আমি অবাক হয়ে ভাবি আবহাওয়ার একটু পরিবর্তন
হলে ছোট একটি গাছ ও বিদ্রোহ করে । আর কৃষ্ঞচুড়া ? আমি কিছুতেই অটলান্টায় আমার বাড়িতে তাকে আসতে বলতে পারবোনা । টিকে থাকাতো দূরের কথা । জন্মাতেই বলতে পারবো না। মানুষের কি অসীম ধৈর্য ! সহনশীলতা তাই না । কেমন করে পরিবেশের সাথে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। আমি এই সহনশীলতার অগ্নি পরীক্ষায় হাঁপিয়ে উঠেছিলাম । আমার সাথে সাথে পরিবারের সবাই । ভেবেছিলাম । কি দরকার! আর পারি না । দেশে চলে যাই । নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবন । জন্মেই পেয়েছি যে সবুজ পাসপোর্ট । তাকে নীল করার জন্য এত পরিশ্রম এত ত্যাগ । আসলেই কতটা অর্থবহ ।যিাই হোক শেষ পর্যন্ত যাওয়া আমার হয়নি । কারণ অনেক । কিছু হয়তো আমি না বললে ও তুমি বুঝতে পার । অনেক কিছুই শ্বাশ্বত্ সত্য আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের জন্য বিশেষ করে মেয়েদের জন্য । তবে যেটা তুমি ভাবতেও পারছনা । তা হলো, ’পিচ’।আমার প্রিয় ফল ।শুধু কি পিচ ? বাজারে রকমারী কত ফল ! এত মজার মজার ফল ফেলে কোথায় যাব ? কোথায় পাব ? হাসছ ? আসলেই তাই কমলা রংএর পিচের দিকে তাকিয়েই সে যাত্রায় শক্তি ফিরে পেলাম । যুদ্ধে নেমে গেলাম ।
কত কাঠ খড় পুড়িয়েছি সে গল্প পরে কখনো বলবো তোমাকে । সময় তো কম হলো না ! ঘটনা ও কম ঘটলো না ।উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষের চলার পথ কখনোই পিচ ঢালা হয় না । তবে একটা কথা কি জান , সবাই এদেশে এসে যে পরিশ্রম, সততা আর নিষ্ঠার সাথে কাজ করে নিজের দেশে গিয়ে এটা কাজে লাগালে আরো ভালোভাবে থাকতে পারে । নিজের দেশের ও উন্নতি হয় ।আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাউকে যদি চলেই যেতে হয় - এতদিন আমেরিকায় বসবাস করে কঠিন পরিশ্রমের যে শিক্ষা নিয়ে গেল এটাই বড় মূলধন ।আমি যেমন পিচ (ফল) খাওয়ার জন্য পেরিশ্রম করে গেলাম । অন্যরা পিচ (শান্তি) পাবার জন্য অকলান্ত পরিশ্রম করে গেল ।নিজের দেশে তার অর্ধেক করলে ও জীবন টা পিচ ঢালা পথের মত মসৃন ও সুন্দর হবে ।
তোমাকে এসব কেন লিখছি ?নিজেকে, নিজের চেতণাকে ডিফেন্ড করবার জন্য । আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা এই মুহূর্তে আমি যা ভাবছি । , ভাবছি , আমার বাসায় ঘরদোর পরিস্কার করতে আমাকে সাহায্য করে যে দম্পতি ওদেরকে জিগ্গেস করতে হবে ওরা এদেশে বৈধ ভাবে আছে কি না ? ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি যদিও আছে আমার কাছে । ওটা দিয়ে সব প্রমাণিত হয়না । বৈধতার আরো কাগজ চাইতে হবে । যদি না থাকে ওদের কে আর রাখা যাবে না । নতুন আইন হয়েছে জর্জিয়া অন্গরাজ্যে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী কাউকে কাজে নিয়োগ করলে নিয়োগকারীকেও অসুবিধায় পড়তে হবে । আর যদি বৈধ কাগজপত্র থাকে ? তাহলে ও আর এক দুশ্চিন্তা । ওরা এখন সুযোগের সদ্ব্যাবহার করবে । হয়তো বেতন বাড়াতে বলবে । ওদের এখন অনেক চাহিদা ।শুধু এই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথাই বা বলি কেন ! সব ধরণের কায়িক পরিশ্রমের কাজ কৃষি কন্সট্রাকশন যা ই বলি না কেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ই এই অবৈধ ভাবে বসবাসকারী মানুষ গুলোই করছে । বেশ অল্প পারিশ্রমিকে । আমেরিকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ও অগ্রগতিতে এদের যে ভূমিকা আছে তা বলাই বাহুল্য ।শুধু এতটুকুই ভুল সরকারকে কোন কর বা ট্যাক্স দিচ্ছে না ।আছেই অবৈধভাবে, কাজ ও করছে অবৈধ ভাবে তো করপ্রেদানের মত অমন আইনানুগ কর্ম্ কান্ডে যোগ দিবেই বা কিভাবে ।কে বোঝে সে কথা !
