আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন বতুতা এর জীবন কাহিনী । (প্রথম পর্ব)
শ্রীলংকার মা বার মাদুরি উপকূলে যাওয়ার সময় প্রচন্ড এক ঝড়ের ধাক্কায় তার জাহাজ প্রায় ডুবে গিয়েছিল। ডুবন্ত জাহাজের পেছনের পাটাতনে প্রায় সমস্ত রাত কাটানোর পর একদল হিন্দু এসে তাকে উদ্ধার করেন এবং সুলতানের দরবারে পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করে দেন। তখনকার দামাঘানের সুলতান ছিলেন গিয়াসউদ্দিন যিনি ছিলেন ভারতের সূলতান মোহাম্মদের নিয়োজিত মাদুরির সামরিক গভর্নর। মাদুরিতে কিছুদিন অবস্থান কালে তিনি শ্রীলংকার এডামস পিক এবং তেনাভারাম মন্দির পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ইবন বতুতা সুলতান গিয়াসউদ্দিনকে মালদ্বীপ দখলের জন্য প্রলুব্ধ করেন এবং আক্রমনের জন্য সেখানে সৈন্য পাঠাতে রাজী করেন। তারপর তিনি ইয়েমেন যাওয়ার উদ্দেশে একটি জাহাজে চড়েন কিন্তু সেই জাহাজের বহরে জলদস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ায় এবং সকল সহায় সম্বল হারিয়ে পুনরায় মালদ্বীপ যান। তখন পর্যন্তও তার চীন যাওয়ার ইচ্ছায় কোনরকম ভাটা পড়েনি তাই তিনি মালদ্বীপ থেকে একটি চীনা বানিজ্য যাহাজে করে চীনের উদ্দেশে রওনা দেন। টানা তেতাল্লিশ দিন যাত্রা করে তিনি বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছান।
বাংলাদেশে আগমন
ইবন বতুতার বর্ননায় পাওয়া যায় মাত্র এক দিরহাম দিয়ে তখন বাংলাদেশ আটটি স্বাস্থবান মুরগী পাওয়া যেত । তাছাড়াও এক দিরহামে পনেরোটা কবুতর দুই দিরহামে একটি ভেড়া এবং এক স্বর্নমূদ্রারও কম মূল্যে দাসদাসী কিনতে পাওয়া যেত। যখন ইবন বতুতা বাংলাদেশে এসে পৌছান তখন এখানকার সুলতান ছিলেন ফখর উদ্দিন। ইবন বতুতার বাংলাদেশে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মহান দরবেশ শেখ জালাল উদ্দিন হযরত শাহ জালাল রঃ সাথে সাক্ষাৎ করার। সিলেটের যেখানে শেখ জালাল উদ্দিন থাকতেন সেখান থেকে প্রায় দুই দিনের দূরত্বেই তার দুজন শিষ্যের সাথে দেখা হয় ইবন বতুতার। তাদের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে শেখ জালাল উদ্দিন আদেশ দিয়েছেন পশ্চিম থেকে যে পর্যটক তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসছেন তাকে যেন স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ ইবন বতুতার সাথে শেখ জালাল উদ্দিনের আগে থেকে কোন পরিচয় ছিল না কিংবা ইবন বতুতা তার আগমনের কোন খবরও শেখ জালাল উদ্দিনকে দেন নি। সেখান থেকেই ইবন বতুতা শেখ জালাল উদ্দিনের আধ্যাত্বিক ক্ষমতার ব্যাপারে ইঙ্গিত পান। হযরত শাহজালাল রঃ সাথে সাক্ষাৎ করে ফেরার পথে ইবন বতুতা একটি ছাগলের পশমের কোট উপহার পান। ইবন বতুতার বর্ননা মতে শেখ জালাল উদ্দিন একটি পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতেন যেখানে তারা ছাগল পূষতেন দুধ এবং মাখনের জন্য। তার সহযোগীরা প্রত্তেকেই সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন এবং কেউই এদেশীয় ছিলেন না। অবশেষে শেখ জালাল উদ্দিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দীপের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
ইবন বতুতা যখন চীনের কুয়ানজু বন্দরে এসে পৌছান। তখন শহরটি জায়তুন শহর নামেও পরিচীত ছিল
চীন সফর
