somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকার চিঠি - ৩

২৪ শে জুন, ২০১১ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ এতকাল পরে তোমার ফোন পেয়ে সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেল । । সেই তুমি সেই আমি । মাঝে শুধু সময় । বয়ে যাওয়া ’সময়’ নামের একটি নদী । ছোট ছোট কত শত সহস্র মুহূর্তের গাঁথা মালা । তবু ও সেই একই চেনা সুর ,একই কন্ঠ ।হয় তো একই কম্পণ ! যখন বললে -.’তুমি দেখতে ঠিক আগের মতই আছ ’। খুব ইচ্ছে করছিল বলি ‘অমার ও খুব দেখতে ইচ্ছে করছে । তোমাকে । আজকের তোমাকে । সংসারী সুখী সফল এক পুরুষকে । তার থেকে ও বেশী আমাকে । এই আমার আমাকে । আজ থেকে বিশ পঁচিশ বছর আগের সেই কিশোরীটিকে । যে আছে শুধুই তোমার কাছে । আছে কি ? আজ ও কি আছে সেই চিঠিগুলো ?যার প্রতিটি শব্দ এক কিশোরীর দুরু দুরু বুকে কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা দলিল । লোমকূপ থেকে হৃদপিন্ড শিরা উপশিরা থেকে মহাধমনীতে বয়ে যাওয়া প্রতিটি রক্ত কণিকার পুংখানুপুংখ বিবরণ । এই যেমন কখন ব্লাড সুগার বেশী ছিল কখন কম কখন ইনসমনিয়া কখন অতিরিক্ত এনডরফিন এই সব আর কি । হাসছ? একটু সহজ করার জন্য এভাবে বললাম।তুমি আবার সিরিয়াস না হয়ে যাও এই অবেলায় । তা যতই বল , আগের মত আছি । আমি একটু মিলিয়ে দেখতাম । ভাগ্যিস লিখেছিলাম তোমাকে ! মন ভরে প্রাণ খুলে লিখেছিলাম । এখন এই টেকনলোজির যুগে হাতে হাতে সেলফোন,ফেসবুক, এস.এম,এস ।কোথায় সে সময় ? কোথায় সে সুযোগ ? আমার ভাবতেই ভালো লাগছে আমি আবার লিখছি । তোমার মনে আছে প্রথমদিকে আমি যখন তোমাকে আমেরিকা থেকে ফোন করতোম তুমি দুষ্টুমি করে বলতে ‘আমাকে ও নিয়ে যাও ’। আমি বুঝতে পারতাম না । আমি স্বপ্নের জাল বুনতাম ।এখানে কত বাঙালী । আসার জন্য পাগল মানুষ । সবাই যে কাগজ পত্র নিয়ে ঠিক ভাবে এসেছে বা আছে তা কিন্তু না। একটা ব্যাবস্থা হয়েই যাবে । এই মানসিকতা নিয়ে কত মানুষ এসেছে । হয়েছে ও তাদের স্বপ্ন পুরণ ।তুমি এলে ও হবে । হবেই হবে । স্বপ্ন দেখতাম বুকে আশা নিয়ে । আজ ও যখন তুমি বললে ‘আমাকে নিয়ে যাও’ -স্বপ্নগুলো উঁকি ঝুঁকি মারতেই হেসে উড়িয়ে দিলাম ।ঠিক যেমন করে একজন দক্ষ সাঁতারু খড় কুটো সরিয়ে দিযে সাঁতার কেটে যায় ঠিক তেমন করে । দিবা স্বপ্নে ও ঠাঁই দিলাম না ।
এখন সময়টা বড় খারাপ ।৯/১১(সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১) এর পর এমন কড়াকড়ি হয়েছে । এরিজনা অন্গরাজ্যে তো প্রতিটি মানুষকে পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরতে হয় । সন্দেহ হ’লে পুলিশ যে কাউকে যখন তখন জিগ্ঞসাবাদ করতে পারে । মেক্সিকোর বর্ডার থেকে প্রচুর অবৈধ ভাবে বসবাসকারী এসেছে বা এখন ও আসছে এ জন্য এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা । এ নিয়ে অবশ্য তর্ক্ বিতর্ক্ ও হয়েছে । অনেকেই সমর্থন করেননি বিষয়টি ।এখানে ‘ডিসক্রিমিনেশন’ শব্দটি খুবই ঘৃণ্য । তবে অনেকে বলছে দেশের নিরাপত্তার জন্য এ ছাড়া কোন উপায় নেই । এসব অবৈধ নাগরিকরা অনেক সময় সাথে করে অবৈধ ব্যবসা যেমন ড্রাগস এটা সেটা ও নিয়ে আসে । অবৈধ নাগরিকরা অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করে । কাজ পাওয়া ই বিরাট ব্যাপার । বাঙালী যারা অবৈধ ছিল এখন ও হয়তো কিছু আছে সাধারণত বাঙালীদের দোকানেই কাজ করে । ক্যাশ টাকায় । বৈধ ভাবে তাদের বেতন দেয়া হয়না । তারা তো অবৈধ । ট্যাক্স ও দেয়না ।এখানে প্রতিটি পে চেক থেকেই ট্রাক্স কেটে রাখা হয় । অনেক বাঙালী আছে সপ্তাহে সাতদিন ই কাজ করে । কাজ আর বাসা । বাসা আর কাজ । কোন রকমে কষ্ট করে ছোট একটি বাসায় থাকে একা বা রুম মেট নিয়ে । অনেকের ই বউ বাচ্চা পরিবার দেশে । বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে এভাবেই । দেশে ও যেতে পারে না । শুধু প্রবাসের রক্ত নিংড়াণো পয়সায় পরিবারের মুখে হাসি কম্বা স্বচ্ছলতাই একমাত্র লক্ষ । আর কবে একটি ’সাধারণ ক্ষমা’ আসবে তার অপেক্ষায় বসে থাকা ।অনেকে ই আবার পরিবার পরিজন নিয়েই এভাবে দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করছে ।
তাই বলে সবাই যে এত কষ্ট করছে তা কিন্তু না ।অনেকেই অন্যের দোকানে কাজ করে করে নিজেই একটি দোকানের মালিক হয়েছে । একটি থেকে দুটি , তিনটি । আবার বাঙালীদের কাজ দিচ্ছে তারই দোকানে । অনেকেই বিভিন্ন সন্মানজনক পেশায় কাজ করছেন । ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, উকিল, প্রফেসর এমন কত কি ।কত কষ্ট করে নিজেকে এই নতুন দেশে নতুন পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে । চাইলেই মানুষ সব কিছুই পারে । তুমি এলে না । কখনো ই এলেনা ।
যে জিনিসটি আমার ভালো লেগেছে তা হলো দেশে যেমন একজন উপরে উঠে গেলে আর একজন যে পা ধরে নীচের দিকে টান দেয এখানে এসে স্বভাবটা একটু হলেও বদলে যায় । দেশের জন্য মায়া বেড়ে যায় । বিশ্বাস করবেনা - ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী যাই হোক দেখতে একটু আমাদের মত হলেই বুকে পানি এসে যায় । মনে হয় কত জনমের চেনা কত আপন !একবার শ্রীলঙ্কার এক পরিবারকে দেখে কেন যে আমার কি হল- সরাসরি বাংলায় ই জিগ্গ্ঞেস করলাম- ’বাঙালী নাকি’ ? ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম ।দেশে কত সময় চেনা মানুষ দেখলে ও কথা বলা হয়না । কুশল বিনিময় করা হয় না তাই না ?


