আমার মায়ের কথা লিখতে গেলে অনেক অনেক কথা লিখা যায়, আজ শুধু সংক্ষেপে কিছু লেখার চেষ্টা করব।
আমি আমার বাবা মার প্রথম সন্তান, একেবারে পাড়া গাঁ বলতে যা বুঝায় সেরকম গ্রামে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, হাই স্কুলের গন্ডি পেড়োনো।
এই আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে, মায়ের স্নেহমাখা পরশ সাথে, কড়া শাষনের ইতিহাস। কত জ্বালা-যন্ত্রণা যে দিয়েছি আমার মাকে (ওহ খোদা ক্ষমা করো ) আব্বা প্রবাসে থাকে, আম্মা একা আমাদের তিন ভাই-এক বোনকে বড় করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সাথে বাবার অল্প আয়ের সংসারকে আজ বিশাল মহীরুহ রুপে সাজিয়েছেন।
আজ আমি প্রবাসে, মায়ের কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে, মাকে দেয়া কষ্টগুলো আজ আমাকে ভীষণ পীড়িত করে।
১৯৯২ ইং:
আমি প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য তখন স্কুলে কোচিং করতাম, কিছুদিন যাওয়ার পরে আমার জন্য কোচিংটা ভীষণ চাপ সৃষ্টি করেছিল, বিশেষত, গনিত টা (আমি বরাবরই অংকে কাচাঁ) । তাই কিছুদিন ধরে কোচিং ফাঁকি দিচ্ছিলাম, মা একদিন জানতে পেরে অনেক কষ্টে পাড়ার এক বড় ভাইকে সাথে নিয়ে দিনের অর্ধেকটা সময় ধরে আমাকে খুজে নিয়ে স্কুলে পৌছে দিয়ে আসে।
গ্রামের গৃহবধুদের জন্য সেসময়ে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানে ভীষন কিছু। মা শুধু আমার কারণে জীবনে প্রথম ঘর থেকে বের হয়ে, সারাটা দিন কষ্ট করেছেন।
১৯৯৬ ইং:
আমি নবম শ্রেণীতে, একদিন ছোট ভাইয়ের সাথে মারামারি করার কারণে আম্মা আমাকে ভীষন মেরেছিল্। রাগ করে সেদিন প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে দূর সর্ম্পকীয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম, সারাদিন মাইকিং চলেছিল আমার নাম ধরে, আমি শুনে ও আসিনি। পরেরদিন যখন আসি, দেখি মা আমার কেদেঁ কেদেঁ চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে, সারাটা রাত মা আমার ঘুমায়নি, একফোটা পানি ও পান করেনি আমার মা.............
এরকম আরো কত কষ্ট দিয়েছি আমার মাকে, একবার পিকনিকে যেতে দেবে না বলায় ঘরের জিনিসপত্র সব ভেঙ্গে ফেলেছি, মা আমার সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল।
আমার এস. এস. সি পরীক্ষার পরে আমরা সবাই শহরে চলে এসেছি, তখন ও মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, সাইবার ক্যাফেতে রাতের বারটা র্পযন্ত চ্যাট করতাম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে যখন আসতাম তখন সবাই ঘুমে অচেতন, শুধু আমার জনমদুখী মা আমার জন্য জেগে থাকত। তরকারী গরম করে ভাত তুলে দিতো আমার মা।
বর্তমানে..
তিন মাস হলো বিয়ে করেছি, একদিন কাজের মেয়ের সাথে আমার বউ এর ঘর মোছার ব্যাপারে কথা কাটাকাটির এক র্পযায়ে আমি আমাদের কাজের মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, তুমি কেন ঘর মোছনি, কে মানা করেছে? কাজের মেয়েটা মাকে গিয়ে একথা বলে যে ”আমি বলেছি, আমার আম্মা কি তোমাকে মানা করেছে ঘর মোছতে?”
এই কথা শুনে আমার মা কেদেঁছিল সেদিন, হয়ত মনে করেছিল বউ আসার পরে আমি পর হয়ে গিয়েছি।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার মনে সেদিন এমন কিছু ছিলনা, যে আমার মা এই কথা বলবে বা মাকে কষ্ট দিব।
কিন্তু তবু ও সেটা আমার অপারগতা আমার ব্যার্থতা আমার অপরাধ। আমি মাকে কষ্ট দিয়েছি।
মা তুমি তোমার এই অযোগ্য সন্তানকে ক্ষমা করো। তোমার পায়ে ঠাই দিও মা।