কঠিন হিসাব নিকাশ ।। আর হাজি মুহাম্মদ মহসিন হওয়া সম্ভব নয় বলেই ভাবছে আমেরিকা বিশেষ করে জর্জিয়া । এদের সন্তান রা এখানে বড় হচ্ছে । স্কুল কলেজে যাচ্ছে ভাগ বসাচ্ছে আমাদের মত করদাতা বৈধ পিতা মাতার সন্তানদের ভাগে । চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এই একই অবস্থা ।শুধু কি তাই পৃথিবীর বিভিন্ন্ দেশ থেকে মানুষ আসে সুচিকিৎসা পেতে । একটি পয়সা ও খরচ না করে । এমন কি বিত্তবান সন্তান সম্ভাবা মা । হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে চলে আসছেন এখানে আমেরিকার খরচে( করদাতাদের) নিজ সন্তানকে আমেরিকার নাগরিক বানিয়ে আবার আমেরিকাকেই গালাগালি করতে করতে উড়ে চলে যাচ্ছেন নিজ নিজ দেশে । দেশের মাটিতে তিলে তিলে গড়ে তুলছেন এক আমেরিকান নাগরিককে যোগ্য আমেরিকান করেই ।তা যা বলছিলাম । আমেরিকার টাকা বলতে কর দাতাদের টাকা ’।’নিজে বাঁচলে বাপের নাম ।অর্থনৈতিক অবস্থা ও দেশের নিরাপত্তা এমন এক অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে যে এমন মর্মান্তিক সিদ্বান্ত নিতেই হলো ।তবে হ্যাঁ , এখন ও অনেক অন্গরাজ্য আছে যেখানে এরা অনায়াসে চলে যেতে পারে । করছে ও তাই ।ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা আপাত: দৃষ্টিতে ক্ষতি গ্রস্থই হচ্ছে ।
ঝড়ের বেগে এক রাতেই নয় বরং অনেক তর্ক বিতর্ক কাঠ খড় পুড়িয়ে তবেই এমন নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে ।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা কিছু শান্তি প্রিয় মানুষ মাথার ঘাম পাযে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটু নিরাপদে ঘুমাচ্ছে আর ছেলেমেয়েগুলোকে মানুষ করছে । এই তো ।তাদের কে নিয়ে কেন টানা হেঁচড়া ?