আমি যখন প্রথম এলাম , লস এনজেলেস এয়ার পোর্টে নেমেছিলাম । অনেক বড় আর জনবহুল শহর লসএনজেলেস । কিন্তু আমার মনে হয়েছিল ধু ধুঁ মাঠ । কোথাও কোন লোক জন নেই ।মনে মনে বললাম - ‘ এ কোন গ্রামে এসে পড়লাম ।’ আর এখন ? লোকের ভিড় এড়াণোর জন্যা আমি লস এন্জলেসে যেতেই চাই না । ঢাকা শেহর থেকে এলে পৃথিবীর যে কোন শহর কেই এমন মনে হবে ।পরের দিন ই বের হলাম টুকটাক কেনাকাটা করতে । ভুল ভাঙ্গলো আমার । এতো লোক । পার্কিং লটে ঢুকেই আমার ভালো লেগে গেল বিস্ময়ে । ভাবছ একসাথে এত গাড়ী দেখে ? না, তা না । গাড়ীর ভিতর থেকে ভেসে আসা গান শুনে । বাংলা গান শুনতে শুনতে গাড়ী থেকে নামলাম সাথে সাথেই থেকে কানে হুট করে ঢুকলো পাশের গাড়ীর স্প্যানিশ রক । আমি হাসি মুখে শুনলাম এত টুকু বিরক্ত হলাম না আর দেখলাম পৃথিবীর সব দেশের সব বর্ণের লোক একই পার্কিং লটে । এক এক গাড়ী থেকে ভেসে আসছে এক এক ভাষার সুর ।নেমে অসছে কত ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের ,গন্ধের ও পোষাকের মানুষ । কী শান্তিপূর্ণ্ সহ অবস্থান ।তখন ই প্রেমে পড়ে গেলাম আমি ।আমেরিকার প্রেমে ।

