somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুড রিভিউ: মনা মামার হালিম

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঙ্গালির হালকা খাবারের তালিকায় হালিমের জনপ্রিয়তা বেশ উপরের দিকে। বিশেষ করে রোজার মাসে ইফতারির অনুষঙ্গ হিসেবে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। ঢাকায় যেসব হালিমের নাম ডাক বেশি শুনেছি তার মধ্যে অবশ্যই মামা হালিম সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। এছাড়াও অনুরাগ, মজিদ মামা, স্টার- এদের কথাও শুনি নানা জায়গায়। তবে এবার রমজানে আমার চাচাতো ভাইয়ের নিয়ে আসা মনা মামার হালিমটা অন্য সবগুলোর চেয়ে ভিন্নতর বলে মনে হয়েছিল। তবু এর আসল স্বাদ নিয়ে সন্দেহ ছিল, কারণ, রোজার কারণে মুখে স্বাদ বেশি লেগেছিল কিনা সে খটকা রয়ে গিয়েছিল। তাই বেশ ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম, ওদের হালিমটা ওখানে গিয়েই খেয়ে পরখ করে আসা দরকার। ভাবতে ভাবতে সেদিন সুযোগটাও চলে আসলো। আমরা তিন বন্ধু সন্ধ্যার পর এক হতেই, প্রস্তাব দিলাম মোহাম্মদপুর গিয়ে মনা মামার হালিম খেয়ে আসি। হালিমের বর্ণনা শুনে ওরাও সানন্দে রাজি হয়ে গেল। আমার মতো ওদের কাছেও মনা মামার হালিম অপরিচিতই ছিল। এতদিন ঢাকায় থেকে এত জায়গার এত খাবার পরখ করেও হাতের কাছে এমন একটা হালিম অপরিচিত থেকে যাবে- এটা আমাদের কারও কাছেই ঠিক বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা। আমিও ভয়ে ভয়ে ছিলাম, কারণ নিশ্চিত ছিলামনা আসলেই কি এর স্বাদ এতটা ভালো, নাকি স্রেফ রোজার দিনে ক্ষুধার বুজরুকিতে সাধারণ হালিমকেই অসাধারণ মনে হয়েছিল।

কিছু শঙ্কা, কিছু অনিশ্চয়তা, কিছু দ্বিধা নিয়ে তিন বন্ধু এক রিকশায় চেপে রওনা দিলাম মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে। জায়গা ঠিক চেনা ছিলনা, তাই গুগল ম্যাপ দেখে বের করে নিতে হলো। সলিমুল্লাহ রোডে পানির ট্যাঙ্ক মাঠের পাশেই ছোটখাটো একটা দোকান; বাইরে থেকে দেখে মোটেও আকর্ষণীয় কিছু বলে মনে হবেনা। জীবনে এমন অনেক সাধাসিধা জায়গায় অনেক অসাধারণ খাবারের সন্ধান পেয়েছি, তাই তিন বন্ধুর কেউই দোকানের চেহারা দেখেই হতাশ হলামনা। তাছাড়া, সাধারণ দোকান হলেও আশপাশটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলেই মনে হলো। আমার বেশি সমস্যা হয় খাওয়ার সময় ড্রেন বা অন্য কোন উৎস থেকে বাজে গন্ধ আসলে। কিন্তু মনা মামার দোকানে তেমন কোন সমস্যা অনুভব করলামনা। দোকানে ঢোকার মুখে ঢাউস সাইজের হালিমে ডেকচি পাতা, ঢাকনা দিয়ে ঢাকা। তার পাশে দোকানদার (ইনিই কি মনা মামা, জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল) হাসি হাসি মুখে বসা। ভেতরে টিনের বেঞ্চি পাতা, সেগুলোতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো বয়সী কিছু ছেলে বসে স্যুপ অথবা হালিম খাচ্ছে।



দোকানের নাম যেহেতু ’মনামামা স্যুপ এ্যান্ড হালিম হাউজ’, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম স্যুপ ও হালিম দু’টোই পরখ করে দেখব। তবে প্রথমে হালিমই অর্ডার দিলাম- তিনজনের তিনটা। দু’য়েক মিনিটের মাঝেই হাজির হয়ে গেল সেই বহু প্রতীক্ষিত হালিম। মেলামাইনের বাটিতে স্যুপের চামচ সহ পরিবেশন করল, হাতে হাতে। মাংস আর তার ঝোল উঁকি দিচ্ছে হাল্কা হলুদ রঙের হালিমের আড়াল থেকে। তেতুলের কিছু অংশও ভেসে রয়েছে। আর দেখা যাচ্ছে চমৎকার গোল কোয়েল পাখির ডিম। জ্বী, কোয়েল পাখির ডিম, যেটা প্রথমবার ইফতারিতে খাওয়ার সময়ও নজর কেড়েছিল। এটাই সম্ভবত মনা মামার হালিমের দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রথম বৈশিষ্ট্য। এক বাটি হালিমের দাম ৭০ টাকা মাত্র।

