এমনটি যদি আজ এখানে অর্থাত আমেরিকাতে হত ঐ মেযেটিকে শিশু নির্যাতন নির্মূল কমিটি এসে ‘প্রোটেক্ট’ বা উদ্ধার করত । নিয়ে যেত অমন মায়ের কাছ থেকে । হ্যাঁ আমি ’ক্ষুদে গানরাজ’ এর অনন্যার কথা বলছি যে কিনা বিচারকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পাবার পর ও দর্শক ভোটের স্বল্পতার কারণে প্রথম দশ জনার মধ্যে থাকার সৌভাগ্য থেকে বন্চ্ঞিত হওয়ার কষ্টে বেদনায় লজ্জায় মূর্ছা যাবার উপক্রম হয় এবংএক পর্য়ায়ে তার মাকে ডেকে আনা হয় সান্ত্বনা দেবার জন্য, সামলানোর জন্য । ‘মা’ আহা ’মা’ ! শব্দটাই কত মধুর ! মা তো না বলতে ই বুঝে সন্তানের দু:খ ব্যাথা কষ্ট এবং নিরাময়ের মহৌষধ । আর সেই মা এসে যে কী করলেন ! প্রতিযোগিতার বিচারক নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদ যখন সেটা বললেন আমার সারা গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। উনি অবশ্য বেশ রেগে গিয়ে বললেন, ‘আর কখনো যেন এমন ঘটনা না ঘটে ’। পরক্ষণেই ভাবলাম, উনি একা কি করবেন ! কি করতে পারেন ! কতজন অনন্যাকে বাঁচাবেন ? ওঁনার এক নাটকে দেখেছিলাম--কোন কারণে অতিরিক্ত রেগে গেলে নিবারণের জন্য পটাপট কাচের গ্লাস ভেঙে ফেলছে সবাই ।কাচ ভাঙার ঝনঝন শব্দ রাগ কমাতে সাহায্য করছে । কিন্তু অনন্যাদের বাবা মা ও নাটক দেখেন নি বা ভুলে গিয়েছেন । তারা সমানে নিজের সন্তানের মন ভেঙে ফেলছে -যতখুশী মারধোর করে । অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু যে কত অসহায় ! দুর্বল । সবলের অত্যাচার সব সময়েই অধীনস্ত দুর্বলের প্রতি । এটা হয়তো বা মানুষর সহজাত প্রবৃত্তি । আর এজন্যই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা সরকারের তরফ থেকেই নেয়া হয় ।
।প্রতিটি মানব সন্তান ই প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতি ভালোবেসে বাবা মা কে লালন পালনের দায়িত্ব দিয়ে থাকে । নি:স্বার্থ ভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে সবাই - এ মহা বিশ্বের এ ই প্রত্যাশা । কিন্তু এই একটি ঘটনা ই আমরা যদি পর্যালোচনা করি কি দেখতে পাই । মা ও কষ্ট পেয়েছেন মেয়ের কষ্টে । পাবেন না ? আমাদের ই বুক ফেটে কষ্ট হয় যখন কেউ একজন বাদ পরে যায় প্রতিযোগিতা থেকে ।আর মা ! হয়তো মেয়ের থেকে ও বেশী কষ্ট তার। তবু ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ আর শিশু । কার কাছ থেকে আমরা বেশী আত্মনিয়ন্ত্রণ আশা করব ? অভিভাবক উদাহরণ সৃষ্টি করবেন জীবনের সব ক্ষেত্রে । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা তো শিশুকে দিছ্ছেন ই না বরং স্বার্থপরের মত নিজের রাগ ক্ষোভ নিবারণের জন্য গ্লাস ভাঙার মত ভাংছেন নিজের সন্তানের মেরুদন্ড । বেচারা দুর্বল শিশু ওর রাগ ক্ষোভ হতাশা দূর করার জন্য কিছুই ভাংতে পরেলো না ! তবে হ্যাঁ ভাংবে ।ও যখন বাবা মা হবে ঠিক একই ভাবে ভাংবে নিজের সনতানকে নিজের অজান্তেই । এভাবেই চক্রাকারে চলতে থাকে নির্যাতন নিপীড়ণের খেলা । প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ।