তোমার মনে আছে আমি কখনো লাইনে অপেক্ষা করতে পারতাম না ।আর করতে ও হতোনা ।কিভাবে যেন স্কিপ করে যেতাম । কেমন করে যে আমি লাইনের সামনে চলে যেতাম কোন অপেক্ষার ধার না ধেরে । ভাবতে ই হাসি পায় এখন । বিশেষ করে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় টোকেন বা কিছু একটা দিত যাতে সিরিয়াল নম্বর থাকত । আমার দম বন্ধ হয়ে আসত অপেক্ষা করতে । পায়চারী করতাম ,কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম ।তুমি আমার অস্থিরতা দেখে হাসতে ।সেই আমি ঠিক দু দিন কি তিন দিনের মাথায় গেলাম সোসাল সিকিউরিটি অফিসে । ’ওমা যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত্রি হয় ‘। কী যে লম্বা লাইন । এখানে স্কীপ করার বা ফাঁকি দেবার কোন উপায় নেই ‘সোসাল সিকিউরিটি নম্বর’ আমেরিকাতে তোমার একমাত্র পরিচয় বললে ভুল হবেনা । ওটা ছাড়া কিছুই শুরু করা যাবে না ।আমেরিকান রা কোন কারণে স্মৃতি হারিয়ে ফেললে ও এই নম্বরটি বোধ হয় মুখস্ত বলতে পারে । তাই আপেক্ষা করতেই হবে ।পেয়ে গেলাম , হয়ে গেলাম একটি নম্বর । নয় ডিজিটের একটি নম্বর ।এভাবে ব্যাংকে , পোষ্ট অফিসে এযার পোর্টে এখানে সেখানে সবখানে লাইন দিতে দিতে এখন শিখে গিয়েছি । ধৈর্য্ ধরে অপেক্ষা করা ।অন্যকে সন্মান করা আর বিশ্বাস করা এক সময় না একসময় আসবেই আমার সময় ।তবে তোমার কানে কানে বলি এখনও দেশী কোন বড় পার্টিতে গেলে আগের পুরাণো স্বভাবটি একটু ঝালাই করে নেই । শুধু আমি না । সবাই করে । ষোলো আনা বাঙালী আনার চর্চা । যেমন ধর কোন অনুষ্ঠান সাত টায় শুরু হবার কথা থাকলে সাড়ে সাতটার আগে যাওয়া তো একেবারে ‘আন কালচার্ড্ ’ বা ‘অবাঙালী’ত্বের পর্যায়ে চলে যায় । কিনতু ওই বাঙালীই যখন আমেরিকানদের কোন অনুষ্ঠানে যাবেন সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে গিয়ে হাজির হবেন অন্য সবার সাথে সাথে । এদেশে সময়ের মূল্য অপরিসীম ।

দেখেছ কত কী লিখে ফেললাম ।কতদিন পরে কথা হলো । মনে হচ্ছে ছোট ছোট সব ঘটনা ই বলি আজ । ওই যে লাইব্রেরীতে যখন পড়তাম তখন কি ভাবতাম । ভাবছ বই সামনে রেখে ? হ্যাঁ বই সামনে রেখেই তো সবাই ভাবে । তুমি ভাবো না? মানুষের মন বড় বিচিত্র। একটা মুহূর্ত্ ও চিন্তা না করে থাকতে পারেনা । তবে মজার ব্যাপার হলো হয় অতীত নয়তো ভবিষ্যত । কখনোই বর্তমানে থাকে না এ মন । ঠিক এই মুহূ র্তে , এই সময়ে থাকার কৌশল টি যদি জানা যেত । এ জন্য ই তো মেডিটেশন । ও বড় কঠিন কাজ । তবে আমি অনেক কেই দেখেছি পড়বার সময় কানে একটি এয়ার ফোন লাগিয়ে গান বা কোন মিউজিক লাগিয়ে দেয় এতে নাকি মনের অকারণ ছুটাছুটি কমে । আমার বাপু এই ছুটাছুটি ই ভালো লাগত । ছুটে ছুটে আমি তোমার কাছে চলে যেতাম আবার ফিরে আসতাম । ।