ইবন বতুতা চীনের কুয়ানজু বন্দরে এসে পৌছান। শহরটি জায়তুন শহর নামেও পরিচীত ছিল ।চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রা করে প্রায় চল্লিশ দিন পর সুমাত্রা উপকূলে পৌছেন। সেখানকার সূলতান আল মালিক আজ জহিররের আতিথিওতায় প্রায় দুই সপ্তাহ কাটানোর পর সূলতান তাকে চীন যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহ একটি ছোট জাহাজের ব্যাবস্থা করে দেন। সেখানথেকে প্রায় চল্লিশ দিন যাত্রা করে ১৩৪৫ সালে বর্তমান চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের কুয়ানজু বন্দরে পৌছান।
তার বর্ননা মতে তখন কুয়ানজুর অধিবাসীরা হুবহু মানুষের প্রতিকৃতি আঁকতে পারদর্শি ছিলেন। সুলতানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় যখন তিনি স্থানীয় বাজারের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক চিত্রকরের দ্বারা নিজের একটি প্রতিকৃতি আঁকিয়ে নেন। সূলতানের সাথে দেখা করে ফেরার পথে তিনি লক্ষ্য করেন যে তাঁর এবং তাঁর সাথীদের প্রতিকৃতি শহরের দেয়ালে দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি জানতে পারলেন যে শহরে কোন আগন্তুক আসলেই তার প্রতিকৃতি এভাবে টাঙিয়ে রাখা হয় যাতে করে সেই আগন্তুক কোন অপকর্ম করে পালিয়ে যেতে না পারে। জেইতুন শহরে তার সাথে কাজী আল-ইসলামের সাথে দেখা হয় যার সাথে ইবন বতুতার ভারতেও একবার দেখা হয়েছিল। কাজী আল-ইসলাম চীনে এসে ব্যাবসা করে বেশ অর্থোপার্জন করেছিলেন। ইনি ইবন বতুতাকে বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দান করেন।চীনে ইবন বতুতা শামস উদ্দিন নামে পরিচীত ছিলেন। তার বর্ণনায় চীনে তার কোন উপপত্নি থাকার কথা জানা না গেলেও বিভিন্ন ইতিহাসবিদের মতে চীনে তিনি একটি উপপত্নি গ্রহণ করেছিলেন। ধারনা করা হয় যে সেখান থেকেই ডিং (শামস উদ্দিন থেকে পরিবর্তীত হয়ে চীনা ভাষায় শিং শু ডিং পরিবারের উৎপত্তি। অবশেষে ১৩৪৬ সালে তিনি তার দেশ মরোক্কো ফেরৎ যাওয়ার উদ্দেশে সূলতানের দেওয়া একটি জাহাজে করে কুয়ানজু থেকে পশ্চিম দিকে রওনা দিলেন।
স্বদেশ প্রত্যবর্তন এবং কালা জ্বর
কুয়ানজু থেকে তিনি ভারত হয়ে মরোক্কোর পথে রওনা দেন । দুইমাস জাহাজে কাটিয়ে তিনি সুমাত্রা পৌছান। সেখানে দুই মাস থেকে তিনি কাওলাম ইতিহাসবিদদের মতে এটা বর্তমান মিয়ানমারের কোন বন্দর বা সে বন্দর হয়ে তিনি ১৩৪৭ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে ভারত পৌছান। ভারতে অবস্থান করার বদলে ফেরার পথে আরো একবার মক্কায় হজ্জ্ব করার পরিকল্পনা করেন কারন তার ধারনা ছিল ভারতের সূলতান মোহাম্মদ বিন তুঘলক চীনা সম্রাটের কাছে পাঠানো উপটৌকোন হারিয়ে ফেলার জন্য তার প্রতি সদয় নাও হতে পারেন। ভারত থেকে অন্য একটি বানিজ্যিক জাহাজে চড়ে ভারত মহাসাগর হয়ে তিনি মাসকাটের দিকে যাত্রা করেন। মাসকট থেকে হরমুজ প্রণালী হয়ে সিরাজ ইস্পাহান হয়ে ১৩৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি বাগদাদ পৌছান। বাগদাদে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন যে সেখানকার সূলতান আবু সাঈদের মৃত্যু হলে তার ফুপাতো ভাই শেখ হাসান তার সম্রাজ্য দখল করে নেন।
১৩৪৮ সালের শুরুতে তিনি সিরিয়ার ডামেস্কাসে পৌছান। সেখানকার স্থানীয় জাহিরিয়া একাডেমিতে তার সাথে মরোক্কোর তাঞ্জিয়ারের এক বিখ্যাত শেখের সাথে দেখা হয়ে যায়। তার কাছে থেকে ইবন বতুতা জানতে পারেন যে তার বাবা পনেরো বছর আগে মারা গেছেন তবে তার মা এখনও বেঁচে আছেন।