একটি শিশু কি চায় ? ভালোবাসা আর দিক নির্দেশনা । তাকে শুধু সঠিক পথটি দেখিয়ে দিতে হবে আর ভালোবাসতে হবে । ভালোবাসাই তার ভিতর থেকে বেরে করে আনবে লুকিয়ে থাকা সেই অশেষ ক্ষমতা, শক্তি । কিনতু তার বিপরীতটি ঘটলেই বিপদ শিশুদের ওপর বিরক্ত হয়ে বকাবকি করা নতুন কিছু নয় ্ অনেকে মনে করেন ঐভাবেই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে । প্রকৃতিগত ভাবে সে ভালো কিছুই অর্জন্ করেনি ।সব সুন্দর কিছুই তাকে শিখাতে হবে ।কিন্তু অনেক পলীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে প্রতিটি মানব শিশুই ।এক একটি ফুলের মত । বিকশিত হতে একটু সাহায্য দরকার এ ই যা । গাঁদা ফুলকে গোলাপ বানানোর কিম্বা গোলাপকে চাঁপা বানানোর চেষ্টা মানেই অপচেষ্টা । যে যেমন তার প্রতি সন্মান রেখে আস্থা রেখে বড় হতে সাহায্য করাটাই সফল অভিভাবকত্বের উদাহরণ ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্য়ন্ত আপনার শিশু কতভাবে ই না বিরক্ত করছে আপনাকে আর আপনি আপনার সেই বিরক্তি হতাশা প্রকাশ করছেন চিতকার চেঁচামেচি করে এমনি কি গায়ে হাত তুলে । যতবার ই আপনি আপনার নিজের আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন ততবারই আপনার শিশুর সামনে নিজের অসহায়ত্ব ও নিরাপত্তাহীনতাবোধকে তুলে ধরছেন । আপনি নিশ্চয়ই এমন আচরণ করবেন না আপনার সহকর্মীদের সাথে ! কেন? আপনার প্রতি সন্মান হারিয়ে ফেলবে । ঠিক একই প্রতিক্রিয়া হবে আপনার শিশুর ।হয়তো আপনাকে আপাত: দৃষ্টিতে ভয় পাবে তবে কোন সন্মানজনক অবস্থানে বসাতে পারবে না সে । । এভাবে ই বেড়ে ওঠা একটি শিশু আস্তে আস্তে সন্মান প্রদর্শণ্ করার ক্ষমতা তো হারিয়েই ফেলবে ।এমন কি নিজের প্রতি সন্মানটুকুও অবশিষ্ঠ থাকবে না । অন্ধকারের অতল গহবরে হারিয়ে যেতে তাকে এতটুকু পরিশ্রম করতে হবে না । আপনার শিশুর ভিতরে মূল্যবোধ ,আত্মসন্মানবোধ এসব কাঙিখত গুণাবলির বীজ রোপণ করার সময় এখন ই ।সময় পার হয়ে গেলে আপনি ,জাতি বা রাষ্ট্র যে যত আইন প্রয়োগ ই করুরক না কেন কিছুই হবে না।
অনেকেই হয়তো বলবেন বাচ্চাদের কে তো ‘শাসন’ করতে ই হবে । ’শাসিত’ কেন হবে সে? সঠিক শব্দটি কি এখানে ‘লালিত পালিত’ হবে না ???এভাবে চিতকার চেঁচামেচি না করে আপনার শিশুকেই সব কিছুর জন্য দোষী সাব্যস্ত না করে তাকে হীনমন্যতায় না ভুগিয়ে কিভাবে তাকে লালন পালন করা যায় আসুন ভেবে দেখি ।প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হ’লো যে কোন কঠিন হতাশা ব্যান্জ্ঞক পরিস্থিতিতে, আপনার শিশুটিকে দোষরোপ করা থেকে বিরত হোন ।ওর আচরণেই আপনার এমন মেজাজ খারাপ হয়েছে এমন চিনতাটিকে মাথা থেকে বিদায় করুন । তারপর মার ধোর তো প্রশ্ন ই আসে না । বকাবকি ও না করে অদর করে বুকে জড়িয়ে ধরুন । দেখবেন হরমোন কিভাবে কাজ করছে আপনার দেহে ।একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করেছে আপনার ।ঘটে যাওয়া ঘটনা বা দুর্ঘটনা আপনার সোনামণির ভুল ত্রুটি গুলো থেকে মনযোগ সরিয়ে নিয়ে আপনার নিজের অনুভূতির দিকে মনযোগ দিন । নিয়ন্ত্রণ করুন নিজেকে ।