এ দেশে যে পড়াশুনা করার কত ব্যাবস্থা । এই ধর মাঝ বয়সে হঠাত কারো মনে হলো - না , আর নাড়ী টেপা না । আমার কাজ হলো গলা বাজী করা বা উকিল হওয়া, সেলসম্যান হওয়া, শিল্পী হওয়া বা অন্য যা খুশী । আবার শুরু করা যায় সব কিছু ।এবং করছে ও অনেকে । কিম্বা কোন গৃহবধু হঠাত একটি মনে করলো তার নিজের জন্য কিছু করা দরকার স্কুল কলেজ যেখান থেকে হোক শুরু করতে পারে সে । যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের (এখানে বলে স্কুল) লাইব্রেরী তে বসে যাওয়া যায বই নিয়ে । , এছাড়া পাবলিক লাইব্রেরী আছে, বইএর দোকান গুলো ,শুধু কি তাই ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এমন ফার্ষ্টফুডের দোকানে বসে ও পড়াশুনা করা যায় । আমি তো মাঝে মাঝে ’ আই হপ’ -এ গিয়ে এক কাপ কফি বা আইস টি কিনে কোণার এক টেবিল নিয়ে বসে যেতাম ।একবার ওখানে কাজ করে এক মেয়ের সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল ওর নাম স্যানড্রা । নেম প্লেটে নাম দেখেই আমি কথা বলেছিলাম । নামের বানান টা অনেক টা আমার টার মত ।তুমি যেভাবে আমার টা লিখতে ‘এস’ দিয়ে অ আমার নামের সেই বানান টির মত । আলাপ করে ভালো ই হলো । দেখলাম মানুষরে জীবন একই রকম জাতি ধর্ম্ বর্ণ্ নি র্বিশেষে । একই সুরে হাসে একই সুরে কাঁদে । তার থেকে ও বড় মিল সবাই এ দেশে আসতে চায় । দেশটিকে নিরাপদ ভাবে । নিজের জননী মাতৃভূমি ছেড়ে এখানে শুধু এতটুকু জীবনের আশায় ।আলোর আশায় , স্বাধীনতার আশায় , কথা বলার স্বাধীনতা, পথ চলার ম্বাধীনতা , ঈশ্বর বা ধর্ম্ নির্বাচনের স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য আমেরিকাতে আছে । ভালো ও বেসে ফেলেছে এ দেশটিকে । মুখে আমরা যে যা ই বলি না কেন । এমন আতিথেয়তা আর কোথাও নেই । দেশটা ই তো ইমিগ্রেন্টদের । কিন্তু তুমি এলে না ।কখনোই এলে না ।

তুমি যখন ফোন করেছিলে আমি ড্রাইভ করছিলাম । কথা বলতে বা গাড়ী চালাতে অসুবিধা হয়নি । কথা শেষে খেয়াল করলাম রাস্তার দু’পাশের গাছগুলো আরো ঘণ আরো সবুজ । ম্যাগনোলিযা গুলো কেমন হাসছে । আমি এখন যে শহরে থাকি , নাম আটলান্টা । চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ । বড় বড় গাছ ।পাইন, ওক কিছু কিছু ম্যাপল গাছ ও আছে । তবুও এত সবুজ ? না না না । আগে কখনো এত সবুজ ছিলনা ।আমার বাড়ীতে এসেই চোখ পড়লো বড় বড় গাঁদাফুলগুলোর ওপর । হলুদ রঙের গাঁদা ফুল ।ছোটবেলায় আমাদের বাড়ীতে ছিল তাই শখ করে লাগিয়েছি ।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম , ভাবলাম খোঁপায় পড়ি । খোঁপা পাব কৈ ? চুল কেটেছি সেই কবে ! আমার লম্বা চুলের কথা মনে আছে তোমার ? সবই এখন অতীত । ফ্রেমে বাঁধানো ছবি । এই যে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি বাড়ীর পিছনের বাগানে । খোলা মাঠ ,ঘণ সবুজ বড় বড় গাছ । ওপারের কিছু দেখা যায় না ।এখন সবুজ কিছুদিন পরে লাল কমলা হলুদ কত রং যে হবে ! মনে হবে স্বর্গ্ রাজ্য। এখনকার এই সবুজ দেখলে মনে পড়ে কবিতায় পড়া শস্য শ্যামল যে বাংলাদেশকে পড়েছি সেটা আসলে এই এখানে । জানালায় দাঁড়িয়ে তোমায় বলছি -’তুমি যাবে ভাই , যাবে মোর সাথে......’’। জান ঠিক এই মুহূর্তাটিতে মনে হচ্ছে -না, ভুল বললাম প্রায়ই আমার এমন হয় । আগেও হ’তো । পড়তে পড়তে ক্লান্ত হলে লাইব্রেরীর জানালা দিয়ে তাকাতাম সবুজের দিকে যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে থাকতাম । ছোট কোন জলাশয় চোখে পড়ত । বসতাম । তোমায় নিয়ে । ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করত বলতো ‘শুভরাত্রি’। এখন ও অবসন্ন নিসঙ্গ মুহূর্তে মনের বিক্ষিপ্ত অবস্থায় সবকিছু পিছনে ফেলে খোলশ ছেড়ে বের হয়ে আসে আমার মন । পা টিপে টিপে সবুজ ঘাসের গালিচায় করে পায়চারী ।লাল পাড় শাড়ী কপালে লাল বড় টিপ ।চোখ চোখ । কাছকাছি পাশাপাশি । ঘাসের কোলে । তুমি আর আমি । আমি আর তুমি । হয়তো হাসছ আর বলছো --ঠিক আছে দেশে এলে দেখা যাবে ।’ দেশ তো এখন কংক্রিটের জঙ্গল । খোলা জায়গা না হয় বাদই দিলাম ।একটা গাছ ও চোখে পড়ে না ।এখানে এলে না ভালো কথা । দেশটা একটু সবুজ রাখবেনা ! তুমি জান প্রকৃতি আমার কত প্রয়োজন । এবার কিন্তু দেশে এসে গাছ দেখতে চাই ,সবুজ দেখতে চাই ।

