বিড়িখোর, জরিপ ও ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্ছা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বন্ধু আলি(ছদ্মনাম)সেদিন হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো, আচ্ছা,......, তুই সিগারেট খাস না কেন? প্রশ্নর মাঝে কিছুটা শ্লেষ জড়িয়ে ছিল। যেন একজন অপদার্থ, গাধা, আন-স্মার্ট, ক্ষেত কে প্রশ্ন করা হল যে, এই ভাল কর্ম টি কেন করা হচ্ছে না। আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলামঃ
আচ্ছা, তুই কেন বিড়ি(সিগারেট কে আমি বিড়িই বলি)খাস।
একটু হকচকিয়ে গেল আমার বন্ধুটি। বুঝতে পারলাম যে এ ধরণের পাল্টা প্রশ্ন সে আশা করেনি। কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলঃ
খাই, এমনেই। ভাল লাগে তাই খাই। তোর কি? তোর পয়সায় খাই??
যাই হোক আমার অতি স্মার্ট বন্ধুটি আমাকে কিছু চিন্তার খোরাক দিল। ইংরেজিতে যাকে বলে food for thoughts.
যাই হোক, সে চিন্তার খোরাক আমাকে একটি জরিপের দিকে নিয়ে গেল। পয়সা খেয়ে দৈনিক পত্রিকার একপেশে জরিপ নয়। একেবারে সাধারণ এক জরিপ।নিজের ঘনিষ্ঠজনদের নিয়েই করি এ জরিপ।
জরিপের বিষয়, “ভাই/বস/আপু(?), আপনি কেন বিড়ি খান?” বিচিত্র সব উত্তর ভেসে এলো আমার কাছে। অনেকে বাঁশ দিল, তুই গাধা- ভাগ বলে তাড়ালো আবার অনেকে আফসোসও করল!!!!! কিছু কমন অংশ তুলে দিলাম।
কেস স্টাডি ১ :
“আসলে সিগারেট খাওয়া ধরেছি কৌতূহলের বসে। যখন ৯ এ পড়তাম, তখন অনেক বন্ধুই সিগারেট খেত। আমারও মন চেত। একদিন এক বন্ধু বললো এক টান দে। সমস্যা কি?সেই শুরু”
কেস স্টাডি ২ :
“ক্লাস ১০ এ পড়তাম। লাইলি কে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম। টাইট জিনস পরলাম, চুলে জেল দিয়ে সজারু(স্পাইক)সাজলাম, ফার্মগেট থেকে কেনা ১০০ টাকার সানগ্লাস পরলাম। কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। বন্ধু কুদ্দুস পরামর্শ দিলঃ মেয়েরা ভদ্র ছেলে পছন্দ করে না, একটু রাফ এন্ড টাফ ছেলে পছন্দ করে। আর রাফ এন্ড টাফ হবার জন্য সিগারেট ধরলাম আমি। লাইলির বাসার পাশে চায়ের দোকানে বসে সুখটান দিতাম। কেন জানি মনে হল যে লাইলি বুঝি আমাকে দেখে মুচকি হাসে।আমি তোঁ আকাশে ভাসি। পরে বুঝতে পারলাম,লাইলি আমকে দেখে হাসত না উপহাস করত। কিছুদিন পর তার বিয়ে হয়ে গেল এক বিসিএস ক্যাডারের সাথে।”
কেস স্টাডি ৩ :
“আসলে সিগারেট খেতে কখনই আমার কৌতূহল হয়নি। কিন্তু বন্ধুরা সবাই খেত। সবাই খাচ্ছে, আর আমি খাচ্ছি না, একটু ওড মনে হয়। অস্বস্তি হত। পরিশেষে আমিও ধরে ফেললাম।
কেস স্টাডি ৪ :
“স্কুল কলেজে আব্বু আম্মুর কড়া তত্ত্বাবধানে ছিলাম। যখন ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হলাম তখন অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে গেলাম।এক অস্থির সময় কাটাতাম।কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না। একদিন বন্ধুদের আড্ডায় সিগারেট ধরলাম। সেই শুরু।”