হুট করে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন না করে সময় নিন ।ফিরিয়ে আনুন আপনার আবেগের ও বিবেচনার শান্ত সৌম্য ও ভারসাম্যতা । দেখবেন আপনি আপনার শিশুর সাথে কেমন ধীর ও নীচু গলায় কথা বলছেন যার প্রতিটি উচ্চারণে রয়েছে আত্ম প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস যা কি না অবহেলা করার কোন ক্ষমতা ই আপনার শিশুর নেই ।এভাবেই পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে ।
সকালে স্কুলে যাবার সময় তৈরী করার কথাই ধরুন, স্কুলের পোষাক ই পড়তে চাইছে না কোন একটি খেল না নিয়ে খেলতে চাইছে । ভিতরে যত বিরক্তি ই এসে ভর করুক না কেন নিজেকে নিয়ে যান সেই সাম্য শান্ত ও স্থিরতার জগতে কন্ঠে আনুন সেই সুর ও স্বর এবং বলুন -ঠিক আছে আগে তৈরী হয়ে নাও থার পর খেলতে পাবে পাঁচ মিনিট । কথা রাখুন । আর হ্যাঁ পোষাক নির্বাচন করার সময় যে কোন একটি বের করে তার’পর চাপিয়ে না দিয়ে কিম্বা সমস্ত অলমীরা তার সামনে খুলে না দিয়ে দুটো বের করে দিন ।ঠিক দুটো এবং তা থেকে ই তাকে নির্বাচন করার সুযোগ দিন যেটা সে পছন্দ করবে খুশী মুখে তার পছন্দের প্রশংসা করে পড়িয়ে দিন । । এতে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা বৃর্দ্ধি পাবে ।
আমরা সবাই জানি একটি শিশু যখন কোন কিছু এলোমেলো করে বা পানি ফেলে দেয় বা অন্য যে কোন শিশু সুলভ অঘটন ঘটায়, যদি তাকেই তার সমাধান করতে বলি - যেমন গুছিয়ে রাখতে বলি বা পানিটা মুছে ফেলতে বলি তাতে তার দায়িত্ব বোধ বৃদ্ধিও সাথে সাথে নিজের কৃত কর্মের জন্য অন্যকে দোষারোপ করার ক্ষমতা লোপ পায় ।ঠিক তেমনি কালে ভদ্রে কখনো যদি সে দায়িত্ব এড়িযে যেতে চায় খুব বেশী জোর জবরদস্তি করার দরকার নেই । পরীক্ষায় এ ও দেখা গিয়েছে যে মাঝে মাঝে পাওয়া এমন সুযোগ ভবিষ্যতে তাকে কাছের কোন মানুষকে হারাণোর কষ্টকে সহজে গ্রহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । সব কথার শেষ কথা যা ই করুন ভালোবেসে করুন । নিজের তাতক্ষণিক আবেগ দিয়ে নয় । আপনার ভিতরকার সেই শ্বাসত শান্ত সৌম্য মানুষটিকে নিয়ে আসুন এবং আর ‘শাসন’ নয় এবার ‘লালন পালন’ করুন ।
আমাদের দেশে যেখানে প্রতিটি স্তরে ই বিদ্যমান হতাশা । হতাশাগ্রস্থ প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবকদের শিকার অবুঝ অসহায় শিশুরা -মৌখিক ,শারিরীক, মানসিক । অনেকেই হয়তো বলবেন যে, দেশে আরো কত বড় বড় সমস্যা রয়ে গিয়েছে ।আমি বলব এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা । একটি একটি শিশুই আগামীর কর্ণধার । তাই তাদেরকে আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী সুস্থ স্বাভাবিক সত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা কেবল মাত্র পইরবারিক ই নয় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব --’ঘুমিয়ে আছে জাতির (শিশুর) পিতা সব শিশুর ই অন্তরে ।’
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১০ সকাল ৮:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




