somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যশোরের মহীয়সী নারী শান্তিলতাকে হৃদয়ছোঁয়া সংবর্ধনা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধুমাত্র শিক্ষাবিস্তারে নিজের সমুদয় জমি (৬দশমিক ৮৬ একর) স্কুলকে দান করেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের শান্তিলতা ঘোষ (৮৮)। জীবনে কিছুই চাওয়া-পাওয়া ছিল না তার।
শিক্ষানুরাগী এই মহীয়সী নারীকে আজ সংবর্ধনা দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির যশোর জেলা কমিটি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর জিলা স্কুল অডিটরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানঅতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষানুরাগী বয়োবৃদ্ধ এই মানুষটির আত্মত্যাগে আপ্লুত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মঞ্চে উঠেই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তার হাতে তুলে দেন সম্মাননাপত্র, গায়ে জড়িয়ে দেন উত্তরীয়।
এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শান্তিলতা ঘোষ নিজে কিছু পাবেন, সেই আশাতে এমন কাজ করেননি। কিন্তু তার মতো নিঃস্বার্থ মানুষদের জন্যে রাষ্ট্র যদি কিছু না করে, তাহলে দেশের মানুষ কিছুই জানতে পারবে না। আমাদের দায়িত্বই হলো তাদের জন্যে কিছু করা। যাতে দেশের সবাই এতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
ডা. দীপু মনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, যে মানুষটি তার সব সম্পত্তি নিঃস্বার্থভাবে দান করে দিলেন, তার কোনও খোঁজ রাখেনি ওই স্কুলটি। তার খাওয়া, পরা, থাকার বিষয়টি কীভাবে তাদের নজর এড়িয়ে যায়! দীর্ঘ প্রায় ৫০টি বছর নিঃসঙ্গ হয়ে কোনওরকমে টিকে রয়েছেন মানুষটি। এই মানুষটিকে সারাজীবন কৃতজ্ঞতা জানালেও তার অবদানের কথা শেষ করা যাবে না।
তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তার চিকিৎসাসহ ভরণপোষণে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ স্থানীয়দের দায়িত্ব দিয়ে যান।
এছাড়া মন্ত্রী স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে শান্তিলতা ঘোষ যে স্কুলটিকে জমি দান করেছিলেন, সেই স্কুলটি তার নামে, শান্তিলতার সুপারিশ অনুযায়ী স্কুলে খুব শিগগির একটি প্রয়োজনীয় নতুন ভবন তৈরি এবং সেটি তার বাবা ইন্দু ভূষণ বিশ্বাসের নামে করার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে যশোরে একটি সংস্কৃতি কলেজ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্যে আগামী বছর তাকে একুশে পদকে ভূষিত করার দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে মন্ত্রী বলেন, আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, আমি সেই চেষ্টা করবো।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা ও আলোচনাসভায় শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জিলা স্কুলের প্রধানশিক্ষক একেএম গোলাম আজম, সংগঠনের জেলা সভাপতি হারুন অর রশিদ, প্রেমবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন প্রমুখ আলোচনা করেন।
সংবর্ধিত শান্তিলতা ঘোষ ১৯৩১ সালের ১২ ডিসেম্বর অভয়নগর উপজেলার ইন্দুভূষণ বিশ্বাস ও সুমনা বিশ্বাস দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিন সন্তানের মধ্যে তিনিই প্রথম সন্তান। পরে আরও দুটি ভাই জন্ম নিলেও কৈশোরে তিনি তাদের হারান।
শান্তিলতা স্থানীয় একটি পাঠশালায় পড়েছেন; স্কুলে যাননি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে যশোর সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎ বিশ্বাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের চার বছরের মাথায় একটি পুত্রসন্তান জন্ম নিলেও কয়েক মাসের মধ্যে সে মারা যায়।
বিয়ের দশ বছরের মাথায় তার স্বামী কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচারে বাবারবাড়ি মাগুরা গ্রামে ফিরে আসেন।
এরপর বাবা তার সমুদয় সম্পতি শান্তিলতাকে দিয়ে দেন। কিছুকাল পরে তিনিও মারা যান। এরপর তিনি প্রতিবেশীর এক শিশুসন্তানকে দত্তক নেন। বাবার দেওয়া সম্পত্তি দিয়েই তার সংসার চলতো।
পরে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে এলাকার সন্তানদের শিক্ষালাভের জন্যে তিনি তার সমুদয় সম্পত্তি দান করেন। গড়ে ওঠে মাগুরা বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
জীবনসায়াহ্নেও তিনি ছুটে যেতেন ওই স্কুলে। খোঁজ নিতেন শিশুদের পড়াশুনার। যদিও তার থাকার জন্যে জীর্ণ কুটিরটি ছিল ভরসা। কিন্তু সেই কুটিরেও বাসা বাঁধে বিষধর সাপ। সেখানে থাকতে গিয়ে আরও সংশয়ে পড়েন।
বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৭ সালে অবয়নগর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনদীপ ঘরাই এগিয়ে আসেন। তিনি জানতে পারেন, ঘর করে দেওয়ার মতো কোনও জায়গায় আসলে শান্তিলতার নেই। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সাথে বৈঠক করে তারই দান করা জমির মাত্র ১ দশমিক ৪৯ শতক জমিতে বসবাসের জন্যে তৈরি করে দেওয়া হয় একটি ঘর।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:২৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×