তোমাকে একটা মজার কথা বলি ।আটলান্টাতে আসার আগে আমি ছিলাম ফ্লোরিডাতে । টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডাতে এসে আমার মনে হলো -ওমা এ দেখি স্বর্গে এসে পড়লাম !রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছি চোখে পড়ছে ছোট ছোট জলাধার । মনে পড়ে গেল বরিশালের কথা । প্রায় প্রতিটি বাড়ীর সামনে ই ছিল এমন জলাধার তাই ছ্টে ছ্টে ব্রীজের মত থাকত । অবশ্য ভেনিসে গিয়ে ও আমার বরিশালের কথা মনে হয়েছে ।তার পর কিছুদূর গেলেই চোখে পড়ছে লাল রংএর রক্ত জবা । জবা ফুল , কলা গাছ । প্রতিটি বাড়ীতে রয়েছে আম গাছ । যা আমায় সবচেয়ে বেশী পাগল করেছে - তা হলো কমলা রংএর আকাশ । হ্যাঁ, কৃষ্ঞচুড়াগুলো যখন আকাশ টাকে কমলা করে ফেলত তুমি জান আমি তখন কী করতে পারি ।

একদিন কী হ’লো জান , দুপুর বেলা তেমন কোন কাজ ছিলনা । বাইরে রোদ । তবু ও আমি বের হলাম । বাসার সামনে হাঁটছি । গায়ে রোদ লাগছে । কেমন চিড়বিড় করে উঠলো হাত পা । শরীরের খোলা অংশ গুলো ।হঠাত করে খেয়াল করলাম এই আমি সেই আমি নই । এ যে সেই মেয়েটা ,সেই বালিকা । --দুপুর রোদে ছুটে বেড়াচ্ছে ফড়িং এর পিছনে। আমি অনুভব করলাম । আমার শরীর দিয়ে অনুভব করলাম আমার বালিকা বেলা আহা, আমার ফড়িং খোঁজার দিনগুলো ! । কেমন ভৌতিক ,অলৌলিক । এক অদ্ভুত অনুভূতি ! বাংলাদেশ আর ফ্লোরিডার আবহাওয়া একই রকম -ট্রপিকাল । তা যা ই হোক । হাওয়াই ও তো তাই । হাওয়াইতে ও আমি গিয়েছিলাম । না এমন তো মনে হয়নি । ।এমন কি দেশে গিযে ও আমার এমন মনে হয়নি । তবে হ্যাঁ , অনেকদিন পর যখন দেশে গেলাম এয়ারপোর্টে নেমেই মনে হয়েছিল ---’যেন জেল থেকে মুক্তি পেলাম ’।যা বলছিলাম , ফ্লোরিডার সাথে আসলেই আমার এক অদ্ভুত যোগাযোগ । দেশে যেমন নিজের গ্রামের বা জিলার সাথে সবার ই একটা ভিন্ন ধরণের আত্মিক সম্পর্ক্ থাকে ।আমেরিকাতে তেমনি আমার ফ্লোরিডার সাথে । তোমার সাথে তো যোগাযোগ ই ছিল না । বলব তোমাকে । কত কী ! ঘটনা দুর্ঘটনা ! সবই বলব । তবে আজ না বন্ধু । আজ এ পর্যন্তই । ভালো থেকো ।

আটলান্টা
জুলাই ২, ২০১০ ।

৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×