
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত পতাকার উপর ভিত্তি করে এই পতাকা নির্ধারণ করা হয়। তখন মধ্যের লাল বৃত্তে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল । পরবর্তীতে পতাকাকে সহজ করতে মানচিত্রটি বাদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা জাপানের জাতীয় পতাকার সাথে মিল রয়েছে কিন্তু পার্থক্য হলো বাংলাদেশের সবুজের স্থলে জাপানীরা সাদা ব্যবহার করেন। লাল বৃত্তটি একপাশে একটু চাপানো কারন হল পতাকা যখন উড়বে তখন যেন এটি পতাকার মাঝখানে দেখা যায়।১৯৭০ সালের ৭ই জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী মতান্তরে ফেব্রুয়ারী ১৫ বাহিনী গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা সেই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। সেই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ই জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তৎকালীন ইকবাল হল ১১৬ বর্তমান ১১৭-১১৮ নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। আর সে বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ, ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ন দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু এবং ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ।
সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারী দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনেন তারপর ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ এবং হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হল বর্তমানে যেটা তিতুমীর হল এর ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকেন পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ পরিশেষে তার নিপুন হাতে মানচিত্রটি লাল বৃত্তের মাঝে আঁকেন ।১৯৭১ সালের ২রা মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ছাত্র নেতা আ.স.ম. আব্দুর রব। তিনি সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।পূর্ব পাকিস্তানের চিহ্ন চাঁদ তারা ব্যবহার না করার জন্য নতুন এই প্রতীক তৈরী করা হয়েছিল। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক অনুযায়ী বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি বুঝাতে পতাকায় সবুজ রং ব্যবহার করা হয়েছিল।শেখ মুজিবুর রহমান মার্চ মাসের ২৩ তারিখে তার বাসভবনে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ এবং তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