কেস স্টাডি ৫ :
“ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবার পর ঠিক করলাম যে রাজনীতিতে প্রবেশ করব।বড় নেতা হব। অঢেল টাকা কামাবো। তাই বড় ভাইদের সাথে চলতে শুরু করলাম। সিগারেটের হাত ধরে একসময় গাজা বর্তমানে বাবা নিয়েই আছি”।
কেস স্টাডি ৬ :
“ছোটবেলা থেকেই একা বড় হয়েছি। মা বাবা দুই জনেই ব্যস্ত।সময় দিতে পারত না। বন্ধুদের পরামর্শে সিগারেট ধরলাম।জানি না, এটি নিঃসঙ্গতা কাটাতে পারছে কিনা”
কেস স্টাডি ৭ :
“রিতার সাথে যখন ৫ বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল, তখন খুব হতাশায় ভুলছিলাম। কিছুই ভাল লাগত না। সব কিছু অসহ্য লাগত। এক বন্ধু সিগারেট খাবার পরামর্শ দিল। বলল, এটি নাকি টনিকের মত কাজ করে। প্রথম দিকেই ভালই লাগত। এক সময় আর সিগারেটে কাজ হত না। গাজা ধরলাম। এক সময় তাতেও অরুচি ধরে গেল। পরে ফেন্সিডিল ধরলাম। এখন সারা দিন ঘুমাই, আর সারা রাত সজাগ থাকি। পরিবারের সবাই আমাকে ঘৃণা করে। আমি যদি সিগারেট না ধরতাম তাহলে আজ এই পরিস্থিতি হত না। এক সময় রিতা কে ভুলে যেতাম।আজ হয়ত নেশাগ্রন্তও হতাম না।”
মূলত অনেক গুল বিষয়ের মধ্যে এগুলই প্রধান।
টপিক আকারে ধরলেঃ
• কৌতূহল
• মেয়েদের ইমপ্রেস করা
• ধূমপানরত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়াতে সমস্যা।
• পারিবারিক শৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেয়ে অবাধ স্বাধীনতা
• রাজনীতির হাতেখড়ির সময়
• নিঃসঙ্গতা কাটাতে
• প্রেমে ব্যর্থতার কষ্ট ভুলে থাকতে
• স্টারদের অনুকরণ করা।
আসুন ভাই ব্রাদাররা। উপরের টপিক গুল ব্যাখ্যা করি।
*আমার এ ক্ষুদ্র গবেষণাতে একটি বিষয় আমার কাছে পরিস্কার যে অধিকাংশই বিড়ি ধরে নবম-দশম শ্রেণী অথবা কলেজের ফাস্ট ইয়ারে। কারণ এ বয়সে কৌতূহল খুব বেশি থাকে। একবার কৌতূহলী হয়ে বিড়ি ফুকা শুরু করলে একেবারে আসক্ত হয়েই যার পরিসমাপ্তি। এটি আসলে এক ধরণের চোরাবালি। যাতে একবার পা দিলে বালির সমুদ্রে ডুবে মরা ছাড়া আর কোন গতি নাই।
আর এক শ্রেণি আছে, যারা নিজেদের অধূমপায়ী থেকে সুপেরিয়র মনে করে। তারা ভাবে যে ধূমপায়ী বলে তাদের intellectual ভাবটা আরও বেশি করে ফুটে উঠে। তারা প্রথিবীকে অন্য ভাবে দেখে। তাদের অনুভূতি, চিন্তা ভাবনা সবার থেকে ভিন্ন। কিন্তু ধূমপান ব্রেইনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে এ রকম কোন তথ্য প্রমাণ তাহারা দিতে পারেন নি আমাকে। কিন্তু আমি পেরেছি।
উইকি থেকে ডু দিয়ে আসুন না।
http://en.wikipedia.org/wiki/Health_effects_of_tobacco
গুগলে খুজলে হাজার হাজার প্রমাণ পাবেন।
*যারা নিঃসঙ্গতা কাটাতে ধূমপানের আশ্রয় নেন তাদের বলছি, ধূমপান আপনার নিঃসঙ্গতা কাটাতে মোটেও সাহায্য করবে না। সারাদিন আপনি যদি ১০ বার ধূমপান করেন, প্রতিটির জন্য ২ মিনিট সময় বরাদ্দ।
১০*২=২০ মিনিট সময়। এ বিশ মিনিট সময় নষ্ট করে কিভাবে আপনি আপনার নিঃসঙ্গতা কাটাবেন?????