কথায় আছে, আগে দর্শনদারি, তারপর গুণবিচারি। তবে এবার হালিমের গুণ বর্ণনা করা যাক। তার আগে বলে নিই, আমি যে বন্ধুদের কিল খাবার সম্ভাবনা থেকে বেঁচে গিয়েছি, তা বেশ বুঝে নিলাম তাদের তন্ময় ভঙ্গিতে হালিম ভক্ষণে মনযোগ দেখে।

১। হালিমে প্রায়ই মসলার আধিক্য থাকে। এমনকি অনেক নামকরা হালিমেও এটা দেখা যায়। অনেকটা মশলার আড়ালে স্বাদের দুর্বলতা গোপন করার চেষ্টার মতো। অথবা, মেকাপের আড়ালে রূপের কমতিটুকু ঢাকা। মনা মামার হালিম মুখে দিয়ে আমার একজন বন্ধুর প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো- মসলার স্বাদটা আলাদা ভাবে পাওয়া যাচ্ছেনা। অর্থাৎ, হালিমের অরিজিনাল স্বাদকে অতিক্রম করে মসলার স্বাদ জিহ্বায় ধাক্কা দিচ্ছেনা। ওর কথা শুনে আমরা বাকি দু’জন মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মশলার পরিমিতি মনা মামার হালিমের প্রথম চরিত্রবৈশিষ্ট্য।

২। হালিমে গোটা তেতুল চুবিয়ে রাখা; তেতুলের পানি নয়। অর্থাৎ, চটপটির মতো তেতুল জল ঢেলে একে টকটক স্বাদময় করে ফেলা হয়নি। হালকা ডুবে থাকা তেতুলখানা ঠিক যেন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু টক ছড়িয়ে চুপ করে ডুব দিয়ে রয়েছে। যার একটু বেশি টক খাওয়ার সখ, সে ইচ্ছে করলে তেতুলখানা চামচে করে মুখে তুলে হাল্কা চুষে নামিয়ে রাখতে পারে। ভোক্তার এ স্বাধীনতা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য মনে হলো।

৩। এ হালিমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে দিক প্রথমেই সবার নজর কাড়ে তা হলো, কোয়েল পাখির ডিম। খেতে আহামরি আলাদা কিছু না হলেও, হালিমের সাথে এর ব্যবহার অভিনব বলেই মনে হলো। আপনারা কেউ অন্য কোথাও এমনটি পেয়ে থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

৪। হালিম খেতে গেলে সবচেয়ে বিরক্তিকর যে জিনিসটি লাগে তা হলো, মাংস মেশানোয় কার্পণ্য। আবার অনেক হালিমে মাংস এমনভাবে কেটে দেওয়া থাকে যে, না যায় একবারে মুখে পোরা, না যায় সহজে ছিড়ে খাওয়া। এখানে দেখলাম, প্রচুর মাংস, অর্থাৎ, পুরো বাটি শেষ করতে এক চামচও মাংস ছাড়া শুধু হালিম মুখে দিতে হয়নি। ভুল বললাম, দুই চামচ দিতে হয়েছে, তবে সে দুই চামচে কোয়েলের ডিম ছিল। মাংসের স্বাদ ভালো, আকার এমন যে সহজেই ছেঁড়াছিঁড়ির ঝামেলায় না গিয়ে একবারে মুখে পোরা যায়, এবং হাড্ডিমুক্ত।

৫। কিছু হালিম ডালের মতো পাতলা বা ফিনফিনে হয়। কিন্তু এ হালিমের তারল্য একদম যথাযথ মাত্রার। পাতলা নয়, আবার একদম ঘনও নয়।



সব মিলিয়ে বেশ ভাল একটি অভিজ্ঞতা হলো। নিশ্চিত হওয়া গেল এর স্বাদ কেবল রোজামুখেই ভালো লাগেনি, আসলেও বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, বন্ধুদের কাছে আমার ইজ্জতটা রক্ষা হলো; তা না হলে কী বিপদেই যে পড়তাম, আর কত আড্ডায় যে হাস্যরসের খোরাক হতে হতো তার কোন ইয়ত্তা নেই। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখি। দোকানের নামে যদিও ‘স্যুপ’ শব্দটি আছে, আমাদের কাছে স্যুপটি মোটেও খুব একটা সুপেয় মনে হয়নি। কাজেই, ও খেয়ে স্বাদ নষ্ট করা সমিচীন হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×