বৈধ মানুষগুলো ও কিন্তু একই কাজ করছে । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে এসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটু শান্তিতে ঘুমাচ্ছে আর ছেলেমেয়েগুলোকে মানুষ করছে । উপরন্তু তারা আরো একটি কঠিন কাজ করছে । নিজেকে বৈধ ভাবে প্রতিস্ঠিত করছে । অতএব তাদেরই অগ্রাধিকার ।
সব ঠিক হয়ে যাবে । একবার সব অবৈধ নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে চলে গেলেই আমরা ওদেরকে ভুলে যাব । ওরা ও আর আসবে না একান্তই যদি আসতেই হয় ।আরো একটু বেশী বষ্ট করবে । বৈধ হবে । এদেশের নাগরিক হবে ।যেভাবে আমরা হয়েছি । ।
এই মুহূর্তে আমি তোমাকে লিখছি ফ্লোরিডার অরলান্ডো তে বসে । আটলান্টো খেকে প্রায় চারশত পঁচাত্তর মাইল । ড্রাইভ করেই এসেছি । ৯১১ এর পর থেকে অল্প স্বল্প দূরত্বে প্লেনে উঠতে ইচ্ছে করে না । খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী ।সিকিউরিটি চেক হেন তেন তে এত সময় নষ্ট হয় আজকাল । জীবন এখন জিম্মি নিরাপত্তাহীনতা বোধের কাছে । পুরো একটা সপ্তাহ থকব ।আমার ৪ বছরের ছোট্ট মেয়ে হোটেলের একরুমে থাকার চেয়ে খোলামেলা পরিবেশে থাকতে পছন্দ করবে ভেবে একটি ভিলা বা এপার্টমেন্ট ভাড়া করেছি ।ভেতরে ঢুকেই আমার মন কেমন নস্টালজিক হয়ে গেল ।ঘুরে ঘুরে দেখছি । লিভিং ডাইনিং কিচেন তিন বেডরুমের ছোট্ট ছিমছাম সাজানো গোছানো একটি এপার্টমেন্ট । আমরা দু বেডরুমের জন্য বলেছিলাম পরে ‘আপগ্রেড’ হয়ে তিন হয়েছে ।প্রায় সবার মত আমিও শুরুতে এমন ভাবে ই, না ! এর থেকে ও ছোট ।এক বেডরুম এমন কি রুম মেট নিয়ে ও থেকেছি ।এখন ও অনেকে থাকছে । কাজ করছে ছেলেমেয়ে মানুষ করছে সংসারের দায়িত্ব পালন করছে সাথে পড়াশুনা করছে । নিজেকে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে ।অনেক কষ্ট ।
আর ঐ যে ‘আপগ্রেড’ হওয়ার কথা বললাম না ।এটা হলো আমেরিকার তথা পুঁজিবাদের আর একটি দিক । ‘তেলে মাথায় তেল দেওয়া ‘। জীবনে প্রথম যখন ব্যান্ক লোন নিয়ে গাড়ি কিনলাম তখন আমার সুদের হার ছিল শতকরা ১৪ ভাগ । কত কষ্ট কত ত্যাগ তিতিক্ষা করে তা শোধ করতে হয়েছে । আর এখন ? গাড়ি কিনতে চাইলে খুব বেশী হলে ৬ ভাগ আর বাড়ির জন্য শতকরা ৪ ভাগ সুদ দিতে হয় । একে বলে’ ’ক্রেডিট স্কোর’ যার যত ভালো বা বেশী তার তত আদর বেশী সুদের হার তত কম । আর আমি বলি ‘তেলে মাথা’ ।।
এখানে এমেছি আমার মেয়েকে নিয়ে । ওর গ্রীষ্মকালীন ছুটি ।তিন মাস স্কুল বন্ধ থাকে । বাবা মা দের যে কি ভোগান্তি । যদিও কিছু কিছু স্কুল সারা বছর ধরে এ ছুটি কে ভাগ করে নিয়েছে । সংখ্যায় খুবই নগণ্য ।এর থেকে পরিত্রাণের তেমন একটা সুযোগ আছে বলেও মনে হয়না । আমেরিকা বলে কথা ! কোণায় কোণায় ফাঁদ পাতা ।টাকা কিভাবে খরচ করিয়ে নিতে হয় তা এরা ভালো করেই জানে ।সামার ক্যাম্প, চিড়িয়াখানা , যাদুঘর , ওয়াটারপার্ক্ , ডিজনি পার্ক্ কত কী !