অনেক ধূমপায়ী লাফ দিয়ে বলে উঠবেন, স্মোক করার ফলে আমার অনেক বন্ধু হয়েছে। যাদের সাথে আমি টাইম কিল করতে পারি। হা ভাই, কিছু টাইম পাস হয়ত করতে পারবেন কিন্তু খোজ নিয়ে দেখেছেন কি তাদের মধ্যে অনেকেই মাঝে মধ্যে সিগারেটের তামাক ফেলে তার মধ্যে শুকনা অর্থাৎ গাজা ভরে। অনেকে ইয়াবাও খেয়ে থাকতে পারে। আর বন্ধুর প্রতিটি আচরণ যেহেতু আমাদের উপর প্রভাব পড়ে, তাই আপনি গাজা, ইয়াবার ঝুকির মধ্যেই আছেন। হাজার হলেও তাদের কাছ থেকেই আপনি স্মোক করা শিখেছেন।
* পৃথিবীতে সবথেকে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে কাওকে ভালবাসতে পারা। সেই ভাগ্যবান যে কারও ভালবাসা পেয়েছে। আর যে ভালবাসা পেয়েও হারিয়েছে, সে সত্যিকার অর্থেই দুর্ভাগা। তার কষ্টের সাথে কোন কিছুই তুলনীয় না। কিন্তু হৃদয় ভেঙ্গেছে বলে স্মোক করা শুরু করলেও আপনার কষ্ট কমবে না। হালকা হবে না আপনার তীব্র যাতনা। হা, প্রাথমিক ভাবে হয়ত একটু চাপ কম অনুভব করবেন, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা অপ্রতুল মনে হবে। যা আপনাকে আরও ভয়ানক ড্রাগসের দিকে নিয়ে যাবে।
*যারা প্রিয়.কম থেকে “যে পাঁচ টি কারণে স্মার্ট মেয়েরা স্মোকারদের পছন্দ করে” পড়ে উৎসাহিত হচ্ছেন তাদের বলছি-মেয়েরা আজকাল অনেক বেশি বাস্তববাদী। বিয়ে করার সময় রাফ এন্ড টাফ আপনাকে নয় বাবার পছন্দের পয়সাওয়ালাকেই বিয়ে করবে, নিশ্চিত থাকুন।
* আপনার আইডল শাহরুখ খান স্মোক করেন, তাই আপনিও করেন। সমস্যা কি? ভাই, সমস্যা আছে। শাহরুখ খান কে? একজন ইন্টারটেইনার। আপনি পয়সা দেন, তাই সে নাচে। আপনি পয়সা দেন, তাই সে অভিনয় করে। অর্থাৎ তার মুভমেন্ট গুল আপনি করাচ্ছেন। পয়সার বিনিময়ে।যে কথা সকল ইন্টারটেইনারের ক্ষেত্রেই প্রজেজ্জ।
In a word, he is not an idol. He can’t be idol.
তাই তাকে ফলো করার কিছু নেই।
হুমায়ুন আহমেদ শেষ পর্যন্ত সিগারেট ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সিগারেট কে তিনি বলতেন “বন্ধু”। যদিও এ বন্ধুই তাকে কোলন ক্যান্সার উপহার দিয়েছিল। তাই সিগারেট বন্ধু না শত্রু তা বোধ করি বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।
তাই কেন জানি বিড়িখোরদের আমার ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্ছা মনে হয়। অযথা লাফালাফি করে। আর খুক খুক কাশে।
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
সম্পর্ক
আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন