somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলিকাতা কল্পলতা ( প্রথম অধ্যায় )

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলিকাতা কল্পলতা রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত কলকাতা মহানগরীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। কলকাতার সূচনা ও ১৮৫১ সাল পর্যন্ত এই নগরীর বিবর্তনের ইতিহাস এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। গ্রন্থটি লেখকের জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। (অনুমিত রচনাকাল ১৮৫০-’৭০ মুদ্রিত হয় ১৯৫৯-এ) । আচার্য অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত কলকাতার ইতিহাস রচনায় রঙ্গলাল অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন... উনিশ শতকের মাঝামাঝি কোনো বাঙালি লেখকের কলকাতার ইতিহাস রচনার এই একক প্রচেষ্টা একান্ত বিস্ময়কর। তার অন্য গদ্য রচনায় মাঝে মাঝে কিছু কৃত্রিমতা আছে, কিন্তু ‘কলিকাতা কল্পলতা’র ভাষা বেশ পরিচ্ছন্ন, উৎকট আতিশায্য নেই বললেই চলে। ... আজ থেকে প্রায় ১৪০ বৎসর পূর্বে রচিত এই গ্রন্থটির ঐতিহাসিক মূল্য স্বীকার করতেই হবে।”

এইক্ষণেও কলিকাতা নগরে এমন দুই চারিজন লোক পাওয়া যায় যাহারা অমরাবতী তুল্য চৌরঙ্গীকে ব্যাঘ্রনিবাস জঙ্গল ও গড়ের মাঠে হলপ্রবাহ দৃষ্টি করিয়াছেন, যে সময়ে দস্যুভয়ে সাহেবদিগের ভৃত্যগণ শুভ্রবস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া মলিন বেশে ঐ মাঠ দিয়া গমনাগমন করিত এবং রাত্রিযোগে সাহেবরা প্রাণভয়ে মুহুর্মুহুঃ বন্দুক ধ্বনি করিতেন। “অন্য পরে কা কথা” যে হেদুয়া পুষ্করিণীর পূর্ব পশ্চিম তীর এক্ষণে বিদ্যাচর্চার গণ্যস্থান হইয়াছে দিবসের মধ্যভাগে সেই সরোবরকে লোকে ভয়াবহ জ্ঞান করিত এবং সন্ধ্যার পর কাহার সাধ্য সেই মুখে গমন করে। একশত বৎসর হইল – কলিকাতা নগরী ভয়াবহ ব্যাঘ্র নক্রাদির সজল জঙ্গলময় বসতীস্থলী ছিল কিন্তু এক্ষণে সেই কলিকাতায় নিয়ত ৫/৬ লক্ষ লোক বাস করিতেছে।

কলিকাতা কি ছিল এবং কি হইয়াছে তদ্বিষয়ে অধিক বক্তব্য পর পৃষ্ঠার তালিকায় প্রকটিত পুরাতন দুর্গের চিত্র দেখিলে এখনকার লোকেরা বিস্ময়াপন্ন হইবেন সন্দেহ নাই, যেহেতু এক্ষণে উক্ত দুর্গের চিহ্নমাত্র দ্রষ্টব্য নহে – পরন্তু তাহা অন্য কোন নগরের প্রতিরূপ বোধ হইতে থাকিবে। আচার, ব্যবহার, রীতি-নীতি, পরিচ্ছদ, ভাষা প্রভৃতি বিষয়ে অত্রত্য লোকের এই স্বল্পকাল মধ্যে এরূপ পরিবর্তন হইয়া আসিয়াছে যে যদি বৈষ্ণবচরণ শেঠ প্রভৃতি বিগত শতাব্দির প্রসিদ্ধ লোকেরা দৈববশে পুনরুজ্জীবন প্রাপ্ত হইয়া কলিকাতায় পুনরুদিত হন তবে এখনকার কৃতবিদ্য নব্য সম্প্রদায়কে দেখিয়া স্বদেশীয় জ্ঞান করিতে সাহসী হইবেন না।

অতএব এই সময়ে আসিয়াখণ্ডের সর্বপ্রধান নগরী এই কলিকাতায় শতবৎসরের পুরাবৃত্ত সংগ্রহ অতি প্রয়োজনীয় বোধ হইতেছে। পরে তদ্বিষয়ে চেষা করাও ব্যর্থ হইবে। এখনও অনেক স্থানীয় লোক জীবিত আছেন এবং দুই-একখানি প্রাচীন পুস্তক প্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু কিছুকার পরে এতদুভয় দুর্লভ হইয়া উঠিবে। এই সব বিবেচনা করিয়া “কলিকাতা কল্পলতা” নামে অভিনব গ্রন্থের রচনাকার্যে হস্তক্ষেপ করা গেল।
কলিকাতার প্রাচীনত্ব বিষয়ে অনেক মহাশয়ের ভ্রান্তি আছে। অনেকে কলিকাতা নাম অতি আধুনিক মনে করেন – ফলতঃ আমরা নিশ্চিতরূপে কহিতেছি যে কলিকাতা গত শতাব্দীর মধ্যে [নগরী] হিসাবে পরিগণিত হইলেও বস্তুতঃ বহু কালাবধি গ্রাম পদবীতে গণনীয় ছিল। কোন মহাশয় গ্রন্থ বিশেষে লিখিয়াছেন যে, কলিকাতাকে বাঙ্গালাদেশের ষষ্ঠ রাজধানীরূপে গণ্য করা যাইতে পারে – প্রথম গৌড়, দ্বিতীয় রাজমহল, তৃতীয় ঢাকা, চতুর্থ নবদ্বীপ, পঞ্চম মুর্শিদাবাদ এবং ষষ্ঠ কলিকাতা। কিন্তু ইহার মধ্যে কিছু ভ্রম প্রমাদ দৃষ্ট হইতেছে। বাঙ্গালাদেশের আদ্য রাজধানী যে গৌড় নগর ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ মাত্র নাই, কিন্তু নবদ্বীপ নগর প্রকৃত প্রস্তাবে রাজধানী মধ্যে গণনীয় নহে। সেনবংশীয় ভূপতিরা গৌড় নগরেই অবস্থানপূর্বক রাজকার্য অবধারিত করিতেন কিন্তু মধ্যে মধ্যে সুবর্ণ গ্রামে ও নবদ্বীপে বিরাজ করিতেন – এজন্য যদি নবদ্বীপ রাজধানী মধ্যে ধর্তব্য হয়, তবে সুবর্ণ গ্রাম এবং বাঙ্গালাদেশের সর্বপ্রধান বাণিজ্যস্থল সপ্তগ্রামকেও রাজধানী বলা যাইতে পারে। সপ্তগ্রামের প্রতিভা বিষয়ে এতদ্দেশীয় কোন প্রাচীন কবি এইরূপ উক্তি করেন। যথাঃ-

কলিঙ্গ তৈলঙ্গ অঙ্গ বঙ্গাদি কর্ণাট।
মহেন্দ্র মগধ মহারাষ্ট্র গুজরাট।।
বারেন্দ্র বন্দর বিন্ধ্য পিঙ্গল সফর।
উৎকল দ্রাবীড় রাঢ় বিজয় নগর।।
মথুরা দ্বারকা কাশী কল্পপুর কায়া।
প্রয়াগ কৌরবক্ষেত্র গোদাবরী গয়া।।
ত্রিহট্ট কাঙ্গর কোচ হাঙ্গর শিলট।
মানিক কারিকা লঙ্কা প্রলম্ব লাঙ্গট।।
বাগন বলিয়া দেশ কুরুক্ষেত্র নাম।
বটেশ্বর আহুলঙ্ক্ষাপুর স্বর্ণগ্রাম।।
শিবাহট্ট মহাহট্ট হস্তিনা নগরী।
আর যত সহর তা বলিবার নারি।।
এ সব সহরে যত আছে সদাগর।
কত ডিঙ্গা লয়ে তারা যায় দেশান্তর।।
সপ্তগ্রামী বণিক কোথাও নাহি যায়।
ঘরে বস্যে সুখ মোক্ষ নানা ধন পায়।।
তীর্থ মধ্যে পূর্ণ তীর্থ ক্ষিতি মোক্ষ ধাম।
সপ্তঋষি শাসন বলিয়া সপ্ত গ্রাম।।
পরন্তু যদিও মুর্শিদাবাদের ভঙ্গদশান্তে কলিকাতার শ্রীসৌষ্ঠব বৃদ্ধি হউক, বস্তুতঃ সরস্বতী নদীর স্রোতমান্দ্য বশতঃ এই সপ্তগ্রাম নগরীর গরিমা হ্রাস হওয়াতেই কলিকাতায় বাণিজ্য লক্ষ্মীর আবির্ভাব হইয়াছে; পূর্বে কি ইউরোপীয় এবং কি এদেশীয় বণিক মাত্রই সপ্তগ্রামে যাওয়া বাণিজ্য করিতেন। সপ্তগ্রামের শ্রীহীনতার অব্যবহিত পরেই পর্তুগীজদের অধীনে কিছুকাল হুগলী নগরের শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছিল। কিন্তু সপ্তগ্রামীয় বস্ত্র ব্যবসায়ী-বণিকেরা ইউরোপীয়দিগের মধ্যে ইংলণ্ডীয়দিগের সহিত ব্যবসায়ে অধিক লভ্য ও তাঁহাদিগের অধীনে নির্বিঘ্নে বসতি করণের সমধিক উপযোগিতা দর্শন করিয়া কলিকাতায় আসিয়া বসতি করিলেন, তদবধি এই নগরের শোভা ও প্রতিভা পদ্মবনের ন্যায় অতি অল্পকালের মধ্যে বর্ধিত হইয়া উঠিল।

অপিচ কলিকাতার প্রাচীনত্বের বিষয় আমরা পুনর্বার অনুসরণ করি,এই স্থান যে নিতান্ত আধুনিক নহে, তাহার বহিল প্রমাণ লব্ধ না হইলেও পুষ্টিপূরক বিলক্ষণ নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে। এদেশের একজন প্রাচীন কবি অর্থাৎ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, যিনি কবিকঙ্কণ নামে বিখ্যাত আছেন, তৎরচিত চণ্ডী কাব্যে শ্রীমন্ত সাধুর সিংহল দ্বীপে বাণিজ্য প্রস্থান প্রকরণ্ব এইরূপ লিখিত হইয়াছে। যথাঃ-

নায়ে তুলে সদাগর নিল মিঠা পাণী।
বাহ বাহ বলিয়া ডাকেন ফরমাণী।।
গরিফা বাহিয়া সাধু বাহে গোন্দল পাড়া।
জগদ্দল এড়াইয়ে গেলেন নপাড়া।।
ব্রহ্মপুত্র পদ্মাবতী সেই ঘাটে মেলা।
ইছাপুর এড়াইল বানিয়ার বালা।।
উপনীত হইল নিমাই তীর্থ ঘাটে।
নিমের বৃক্ষেতে যথা জবা ফুল ফোটে।।
ত্বরায় চলয়ে তরী তিলেক না রয়।
ডাহিনে মাহেশ বামে খড়দহ কয়।।
কোন্নগড় কোতরঙ্গ এড়াইয়ে যায়।
সর্বমঙ্গলার দেউল দেখিবারে পায়।।
ছাগল মহিষ মেষে পূজিয়া পার্বতী।
কুচিনাল এড়াইল সাধু শ্রীয়পতি।।
তীরসম ছোটে তরী তরঙ্গের ঘায়।
চিত্রপুর এড়াইয়া শালিখাতে যায়।।
কলিকাতা এড়াইল বানিয়ার বালা।
বেতরেতে উত্তরিল অবসানে বেলা।।
বেতাঙ্গ চণ্ডিকা পূজা করি সাবধানে।
ধনতার গ্রাম সাধু এড়াইল বামে।।
ডাহিনে ত্যজিয়া যায় হিজুলীর পথ।
কিনিয়া লইল রাজহংস পারাবত।।
বালীঘাটা এড়াইল বাময়ার বালা।
কালীঘাটে উপনীত অবসানে বেলা।।
এক্ষণে ত্রিবেণী হইতে কালীঘাট পর্যন্ত উল্লেখিত গ্রামনিচয়ের প্রাচীনত্ব বিষয়ে সংশয় মাত্র থাকিতে পারে না। কলিকাতা দূরে থাকুক খিদিরপুরের উত্তরে অবস্থিত বালীঘাটার নাম পর্যন্ত প্রাপ্ত হইতেছে অথচ খিদিরপুরের নামোল্লেখ দৃষ্ট হয় না। প্রত্যুত এই কাব্যগ্রন্থ অল্পদিনের নহে। কবিকঙ্কণ লেখেনঃ-

শকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গণিতা।
কব কত দিল পীত হরের বণিতা।।
‘অঙ্কস্য বামগতি’ এই নিয়মে গণনা করিলে চণ্ডীগ্রন্থ ১৪৬৬ শকে প্রস্তুত বিধায় ইহাই প্রমাণ হইতেছে কলিকাতা গ্রাম তিনশত বৎসরেরও অনেক পূর্বে বর্তমান ছিল।

অপর, দেবীবর কর্তৃক এদেশীয় কুলীনদিগের মেল বদ্ধ হইলে পর তাঁহারা যে যে স্থানে বসতি করেন, সেই সেই স্থানের নামানুসারে বিখ্যাত হন। যথাঃ- ফুলিয়ার মুখুটি, খনিয়ার চাটুতি, সাগরদহের বন্দ্য, কলিকাতার ঘোষাল,ইত্যাদি। ঘোষালবংশীয় পশো হইতে কলিকাতার ঘোষাল নাম হয়। যথা করিকা,

এই পশো অন্যূন ... বৎসর গত হইল বর্তমান ছিলেন। সুতরাং ইহাতেও কলিকাতার প্রাচীনত্বের প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে।

কলিকাতা নামের ব্যুৎপত্তি বিষয়ে বহুতর কল্পনা কল্পিত হইয়াছে। কোন মহাশয় লিখিয়াছেন যে, অনেক নগরের নাম দেবমণ্ডপাদির আখ্যা অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকে; অতএব বোধ হয় কলিকাতার অদূরবর্তী পীঠস্থান কালীঘাটের নামানুসারে ইহার নামকরণ হইয়া থাকিবে। অর্থাৎ কলিকাতার নাম, কালীঘাট অথবা কালীঘাঠার অপভ্রংশ মাত্র। অন্য এক মহাশয় লেখেন, ইং ১৭৪২ অব্দে মহারাষ্ট্রীয় উৎপাত নিবারণার্থ যে পরিখা খনিত হয়, সেই ‘খাল কাটা’ হইতে ‘কলিকাতা’ নাম উৎপন্ন হইয়া থাকিবে, যেহেতু উক্ত অব্দের অনেক পূর্বে কলিকাতা নাম প্রচলিত ছিল না। এই উভয় ব্যুৎপত্তি যে বিলক্ষণ অমূলক তাহা উপরিভাগে পদ্য ও কারিকায় সপ্রমাণ করিতেছে, কারণ ইং ১৭৪২ অব্দের অনেক পূর্বে কলিকাতা নাম প্রচলিত ছিল।

প্রাগুক্ত ব্যুৎপত্তিদ্বয় ব্যতীয় আর এক রহস্যজনক জনশ্রুতি এই যে, ইংরাজেরা যখন প্রথমতঃ এই স্থানে বাণিজ্যালয় স্থাপনার্থ আগমন করিলেন তখন গঙ্গাতীরে দণ্ডায়মান কোন লোককে অঙ্গুলী প্রসারণ পূর্বক স্থানের নাম জিজ্ঞাসা করাতে সে ব্যক্তি সেইদিকে শায়িত এক ছিন্নবৃক্ষ দেখিয়া মনে করিল সাহেবরা কবে ঐ বৃক্ষছেদন হইয়াছে, তাহাই জিজ্ঞাসা করিতেছেন। অতএব সে উত্তরচ্ছলে কহিল, “কালকাটা”। সেই হইতে ইংরাজেরা ইহার নাম “ক্যালকাটা” রাখিলেন, এই ব্যুৎপত্তি অমূলক হইলেও ইহার রচয়িতার চতুর বুদ্ধির ব্যাখ্যা করা কর্তব্য। ফলতঃ কোৎরঙ্গ-কুচিনান প্রভৃতি গ্রামাখ্যা যেমন নিরর্থক,কলিকাতা শব্দও যে সেইরূপ নিরর্থক তাহাতে সন্দেহ করিবার প্রয়োজন নাই।

এইরূপে কলিকাতার প্রাচীনত্ব সাব্যস্ত হইলেও তাহা বহুকালাবধি ইতর লোকের বাসস্থান ছিল, অনন্তর অনুমান দুইশত বৎসর বিগত হইল সপ্তগ্রামের শেঠ ও বসাকখ্যাত তন্তুবায় জাতীয় ব্যবসায়ীগণ উক্ত প্রাচীন নগরের নিকটবর্তী আপনাদিগের বাসথান হরিদপুর গ্রাম পরিত্যাগ পূর্বক কলিকাতায় আসিয়া বসতি করেন। এই শেঠ বসাকদের পূর্বনিবাস ঢাকায় ছিল। অদ্যাপি তৎপ্রদেশে তাঁহাদিগের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তির ভূসম্পত্তি আছে। আমাদিগের আত্মীয় কোন বসাকের নিকট তাঁহার পূর্বপুরুষের অধিকৃত ঢাকার নিকটস্থ কতিপয় গ্রামাদির কাগজ পত্র আছে; ফলতঃ অন্যূন একশত বৎসর হইল তাঁহারা ঐ বিষয়ের অধিকার ভ্রষ্ট হইয়াছেন।

ঢাকার শেঠবসাকেরা যদিও কলিকাতায় শেঠবসাকদিগের সহিত একগোত্রজ হউন কিন্তু বহুদিবস যাবৎ তাঁহাদিগের পরস্পর বিচ্ছেদ বশতঃ এক্ষণে করণ-কারণ রহিত হইয়াছে। মুর্শিদাবাদের তন্তুবায় কারফরমাদিগের সঙ্গেও কলিকাতাস্থ শেঠবসাকদিগের এইরূপ সম্বন্ধ। মৃত রাধাকৃষ্ণ বসাক কারফারমাদিগের সহিত পুনর্বার কুটুম্বিতা করণের প্রস্তাব করেন। তাহাতে কারফারমারা সম্মত হইয়াছিলেন কিন্তু এক সামান্য অনৈক্য সূত্রে এই বাঞ্ছনীয় সদ্ভাব সংস্থাপনে ব্যাঘাত সম্ভূত হয়। তাহা এই যে, কারফারমাকুলের অঙ্গনাগণ বামাঙ্গে রজতালঙ্কার পরিধান করেন। কারফারমারা সেই পুরুষ পরম্পরা প্রচলিত কুলাচার পরিত্যাগে সম্মত না হওয়ায় রাধাকৃষ্ণ বসাক পূর্ব প্রস্তাবে পরাঙ্মুখ হইলেন। সে যাহাই হউক ঢাকাই শেঠবসাকদিগের আদ্যস্থান। তথা হইতে তাঁহারা প্রথমে মুর্শিদাবাদ ও তৎপরে সপ্তগ্রামের নিকট হরিদপুরে বসতি করেন। তদনন্তর সপ্তগ্রাম ও হুগলীর প্রতিভা হ্রাস হইলে কলিকাতায় আসিয়া বড়বাজারে বসবাস করিতে লাগিলেন , অভিপ্রায় এই যে, সরস্বতী মন্দা পড়িয়া গেলে ভাগীরথী প্রবলা থাকায় ইউরোপীয়েরা সেই নদী হইয়া আগমন পূর্বক বাণিজ্য-ব্যবসা করিবেন, সুতরাং যত অগ্রসর হইয়া থাকা যায় ততই উভয় পক্ষের মঙ্গল। শেঠবসাকেরা ওই স্থানে বসতিপূর্বক আপনাদিগের ব্যবসানুসারে “সুতালুটি”শব্দে তাহার নাম করণ করিলেন।

হিন্দু ভদ্রগ্রামের লক্ষণ ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থাদি সজ্জাতির বাস, যেহেতু তাহাদিগের অভাবে যজন, যাজন, চিকিৎসা পথ্য ও লিখন পঠনের উপায় থাকে না। অতএব উক্ত সুসম্পন্ন তন্তুবায়েরা একঘর ব্রাহ্মণ, একঘর বৈদ্য এবং একঘর কায়স্থ আনাইয়া আপনাদিগের নিকটে সংস্থাপিত করেন। পাতুরিয়াঘাটার শুদ্ধ শ্রোত্রীয় ঠাকুরগোষ্ঠী উক্ত ব্রাহ্মণের এবং সেইস্থানে মজুমদার খ্যাত বৈদ্যেরা এবং কলিকাতা নিবাস প্রথম কায়স্থের বংশধরগণ হয়েন।




শব্দার্থ
আসিয়াখণ্ড = এশিয়া মহাদেশ
সুতালুটি = সুতানুটি


তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×