[ দামেস্কাসে তিনি ১৩৪৮ সালের শেষ পর্যন্ত থাকলেন। তখন সিরিয়া এবং গাজায় কালা জ্বরের মহামারি ছড়িয়ে পরেছে। ইবন বতুতা স্থানীয় কাজীর কাছ থেকে জানতে পারেন যে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ২৪০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি যখন হেবরন আর গাজা পৌছালেন তখন দেখলেন যে মহামারির প্রোকোপ কিছুটা কমে প্রতিদিন গড়ে ১১০০ তে নেমে এসেছে। এই মহামারি থেকে বাঁচতে ইবন বতুতা প্রতিদিন রোজা রাখতেন। সেখান থেকে কায়রোতে যেয়ে সেখানেও দেখলেন মহামারি থামেনি। ইবন বতুতা কায়রো পৌছানোর আগে এখানে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ২১,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কায়রো থেকে মিশরের সাঈদ বন্দর হয়ে ১৩৪৮ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি মক্কা পৌছান। ১৩৪৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২রা মার্চ পর্যন্ত হজ্জ্ব সেরে তিনি ফেজ হয়ে ওই বছরেই তার নিজ দেশ তাঞ্জিয়ার পৌছান। তাঞ্জিয়ার পৌছে তিনি দেখতে পান যে তার মা ও পরলোক গমন করেছেন।
আল আন্দুস স্পেন এবং উত্তর আফ্রিকা
ইবন বতুতা গ্রানাডা ভ্রমন করেন যেটা আল আন্দুস সম্রাজ্যের শেষ নিদর্শন ছিল তার নিজের শহর তাঞ্জিয়ারে পৌছে তিনি আসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় তিন মাস শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হওয়ার পর ইবন বতুতা সূলতানের অনুরোধে যুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহন করার জন্য রক্ষি বাহিনীতে যোগ দেন এবং সৈন্যবাহিনীর সাথে জাহাজে চড়ে আন্দালুসিয়ায় পৌঁছান। স্পেনের খৃষ্টান শাষক আডফুনাস Alfonso XI দশ মাস ধরে জোবেল জিব্রাল্টার দখল এবং অবরোধ করে রেখেছিলেন। আডফুনাসের ধারনা ছিল যে অবরোধ করে রাখলে হয়তো মুসলিমরা পরাজিত হবে এবং দূর্গের সকলকে একসাথে বন্দি করা যাবে। কিন্তু আডফুনাস নিজেই কালাজ্বরের মহামারিতে আক্রান্ত হন এবং মারা যান। তাতে মুসলিমদের আর আডফুনাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রয়োজন হয় নাই। যুদ্ধ করার প্রয়োজন না হওয়ায় ইবন বতুতা স্পেনের ভ্যালেনসিয়া এবং গ্রানাডা ভাল করে ঘুরে দেখার সুযোগ পান। আল আন্দুস থেকে তিনি মরোক্কোতে ফেরৎ আসেন এবং আফ্রিকার এমন কিছু অঞ্চল পরিদর্শন করার ইচ্ছা পোষন করেন যেগুলো মুসলিম অধ্যুষিত কিন্তু তার তখনও সেগুলোতে যাওয়া হয় নি। তিনি মরোক্কোতে ফিরে কিছুকাল অবস্থান করে মারাক্কিস যান যেটা সাম্প্রতিক মহামারিতে একেবারে খালি হয়ে গেছে। তাই এর রাজধানী ফেজ শহরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখান থেকে পুনরায় তিনি তার নিজের শহর তাঞ্জিয়ার পৌঁছান।
সাহারা মরুভূমি এবং মালি
ইবন বতুতা ট্রান্স সাহারান বানিজ্য রুটের একটি গুরুত্বপূর্ন শহর আওয়ালাতায় কিছুদিন অবস্থান করেন
প্রায় সমস্ত মুসলিম সম্রাজ্য ভ্রমনের পর আর একটি মাত্র মুসলিম দেশ ভ্রমণ বাকি ছিল তাঁর আর সেটি হল নিগ্রোল্যান্ড। ১৩৫১ সালের বসন্তে ইবন বতুতা সাহারা মরুভুমির উত্তরে সিজিলমাসার উদ্দেশ্যে ফেজ নগরী ত্যাগ করেন। সিজিলমাসাতে তিনি কয়েকটি উট কেনেন এবং প্রায় চার মাস কাটান। সেখান থেকে ১৩৫২ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি লবনের খনির শহর তাঘাজার Taghaza উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় পঁচিশ দিন পর সেখানে পৌছেন। ইবন বতুতা বর্ননা মতে সেখানকার ঘরবাড়ি এবং মসজিদগুলো লবনের ব্লক দিয়ে তৈরী আর ছাদগুলো তৈরী ছিল উটের চামড়া দিয়ে। সেই এলাকায় গাছপালা তেমন একটা ছিল না আর এখানকার পানি অত্যন্ত লবনাক্ত ছিল তাই ইবন বতুতা তাঘাজাতে খুব কম সময় কাটান।