আমরা এসেছি ডিজনি পার্কে ।এখানে তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রী ফারেনহাইটের ওপরে ছাড়া কম না এ সপ্তাহের একটি দিন ও । এত গরম আর এমন অর্থনৈতিক অবস্থায় খুব একটা ভিড় হবে না ভেবেছিলাম ।ও মা, কে বলবে আমেরিকার বেকারত্বের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে ?মিলিয়ন মিলিয়ন প্রায় ১৪ মিলিয়ন লোকের চাকুরী নেই । আর ১৯৮১ সালে লেবার এনার্জি কনসোলিশন হয়েছিল কেন না গ্যাসের দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়ে প্রতি গ্যালন ১ ডলার ৩৫ সেন্ট হয়েছিল । আজ ৩০ বছর পর ২০১১ তে এসে প্রতি গ্যালন হয়েছে ৪ ডলার । যদিও দেশ জুড়ে তোলপাড় ।
সি এন এন এর এক পরিসংখাণে দেখা গিয়েছে ৬১ বাগ জনগন দাযী করছে গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আর মাত্র ২৫ ভাগ দায়ী করছে ওবামাকে এ পরিণতির জন্য ।
কথা সেটা না কথা হলো জীবন থেমে থাকে না । আবার ও সেই এক কথা । মানুষ ঠিকই খাপ খাইয়ে নেয় পরিস্থিতির সাথে ।
ডিজনির অনেকগুলো পার্ক আছে । তবে হলিউড স্টুডিও, এনিমাল আর ম্যাজিক কিংডমই বাচ্চাদের বেশী পছন্দ ।সন্ধ্যার পরে ম্যাজিক কিংডম এক স্বপ্নপুরী । আমরাই এত মুগ্ধ হয়ে ভুলে যাই সব কিছু । চলে যাই সেই স্বপ্নের জগতে । আর ছোটছোট সোনামনিদের কেমন লাগছে ভাবতেই বুক ভরে যায় ।মানুষের মনের অনন্দ যদি আশির্বাদ হয় তাহলে ওয়াল্ট ডিজনি নামের যে ভদ্রলোক এর সৃষ্টি করেছিলেন এই ছোট ছোট নিষ্পাপ হৃদয়নি:সৃত আশির্বাদ প্লাবণে ভেসে বেড়াচ্ছেন নিশ্চয় ।
সিনন্ড্রেলা ক্যাসেল বা রাজপ্রাসাদে ঢুকে ভাবলাম এখানেই কোন সিন্ডেরেলা ডিনার করি । আবার ভাবলাম খাবার কেমন না কেমন হবে ।বাচ্চাদের প্রিয় প্রাইস আর বার্গার ছাড়া আর কি ?না , তবু ও । যার জন্য আসা সে তো খুশী হবে !ও এমনিতেই অনেক খুশী ।হয়তো এজন্যই মনে হচ্ছে আরো আরো আরো বেশী পৃথিবীর সব আনন্দ আর সব খুশী এনে দেই ওর হাতের মুঠোয় । এ যে আসলেই এক রয়াল টেবিল তা কি জানতাম! এপয়েন্টমেন্ট বা রিজার্ভেশন ছাড়া আশে পাশেই যাবার উপায় নেই ।আর রিজার্ভেশন পাবার জন্য একদিন দুদিন বা একমাস দুমাস নয় ।প্রায় পুরো একটি বছর অপেক্ষা করতে হয় ।যাই হোক মাথা থেকে ’সিন্ডেরেলা রযেল টেবিল’ ভুত নামলো । তবে আর এক ভুত তখন ও কিলবিল করছে । রয়েছে বুটিক । ওরা ছোট ছোট মেয়েদের প্রিন্সেস সাজায় । সেখানে ও এপযেন্টমেন্ট । রেস্টুরান্টের খোঁজ নিতে গিয়ে জেনেছিলেম দু ঘন্টার আগে যোগাযোগ করলেই হয় । পরের দিন আসব ভেবে ফোন করলাম । দীর্ঘ্ বারো মিনিট আমাকে হোল্ড করিয়ে রেখে জানালো । না । তিন মাসের জন্য সব বুকড ।
