংগ্রহ করতে হবে খুব বিশ্বস্ত কারও কাছ থেকে। যে তথ্য দেওয়া হয়েছে প্রবাসী পাত্র বা পাত্রীর ব্যাপারে, তা সত্য কি না, তা যাচাই করে নিতে হবে। মানুষের মনে একটা ধারণা আছে যে, বিদেশ মানেই স্বর্গসুখ, বা নিরাপত্তা, ঐশ্বর্য। এ জন্যই প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী হাতছাড়া হয়ে যাবে, এ ভাবনাটা অনেকের মনে কাজ করে। আমার অভিজ্ঞতার মধ্যেও এ রকম একটি ঘটনা আছে। আমার এক নিকটাত্মীয়ের বিয়ে নিয়ে কথা। প্রবাসী ছেলে চলে যাবে পাঁচ দিন পর, আজই বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমরা তাদের পারিবারিক বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার স্বামী আর আমি প্রতিবাদ করলাম। এত তাড়াহুড়ার পক্ষপাতী ছিলাম না আমরা। ওরা বলছিল, ‘আমাদের সময় নেই। আপনারা যদি দেরি করেন, তাহলে বিয়ের সময় পাওয়া যাবে না।’
তার পরও আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের যে চেনাজানা মানুষ আছে, তাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। দুদিন সময় নিয়ে ছেলের সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়ার পর বিয়েটা হলো। এক বছর পর ছেলে এসে মেয়েকে নিয়ে গেল। ঘটনাচক্রে সেটা ভালোই হয়েছে। কিন্তু একটা বিপদ ঘটতেও পারত। আরেকটা ব্যাপার, এ রকম বিয়ের ক্ষেত্রে আমরা জানিও না যে, প্রবাসী ছেলে বা মেয়ের স্বভাবচরিত্র কেমন, কেমন তার পরিবার। ফলে পরে বিপদে পড়তে হয়। এ দিকটা যাচাই করে দেখতে হবে।

উৎস
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×