তাঘাজাতে প্রায় দশদিন অতিবাহিত করার পর বিরাট সাহারা মরুভূমি পার হবার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তিনি তাসারাহলার একটি মরুদ্যানে তিন দিন অবস্থান করেন এবং মরুভূমির জন্য পর্যাপ্ত রসদ ও পানি সংগ্রহ করেন। তাসারাহলা থেকে যাত্রা শুরু করে আওয়ালাতায় একবার যাত্রাবিরতি দিয়ে ট্রান্স সাহারান বানিজ্য রুটের দিকে রওনা দেন। সিজিলমাসা থেকে এই রাস্তায় প্রায় ১৬০০ কিঃমিঃ সাহারা মরুভূমি পার হতে তার প্রায় দুই মাস লাগে। নাইজার নদীর তীরে মালি সম্রাজ্যে পৌছে তিনি সূলতানের সাথে সাক্ষাত করেন। তৎকালীন মালি সম্রাজ্যের সূলতান ছিলেন মানসা সুলায়মান মানসা একটি উপাধি অর্থ সূলতান এবং তার নাম ছিল সুলায়মান যিনি ১৩৪১ সাল থেকে সেখানকার সূলতান হিসেবে আছেন। মানসা সূলতান কিপ্টেমির জন্য কুখ্যাত ছিলেন। সেখানকার স্থানীয়দের আতিথিওতা ইবন বতুতার কাছে মনমুগ্ধকর মনে হলেও সূলতানের আতিথিওতা খুব একটা পছন্দ হল না তার কাছে। ইবন বতুতার বর্ননা মতে সেখানকার মানুষ ধর্মভীরু হলেও সেখানকার নারীরা ইসলামী পর্দাপ্রথা মানতেন না। তারা সকলেই এমনকি সুলতানের কন্যারাও সকলের সামনে বিবস্ত্র হয়ে ঘুরে বেড়াতো। মালিতেই ইবন বতুতা সার্বপ্রথম জলহস্তি দেখেন। মালিতে আট মাস অবস্থান করে তিনি তার কাফেলা নিয়ে তিম্বুক্তের দিকে রওনা হন। তিম্বুক্ত থেকে তিনি নাইজার নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত গাঁও শহরে যান। গাঁও শহরে অবস্থানকালে তিনি মরোক্কোর সম্রাট আবু ইনান ফারিসের একটি পত্র পান যেখানে তাকে মরোক্কো ফেরৎ যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সম্রাটের আদেশ পাওয়া মাত্রই ইবন বতুতা তার কাফেলা তৈরী করেন এবং মরোক্কোর উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৩৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মরোক্কোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং ১৩৫৪ সালের শুরুর দিকে তার জন্মভূমিতে শেষবারের মত পদার্পন করেন।
রিহলা
তাঞ্জিয়ারের মদিনা শহরের একটি বাড়ি যেটা ইবন বতুতার কবর হওয়ার সম্ভাবনা আছে
মরোক্কোর ফেজ নগরীতে গিয়ে ইবন বতুতা সুলতান আবু ইনান ফারিজ এবং তার সভাসদদের কাছে তার সমস্ত ভ্রমন কাহিনী খুলে বলেন। তার সমসাময়িক আরেক ঐতিহাসিক ইবন খালাদুনের বর্ননা থেকে জানা যায় যে তারা সেসব বিশ্বাস করেন নি। তবে গল্প বলার ফলে অন্য দিক থেকে লাভ হয়েছিল ইবন বতুতার। উজিরদের মধ্য থেকে একজন ক্ষমতাধর সমর্থক জুটে গিয়েছিল তার। তার চাপে পড়ে সুলতান নিজের একান্ত সচীবদের একজন ঈবন জুজাঈকে তার ভ্রমনের বিস্তারিত লিখে রাখার নির্দেশ দেন। শুরু হয় বলা ও লিখার পর্ব। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে ঈবন জুজাঈ ইবন বতুতার প্রতিটি কথা এবং বর্ননা হুবহু লিপিবদ্ধ করেন নি। তবে আরবী নাম ও জায়গার নামের ব্যাপারে অনেক সচেতন ছিলেন ঈবন জুজাঈ। অনেক ক্ষেত্রেই তার সম্পাদনায় ত্রুটি পাওয়া গেছে। লেখার ধরন সাধারন কিন্তু তার মধ্যে কিছুস্থানে কবিতার ছত্র যোগ করে লেখায় বৈচিত্র আনতে চেষ্টা করেছেন। কোথাও কোথাও আবার নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথাও জুড়ে দিয়েছেন। ইবন জুবাইর নামে আন্দালুসিয়ার এক পন্ডিৎ দ্বাদশ শতাব্দিতে মিশর হিজাজ, সিরিয়া এবং পূর্বের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমন করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ইবন বতুতার যেসকল ভ্রমন পথ ও বর্ননা ইবন জুবাইরের সাথে মিলে যায় সে জায়গায় ঈবন জুজাঈ নতুন কোন কাহিনী না লিখে ইবন জুবাইরের ভ্রমনের বর্ননাই তুলে ধরেছেন।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