কী আর করা ওকে বললাম, ওর আগামী জন্মদিন আমরা এখানে করব । ও খুশী । আমার মনে তখন তখনরকম বেশ গভীর একটা কষ্ট অনুভব করলাম । । আমার মেয়েটা এত অল্পতেই খুশী হয়ে যায় ।আর বলছেনা, ‘ আমার সাজুগুজু’ । কী জানি , এ হয়তো আমাদের তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জীনে আছে ।অল্পতেই খুশী হয়ে যাওয়া । আমরা জীবনকে দেখিও একটু অন্যভাবে । কত গুলো ছোট ছোট মেয়েকে দেখলাম ওই বুটিক থেকে সেজে এসেছে । একটা পরিবারকে দেখলাম তিন তিনটা ছোট মেয়েকে প্রিন্সেস সাজিয়েছে ওদের কাছ থেকে । আমি অন লাইনে দেখেছিলাম এক এক জনার জন্য ওদের চার্জ দেড়শত থেকে দুইশত ডলার । ওরা যে আহামরি বড়লোক টাকা উড়াচ্ছে তা কিন্তু না । আমাদের কাছে বস্তুগত জিনিসের অনেক মূল্য । একট বাচ্চার ওই আনন্দ অনুভূতি যে টাকা দিয়ে কেনা যায় না । তা আমরা বুঝিনা । আমরা সন্চয় করি । গাড়ি বাড়ি করি বাচ্চদের কে ভালো স্কুলে পাঠাই ।
আমরা যখন ঠান্ডা লাগলে টিসু পেপার বা হাত মুছতে পেপার টাওয়েল ব্যাবহার করি তখনই পশ্চিমারা বুঝে ফেলে ‘ইনডিয়ান’ ।একটা মজার ঘটনা বলি তোমাকে । তখন আমি একজন ইহুদী ডাক্তারের সথে কাজ করি । অনেক বয়স্ক অভিগ্গ এবং আমার দেখা অন্যতম দক্ষ এবং ’কাজ পাগলা’ ডাক্তার । ওনার কথা বলার ই সময় নেই । হঠাত একদিন আমাকে ডেকে বললেন ‘ ঔষধ গুলো ফেলে না দিয়ে বরং তোমার দেশে পাঠিয়ে দাও তোমার বাবা বা আত্মীয় স্বজন রা ব্যাবহার করতে পারবে ।’ বাহ ! কি মহানুভবতা ! আমি তাকিয়ে দেখলাম কতগুলো ব্লাড প্রেসার আর কোলেস্টেরল কমানোর ঔষধ ।তবে ডেট এক্সপায়ার্ড্ । এদেশে এটা এখন চোখের সামনেই রাখা যাবে না ফেলে দিতে হবে । আর তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের জন্য মহৌষধ। হোক না আমার দেশের বাচ্চাদের প্যারাসিটামলে বিষ মেশানো থাকে । কোন ঔষধেই ঠিকমতো উপাদান নেই ।তাই বলে এত বড় অপমান ! কেবল মাত্র অসম্ভব ভালো আর একটু সহজ সরল বা পাগলাটে ধরণের মানুষ দেখে তেমন কিছুই বললাম না । শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললাম, “ নো থ্যাণ্কস ’। ও কেমন অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল । আজো মাঝে মাঝে সেই দৃষ্টির কথা মনে পড়ে যায় ।
।
। ঠিক এই মুহূর্র্তে আমি আটলান্টায় । মূষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ।মনে হচ্ছে গোটা আকাশটা ই আমার বাড়ির ছাদে এসে ভর করছে । এত কাছ খেকে বৃষ্টির শব্দ শুনছি ।মনে হচ্ছে আমিই বৃষ্টি । অরল্যানডো বসে আর সময় হয়নি লিখতে বসার । ড্রাইভ করে আসার সময় পথ থেতে অনেক পিচ ফল কিনে এনেছি । আটলান্টার কত রাস্তার নাম যে পিচ ট্রি দিয়ে । পিচ ট্রি রোড, পিচ ট্রি ড্রাইভ ,স্ট্রীট ,এ্যাভিনিউ কত কী !রাস্তার পাশে ছোটছোট গ্যাস স্টেশনগুলিতে বিক্রি হয় সরাসরি গাছ খেকে তুলে আনা ফ্রেস পিচ ।ভাবছিলাম অবৈধ সেসব মাঠ কর্মীদের কথা । ওদের নিরপরাধ ছেলেমেয়েদের কথা । ওরা ও হয়তো মাঝে মাঝে ম্যাজিক কিংডমে যেত । স্বপ্ন দেখতো এ সিন্ড্রেলা রাজপ্রাসাদের ।এখন চলে যেতে হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি দেশে এক নতুন পরিবেশে ।
সেদিন কাগজে পড়েছিলাম এক উনিশ বছরের মেয়ের কথা। মেয়েটি মা হবে । সেটা নিয়ে সে ভয় পাচ্ছে না ।কিন্তু তাকে এখন চলে যেতে হবে এদেশ ছেড়ে । বাবা মার সাথে প্রথম যখন এ মাটিতে পা রেখেছিল বয়স ছিল ৫ বছর ।শিশু মনের সবটুকু দিয়ে লালন করেছে ধারণ করেছে এ সংস্কৃতি ।কিন্তু বাবা মা বৈধতা এনে দিতে পারেনি । ওর কি দোষ ? আর ওর হবু সন্তানের ?মানবিকতা আর আইনের কেন যে সব সময় মিলন হয় না !!!
তার পব্র মনে মনে ভাবছিলাম সে সব ফার্মের মালিকদের কথা ওরা এখন মহা বিপদে পড়বে । এত অল্প বেতনে কর্মচারী পাবে কই ! এজন্য অবশ্য স্টেট বা সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ কি বল ! ন্যায্য মজুরী দিলে শ্রমিক ঠিকই পাবে ।এখন কেউ যদি বাজারে এক টাকা দামের আই প্যাডের বা কম্পিউটারের অভাব বলে সরকার কে দোষারোপ করে কি আর করা ।যার যা মূল্য তাকে তো তা দিতেই হবে ।
সে যাই হোক । পিচগুলো কিন্তু দারুণ মজার ছিল । ওরা এত জটিলতার ধার ধারে না । যেমন এই বৃষ্টি । পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাও মানুষের হাসি কান্না আর বৃষ্টির শব্দ একই ।রিম ঝিম রিম ঝিম ঝর ঝর ঝর ঝর । ঝরেই যায় ।আকাশ,ছাদ মস্তিস্কের দূররত্ব অতিক্রম করে চলে যায় হৃদয়ে । শুধু ঝরে যায় গেয়ে যায় গান তার নিজস্ব তালে ও লয়ে । ভুলিয়ে দেয় সব কষ্ট । যে মানুষগুলো জর্জিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে, যাচ্ছে, যেতে হবে ওদের আকাশেও হয়তো এমন বৃষ্টি । হয়তো আজ না । আজ আকাশ মেঘলা কিম্বা খটখটে শুকনো রোদ । কাল হবে বৃষ্টি । হবেই হবে এমন পাগল করা মন রাঙিয়ে দেওয়া বৃষ্টি । তোমার আকাশে ও কি আসে না সে ?অসে না এমন পাগল করা বৃষ্টি ?। এখন বৃষ্টি এলে কি কর তুমি ?
ভালো থেকো ।
অটলান্টা
১৫ জুন,২০১১ ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




